১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৪:১৮
১২ তম পর্ব

বনবিহারী

আলম শাইন

বনবিহারী

  ধারণা করছি দ্বীপ বনে সাপ আর খেপাটে মহিষ ব্যতিত এখন তেমন কোন ধরনের হিংস্রপ্রাণীর বসতি নেই। বিশেষ করে শেয়াল-কুকুরের কথাই বলছি। সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে মেঘলা মৌজায় পাঁচশতাধিক শেয়াল ও কুকুরের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে দুই হাজারের ওপরে হিংস্রপ্রাণী নিধন করা হয়েছে দ্বীপ বনে। তাই বলা যায় দ্বীপ বন এখন অনেকটাই শেয়াল কুকুরমুক্ত। একেবারেই যে হিংস্রপ্রাণীমুক্ত তা-ও আবার বলা যাবে না, আছে তবে সংখ্যায় তত নয়। ইতোপূর্বে সাঁঝের আঁধার ঘনিয়ে এলেই শেয়াল কুকুরের পাল্টাপাল্টি হাঁকডাকে বনপ্রান্তর কেঁপে ওঠত। এখন আর সে রকম কিছুই শোনা যায় না। হিংস্রপ্রাণীর হাঁকডাকের কারণে আগে বনপ্রান্তর সরব ছিল। এখন নীরব নিস্তব্ধ প্রেতপুরীর মতো লাগছে। অর্থাৎ বনের পশু বনে না-ই থাকলে যা হয় আর কি! এই তো, মাত্র দুই-এক মাস আগের কথা, রাতে বাংলোর ওপর থেকে নিচে একাকী নামতেও ভয় পেতাম, আর এখন দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছি বাংলোর আঙ্গিনায়। বিষয়টা সবার কাছে আনন্দের মনে হলেও আমার কাছে এটি ভালো কোন সংবাদ নয়, এই ভালোটাই আমার কাছে অশনি সংকেত মনে হচ্ছে। আমি শঙ্কিত দ্বীপ বনের অস্তিত্বসংকট নিয়ে, প্ল্যান্টের ভবিষ্যত নিয়েও।

 সেদিনের একটি ঘটনায় আমি খুব চিন্তিত হলাম। ঘটনাটি আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি শঙ্কিত হলাম প্ল্যান্টের ভবিষ্যত নিয়েও। খুলে বলছি সেই কথা।

  রাতের ঘটনা। অফিসের কিছু কাজ নিয়ে বসেছিলাম বাংলোতে। সকালে সাগরমুখী মৌজায় যেতে হবে; থাকতেও হতে পারে দুই-একদিন। তাই রাতের মধ্যেই অফিসের কাজকর্ম সেরে রেখে যেতে চাই। কারণ সামনের সপ্তাহে আবার শিপমেন্ট আছে, দেশের বাইরে ভেষজ কাঁচামাল যাবে, তাই দ্রুত কাগজপত্র ঠিকঠাক করে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও গরমের জন্য কাজ করতে পারছি না; এমনি প্রচণ্ড গরম পড়েছে সেরাতে। ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে গেলাম আমি। হাতের নিচে চাপাপড়া কাগজপত্রগুলোও ভিজে যাচ্ছে ঘামে। বাংলোর ভেতরে থাকাই দায় এখন। পরিশেষে কাজে ইস্তফা টানতে বাধ্য হলাম। কাগজপত্র গুছিয়ে কামরা থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে বসলাম, সেখানেও একই অবস্থা, ঘেমে অস্থির হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে একটু হেঁটে বেড়াতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ততক্ষণে রাত ১০টা বেজে গেছে, এতরাতে দূর কোথাও যাওয়া বা হাঁটাহাঁটি করা ঠিকও হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এদিক-সেদিক না হেঁটে বরং টাওয়ারের ওপরে উঠে বায়ুসেবন করে আসি। খোলামেলা উঁচুতে উঠলে হয়তবা নদীর হাওয়া গায়ে লাগতে পারে। টাওয়ারাটা নদীর পারে, অর্থাৎ বাংলোর কাছেপিঠেই। সুতরাং মহব্বত দয়ালেরও প্রয়োজন নেই। তাই ওকে না জানিয়ে টি-শার্ট গায়ে চাপিয়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে বাংলোর নিচে নামলাম।
  নিচে নামতেই ফুলের গন্ধে আমি বিভোর হয়ে গেলাম। হাস্নাহেনার মনমাতানো গন্ধে বাংলোর আঙ্গিনা মৌ মৌ করছে। সেই গন্ধ নাকে যেতেই আমি পুলকিত হলাম। নিচে ফুলের কড়াগন্ধ যতটা নাকে লাগছে, ওপরে ততটা নয়। মনমাতানো উদাসকরা সেই গন্ধ নাকে টানতে টানতে টাওয়ারের দিকে এগুলাম। টাওয়ারটা সামনেই, অফিস চত্বর থেকে বড়জোর একশোগজ দূরত্ব হবে। রাতবিরাতের জন্য অবশ্য দূরত্বটা কম নয়। তথাপিও হিম্মত নিয়ে রওয়ানা দিলাম টর্চ আর ছোট্ট একটা লাঠি হাতে নিয়ে।
  কাঠের প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে টাওয়ারের ওপর ওঠলাম। গরমে হাঁপিয়ে গেছি ইতোমধ্যে। তাই ওপরে উঠতেই ঘনঘন শ্বাসপ্রশ্বাস বইতে লাগল আমার। সেই শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষীণ শব্দ দ্বিগুণ হয়ে আমার কানে প্রবেশ করছে; সুনশান নীরবতার কারণেই হয়তবা। 
  টাওয়ারে দাঁড়িয়ে আকাশপানে তাকালাম; মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। চন্দ্রকরের প্রখরতা নেই। মেঘে ঢেকে দেওয়ায় রূপালী চাঁদটাকে ধূসর লাগছে; লাগছে দুঃখী দুঃখীও। পরিবেশটা কেমন জানি ভৌতিক ভৌতিক লাগছে, গা ছমছম করছে; ভয় নেই, আবার আছেও, এমনি এক শঙ্কিত অবস্থায় টাওয়ারে ওপর দাঁড়িয়ে আছি আমি। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম গাছের পাতাও নড়ছে না, থমকে আছে ডালপালা; কালবৈশাখীর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সিগন্যাল আছে কীনা জানতে পারিনি এখনো। তবে গুমোট আবহাওয়া ঝড়ঝাপ্টারই আভাস দিচ্ছে; সেটা বুঝতে পারলাম। তাছাড়া এখন কালবৈশাখীর মৌসুম, বিনানোটিশেই যখন তখন কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে। আগে দেখতাম নিদৃষ্ট একটা সময়ে অর্থাৎ শেষ বিকেলে কালবৈশাখী বয়ে যেতে, এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির রুটিনেরও হেরফের লক্ষ্য করছি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এই তিন ঋতুর বাইরে তো এখন আর অন্য কোন ঋতুর আমেজও উপভোগ করা যায় না। তার ওপরে আবার বছরান্তে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তেমনি আজও প্রচণ্ড গরম অনুভব করছি।
