২৬ জুলাই, ২০২০ ১৩:২১

আনিসুজ্জামান ও অন্তরঙ্গ ডুয়ার্স

অন্বিন্দু রায়

আনিসুজ্জামান ও অন্তরঙ্গ ডুয়ার্স

২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি চিলাপাতা জঙ্গলে মুকুলিকা রায়, সমরেশ মজুমদার, ডা. আনিসুজ্জামান ও সিদ্দিকা জামান (বাঁ থেকে)

সালটা ২০০৯, ১৯শে অক্টোবর। বহুকালের তাড়িত সহজাত আবেগ অব্যক্ত ব্যঞ্জনায় বিমুক্ত হয়ে ডানা মেলেছিল সেদিন। পিতৃপুরুষের প্রণম্যভূমি এবং আমার সযত্নে লালিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অন্তরের টান সপরিবারে আমাকে টেনে আনে ঢাকায়। এক স্বপ্নিল আবেশে আনত মস্তকে ভূমি স্পর্শ করে আমি ধন্য হলাম ওইদিন। অস্ফুটে বলে ফেলি, “বাংলার মুখ দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।”

সমরেশদার ভূমিকা এ ব্যাপারে অনস্বীকার্য। গন্তব্যের ঠিকানা, দর্শনের কেন্দ্রগুলি এবং কখন কীভাবে যাব, সবকিছুর আয়োজক আমার দাদা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরেই দাদার নির্দেশ অনুসারে তাঁর অত্যন্ত স্নেহভাজন ‘জামান-ভাই’ তাঁর নিজস্ব বাহনসহ আমাদের সাত দিনের ভ্রমণসূচি নিপুণভাবে ছকে দিলেন। উঠলাম ঢাকা ক্লাবে; অর্থাৎ ঢাকার কেন্দ্রস্থলে। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আরেকদিকে রমনা। ছোটবেলায় রমনা ময়দানের গল্প কত শুনেছি মায়ের কাছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সম্মেলন তখন হতো সেখানে। আমার বাবা-কাকার ভবিষ্যৎ গড়ে উঠেছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলে।

আমি যেন তাদের উপস্থিতি মুহূর্তে প্রত্যক্ষ করতে পারলাম। আর শেকড়ের টান কাকে বলে প্রতিটি শিরায় শিরায় আশ্চর্যজনকভাবে অনুভব করলাম। সমরেশদা, অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, সংক্ষিপ্ত পরিচয়লিপি দিয়েছিলেন সেই মানুষটির। বলেছিলেন, আমাদের ঢাকা ক্লাবে সাময়িক বাসের ব্যবস্থাপক তার সেই পরম শ্রদ্ধেয় দাদার কিছু কথা। ঢাকা ক্লাবে নিজেদের ঘরের গোছগাছ সম্পূর্ণ করে সন্ধ্যাবেলা নিচের রেস্তোরাঁয় নেমে এলাম। খাদ্যের নির্দেশ দিয়ে সপরিবারে অপেক্ষা করছি। দেখতে পেলাম এক সৌম্য দর্শন মানুষকে, পাজামা-পাঞ্জাবি পরিধানে, তীব্র ব্যক্তিত্বের আকর্ষণ নিয়ে ধীর পদক্ষেপে কাছে এগিয়ে এলেন। পরিচয় প্রদান করলেন। নমস্কার, প্রতি নমস্কার এবং শুভেচ্ছা বিনিময় সমাপন হলে স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বললেন, ‘সমরেশ আমায় সব বলেছে। এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো আপনাদের? কোনো প্রয়োজন হলে বলবেন, একটুও দ্বিধা করবেন না।' এরপর বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতায় আমরা অনেকটা সময় কাটিয়ে দিই। শ্রদ্ধেয় আনিস-দা, অর্থাৎ আবু তৈয়ব মহম্মদ আনিসুজ্জামানের সঙ্গে সেটাই আমাদের প্রথম পরিচয়। সাত দিনের বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে অজস্র সুখস্মৃতি নিয়ে অবশেষে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন। কিন্তু মনে দাগ রেখে গিয়েছিল সেই সুন্দর সন্ধ্যা এবং পরিবেশের উজ্জ্বলতা!

পরবর্তীতে আনিস-দার খোঁজখবর রেখেছি বটে, কিন্তু প্রত্যক্ষ যোগাযোগ সেভাবে ঘটেনি। খবর রাখতাম সমরেশদার মাধ্যমে। এরপর এলো ২০১৪ সাল। ভারত সরকার দ্বারা আনিস-দাকে ‘পদ্মভূষণ’ প্রদান আমাকে ভীষণভাবে অভিভূত করেছিল। তখন থেকে আনিস-দার বিষয়ে জানা ও বোঝার আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। ২১ শের ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসভাজন এবং নবগঠিত বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ; শত কর্মকাণ্ডে মহিমান্বিত মানুষটির পরিধি যে কী বিশাল সেই ব্যুৎপত্তির হদিস পেতে অতলান্তে যাবার চেষ্টা করেছি বটে তবে বিশেষ কৃতবিদ্য হতে পারিনি।

কথাটা চলছিল অনেক দিন ধরে। তবে ২০১৮ সালের শেষের দিকে হঠাৎ সমরেশদা আমার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করলেন সরাসরি। ওনার স্বপ্নের উত্তরবঙ্গকে তার মতো করে শ্রদ্ধেয় আনিস-দাকে তিনি একবার চেনাতে চান। সেই সবুজের সমারোহ, গালিচা বিছানো চা বাগান, প্রাণের আংরাভাসা, ডুডুয়া নদী, ডুয়ার্সের গহিন অরণ্য অথবা মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি। যেখানে অনির অনিমেষ হয়ে ওঠা, অর্জুন মেজরকে নিয়ে যে অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ায় সুযোগ পেলেই, অথবা দীপার দীপাবলি হয়ে ওঠা চিরপরিচিত সেই চা বাগান। আমি সাগ্রহে আমন্ত্রণ জানালাম আনিস-দা ও শ্রদ্ধেয়া বৌদি সিদ্দিকা জামানকে।

৭ই জানুয়ারি, ২০১৯। আমি ও আমার স্ত্রী রাখী বাগডোগরা থেকে আনিস-দা, বৌদি ও সমরেশদাকে নিয়ে রওনা হলাম ডুয়ার্সের পথে। রওনা দেবার আগে সামান্য কিছু খাদ্য গ্রহণ করলাম বাগডোগরায়, আমার এক বন্ধু ও তার স্ত্রীর সাহচর্যে। ওদিকে সমরেশদার তখন আবার ভীষণ তাড়া। আমাদের বাগানে পৌঁছতে হবে যত শিগগিরই সম্ভব। কারণ এই দুই-তিন দিনের সফরে যতটা পারা যায় দাদা ও বৌদিকে দেখাতে হবে ডুয়ার্সের রূপ; চেনাতে হবে এ অঞ্চলের মানুষদের। এদিকে আমি আবার করে ফেলেছিলাম এক কাণ্ড! জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত মাল মহকুমা শহরটি অত্যন্ত সাজানো-গোছানো। পরন্তু বঙ্গ সংস্কৃতিমনস্ক জনসাধারণের বসবাস এ অঞ্চলকে সুখ্যাতি দিয়েছে অনেক আগে থেকেই। এ ছাড়া মাল পৌরসভার পৌরপ্রধান শ্রী স্বপন সাহা আমার খুব কাছের মানুষ। স্বপনের আন্তরিক উদ্যোগে এবং তাঁর কিছু সংস্কৃতিবান সদস্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঢাকার আদলে ‘ভাষা শহীদ চক্’ প্রতিষ্ঠা হয় বেশ কিছুদিন আগে এখানকার বিখ্যাত ‘ক্যালটেক্স’ মোড়ের পুনর্গঠনের সময়ে। স্বপনকে প্রস্তাব দেওয়া মাত্র সে লুফে নিল। বলল, “যে মানুষটি মাতৃভাষাকে ‘৫২’র ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করলেন, তাকে এত কাছে পেয়ে কিছুতেই ছাড়তে পারব না। তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর পদধূলিতে আমরা ধন্য করতে চাই এই ভাষা শহীদ চক্। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও তাঁর মহীয়সী সহধর্মিণীকে আমরা পৌরসভার তরফ তথা মালবাজারবাসীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানাব। উপরি পাওনা প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের উপস্থিতি। দাদা, আপনি ব্যবস্থা করুন।”

এ ব্যাপারে অঞ্চলের বঙ্গ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক শ্রী চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব ন্যস্ত করা হলো।
সময়াভাবে সমরেশদা প্রথমে আগ্রহ প্রকাশ না করলেও আনিস-দার অনুমতি মেলাতে অবশেষে সম্মতি জানান। আমার সে কী আনন্দ! এ বাংলার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক ইতিহাস গড়ায় সহযোগিতা দানের আনন্দ। ভরদুপুরে অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে অনুষ্ঠিত হলো মাল পৌরসভার তরফে ও শ্রী স্বপন সাহার নেতৃত্বে। আনিস-দা, বৌদি ও সমরেশদা সংবর্ধিত হলেন। তাঁদের আন্তরিক শুভেচ্ছাবার্তা এবং বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন মালবাজার অধিবাসীদের নাড়িয়ে দিয়ে এক ঐতিহাসিক কালজয়ী ঘটনার সাক্ষী করে রাখল এই ‘ভাষা শহীদ চককে।’

পরবর্তী সময়ে ২১শের ভাষা শহীদ দিবসে স্বপনের অনুরোধে ও আনিস-দার পুত্র আনন্দ জামানের সহযোগিতায় আনিস-দা উনার কয়েকটি অন্তরের বাণী পাঠিয়েছিলেন ওই স্মৃতি স্থানটির উদ্দেশ্যে। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম উনার সেই আন্তরিকতার দৃষ্টান্ত অনুধাবন করে। বুঝলাম প্রকৃত বড় মাপের মানুষ যারা হন, কোনো ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা তাঁদের কাছে অবহেলিত হয় না। সেদিন থেকে আনিস-দাকে অনেক উচ্চাসনে স্থান দিয়েছি। উনার আন্তরিকতার ছোঁয়ায় কেন জানি মনে হয়েছিল, তাঁর কাছে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একাধিক পুরস্কার, যথা বাংলা একাডেমি সাহিত্য, একুশে পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার, অথবা ভারতের অসংখ্য সম্মাননা, দু-দুবার আনন্দ পুরস্কার, রবীন্দ্র ভারতীর ডি-লিট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী এবং যার সর্বশেষ পদ্মভূষণ পাওয়া, এসবের সঙ্গে মালবাজারের মতো মফস্বল শহরের সংবর্ধনা যেন তাঁর কাছে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আনিস-দার মতো উচ্চ হৃদয়ের মানুষরা বোধহয় এমনই হয়ে থাকেন। যাকে বলে প্রকৃত আদর্শবান, অনাসক্ত জীবন ধারণে বিশ্বাসী, নিরলস কর্মযোগী ও মানুষের সেবাই যাদের জীবনের একমাত্র ব্রত, যারা মনে করেন “সবার উপর মানুষ সত্য, তার উপরে নাই।”

ড. আনিসুজ্জামান তাদেরই একজন। আনিস-দার প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হলাম।

এদিকে, সমরেশদা- অনবরত তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, “বাড়ি চলো, বাড়ি চলো!” ফলত খাদ্যের আয়োজন করেও আয়োজকরা আতিথ্যদানে বঞ্চিত হলেন। অবশেষে অতিথি বিদায়ের কয়েকটি মিষ্টির বাক্সের ওপর ভরসা করে প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তায় পাড়ি জমালাম। বুঝতে অসুবিধা নেই যে সবারই পেট চোঁ চোঁ করছে। কারণ সেই সাতসকালে কলকাতা ছাড়তে হয়েছে উনাদের। কিন্তু সমরেশদার অনুশাসনে কারও কিছু বলার বা করার ছিল না তখন। এদিকে, পথিমধ্যে আরও এক সমস্যা। কোনো এক রাজনৈতিক নেতার আগমন বার্তায় পথিমধ্যে ঠায় দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হলো। অগত্যা সেই মিষ্টির বাক্সগুলোই কিছুটা হলেও আমরা পাঁচজন ও আমাদের সারথিকে অর্ধাহারের যাতনামুক্ত করল। বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। বুঝলাম তৎক্ষণাৎ খাদ্য গ্রহণ না করলে আনিস-দা ও বৌদি কাহিল হয়ে পড়বেন। আমার স্ত্রীর তৎপরতায় বাড়িতে ঢুকেই কিছু গলাধঃকরণ করতে পারলাম। এত কিছুর পরেও আনিস-দা এবং বৌদির মুখে হাসি লেগেছিল। আমরা লজ্জিত বোধ করলেও তাদের কাছে এসব অতি তুচ্ছ ব্যাপার!

কিন্তু ততক্ষণে টের পেলাম, সমরেশদা নিজেও পেটের টান অনুভব করেছেন হাড়ে হাড়ে। অনুশোচিত মন্তব্য করে ফেললেন, “আমার জন্য আনিস-দা ও বৌদির সারা দিন উপোস গেল!” কিন্তু পথে আনন্দ হয়েছে প্রচুর। যদিও সমরেশদার মননশীল নিদ্রাযাপনের (সমরেশদার ভাষায়) কোনো খামতি ছিল না এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে।

সাধারণত সমরেশদা বছরে যে কয়বার আমার কাছে আসেন তখন উনার প্রিয় ছোট ঘরটিতে বসে সারা দিনের লেখালেখির পাট চুকোবার পর সান্ধ্যকালীন এক জমজমাট মজলিশ বসে আমাদের প্রাত্যহিক নিয়মে। এ আমাদের সুদীর্ঘ দুই দশকের অভ্যেস। নিপাট আড্ডা, সাহিত্যচর্চা, গানবাজনা, খানাপিনা সবই চলে তখন। কিন্তু সমরেশদার নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষণীয়। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব মিটিয়ে রাত ১০টার মধ্যে বিছানায় যাবেনই যাবেন। আবার ভোর ৬টার মধ্যে লিখতে বসে যাবেন প্রাতঃক্রিয়া ও চা পান পর্ব মিটিয়ে। এত বছরে আমি এর অন্যথা হতে কখনো দেখিনি। সন্ধ্যার বাধা নিয়মে বসে পড়েছি আমরা পাঁচজন। আনিস-দা, বৌদি, সমরেশদা, আমি এবং আমার স্ত্রী। মন খুলে কত গল্প, বিভিন্ন শিক্ষামূলক আলোচনা, বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ও আমার স্ত্রী রাখী সেই অমূল্য আলোচনার কেবল অংশীদারই ছিলাম না, বহুজ্ঞানের ঋদ্ধ হয়েছি সেই সন্ধ্যায়। দুই খ্যাতিমান পুরুষ তাদের বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে গমনের মধ্য দিয়ে জ্ঞানের শিখরে আমাদের উন্নীত করেছিলেন সেদিন। দুই ব্যক্তিত্বের পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের অনেক কিছু নীরবে বুঝিয়ে দিয়েছিল।

উদাহরণস্বরূপ, শুনেছি আনিস-দা বলছেন, ‘‘সমরেশ, বাংলাদেশের অনেক সাহিত্যপ্রেমী মানুষ, যারা তোমার ভক্ত, আমার মাধ্যমে তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে উদগ্রীব। জানো, এতে আমি কী ভীষণ গর্ববোধ করি! তোমার আমার নৈকট্যের বিষয় সম্ভবত তাদের অজানা নয়!”

অপরদিকে সমরেশদা বলছেন, ‘‘কী যে বলেন দাদা, আপনার পরিচয়ে বাংলাদেশের কত মানুষ আমাকে চিনল, জানল!’’ সমরেশদার চোখেমুখে তখন ঝরে পড়তে দেখেছি জ্যেষ্ঠের প্রতি কি পরম শ্রদ্ধা! কখনো ছাত্রের মতো শুধোচ্ছেন, ‘‘আচ্ছা দাদা, এই বাংলা বানানটা ঠিক কী হবে বলুন না?’’ ভাবা যায়? দুই বাংলার একজন প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক কোন আসনে আনিস-দাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তেমনি আনিস-দার মধ্যে তাঁর কনিষ্ঠের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও স্নেহের প্রতিফলন আমি পুরোমাত্রায় লক্ষ্য করেছি। তা না হলে কনিষ্ঠের ভালোবাসার আহ্বানে এক কথায় ওই অশক্ত শরীরে কলকাতা হয়ে সুদূর ডুয়ার্সে সস্ত্রীক পাড়ি জমাতে পারতেন না। ১৪ মে সন্ধ্যা ৬টায় সমরেশদা যখন আনিস-দার অন্তিম সংবাদ মোবাইলের মাধ্যমে প্রথম আমায় জানালেন, তখন তার কণ্ঠরোধ হয়ে আসা স্বরক্ষেপণে বুঝতে পেরেছিলাম আনিস-দার প্রতি শ্রদ্ধার গভীরতা কোথায় লুকিয়ে আছে।

সময় খুবই কম। আগামীদিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারির ভ্রমণসূচি তাই আগাম বানিয়ে রাখা হলো। সকাল বেলা প্রাতরাশের পর সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার আমাদের বাংলোর লনে আয়োজিত হলো। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রবীণ সাংবাদিক শ্রীজ্যোতি সরকার আনিস-দার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিলেন। আগের দিন আনন্দবাজার পত্রিকা ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম আনিস-দাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এ ছাড়া শ্রী পার্থসারথি রায় ‘ঠিকানা’ আনিসুজ্জামান জীবন ও সাহিত্যের রচয়িতা, আসেন আনিস-দাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে।

সমরেশদা আবার তাড়া দিতে লাগলেন। তাই পূর্বপরিকল্পনা মতো বেরিয়ে পড়লাম ‘চিলাপাতা’ জঙ্গল পরিদর্শনে। গভীর জঙ্গলে এক গা ছম্ ছম্ করা পরিবেশে লুকিয়ে আছে ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। ‘নল রাজার গড়’ নামে বহুল প্রচারিত এই দুর্গ। যা কিনা কোচবিহার মহারাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও তাঁর সুযোগ্য ভ্রাতা দুর্ধর্ষ সেনাপতি চিলা রায় দ্বারা একদা পরিচালিত। ভুটান রাজার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এই দুর্গের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এতদ্ভিন্ন এই চিলাপাতার জঙ্গল বিশেষ পরিচিতি লাভ করে কোচ রাজপরিবারের মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে। পাশেই আছে এক বিশালাকার বৃক্ষ আঞ্চলিক ভাষায় যার নাম ‘রামগোয়া’ অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য এই গাছের! সামান্য আঘাতেই শরীর থেকে যার ক্ষরণ ঘটে। তার বর্ণ মানুষের রক্তের মতো ঘন লাল! সমস্ত জঙ্গল খুঁজলে এই প্রজাতির গাছ মাত্র কয়েকটি পাওয়া যাবে। আনিস-দা ও বৌদি বিহ্বল দৃষ্টিতে সব উপভোগ করলেন এবং কিছু প্রশ্ন রাখলেন সেই দুর্গ ও বিচিত্র গাছটি সম্বন্ধে। এ জঙ্গলের বাসিন্দা মূলত হাতি, চিতা, কাইসন, গণ্ডার, হরিণ, নানা প্রজাতির সরীসৃপ ও পক্ষীকুল। এ বেলায় আমাদের হস্তীদর্শন ভিন্ন আর কিছুই কপালে জুটল না।

দ্বিপ্রাহরিক ভোজন পর্ব শেষে সামান্য বিশ্রাম। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আনিস-দা ও বৌদির প্রচণ্ড উদারতা লক্ষ্য করেছি। প্রতিটি খাদ্যই খুব আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। বুঝলাম, মাংস হচ্ছে দাদার অতি প্রিয় বস্তু। আমার সহধর্মিণী এ বিষয়গুলি দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। ফলে বৌদির আস্থাভাজন হতে বেশি সময় লাগেনি।

