রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জের পাঁচ এমপির হলফনামা

কোটিপতি এমপির পত্নীরাও কোটিপতি

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

কোটিপতি এমপির পত্নীরাও কোটিপতি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের বর্তমান এমপিরা সবাই কোটিপতি। শুধু তা-ই নয়, এমপি স্বামীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পত্নীরাও উপার্জনশীল। বেশিরভাগ এমপির পত্নীরা লাখপতি। আবার কেউ কেউ কোটিপতিও। হলফনামার সম্পদের বিবরণীর প্রতিটি ছকেই এমপিদের পাশে পত্নীদের রয়েছে কোনো না কোনো সম্পদ। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া এমপিদের হলফনামার বিবরণীতে হিসাব কষলে সেই চিত্রই দেখা যায়।

গোলাম দস্তগীর গাজী : নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় দুই লাখ ৫৯ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত আছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৮ টাকার। বোর্ড মিটিং ফি ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা হিসেবে বার্ষিক ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৭১৫ টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৮ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৮ টাকা। তার স্ত্রীর নামে আছে ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৯৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ৩২ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩১৯ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৪২ হাজার ১০৮ টাকা। পরিবহন খাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৭ টাকা। তার নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের এবং তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ৩৮০ টাকার।

নজরুল ইসলাম বাবু : নারায়ণগঞ্জ-২  আসনে নজরুল ইসলাম বাবুর হলফনামা অনুযায়ী ব্যবসা ও কৃষি খাত থেকে তার আয় ১০ হাজার ২০০ টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে নিজ নামে আয় না থাকলেও স্ত্রীর নামে আয় রয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। মাছ চাষ থেকে আয় ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত নিজ নামে ১৯ হাজার ৬৪৩ টাকা, স্ত্রীর নামে ৪৪ হাজার ৮৩৬ টাকা। তার স্ত্রী চিকিৎসা পেশা থেকে আয় করেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি নিজে সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা পান ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার স্ত্রী আয় করেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ১৯ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৩৫ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৪২৩ এবং স্ত্রীর নামে আছে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৪৬ টাকা। শেয়ারের মূল্য ৫ লাখ ৪২ হাজার ৭০০ টাকা। স্ত্রীর নামে শেয়ারের মূল্য ৬ লাখ ১২ হাজার ৪৭৭ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিজস্ব টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার জিপগাড়ির মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪০৩ টাকা। ৬ লাখ ১২ হাজার ১৮৬ হাজার টাকা সমমূল্যের স্বর্ণালঙ্কারসহ ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে, যার মূল্য জানা নেই। স্ত্রীর নামে ৫২.২৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আছে, যার মূল্য জানা নেই।

লিয়াকত হোসেন খোকা : নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হলফনামা অনুযায়ী তার পেশা ব্যবসা। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কালীনবাজার চারারগোপ যাবতীয় কাঁচা-পাকা ফলের আড়ত ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় লাবিবা ট্রেড লিঙ্ক আইউব প্লাজা। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪০ টাকা ও স্ত্রীর ব্যবসা থেকে আয় ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংকে সুদ ও শেয়ার থেকে তিনি আয় করেন ৬১ হাজার ৬৩৪ টাকা ও তার স্ত্রী আয় করেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮১৪ টাকা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তার বার্ষিক আয় ২২ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৫ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার কাছে নগদ অর্থ ব্যবসা থেকে রয়েছে ৮১ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ টাকা ও ব্যবসাবহির্ভূত সম্পত্তি ১৭ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। এ ছাড়া একইভাবে তার স্ত্রীর কাছে ব্যবসা থেকে নগদ অর্থ ৫৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯৬৫ টাকা। তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ রয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৪২ টাকা, তার স্ত্রীর নামে ৯ লাখ ৪ টাকা। এ ছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৫ টাকা রয়েছে। তার নামে শেয়ার রয়েছে ৮ লাখ টাকার ও তার স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকার। লিয়াকত হোসেন খোকার নিজের কোনো গাড়ি নেই। তার স্ত্রীর একটি গাড়ি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ২৯ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার তার কাছে উপহার হিসেবে রয়েছে ৩০ ভরি ও তার স্ত্রীর কাছে ৮৪ ভরি।

শামীম ওসমান : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, এলএলবি। তার নামে এখন পর্যন্ত দায়ের করা মামলার সংখ্যা ১৭টি। তিনটি মামলায় বেকসুর খালাস, খালাস চারটি, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রত্যাহার হয়েছে চারটি, বাতিল হয়েছে একটি, হাই কোর্ট কর্তৃক স্থগিত হয়েছে তিনটি ও অপর দুটি মামলায় তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন করপোরেশন, জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ও শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। নিজের বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় করেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬৪ টাকা। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। শেয়ারের সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের জামানতের সুদ থেকে তার বার্ষিক আয় ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮১ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী পান ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৫ টাকা। তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া শেয়ারের সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে জামানতের সুদ থেকে তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪ টাকা করে। তার নিজ নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৭০ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৮২০ টাকা। এ ছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৬৩৪ টাকা রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ টাকা। স্ত্রীর নামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫২ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত কোনো টাকা নেই। তার সঙ্গে থাকা লাইসেন্সকৃত পিস্তলের মূল্য ৩৫ হাজার টাকা।

সেলিম ওসমান : নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। তার নামে মামলার সংখ্যা আটটি। হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। কৃষি খাত থেকে সেলিম ওসমানের বার্ষিক আয় ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৯০। বাড়ি, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খাতে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক আয় ৬০ লাখ, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে প্রাপ্ত সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৭১ হাজার ৩২৯ টাকা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ২২ লাখ ২ হাজার টাকা। কৃষি খাত থেকে তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৪০ টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ব্যবসা খাত থেকে ৬০ লাখ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে প্রাপ্ত সুদ থেকে ৭ হাজার ২৮৮ টাকা আয় করেন। তার মেয়ে ব্যবসা খাত থেকে ৬০ লাখ এবং শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে প্রাপ্ত সুদ থেকে ৫০ হাজার ৩১১ টাকা আয় করেন।

সর্বশেষ খবর