  টাওয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেই টের পাচ্ছি নদীতে জোয়ার বইছে, জলস্রোতের মৃদু কুলকুল ধ্বনি কানে ভেসে আসছে নিচ থেকে। বনবাদাড়ে যে কোন ধরনের আওয়াজ শুনলেই কানখাড়া হয়ে যায় আমার। বনজঙ্গলে বাস করতে হলে সবারই এমন সতর্ক থাকা উচিত। যে কোন ধরনের আওয়াজ বা ধ্বনি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হয়। হেলাফেলায় বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদিও টাওয়ারের ওপরে এতটা সতর্কতার প্রয়োজন নেই আমার, তথাপিও সতর্ক সব সময়ের জন্যই আমি।
  সুনসান নীরব নিস্তব্ধতার চেয়ে প্রকৃতির আওয়াজ বেশ লাগছে, তাতে শঙ্কা কেটে গেল কিছুটা। আমি কানপেতে শুনছি ছান্দসিক তালে প্রবাহিত জলতরঙ্গের কুলকুল ধ্বনি। মুগ্ধ, ভীষণ মুগ্ধ হলাম সেই সিম্ফনি শব্দে। আর তাছাড়া বাংলোর তুলনায় এখানে খানিকটা আরামদায়কও। মৃদু হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে নদীর ওপর দিয়ে, যদিও তা মনপ্রাণ শরীর জুড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়; তথাপিও শান্তি। নদীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ধূসরজ্যোৎস্নায় আবৃত নদীর খোলাবুক, দূর থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে এখন। চন্দ্রকর সাদা মেঘে ঢেকে যাওয়ায় নদী এবং বনপ্রান্তরকেও কুয়াচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।
  আমি সেই কুয়াশা সাদৃশ্য চন্দ্রালোকিত বনপ্রান্তরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দেখতে দেখতে হঠাৎ নজর গেল হাতিশালার পূর্বদিকের কলাবাগানের ওপর। বিশাল কলাবাগান; হাজার হাজার কলাগাছ। এক-দুই হাজার নয়, কয়েক হাজার কলাগাছ। দিনে টাওয়ারের উপর থেকে কলাবাগান স্পষ্ট নজরে পড়লেও চন্দ্রালোকিততে এখন ততটা স্পষ্ট নয়। তবে মালুম করা যায় খর্বাকৃতির গাছ-গাছালিতে সমৃদ্ধ স্থানটি।
  কলাবাগানের দিকে নজর পড়তেই আমি একটু হতচকিত হলাম। বাগানের আশপাশে টর্চ জ্বলছে। একটা নয়, কয়েকটি টর্চ পর্যায়ক্রমে জ্বলছে। বিষয়টা কী হতে পারে, ভাবনায় পড়ে গেলাম আমি। এতরাতে প্ল্যান্টের কেউ যে ওখানে নেই, তা আমি নিশ্চিত। কারণ আপাতত এমন কোন কাজও নেই যে, রাতজেগে সেকাজ করতে হবে। আর যদি করতেই হয়, সেটি আমি জানব না, তা কী করে হয়?
  টাওয়ারে দাঁড়িয়েই বিষয়টার অনুসন্ধান করতে লাগলাম। চোরাশিকারি কীনা সেটা নিশ্চিত হতে চেষ্টা করলাম। চোরাশিকারি হলে একই জায়গায় এতটা সময় ধরে টর্চের প্রখরআলো দেখা যাওয়ার কথা নয়। শিকারিদের টর্চের আলো হয় নিভুনিভু। আর তা ছাড়া হরিণের বাস এতটা কাছাকাছিতে নয়, ওরা বনের গহীণে বাস করে। সুতরাং হরিণশিকারি নয় তা নিশ্চিত হলাম, অন্যকিছু হবে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সেই অন্য কিছুটা কি? সেটা নিয়ে চিন্তিত হলাম। কিছুক্ষণ চিন্তা করতেই আমার মাথায় এল ওখানে কলাবাগান ছাড়া আমাদের আর অন্যকোন সম্পদ নেই। কলার কাঁদিই একমাত্র সম্পদ। চোর-টোর হয়ে থাকলে, আমার বদ্ধমূল ধারণা কলার কাঁদি চুরি করতেই ওরা এসেছে। 
