রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

যে কারণে পারল না আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল

যে কারণে পারল না   আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল

১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের পর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে যাওয়াটাই আর্জেন্টিনার গ্র“ুপপর্বে সবচেয়ে বড় পরাজয় ছিল। অথচ তারা এই আসরে অন্যতম ফেবারিট হয়েই এসেছিল। ৩০ বছর বয়সী  মেসির শেষ বিশ্বকাপ হওয়ায় তিনিও উচ্ছ্বসিত ছিলেন শিরোপা উপহার দিতে। ভক্তদের দাবিটাও তার কাছে ছিল এমন। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই দলটি ১-১ গোলে ড্র করে নবাগত আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে দলটি  মেসিকে ভীষণ মার্কিংয়ে রেখেছিল। ম্যাচে গোলমুখে ১১টি শট নিয়েও তাই গোলের দেখা পাননি এই বার্সেলোনা তারকা। তবে ক্রোয়েশিয়া খুবই দক্ষতার সঙ্গে  মেসিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে সফল হয়। পুরো ম্যাচে  মেসিকে পায়ে বলই তুলতে দেয়নি সেভাবে। নিজের জাদুকরী পা দিয়ে প্রথমার্ধে মাত্র ২০ বার বল স্পর্শ করেছিলেন তিনি যা আর্জেন্টিনা দলে ছিল দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ম্যাচে গোলের পরিষ্কার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি। ৬৪ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার গোলপোস্টের পাশের জটলা থেকে তিনি বল এগিয়ে দিয়েছিলেন  গোলমুখে। তবে তাও প্রতিহত করেন প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ। তবে আইসল্যান্ড ও  ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দুটি প্রমাণ করেছে দলটি এখনো মেসির ওপরই নির্ভরশীল। তার বিফলতার খেসারত হিসেবে আর্জেন্টিনা পেল না কাক্সিক্ষত ফলাফল। অথচ বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে মেসিই দলটিকে উঠিয়েছেন বিশ্বকাপে। কিন্তু রাশিয়ায় এসে আর্জেন্টিনার এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সে প্রশ্ন তোলাই যায়, তবে কি  মেসি বিবর্ণ বলেই জয় পায়নি তার দল?

এদিকে ফ্রান্সও যেন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ঘোষণা দেয় যুদ্ধের। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমের নির্দেশ- কোনোমতেই মেসিকে খেলতে দেওয়া যাবে না। এই রণনীতি একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন পগবা-এমবাপ্পে-এনগোলা কতেঁরা। মেসির পায়ে বল  গেলেই তাকে ঘিরে ধরেছেন অন্তত তিনজন ফরাসি ফুটবলার। অনেকটা নিচে নেমে মেসি খেলায় আর্জেন্টিনার প্রধান অস্ত্রটাটাই ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল।

আর্জেন্টিনার রণনীতি প্রথম থেকেই ছিল ভুলে ভরা। আগুয়েরো, হিগুয়েইনকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখে শুরুতেই খানিকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এর ফলে প্রথম থেকেই চাপে পড়ে যায় আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ। আর্জেন্টিনার খেলায় হোমওয়ার্কের স্পষ্ট অভাব দেখা দিয়েছিল। এমবাপ্পে যে নিজের প্রচণ্ড গতি দিয়ে একাই মাঠ কাঁপিয়ে দিতে পারেন, তা বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। এমবাপ্পের গতির সামনে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স যেন পাত্তাই পাচ্ছিল না! ম্যাচের আগে যে হিসাব কষে  খেলোয়াড়দের মাঠে নামিয়েছিলেন দেশম, মাঠের  খেলায় তা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। অঙ্ক কষে  খেলে ম্যাচ জিতল ফ্রান্স। মেসিকে আটকে রাখা এবং দুর্দান্ত গতিতে প্রতিপক্ষের দুর্গ আক্রমণ করে রোহোদের ডিফেন্সকে ছিন্নভিন্ন করে ফেললেন এমবাপ্পে-গ্রিজম্যান-জিহুরা। গ্র“ুপ পর্ব থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, আর্জেন্টিনার ডিফেন্স ভীষণ ভীষণ দুর্বল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩  গোল খাওয়াসহ নাইজেরিয়া এমনকি প্রথম ম্যাচে নবাগত আইসল্যান্ডের বিপক্ষেও গোল হজম করতে হয়েছে তাদের! সেই দুর্বল ডিফেন্সই বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করল মেসিদের। পগবা, কঁতে, মাতুইদিদের নিয়ে গড়া ফ্রান্সের মিডফিল্ড টিমের সামনে নিতান্ত সাদামাটা  দেখিয়েছে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডারদের। বনেগা ছাড়া বাকিদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মেসিকে বল জোগানোর ক্ষেত্রে। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচের পরেও মেসি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারল না আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ বুঝে গিয়েছিল, শুধুমাত্র মেসিকে আটকাতে পারলেই আর্জেন্টিনার দৌড় শেষ। আর হলোও তাই। নকআউট পর্বেই নিজেদের বিশ্বকাপ মঞ্চে নিজেদের তাঁবু গোটাতে হলো। পাঁচবারের বিশ্বজয়ী ব্রাজিলের মিশনেরও একই অবস্থা। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তাদের পরাজয় গ্রাস করেছে। তাদের এই পরাজয়ে হাহাকার উঠেছে বিশ্বজুড়ে। আর্জেন্টিনার পর সাম্বাদের বিদায়ে যেন শেষ হয়ে গেল ল্যাটিন ফুটবল। অথচ এবার স্বপ্ন ছিল ষষ্ঠ শিরোপার। তা তো হলোই না, বরং বেলজিয়ামের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারতে হলো। বিশ্বকাপের আগের সেই অপরাজেয় ব্রাজিলের কেন এমন পরাজয়? এর পেছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ। যেমন বেলজিয়ামের  গোলকিপার কুর্তোয়া অসাধারণ খেললেন। বারবার আটকে দিলেন ব্রাজিলের আক্রমণ।  নেইমার, কুতিনহো, ডগলাস কস্তারা যেভাবেই আক্রমণ গড়–ন না, শেষে কুর্তোয়াকে একবার ছাড়া হার মানানো যায়নি। অবশ্য বেলজিয়াম রক্ষণেও নির্ভরতা দিলেন ভিনেসন্ট কোম্পানিরা। ব্রাজিল মানেই বল পায়ে জাদু প্রদর্শন। যা দেখাই  গেল না বেলজিয়ামের বিপক্ষে। নেইমার বার বার পড়ে গিয়ে,  পেনাল্টি আদায়ের চেষ্টা করে গেলেন। যা ‘ভিএআর’ চালু হওয়ায় পাত্তাই পেল না রেফারির কাছে। তিতের দল বিকল্প  কোনো স্ট্র্যাটেজিও দেখাতে পারল না। দলে নি®প্রভ ছিলেন কুতিনহো। অথচ তার ডানায় চড়ে এতদূর এসেছিল ব্রাজিল,  সেই তিনিই এ ম্যাচে সবচেয়ে অনুজ্জ্বল ছিলেন। ফলে মাঝমাঠ থেকে যে আক্রমণটা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বলও জোগান দিতে পারেননি। উল্টো মিস হয়েছে একাধিক সুযোগ।

সর্বশেষ খবর