রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনের আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠক

তারুণ্যের প্রথম ভোট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক

আমজাদ হোসেন বলেন, তরুণরা এখন পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে গেলেও আবার ফিরে আসছে দেশে।

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারুণ্যের প্রথম ভোট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপে কাঁপছে দেশ। এবার ভোটের ফ্যাক্টর ২ কোটি ৪০ লাখ তরুণ ভোটার। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিল তারুণ্য। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তারুণ্যের প্রথম ভোট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা-অভিনেত্রী, খেলোয়াড়, শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। গতকাল রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘তারুণ্যের ভোট উৎসব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. নুজহাত চৌধুরী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর শিক্ষক ও গবেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান, অভিনেতা আজিজুল হাকিম, অভিনেত্রী ও নির্মাতা শমী কায়সার, চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ, অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত, এফবিসিসিআই পরিচালক আমজাদ হোসেন, সাবেক ক্রিকেটার মিশু চৌধুরী, ক্রিকেটার সাথীরা জাকির জেসি, সংগীতশিল্পী সাবরিনা পড়শী ও জঙ্গিদের নিয়ে রচনা লিখে জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী তনিমা আফরোজা।

গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক সামিয়া রহমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণদের ভোট ভাবনা এবং তাদের চাওয়া-পাওয়া বিষয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বিশ্বের এমন কোনো প্রান্ত নেই যেখানে বাংলাদেশের তারুণ্য তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখেনি। তবে ১৫ বছর আগে বাংলাদেশে উন্নয়নের এই প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখলে দেশের পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আত্মদান করে তরুণরা এ দেশ উপহার দিয়েছে। সেই দেশের তরুণরা কখনো ভুল করবে না। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জিনাত হুদা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি ধরে আমি বলতে চাই, তরুণরা এমন কাউকে ক্ষমতায় আনবে না যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলায়। ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমরা ২০০১-০৬ পর্যন্ত নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে লাল-সবুজের পতাকা দেখেছি। কিন্তু এই প্রজন্ম সেই দৃশ্য আর দেখতে চায় না। ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, তরুণদের মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকারদের ভূমিকার কথা বলতে হবে, ’৭৫-এর রাসেলের সেই আর্তনাদের কথা বলতে হবে। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা নিয়ে তরুণদের কাছে যেতে হবে। মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, মিথ্যা বলে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা যায় না। তাই এই মিথ্যাবাদীদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের সত্য খুঁজে দেখতে হবে। ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম বলেন, তরুণদের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক স্রোতে ভেসে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীরা এখন অন্য পার্টির খোলসে আবির্ভূত হয়েছে। ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান বলেন, তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত দেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে চায়। আজিজুল হাকিম বলেন, একটি ভুল সিদ্ধান্তে থমকে যেতে পারে দেশের উন্নয়নের বিজয় নিশান। তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। শমী কায়সার বলেন, এ দেশের তরুণরাই ডিজিটাল বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা। পদ্মা সেতুসহ যত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বা হচ্ছে এগুলো আমাদের দেশের আত্মসম্মানবোধকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অভিনেতা রিয়াজ বলেন, তরুণদের একটি ভোট বদলে দিতে পারে এই বাংলাদেশকে। মাহফুজ আহমেদ বলেন, সবকিছু তৈরি হয় তরুণদের নিয়ে। অথচ আমাদের এখানে তরুণদের অবহেলা করা হয়। নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, তরুণরা যত সক্রিয় হবে দেশ ততটাই এগিয়ে যাবে। একটি ভোট পাল্টে দিতে পারে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ। এম এ মুহিত বলেন, মাদকমুক্ত, নারী নির্যাতনবিরোধী সৎ নেতাকে ভোট দিতে হবে। আমজাদ হোসেন বলেন, তরুণরা এখন পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে গেলেও আবার ফিরে আসছে দেশে। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে অপারসম্ভাবনা। সাবেক ক্রিকেটার মিশু চৌধুরী বলেন, ভুল সিদ্ধান্তে থেমে যেতে পারে দেশের উন্নয়ন। সরকার কী দিয়েছে এগুলো ভাবার এখনই সময়। সাথীরা জাকির জেসি বলেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই সময়। সাবরিনা পড়শী বলেন, তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো বলার সুযোগ দিতে হবে। তনিমা আফরোজা বলেন, সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে আমাদের আইডল (আদর্শ) দরকার।

সর্বশেষ খবর