শ্রীবিমল দেবনাথ, জলদাপাড়া জঙ্গলের একজন উচ্চপদস্থ বন অধিকারিক এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। তাঁর উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় এবার আমরা সবাই দুটি গাড়িতে বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গল দর্শনে। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। যা আমাদের চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমনিতেই জঙ্গল সমরেশদাকে ভীষণভাবে টানে। এর মূলে দাদার শৈশব। আর দাদার প্রিয় তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম বিভূতিভূষণের অরণ্যজীবন, বর্ণনা এবং বিশ্লেষণ দাদাকে বরাবর অনুপ্রাণিত করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি তা উপলব্ধি করেছি। তা না হলে এখনো এই বয়সে পুরুলিয়ার ভালোপাহাড় এবং জঙ্গলে ছুটে ছুটে যেতেন না। সমরেশদাকে নিয়ে অতীতে জঙ্গল ভ্রমণের বহু অভিজ্ঞতা আমার আছে। ভবিষ্যতে সেটা অন্য কোনো বিষায়ানুসঙ্গে না হয় উপস্থাপিত করা যাবে। প্রিয় দাদা বৌদিকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান দেখাতে পারার আত্মতৃপ্তি সেদিন সমরেশদার চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল। জলদাপাড়ার প্রকৃতি এত বড় মানুষদের পেয়ে তার নানা রূপের ডালি নিয়ে যেন আত্মপ্রকাশ করেছিল। দেখেছিলাম জঙ্গলের প্রাণভোমরা তোর্ষা নদীর জলে দুপুর রোদের সোনা ঝিকিমিকি; আবার সেখানেই দেখেছি জল ছুঁয়ে বনানীর কোলে ঢলে পড়া, অস্তরাগে দিগন্ত রাঙিয়ে যাওয়া সূর্যাস্তের অনির্বচনীয় নৈসর্গিক রূপ।

মহাদ্রুম থেকে সামান্য লতাগুল্মের মনোমুগ্ধ শৈল্পিকরূপ, পাখির কলতান, জঙ্গলের ভিতর থেকে ভেসে আসা কত রকমের অজানা ধ্বনি, প্রতিধ্বনি চরম আবেশে আচ্ছন্ন করে তোলে আমাদের। সেদিন ওই জঙ্গলের প্রাণীকুল এতটুকু কার্পণ্য দেখায়নি তাদের অমূল্য দর্শন স্থানে। হাতি, গণ্ডার, বাইসন, সম্বর, কত প্রজাতির হরিণ আমাদের গাড়ির চারদিকে ঘুরে-ফিরে দাদা বৌদিকে স্বাগত বার্তা জানিয়ে গেছে তাদের ভাষায়। তবে বন্ধু বিমলের একটাই আফসোস থেকে গেছে, ওইদিন অনেক চেষ্টা করে জঙ্গলের গভীরতম অঞ্চলে গিয়েও ব্যাঘ্র দর্শন করানো গেল না দাদা বৌদিকে। বলল, পরেরবার দেখিয়ে ছাড়ব।

তবে যা দেখেছি ওতেই আমাদের সবার মন তৃপ্তিতে ভরে গিয়েছিল। জঙ্গলকে এত নিকট করে ফেলার আনন্দই আলাদা। আনিস-দা ও বৌদির সে সময়ের শারীরিক ধকল আমরা অনুধাবন করলেও উনাদের তৃপ্তির হাসি আমাদের সুখানুভূতি দিয়েছিল। ভ্রমণ শেষে আমাদের শত আপত্তিকে পাত্তা না দিয়ে বন্ধুবর বিমল ও তাঁর স্ত্রী শেষ পর্যন্ত জলযোগ না করিয়ে ছাড়ল না। এর সঙ্গে দিয়ে রাখল দাদা বৌদিকে সপরিবারে আগামীদিনে আসার আমন্ত্রণ বার্তা। বিমল ও তাঁর স্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সন্ধ্যাবেলা ফিরে এলাম নিজেদের কুঠিতে।

আগেই লিখেছি সূর্য পাটে গেলে সন্ধ্যাকালীন আড্ডা সমরেশদার চাই-ই চাই। আজো তার অন্যথা হলো না। এ ছাড়া দাদা বৌদির সম্মানে কিছু আয়োজন তো অবশ্যই দরকার। অবশেষে ঘরোয়া গানের আসর বসানো হলো। মুখ্য শিল্পী চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, যিনি সংগীত শিক্ষকও বটে। সুদূর মালবাজার থেকে চলে এসেছেন নজরুলগীতির সম্ভার নিয়ে। আড্ডা, তার মাঝে মাঝে সংগীত পরিবেশন, বেশিরভাগই উচ্চমার্গের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা। আনন্দঘন পরিবেশে চারদিক বিমূর্ত হয়ে উঠল। তবে সহসা তাল কাটল। খবরটা এলো ঢাকা থেকে। দাদার পুত্র আনন্দ জানাল, দাদার এক পরম আত্মীয়ার বিয়োগ বার্তা। দাদা বৌদি বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। স্থির হবার পর পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করলেন আমাদের সঙ্গে। অন্তিমযাত্রার বিষয়ে আলোচনা করলেন আনন্দর সঙ্গে। ফেরার টিকিটের ব্যাপারে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তবে তা অচিরে মিটিয়ে ফেলা গেল। সকলে রাতের খাওয়া-দাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে ফেললাম।

এরপর শুরু হলো বৌদির গোছগাছ পর্ব। কারণ পরদিন আনিস-দা, বৌদি ও সমরেশদার কলকাতা ফেরার পালা। এবার আনিস-দাকে ছেড়ে বৌদি প্রসঙ্গে কিছু না বললেই নয়। এমন উদার হৃদয়ের মহীয়সী রমণী জীবনে আমরা খুব কম দেখেছি। উচ্চশিক্ষিতা, রুচিশীলা, ব্যক্তিত্বময়ী, সর্বোপরি স্বয়ংসম্পূর্ণা। আমাদের প্রতি তাঁর মাতৃত্বসুলভ কমনীয় ব্যবহার সহজেই ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ফেলে চিরদিনের মতো। স্নেহ ও মমতা বোধ নিশ্চিতভাবে তাঁর জন্মগত। শুধু বাহ্যিক শিক্ষা দ্বারা এই মহানুভবতা অন্তরে ধারণ করা যায় না, এ আমার দৃঢ়বিশ্বাস। ঢাকায় ফিরে যাবার পর বৌদির সঙ্গে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে বা এখনো হয়, বিশেষত আমার স্ত্রীর সঙ্গে। তখন মনে হয় যেন কোনো পরমাত্মীয়ার কাছে জমানো মনের কথা বলছি! এ ছাড়া আমাদের এখানে থাকাকালীন আনিস-দাকে যেভাবে সামলে নিয়ে উনি চলেছেন তা যে কোনো মহিলার কাছে উদাহরণস্বরূপ। আমাদের বাগানের ছোট ছোট বিষয় তাঁর নজর এড়ায়নি। তিনি নিজে স্বাধীনচেতা ও স্বাবলম্বী এবং একই পাঠ আন্তরিকভাবে আমার স্ত্রীকে দিয়ে গেছেন। পূর্বকথা অনুযায়ী ঢাকায় পৌঁছে যত্নসহকারে ঢাকার বিখ্যাত ‘বাখরখানি’ তৎসহ সুস্বাদু পনির উনার এক আত্মীয়ার মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের কলকাতার বাসস্থানে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ফোনে আমার স্ত্রীকে খাদ্যটির প্রস্তুত প্রণালি শিখিয়েছেন নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এমন যোগ্য সহধর্মিণীর সাহচর্য ও সহায়তা আনিস-দার চলার পথ অনেক সুগম করেছে।

পরের দিন অর্থাৎ ৯ই জানুয়ারি তাড়াতাড়ি প্রাতরাশ সেরে ফেলা হলো। এবার ফটো তোলার পর্ব এবং আরও কিছুক্ষণ মন খুলে নিছক গল্প। দাদা বৌদি দুজনেই আশ্বাস দিলেন শিগগিরই উনারা আবার আমাদের এখানে আসার পরিকল্পনা করবেন পুত্র আনন্দ ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে। যাবার আগে প্রাণ খুলে আমাদের আশীর্বাদ করলেন। এ যে কী পরম প্রাপ্তি বলে বোঝানো যাবে না।

সমরেশদার সময়ানুবর্তিতা যে কোনো মানুষের শিক্ষণীয়। বৌদির কাছে জেনেছি, আনিস-দাও সময় মেনে চলার ব্যাপারে বরাবরই কঠোর। যে কোনো অনুষ্ঠানে সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে যেতে উনি পছন্দ করেন। এ ব্যাপারে আমি ঠিক উল্টো রাস্তায় হাঁটি এবং তার জন্য সমরেশদার কাছ থেকে বহুবার বকুনি জুটেছে কপালে, তবু আজো শোধরাতে পারিনি নিজেকে। স্বভাবসুলভ মতো আবার বেরিয়ে পড়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলেন সমরেশদা। এবার বাগডোগরা হয়ে কলকাতা ফেরার পালা। কলকাতা পৌঁছে এক দিন বাদে আনিস-দাদের ফিরতে হবে ঢাকায়। প্রচুর কাজ জমে আছে যে সেখানে। ইচ্ছা থাকলেও এ কারণে দাদা বৌদিকে আর কয়েকটা দিনের জন্য ধরে রাখা গেল না। পরে শুনেছি কলকাতায় পৌঁছেও আনিস-দার এক-দুটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হয়েছিল। ৮১ বছর বয়সের এমন ক্লান্তিহীন স্থিতধী মানুষ অসুস্থ শরীরেও হাসিমুখে কী করে সবকিছু সামলান ভাবলেও অবাক লাগে! এজন্যই উনি ছাত্র দরদি প্রিয় শিক্ষক (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশায়) জাতীয় অধ্যাপকের সম্মানে ভূষিত, এক প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক, মানবদরদি বিশ্ববরেণ্য মানুষ ড. আনিসুজ্জামান। দেশ ও কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক অধরা জগতে উনার স্থান। আমরা তাঁর নাগাল পাব কী করে? উনি তো ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর।’ সারাজীবন তাই দূর থেকেও উনাকে বোঝার ও জানার চেষ্টা চালিয়ে যাব। পথে পথে উনার ছড়িয়ে দেওয়া ‘কালনিরবধি’ বা ‘বিপুলা পৃথিবী’র মতো মণি-মুক্তো থেকে জুগিয়ে নেব মুখের ভাষা। উনার সারাজীবন ধরে লালন করা বিশ্বমানবতা বোধটুকু ধারণ করব অন্তরের অন্তস্থলে। উনাকে শ্রদ্ধা জানানোর সার্থকতা এভাবেই খুঁজে পাব।

আনিস-দা অতীতে উত্তরবঙ্গে এসেছেন বটে, তবে এবারকার আগমন মূলত চা বাগানকে কেন্দ্র করে, বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ এবং এখানকার মানুষজন ও তাদের লোকসংস্কৃতি আরও গভীরভাবে জানা। ১৯ শতকের শেষভাগে ডুয়ার্সে ইংরেজদের দ্বারা চা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। তারপর ক্রমবিকাশের মাধ্যমে তখনকার অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে কিছু সুচিন্তিত মতামত আনিস-দা আমাদের কাছে তুলে ধরেন। দেড়শ বছর আগে ছোট নাগপুরের আদিবাসী জনজাতি ব্রিটিশ শাসনের মধ্যে জীবন বাজি রেখে ডুয়ার্সের জঙ্গল কেটে কীভাবে প্রতিষ্ঠা করে একের পর এক চা বাগান তার ইতিহাস নিয়ে কত মনোগ্রাহী আলোচনা হয় সে সময়। আমাদের সুভাষিণী চা বাগানে সবুজের সমারোহ, প্রবহমান তোর্ষা নদীর কুলকুল ধ্বনি, নদীর পশ্চিম পাড়ের ‘বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, উত্তরে ভুটান পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় বরফের শিরস্ত্রাণ, মাঝে মধ্যে শ্বেতশুভ্র পুঞ্জীভূত মেঘরাশির উজান বেয়ে যাওয়া আনিস-দাকে মোহাবিষ্ট করে তোলে। হয়তো বুঝতে চেয়েছেন ইংরেজরা কী কারণে দ্বিতীয় স্কটল্যান্ড বানাতে চেয়েছিল উত্তরবঙ্গের চা বাগান অঞ্চলকে! আমরা সবাই আনিস-দার জীবন বোধের অভিব্যক্তির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করেছি আন্তরিকভাবে।

কলকাতা পৌঁছে আনিস-দা উনাদের পৌঁছানোর সংবাদ দিলেন ও বললেন, ‘‘তুমি ও রাখী ভালো থেকো। আবার দেখা হবে।’’

কিন্তু আর দেখা হলো কই? আগলে রেখেছি ঢাকা থেকে আনা তাঁর বহুমূল্য উপহারখানি। যা গায়ে স্পর্শ করলে প্রিয় আনিস-দা জাগরূক হয়ে উঠবেন বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: বর্তমানে ডুয়ার্সের চা বাগানে কর্মরত

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর