মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

যেসব কারণে হেভিওয়েটে ধস বিএনপির

আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা অন্য যে কোনো বারের চেয়ে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সজাগ ছিলেন

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের আসনগুলোয় হেভিওয়েটে ধস হয়েছে বিএনপির। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকও ছিটকে পড়লেন যেন সংসদের সিঁড়ি থেকে। ঝরে পড়লেন চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীও। টালমাটাল নির্বাচনী লড়াইয়ে সংসদের সিঁড়ি হারিয়ে ফেলেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও। নিবন্ধনবিহীন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আ ন ম শামসুল ইসলামও ডুবেছেন ধানের শীষেই। বিএনপি, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের হেভিওয়েট নেতাদের কেন এমন করুণ পরাজয়? এমন প্রশ্নে নানা জনের আছে নানা মত। মামলা, গ্রেফতার, প্রতিকূল পরিবেশসহ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি ও মিত্র জোটের পক্ষ থেকে যত অভিযোগই করা হোক না কেন মাঠে আছে তীব্র ভিন্ন ভাষ্যও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বৈত নেতৃত্বই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির স্মরণকালের এ পরাজয়ের মূল কারণ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একক নেতৃত্বের বাইরে তার পুত্র বিদেশবিভুঁইয়ে থাকা তারেক রহমানের বিশেষ প্রভাব চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী অভ্যন্তরীণ বিভক্তি তীব্র করে তোলে। এর ফলে দ্বিধা, সংশয় ও অবিশ্বাসে নাজুক বিএনপি মাঠছাড়া হয়ে পড়ে। কর্মীরা ঝুঁকি নিতে রাজি না হওয়ায় পোলিং এজেন্টও পাওয়া যায়নি। অনেক প্রার্থী ভোট দিতেই যাননি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা অন্য যে কোনো বারের চেয়ে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সজাগ ছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে আনীত দমন-পীড়নসহ অন্যসব অভিযোগ নাকচ করেই রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞরা বলছেন, এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি প্রতিকূল স্রোত মোকাবিলা করেছে। ’৭৫-এর পর থেকে ২১ বছর চরম দুঃসময়ে বিএনপির মতো মাঠছাড়া দশা হয়নি আওয়ামী লীগের। মাঠের কর্মীরাই আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখেন, সে রকম কর্মীবাহিনী নেই বিএনপির। এর বাইরে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় শীর্ষ নেতাদের দীর্ঘকালীন বিরোধ, মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রতিটি আসনে গড়ে তিন-চারজন করে দলীয় প্রতীক দেওয়ার কৌশল ও জোট শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের মাঠের অবস্থা যাচাই না করে মনোনয়ন প্রদানে অসন্তুষ্ট কর্মীরা কাজ করেননি। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দলের সর্বশক্তি কাজে লাগাতে ঐক্যের নৌকায় তোলেন আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ, অসন্তোষ ও বঞ্চনায় অভিমানে দূরে থাকা সব নেতাকেই। ফলে আওয়ামী লীগের দোর্দণ্ড  সাংগঠনিক শক্তির মুখে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি ও তার মিত্রজোট। চট্টগ্রামের সব আসনেই পরাজয় অনিবার্য হয় জোটটির। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনটিতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের (এলডিপি) প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে বিশেষ নজর ছিল সচেতনদের। লাঠি নিয়ে মাঠে থাকার জন্য সমর্থকদের দেওয়া ফোনালাপ ফাঁস হলে বেকায়দায় পড়েন অলি। তার কর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটের আগের রাত ও ভোট চলাকালে প্রকাশ্যেই চিকিৎসক নেতা মইজ্জুল আকবরের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত অলি দাঁড়াতেই পারেননি ভোটের মাঠে।  হাটহাজারীতে জাপার ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অদম্য অভিযাত্রার কাছে টিকতেই পারলেন না যেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

সর্বশেষ খবর