শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংগীত আমার এক জনমের সাধনা

সংগীত আমার এক জনমের সাধনা

শিল্পী সুবীর নন্দী (১৯৫৩), কণ্ঠ জাদুকর। গান তার কাছে ঈশ্বর-আরাধনা। গান তার সাধনা। তার শত্রুও বলতে পারবে না তিনি দুর্বিনীত। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি আধুনিক, পল্লীগীতি, ভজন, কীর্তন, শাস্ত্রীয়সংগীত শুনিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চলেছেন। কর্মজীবনে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন—সামিয়া রহমান

 

দাদা, যতদূর জানি, আপনার বাবার প্রায় হাজারের বেশি গ্রামোফোন রেকর্ড ছিল।

মোর দেন থাউজেন্ড। বাবা গ্রামোফোন রেকর্ড শুনতেন আর খুব রেডিও শুনতেন। মারফি রেডিও ছিল। সকালবেলায় সায়গলের গান শুনতেন। সাড়ে ৮টার বিনাকা গীতিমালা শেষ হতো কুন্দন লাল সায়গলের গান দিয়ে। শাহজাহান ফিল্মের একটা গান ছিল। যাব দিল ইয়ে টুটেগা হাম জিকে কেয়া করেঙ্গে। নওশাদ সাহেবের সুর করা। ওই গানটা ছোটবেলায় খুব শোনা হতো। ওখান থেকে ওই ধরনের গান গাওয়ার প্রতি আমার ছোটবেলা থেকেই একটু আগ্রহ হলো। এরপর অনেকের গান শুনতাম। পঙ্কজ মল্লিক, কানন বালা এরকম বড় বড় যারা।

 

কার গান বেশি প্রভাবিত করত?

এদের গান প্রভাবিত করেছে। ওই ধরনের গায়কীতে যারা গান করতেন তাদের গানই আমার পছন্দ ছিল।

 

সেই চা বাগান থেকে একেবারে জেলা শহরে চলে আসলেন। সেই জীবনটা কেমন ছিল?

চা বাগানে পড়াশোনা করতাম। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়েছি মিশনারি স্কুলে। তারপরে হবিগঞ্জে আমাদের বাড়িতে চলে গেলাম। খুব সুন্দর জায়গা। দুটা রাস্তা ছিল। একটা পেছনের রাস্তা আরেকটা সামনের রাস্তা। এখন অবশ্য অনেক বড় হয়েছে। সেখানে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে দেখা হলো আমাদের পারিবারিক শিক্ষাগুরু ওস্তাদ বাবর আলী খান সাহেবের সঙ্গে।

 

দাদা, তার কাছেই তো গান শিখেছেন আপনারা।

আমরা সবাই। আর মার কাছে প্রথম এমনিই টুকটাক গান শেখা।

 

যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন আপনি বোধহয় ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে ছিলেন। সেই সময়ের কথা শুনি?

আমরা হবিগঞ্জে ছিলাম। তার আগে থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা বাইরে যেতাম। হবিগঞ্জের চারপাশে আর কি। তখনকার রাস্তা-ঘাট এত ভালো ছিল না। আমার মনে আছে যে আমরা ঘটা করে প্রথম হবিগঞ্জ শিরিশ তলায় ঠিক কলেজের সামনে আমার সোনার বাংলা গান গেয়েছিলাম সব স্কুল-কলেজের সঙ্গে। তারপর তো যুদ্ধ শুরু হলো। চা বাগানে চলে আসলাম আমরা বাবা যেখানে থাকতেন।