   টাওয়ারে অবস্থান করার ইচ্ছে আর নেই, দ্রুত সেখান থেকে নিচে নেমে বাংলোয় চলে এলাম। বাংলোয় এসে দেখলাম মহব্বত দয়াল শোয়ার আয়োজন করছে। ওকে ডেকে বললাম, ‘তৈমুর আলীকে এক্ষুণি আমার কাছে আসতে বলো।’
  তৈমুর আলী হচ্ছে প্রহরীপ্রধান। এতরাতে ওকে তলব করায় মহব্বত দয়াল ভাবনায় পড়ে গেল। কেন তলব করেছি সেই সম্পর্কে জানতে কৌতূহলী হলেও আমার চোখমুখের দিকে তাকাতেই মহব্বত দয়ালের সেই কৌতূহলটা উবে গেল।
  আমার আদেশ বাস্তবায়ন করতে মহব্বত দয়াল তড়িঘড়ি করে অফিসের দিকে ছুটল। অফিস আর বাংলো কাছাকাছি বিধায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈমুর আলীকে নিয়ে আমার কাছে ফিরে এল। তৈমুর আলী খুব ভাবনায় পড়ল, এত রাতে কেন তাকে তলব করলাম, বিষয়টা বুঝে উঠতে পারছে না সেও। অপরাধীর মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। দুইজনই চিন্তিত এখন। বিষয়টা অনুধাবন করে তাদের উৎকণ্ঠা দূর করলাম শীঘ্রই। বললাম, ‘তোমরা পাঁচমিনিটের মধ্যে কলাবাগান যাও, অস্ত্রসহ যাবে। সঙ্গে আরও কয়েকজনকে নিয়ে যাও। আমার মনে হচ্ছে কলাবাগানে চোর পড়েছে, কলারকাঁদি কাটতে এসেছে।’
  এতক্ষণ পর দুইজন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তৈমুর আলী বলল, ‘বড়মিয়া, সবকটাকে ধরে আনব, চিন্তা করবেন না।’
  আমি বললাম, ‘সবকটা ধরতে হবে না, তুমি একটাই ধর। তোমার আগাম কথাবার্তা আমার পছন্দ নয়। যাও দ্রুত। আর সিকান্দার বারীকে (সহকারী ম্যানেজার) আমার কাছে আসতে বলো।’
   তৈমুর আলী কাজের চেয়ে কথা বেশি বলে। অহেতুক কথাবলা তার একটি বদ স্বভাব। বোঝায় অনেক কিছু বোঝে, আসলে লবডঙ্কা। আমার দৃষ্টিতে প্রহরীপ্রধান হওয়ার যোগ্যতা তার নেই। নেই বডি ফিটনেসও। সেই যোগ্যতা আছে মহব্বত দয়ালের, কিন্তু সে পদলোভী নয়, যেখানে আছে সেখানেই তার পছন্দ। আমি প্ল্যান্টে যোগ দেওয়ার আগেই তৈমুর আলী এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আমি তখন প্ল্যান্টে কর্মরত থাকলে সে এই পদে অধিষ্ঠিত হতে পারত না, এটা নিশ্চিত বলতে পারি। মানবিক দিক বিবেচনা করেই এখনো প্রধান হিসেবেই রেখেছি ওকে। কারণ আমি কখনো চাইনি একটা মানুষ অধস্তন দ্বারা অপমানিত হোক বা অধস্তনের অধস্তন হোক।
  আমার আদেশের নড়চড় হয়নি। ওরা সঙ্গে সঙ্গে চার-পাঁচজন মিলে দোনালা বন্দুক নিয়ে সন্তর্পণে কলাবাগান পৌঁছল। ওরা যত সন্তর্পণেই এগুক না কেন, দুষ্কৃতিকারিরা তারচেয়ে বড় ধাড়িবাজ। না হলে এই শ্বাপদসংকুল অরণ্যে রাতবিরাতে প্রবেশ করার সাহসই বা পায় কোথায়?
   প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ওরা সবাই ফিরে এল, কিন্তু সঙ্গে অপরিচিত কাউকে দেখছি না। তার মানে কাউকে আটক করতে সক্ষম হয়নি ওরা তা বুঝে ফেললাম। ওরা এসেই আমাকে যা জানাল তার সারমর্ম হচ্ছে, কলাবাগানে চোর এসেছে সত্যি, তবে এক-দুইজন নয় সংখ্যায় অনেক। প্রহরীদের আগমনে চোর পালিয়েছে বটে, কিন্তু ক্ষতি যা করার করেই গেছে। প্রায় চার শতাধিক কলার কাঁদি কেটে স্তুপ করেছে ট্রলারযোগে নিতে। কাঁদি কাটতে গিয়ে কলাগাছ সুদ্ধ কেটে ফেলেছে। নাশকতার ফলে আমাদের মায়ারানীর অনেকদিনের খাবারও নষ্ট হয়েছে। এ গাছগুলো বেঁচে থাকলে মায়ারানী পর্যায়ক্রমে খেত পারত, অথচ এখন একরাতেই শেষ। গাছও শেষ, কলার কাঁদিও শেষ!

 সব শুনে আমি খুব দুঃখ পেলাম, মেজাজও চড়ে গেল। এতবড় সর্বনাশ ঘটে যাবে, যা ভাবতেই পারিনি কখনো। হাতির খাদ্য নষ্ট হওয়া বা খাদ্যসংকট হওয়ার মানে হচ্ছে প্ল্যান্টের জন্য মারাত্মক একটা হুমকির বিষয়। আমি জানি এ নাশকতার জন্য স্টাফরা দায়ী নয়, তথাপিও জিদ সামলে রাখতে পারলাম না। বললাম, ‘তৈমুর আলী, তুমি কথা কম বলতে চেষ্টা করবে সবসময়। আর এখন থেকে তোমাদের রাতেও ডিউটি করতে হবে। আগে শেয়াল কুকুর বন পাহারা দিতো, এখন সেই কাজ মানুষকেই করতে হবে। তোমরা খুশি হয়েছ হিংস্রপ্রাণী নিধন করাতে, এখন তার ফলাফল নিজ চোখেই তো দেখলে! ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে তোমাদের, আমি তা বলে রাখলাম আগেই।’
   আসলে আমি রাগান্বিত হলাম হেড অফিসের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ওপর, অথচ সেই রাগ ঝাড়লাম কীনা নির্দোষ মানুষগুলোর ওপরে। এটাই জগতের নিয়ম, যে নিয়মের ব্যত্যয় আমার দ্বারাও ঘটেনি। তবে এ কাজটি করা আমার উচিত হয়নি সেটিও উপলব্ধি করলাম। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি লজ্জিতও হলাম। কিন্তু প্রশাসন রক্ষার খাতিরে দুঃখপ্রকাশ করা থেকে বিরত রইলাম।
  আমার মেজাজ ঠাণ্ডা হতেই মহব্বত দয়াল বলল, ‘বড়মিয়া, কলাচুরির সঙ্গে আমাদের প্ল্যান্টের লোকজনও জড়িত আছে।’
 ‘বলো কি! কীভাবে বুঝলে?’
 ‘কয়েকটি কাঁচি দেখলাম যেগুলো প্ল্যান্টের শ্রমিকরা ব্যবহার করে। আমরা যেতেই ওরা কাঁচি ফেলে দৌড়ে পালিয়েছে। তৈমুর আলী কাঁচিগুলি নিয়ে এসেছে; ভয়ে আপনাকে দেখায়নি।’
  কথাশুনে আমি আরও বিস্মিত হলাম। বললাম, ‘তার মানে শস্যের মধ্যেই ভূত! মহব্বত দয়াল, তুমি খুঁজে বের কর কারা এই চুরির সঙ্গে জড়িত।’
  সেই দিনের ঘটনায় আমি অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারলাম। তার মধ্যে যেটি আমি পরিষ্কার উপলব্ধি করলাম তা হচ্ছে, হিংস্র বন্যপ্রাণী বনের অতন্দ্রপ্রহরী; অলংকারও বটে। আর এ বিষয়টি প্রত্যেকেরই উপলব্ধি করা উচিত, তাতে বন-বনানী-বন্যপ্রাণী যেমন রক্ষা পাবে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় থাকবে। 

চলবে...

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর