২১ জুন, ২০১৮ ০৯:২৮
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সালাহ্ বললেন

বাংলাদেশকে চিনি, দোয়া করবেন

রাশেদুর রহমান, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে

বাংলাদেশকে চিনি, দোয়া করবেন

আসসালামু আলাইকুম মোহাম্মদ সালাহ। মিক্সড জোনে ঢুকে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকা মিসরীয় তারকা চোখ তুলে তাকালেন। হেসে সালামের জবাব দিলেন। এরপর কিছুক্ষণের আলাপন। বেশি কিছু নয়। অন্যদের দিকে তো ফিরেও তাকাননি। মাথা নিচু করে ছুটে  বেরিয়ে গেলেন। মোহাম্মদ সালাহর সঙ্গে কাটানো কয়েকটা মুহূর্তই হয়ে উঠল পরম সম্পদ। মিসরীয় ফুটবল দলের মিডিয়া ম্যানেজার উসামা ইসমাঈলের সঙ্গে পূর্ব পরিচয় থাকায় বলে গিয়েছিলেন, সালাহ কোনো কথা বলবে না। ওর মনটা খুব খারাপ। সালাহর মন খারাপ, এটা বোঝার জন্য মনোবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ৩-১ গোলে রাশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে তার দল। একটা গোল করেও দলকে জয় উপহার দিতে পারলেন না। এই দুঃখ বুকে নিয়ে সালাহর মতো ফুটবলারের পক্ষে কথা বলা যে সত্যিই কঠিন। কিন্তু সালাহ কথা বলবেন না জেনেও কেউ মিক্সড জোন ছাড়ল না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। দক্ষিণ কোরিয়ার স্পোর্টস হ্যানকুনের রিপোর্টার জেহোকে এই ভিড়ের মধ্যে দেখে খুব অবাক লাগল। তুমি এখানে কেন ভাই? রোস্টভ অন ডনে তোমার দলের খেলা আছে না? জবাব না দিয়ে জেহোর পাল্টা প্রশ্ন। তুমি এখানে কেন? সরল উত্তর, সালাহর জন্য। জেহো মুখে কিছু না বলে কেবল ভঙ্গিতেই বুঝিয়ে দিলেন তিনিও এই দলে। সালাহর দলে। কেবল দক্ষিণ কোরিয়ানরা কেন, সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষিত মিক্সড জোন থেকে সরছিল না রাশানরাও। তারাও তাকিয়েছিল দরজার দিকে। তিনি আসবেন বলে অপেক্ষায় আছেন অনেকে। সাধারণ ভক্তদের তার কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি সাংবাদিকদেরও থাকতে হয় নির্দিষ্ট দূরত্বে। জায়গাটার নাম মিক্সড জোন। এখানে জড়ো হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ দুনিয়ার সেরা পত্রিকাগুলো থেকে আসা সাংবাদিকরা। রাশানরা চলে যেতেই মিসরীয়রা আসতে লাগল। একে একে অনেকেই চলে গেল। তবে কী তিনি আসবেন না! হঠাৎ করেই দরজার কাছে বেড়ে যায় ভিড়। চারদিকে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। মোবাইল ক্যামেরাগুলো বন্ধ করতে হয় ফিফা কর্মকর্তাদের চোখ রাঙানিতে। আড়ালে-আবডালে চেষ্টা করে ধরা পড়লেই বকুনি খেতে হয়। শত বাধা-বিপত্তি ঠেলে সালাহর কাছাকাছি হওয়া সত্যিই এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ভিড় ঠেলে তার কাছে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে মিক্সড জোনের শেষ প্রান্তে আসতেই জুুতসই জায়গা পাওয়া গেল। অনেকের অনুরোধ পায়ে দললেও এই প্রতিবেদক শেষ ব্যক্তি বলেই বুঝি প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কেমন আছেন? এর আসলে কোনো উত্তর হয় না। পরাজিত সৈনিককে এমন প্রশ্ন করতে নেই। সালাহ কেবল এক গাল হাসলেন। করুণ সে হাসি। বাংলাদেশকে জানেন? সেখানে আপনার অনেক ভক্ত আছে, যারা আপনার জন্য সব সময় প্রার্থনা করে। ‘আমি চিনি বাংলাদেশকে। জানি তোমাদের দেশে আমার অনেক ভক্ত। তারা চেয়েছিল মিসরের জয়। আশা পূরণ করতে পারলাম না। এ জন্য দুঃখিত। আমার জন্য দোয়া করবে যেন আরও ভালো খেলতে পারি। বাংলাদেশের শুভ কামনা করি। বের হওয়ার সময় গলায় ঝুলানো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে ইংরেজি লেখা দেখে সহাস্যে উচ্চারণ করলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন।’ এতটুকু বলেই মিক্সড জোনের শেষ প্রান্তটা পেরিয়ে গেলেন এরই মধ্যে মিসরীয় মেসি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সালাহ। রাশিয়ার কাছে পরাজয়ে বিশ্বকাপে মিসর এখন বিদায়ী দল। তবে সালাহকে কেউ বিদায় দিতে রাজি নন। সেন্ট পিটার্সবার্গের মেয়ে ওলগা রাশিয়ার পতাকা হাতেও মধ্যরাতে সালাহর জার্সি গায়ে ঘুরে বেড়ায়। ওলগার মতো অনেকেই চান, সালাহ থাকুন। অন্তত বিশ্বকাপের দিনগুলোয়।

সর্বশেষ খবর