মুক্তিযুদ্ধের কর্মকাণ্ড এখান থেকে সংগঠিত হয়েছিল। তখন যেটা তেলিয়াপাড়া চা বাগান, মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টরের একটা হেড অফিস হয়েছিল। বিশাল মনুমেন্ট ওই খানে আছে। ওই খানে আমরা ছিলাম কয়েকদিন। খুব সম্ভব পয়লা বৈশাখ ছিল। আমরা পয়লা বৈশাখ করিনি। পয়লা বৈশাখে সবসময় আমরা খুব ধুমধাম করে প্রত্যেকের বাড়িতে যেতাম, কিন্তু সেসময় এই অবস্থায় আমরা করিনি। দৃশ্যপটগুলো মনে আছে। বৈশাখের তিন তারিখ আমরা তেলিয়াপাড়া চাবাগান থেকে আগড়তলায় চলে যাই। মনে পরে এখনো সে যে কি কষ্ট, কি রক্ত, কি আর্তনাদ মানুষের! নিজের চোখে দেখেছি। ভোলার মতো নয়। চোখে দেখার মতো না। আমার আর যাওয়া হয়নি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। আমার ভাইয়ের ওখানে চলে গেলাম। ওখানে গিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক সমিতির ব্যানারে ওই এলাকাতে গান গাইতাম। গানে যুদ্ধের কথা বলতাম। আমার ভাই আবার গান লিখতে পারতেন। গান বানিয়ে বানিয়ে আমরা দুজনে সুর তুলে গাইতাম। অসমিয়াদের বোঝাতে আমরা তাদের ভাষায় বলে দিতাম। আমার ভাই ইংরেজিতে বলে দিত। সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সের ছাত্র ছিল। তারপর ফিরে এলাম।

 

যুদ্ধের পর বাংলাদেশে এসে আপনি আবার হবিগঞ্জে চলে গেলেন। তারপর ঢাকায় আসলেন কবে?

তারপর আমি চাকরিতে জয়েন করি। ইন্টার মিডিয়েট পাস করার পর তখন ফোর্থ ইয়ারে পড়ি। আমি জনতা ব্যাংকে জয়েন করি।

 

চাকরির প্রয়োজনে ঢাকায় আসা?

না এটা পরে। সিলেটে জয়েন করলাম। তখন তো আমি সিলেটে রেগুলার যাই। আমার ব্যাংক ম্যানেজার ছিলেন খাজা মঈনুদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লার মানুষ। খুব সম্ভব উনি বোধহয় কুমিল্লার বিখ্যাত জায়গা চিরুলিয়ার কাজীবাড়ির ছেলে। তিনি আমাকে বললেন সুবীর এত সুন্দর গান করেন, সিলেটে গান করে কী হবে? আপনি ঢাকায় যান। আমি বলেছিলাম, স্যার আমি ঢাকায় আসা যাওয়া করি। একটা-দুটা গান রেকর্ড করেছি। কিন্তু যাব কি করে। উনি বললেন, আমি ব্যবস্থা করে দিব।

 

দাদা, শুনেছি আপনি ছোটবেলায় কচিকাঁচার আসরও করেছেন।

ওহ, সেটা তো আরেকটা ইতিহাস। সিক্সটি ফোর থেকে আমি কচিকাঁচার আসর করি। তখন ছোট্ট আমি। ক্লাস থ্রি ফোরে পড়ি। আমি তখন আমার মামার বাড়িতে আসা-যাওয়া করি। শ্রীমঙ্গল কিন্তু কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার দারুণ একটা প্রভাব ছিল। মিড সিক্সটি থেকেই। দাদা ভাইয়ের কচিকাঁচার মেলা, তারপরে সুফিয়া খালাম্মা সবাই। ওখানে একটা কেন্দ্র ছিল। ওই জায়গাটাকে কেন্দ্র করে গ্রেটার মৌলভীবাজার ডিসট্রিক্ট, হবিগঞ্জ ডিসট্রিক্টে  কচিকাঁচার মেলা হতো।

 

আপনার প্রত্যেকটা গানের পেছনে গল্প আছে। সে গল্প শুনব।

আমরা তখন ঢাকা রেডিওতে এক ঝাঁক তরুণ শিল্পী। আমাদের প্রজন্মে আমি, শাম্মী আখতার সবাই ভিড় করেছি ঢাকায় একটা জায়গা করে নিব। সেই সময় ট্রান্সমিশন সার্ভিস থেকে একটা রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন করা হয়। এখন যেমন রিয়েলিটি শো হয় মোটামোটি ওই প্যাটার্নেই। কিন্তু এটা শো ছিল না। বাইরের মিউজিক ডিরেক্টর দিয়ে, বাইরের গীতিকার দিয়ে গান লিখিয়ে নতুন শিল্পীকে দিয়ে গাওয়ানো হতো। আমরা টেনশনে ছিলাম কার ভাগ্যে কোন মিউজিক ডিরেক্টর পড়ে তা নিয়ে ।

ভালো ডিরেক্টর পেয়ে গিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো।

ওই গানটি পেয়েছিলাম—বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম। আমি তো এক্সসাইটেড ছিলাম। মফস্বল থেকে এসেছি। রফিকুজ্জামান সাহেব, খুব নাম করা গীতিকবি। তো উনি সত্যদার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিলেন। সত্যদা আমাকে বললেন, তোমার গান শুনেছি, খুবই ভালো গাও। তারপর রফিক ভাই গানটা দিলেন। রফিক ভাইয়ের একটা দোষ ছিল উনি গান পুরোটা দিতেন না। একটা মুখরা দিয়ে আর অন্তরাটা দেন না। তারপরে শুধু দিচ্ছি আর দিব বলেই সময় পার। সত্যদার বাসায় গেলাম। গান তুলে দিলেন। যেদিন রেকর্ডিং হবে বসে আছি, বসেই আছি। কিন্তু রফিক ভাইয়ের কোনো খবর নেই। এখন দ্বিতীয় অন্তরা ছাড়া তো গান করা যাবে না। এখনকার মতো তো আর ডিজিটাল না যে পরে এসে গেয়ে নেওয়া যাবে। একসঙ্গেই গাইতে হবে। বাণীটা ঠিক থাকতে হবে। তিন/চার ঘণ্টা পর রফিক ভাই আসলেন। বললেন, হ্যাঁ এই যে দাদা অর্ধেক অন্তরা, বাকিটা। তখন গাইলাম গানটা। মানুষ গানটা গ্রহণ করল। এরকম অবস্থায় হঠাৎ করে একদিন শেখ সাদী ভাই আসলেন। উনি তখন ইয়াং, আমাদের থেকে বয়সে বড়। সাদী ভাইয়ের ভাগ্যে তখন আমি পড়ে গেলাম। আমার খুব প্রিয় মানুষ উনি। যেহেতু শিবপুর ঘরানার, আলাদা ওই গায়কীর ব্যাপার আছে। গানটি ছিল নজরুল ইসলাম বাবুর। নজরুল ইসলাম বাবু আবার সিগারেট খেতেন। সিগারেটের ভিতরে আবার প্যাকেট থাকে না? ওই প্যাকেটের মধ্যে তিনি গান লিখতেন। ওখানেই হাজার মনের কাছে প্রশ্ন গানটি লিখে প্রথম অন্তরায় এসে থেমে গেলেন। উনি অবশ্য রেকর্ডিংয়ের পরে সেম পার্টটিই আরেকটা সিগারেটের বাক্সের মধ্যে নিয়ে যেতেন। একবার এটা দেখে আর ওটা দেখে গানটা হতো।

 

দাদা, আর বন্ধু হতে চেয়ে গানটি?

বন্ধু হতে চেয়েও গাইলাম। এটা যেদিন রেকর্ড হলো প্রডিউসারদের এত ভালো লাগল। নুরুজ্জামান দুলাল বলে একজন ছিলেন, কামরুল ইসলাম এদের জয়েন প্রোডাকশন ছিল। তারা বিকাল ৪টার দিকে রেকর্ডিং করে ৬টার সময় অনএয়ার করে দিলেন। অনএয়ার করার পরের দিন থেকে নাকি দুর্বার নামে একটা অনুষ্ঠান হতো, এখনো হয়, দুর্বারে বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, শত্রু বলে গণ্য হলাম গানটি খুব চলল। এটা সত্যদার বিখ্যাত সুরের মধ্যে একটি। আরও নানান গল্প আছে।

 

দাদা, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক হলো কীভাবে?

মোটামোটি যে কোনো ভালো গানই গাইতে গেলে আপনি যদি গানের বাণীটাকে যদি ভিজুয়ালাইজ না করতে পারেন বা সুরের ক্ষেত্রেও, তাহলে কিন্তু গানটি হয় না। সুরের মধ্যেও একটা অনুভূতির জায়গা আছে। একেকটা নোট একেক রকম নার্ভে কাজ করে। যেমন পা বললে পঞ্চম। ধা বললে আমরা দৈবাৎ মনে করি যে বীভৎস। নি বললে আমরা মনে করি যে কোনো কিছুকে টাচ করছে। হুমায়ূন স্যারের গান যখন গাইতে যেতাম তখন আর বলতে হতো না প্রেক্ষাপট কি। ওর বাণীই বলে দিত যে কি করে ডেলিভারিটা দিতে হবে। ‘অয়োময়’ নাটক থেকে তার সঙ্গে সম্পর্ক।

 

তার সঙ্গে আপনার নিশ্চয়ই অনেক মজার গল্প আছে?

অনেক গল্প আছে। যেমন, একটা ছিল সোনার কন্যা। বললাম, স্যার এই গানটা কী রকম? এটা প্রথমে কিন্তু একটা মিউজিক ভিডিওর জন্য করা হয়েছিল। খুব সম্ভবত গাজীপুরের দিকে রেকর্ড করা হয়েছিল। রেকর্ড করে এটা ফিল্মে লাগাই। আমি চিন্তা করছি যদিও এটা মিউজিক ভিডিও কিন্তু তার তো একটা ব্যাপার আছে। যিনি গান লেখেন তার একটা কল্পনা থাকে। তার প্রেক্ষাপট থাকে। উনি বলেছিলেন গেয়ে ফেলেন। কিশোরগঞ্জের ভাষায় কথা বলতেন উনি। বলেছিলেন, গাইবেন আপনার যেরকম ভালো লাগে, গেয়ে দিবেন। কোনো সমস্যা নেই। প্রেম-টেম করেননি? আমি বলি না, করলেও তো ভুলে গেছি। অনেক দিন হয়ে গেছে। ওইরকমই কাউকে মনে করে গাইবেন। তবে স্যাড। স্যাড কি করে? বললেন, গানটা আরও ভালো করে পড়েন। দেখবেন এর ভিতরে কোথাও অনেক বেদনার কথা আছে। এরপর অনেকদিন ধরে গানটা নিয়ে ভাবতাম। রিয়েলি, গানটা খুব মিষ্টি প্রেমের কথা এবং কষ্টেরও অনেক ব্যাপার আছে। একটা ছিল সোনার কন্যা মাকসুদ জামিল মিন্টু এত সুন্দর সুর করেছে। এই যে একটা ছিল সোনার কন্যা। এখানেই কিন্তু হাহাকার বিষয়টি। আমরা অনেকে এখন এটা আইটেম সং হিসেবে গাই অনেক সময়। গানটা কিন্তু খুব স্যাড গান।

 

দাদা, আপনার কি মনে হয় না আপনার গানের মধ্যে মেলোডিটা অনেক বেশি?

এটা আমার কপাল যে সুন্দর সুন্দর সুরের গানগুলোর ম্যাক্সিমামই আমি গাইতে পেরেছি। আগে একটা গান যখন গাইতাম তখন আমরা সবাই একসঙ্গে বসতাম। যিনি গাইতেন, যিনি লিখতেন, এবং সুরকার। ইন্টারঅ্যাকশন হতো গীতিকারের সঙ্গে মিউজিক ডাইরেক্টরের। তারা আবার বলত, গাও তো দেখি, গলাতে কেমন লাগে? এই করে করে একটা গান, একদিন দুদিন সিলেক্ট করার পরে গানটার রিহার্সেল শুরু হতো। সেই জিনিসটা এখন আর নেই।

 

দাদা নিজে কতগুলো গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন?

৩০টার উপরে, তারপরে ছেড়ে দিয়েছি।

 

আপনি কি মনে করেন, বর্তমানে গানের দুর্দশা চলছে?

খুব দুর্দশা। দুর্দশা এই সেন্সে বলছি যে, গানের বাণীর খুবই অভাব। খুবই অভাব বলতে যারা ভালো গান লেখেন তারা গান লিখতে চান না কেন? আমাদের অনেক ভালো ভালো তরুণ ছেলেমেয়ে গান গাইছে। তাদের এত ফরমায়েশে গান লিখতে হয়, প্রচুর প্রেশার। এক সপ্তাহের মধ্যে একটা অ্যালবামের ১২টা গান। ১২টা গান লেখা মানে মাথা ঠিক থাকে না। সত্যদা একটা কথা বলতেন। তখন বয়স কম ছিল। একটু আনমনা থাকলে সত্যদা বলতেন, যখনই গান গাইতে আসবা তখন মনে করবা যে আজকেই প্রথম মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়েছ। কালকে তোমাকে নাও ডাকতে পারে। এই কথাটা একদম আমার কানে মাথায় টনটন করল। যখনই মাইক্রোফোন দেখি দাদার কথা মনে পড়ত। যেটুকু আমার সামর্থ্য আছে তা দিয়ে গানটাকে সুন্দর করে দেওয়ার চেষ্টা করি।

 

দাদা, আর কি চাওয়া আছে জীবনে?

জীবনে অনেক পেয়েছি। এটা বর্ণনাতীত। আমার ছোট্ট একটা জীবনে আমার মনে হয় ১০০টা জীবনের প্রাপ্তি। এখন একটা প্রশ্ন জাগে। প্রশ্ন জাগে যে এর বিনিময়ে আমি দিলাম কি? দেওয়ার জায়গাটা মনে হয় অনেক অল্প। চেষ্টা করছি। সংগীত আমার এক জনমের সাধনা।

 

আপনার স্বপ্ন কী জীবনে দাদা আর?

স্বপ্ন এরকম যে ঠিক আগের মতো যেমনটি বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি সব কিছু লালিত হোক। কোনো কারণে যেন, একটি মাত্র কারণেও যেন সেই ভালো লাগা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধার জায়গাটা যেন এক চুল এদিক সেদিক না হয়। তাহলে শিল্প বেঁচে থাকবে, সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে, আমাদের সবকিছু, আমাদের অস্তিত্বটা বেঁচে থাকবে। না হলে সারাক্ষণই এই ভুলটা হবে যে এটা নাই ওটা নাই। এটা মনে করতে হবে যে আমার নেওয়ার আছে, পাওয়ার আছে কিন্তু ধ্বংস করার অধিকার নেই। বুদ্ধদেব বসুর একটি প্রবন্ধে, বহুদিন আগে পড়েছি, জনকণ্ঠে একটা ছিল। সেখানে বলেছেন আমি এটা খুব মনে রাখি যে, বেসিক জায়গায় আঘাত করলে হয় সৃষ্টি হবে না হয় অনাসৃষ্টি হবে।

 

আমরা কি এখন অনাসৃষ্টির জগতের দিকে যাচ্ছি?

সৃষ্টিও হচ্ছে অনাসৃষ্টিও হচ্ছে।

 

একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

এটা মাথায় রাখতে হবে যে এমন কিছু করব না যে অনাসৃষ্টি হয়। মৌলিকত্বটাকে বাদ দিলে সৃষ্টি যদি না হয় অনাসৃষ্টি করা মানে ক্ষতি করা।

 

আপনার গানে মেলোডি অনেক বেশি। এখনকার গানে কি মেলোডি কমে গেছে?

মেলোডি থাকবে কেন? মেলোডি বাদ দিলে পরে ওইটা সফটওয়্যার দিয়ে ঠিক করা হয়। এফেক্ট দেওয়া হয়। আগে যেখানে গান রেকর্ডিং হতো, আপনি যেহেতু মিডিয়ার সঙ্গে অনেকদিন, অনেক অভিজ্ঞতা অনেক কিছু দেখেছেন, শুনেছেন, জানেন। সেটা হলো যে আমরা যখন রেকর্ডিং করি তখন তারা বলে র ভয়েস। এটাতে কোনো অ্যাড হবে না। এখন আমরা কি করি, একটা এফেক্ট দিয়ে গাই। তো যার বডিই থাকে না তাকে আর কাটবেন কি করে। যতই ডিজিটাল করেন আর ম্যানুয়ালি করেন। মুশকিলটা এই জায়গায়। কাজেই আমি বলব যে ঈশ্বরের দেওয়া গলা যেটা আছে সেটা দিয়ে গান করুন। তারপর বিউটিফিকেশনের জন্য একটু এদিক সেদিক করেন। কিন্তু না, আমরা গেয়ে দিব, একটা মুখরা গাইলাম, মুখরা দ্বিতীয় বার গাইলাম না। অন্তরার পর মুখরায় যেতে হয়। না, ওটা কাট করে লাগিয়ে দাও। রিপিটটা করি না। এসব করে তো আর গান বাজনা হয় না। পরিশ্রম করতে হয়। আপনাকে যে একটা লোক পারিশ্রমিক দিচ্ছে, আপনাকে তো খেটে সেটা গাইতে হবে। বলা যায় না কোন গানে হয়তো আপনি অজেয়, অমর হয়ে যাবেন একটি গানের জন্য। পৃথিবীতে এরকম অনেক ইতিহাস আছে। একটা ছবির জন্য, একটা উপন্যাসের জন্য মানুষ অমর হয়েছেন।

 

আপনাকে অনেক অনেক শুভ কামনা দাদা।

অনেক ধন্যবাদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর