৮ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:৪৯

প্রতিদান

রাহিতুল ইসলাম

প্রতিদান

রাহিতুল ইসলাম

অফিসে প্রথম দিন। কোনো চেনা লোক নেই, দুরু দুরু বুকে সামনের সারি অতিক্রম করে নিজের ডেস্কের দিকে যাচ্ছিল মিলন। অফিসটা গোছানো খুব। কাজের পরিবেশও ভালো। এতো ঝকঝকে তকতকে দেখেই কেন যেন নিজেকে এই অফিসের সঙ্গে ঠিক মানানসই লাগে না মিলনের। 

সে যে শার্ট পরে এসেছে, তার নিচের দিকটায় ছোট্ট একটা ফুটো। সেটা খুব যত্ন করে প্যান্টের ভেতরে গুঁজে রাখা। প্যান্টটাও মিলন সকালেই মোড়ের দোকান থেকে লন্ড্রিওয়ালাকে অনুরোধ করে দাঁড়িয়ে থেকে ইস্ত্রি করে নিয়ে এসেছে। 

অফিসে নিজের ডেস্কে বসে সে যখন অন্যদের তুলনায় নিজেকে সবদিক দিয়ে অযোগ্য ভাবছিল, তখনই একটা পরিচিত মুখ চোখে পড়ল। পলাশ ভাই না? হ্যাঁ, তাই তো! পলাশ তার দূরস্পর্কের চাচাতো ভাই। মিলন শুনেছে সে বড় অফিসে চাকরি করে। এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। পলাশকে দেখে অকূল পাথারে সে যেন কূল পেল।

পলাশ এখানে চাকরিতে ঢুকেছে দুই বছর হতে চলল। আর মিলন জয়েন করেছে মাত্রই।

প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হচ্ছিল মিলনের। কিন্তু অল্পদিনেই সে প্ররিশ্রম আর সততার কারণে বসদের সুনজরে চলে আসে। বছর বছর প্রমোশন হয় তার। বোঝা যাচ্ছিল পলাশকে ছাড়িয়ে সে আরও ওপরে উঠে যাবে অল্পদিনে। পলাশ এসব কারণে তাকে হিংসার চোখে দেখলেও মিলন কিন্তু পলাশকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করত। নানা সময়ে বুদ্ধি পরামর্শ চাইতে যেত। যদিও কখনো ভালো পরামর্শ সে পেত না। 

অফিসে একসময় পলাশের চেয়ে মিলনের গুরুত্ব বেড়ে গেল। মিলন এর-ওর কাছে শুনতে পায়, পলাশ তার নামে বসদের কাছে বানিয়ে বানিয়ে নানা মিথ্যে কথা বলে। বসদের কান ভারি করে। 

পলাশের ছোট ভাই শিমুল একদিন মিলনকে একটা চাকরির কথা বলে। আপন ভাই যখন তাকে হেল্প করতে পারছে না, তখন মিলনই এগিয়ে আসে। মিলনের রেফারেন্সে চাকরি হয় তার। কেননা, ততদিনে পলাশের চেয়ে মিলনকেই অফিসের বসরা বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করে। 

কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! যাকে সে চাকরি দিল, সেই শিমুলই বড় ভাই পলাশের সাথে মিলে মিলনের ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। কথায় বলে, লেগে থাকলে সাফল্য আসেই। পলাশ আর শিমুলও সফল হলো। তারা নানা চক্রান্ত করে মিলনের চাকরিটা খেতে পারল। 

মিলন দুঃখ পেল এই ভেবে, যে শিমুলকে তার বড় ভাই চাকরি দিল না, তাকে চাকরি দিয়েই নিজের চাকরি হারাতে হলো। উপকারের এই প্রতিদান দিল সে! মিলন এরপর ভেবেছিল অনেক হয়েছে, সে আর কারো উপকার করবে না। কিন্তু স্বভাব কি আর অত সহজে যায়? মিলন মানুষের দুর্দশা বা প্রয়োজন দেখলে বসে থাকতে পারে না। অনেক মানুষের দোয়াও ছিল মিলনের ওপর।

পাঁচ বছর পরের কথা। চাকরি যাবার পর মিলন ঢাকায় ব্যবসা শুরু করে। সামান্য পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও আইডিয়ার কারণে এখন সেই ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেছে। তার ওখানে এখন পঁচিশজন স্টাফ আছে। এই লোক দিয়ে সে পুরোপুরি সামলাতে পারছে না। আরও লোক দরকার। 

বেশ ভালো স্যালারি দেয় মিলন। একই ধরনের অন্য অফিসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ইন্টারভিউয়ের একদম শেষ ধাপে, অর্থাৎ ভাইবা পরীক্ষায় মিলন নিজেই বোর্ডে থাকে। ইন্টারভিউ বোর্ডে তৃতীয় প্রার্থী যখন ঢুকল, মিলন চমকে গেল। শিমুল। যার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছিল। অবশ্য এটা বোধ হয় ভালোই হয়েছিল। না হলে কি তার নিজের অফিস হতো? ক্ষতি করতে গিয়ে শিমুল কিন্তু পরোক্ষভাবে তার উপকারই করেছে। 

বোর্ডে যথারীতি ফর্মাল কথোপকথন হলো। অন্যান্য স্টাফদের সামনে সে যে পরিচিত সেটা প্রকাশ করল না শিমুলও। ইন্টারভিউ শেষ করে বাইরে একটা কফি হাতে নিয়ে মিলন ভাবতে লাগল, শিমুল ছেলেটা কাজে দক্ষ, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু সে তো বিশ্বাসঘাতক। তাকে কি আবার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে?

লেখক : সাংবাদিক ও লেখক।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর