রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বরিশাল-২ ও ৩ আসনে দুই জোটের হিসাব-নিকাশ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল-২ ও ৩ আসনে দুই জোটের হিসাব-নিকাশ

বরিশাল জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আসন বণ্টন নিয়ে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে। বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মো. শাহে আলম এবং বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতানকে মহাজোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত আশা ছাড়ছেন না এই দুই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা এবং গোলাম কিবরিয়া টিপু। আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত এই দুই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে আশা জাপার দুই প্রার্থীর। অপরদিকে মহাজোটের সিদ্ধান্ত মেনে জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী আজকের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা ওই দুই আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। এদিকে মহাজোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন না পেলেও তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই দাবি করে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন জাপার প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের প্রথম দফা মনোনয়ন ঘোষণায় বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। তখন থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর রাতে ওই আসনে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মো. শাহে আলমকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপরও সোহেল রানার কর্মী-সমর্থকরা আশা  করেছিলেন এ আসন জাপাকেই ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর বিকালে মহাজোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণায় এ আসনে নৌকা প্রতীক পান শাহে আলম। তারপরও মহাজোটের মনোনয়নের আশা ছাড়ছেন না জাতীয় পার্টির সোহেল রানা। উজিরপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহিদ আলম জানান, আজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে এ আসনে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা সোহেল রানার।

এদিকে এ আসনের নৌকার প্রার্থী মো. শাহে আলম বলেন, আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিকদের ৬০টি আসন দিয়েছে। যেসব আসনে মহাজোটের শরিকদের প্রার্থী আছে সেখান থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একইভাবে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে সেখান থেকেও মহাজোটের শরিকরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে তারা আশা করছেন। মহাজোটের শরিকরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অনুকূলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলেও কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী শাহে আলম। এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত নৌকা বিজয়ী হতে পারেনি বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে। ২০০৮ সালে মহাজোটের মনোনয়নে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। কিন্তু ২০১৪ সালে এ আসন বণ্টন নিয়ে মহাজোটের দুই শরিক জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। দুই শরিকের আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত এ আসনটি উন্মুক্ত করে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে বিজয়ী হন ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। যদিও অনিয়মের অভিযোগে ভোটের দিন মাঝপথে ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু। একইভাবে এবারও শুরু থেকেই এ আসনটি দাবি করে আসছিল ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়ন জমা না দিলেও মনোনয়ন জমা দেন ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান এবং জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। গত কয়েক দিনের রশি টানাটানির পর ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী স্বাক্ষরিত চিঠি পান ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জাতীয় পার্টির। তারা এখনো এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আশায় আছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান বলেন, তিনি ৭ ডিসেম্বর রাতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র পেয়েছেন। তাকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। জোটের সিদ্ধান্ত মেনে এ আসনে মহাজোটভুক্ত অন্য দলের প্রার্থী (জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু) তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে তারা আশা করছেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন তারা আশা করছেন এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।

সর্বশেষ খবর