শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
ফারুক চৌধুরী

এক নক্ষত্রের বিদায়

রফিকুল ইসলাম

এক নক্ষত্রের বিদায়

সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রদূত, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও লেখক ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কীর্তিমান মানুষ। তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিলেটের করিমগঞ্জে। তার বাবা গিয়াসুদ্দিন ছিলেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও ক্রীড়া সংগঠক।  মা রফিকুন্নেসা ছিলেন গৃহিণী। ফারুক চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি করার পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ফরেন সার্ভিসে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ফ্লেটার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসিতে আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর ওয়াশিংটনের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউট এবং লন্ডনের ফরেন অফিসে প্রশিক্ষণ লাভ করার পর তিনি প্যারিসের অলিয়ঁস ফ্রানসে ফরাসি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৯ সালের শেষে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে তিনি রোমের পাকিস্তান দূতাবাসে নিযুক্ত হন। ইতালিতে তার কর্মতত্পরতার জন্য ইতালির সরকার তাকে ‘কাভালিয়ারি’ খেতাবে ভূষিত করে। পরবর্তী দশ বছর তিনি রোম, বেইজিং, দি হেগ এবং আলজিয়ার্সে পাকিস্তান দূতাবাসে নিযুক্ত ছিলেন। তারপর তাকে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পরবর্তীকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঢাকা শাখার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ‘চফ অব প্রটোকল’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ডেপুটি হাই কমিশনার, ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউরোপের বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। পরে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার এবং ১৯৯২ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে তার বিভিন্ন সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন ফারুক আহমেদ চৌধুরী। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফেরার পথে দিল্লিতে বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তার খসড়া তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইংরেজিতে তাত্ক্ষণিক অনুবাদ করে দিয়েছিলেন।

অবসরে যাওয়ার পর ফারুক চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে ফারুক চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। বাকি তিন ভাইয়ের মধ্যে সাবেক সচিব ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুম আহমেদ চৌধুরী; বোনদের মধ্যে নাসিম হাই শহীদ কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। আর ছোট বোন নীনা আহমেদের স্বামী ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ (২০০৭-২০০৮) সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তারা আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ফারুক চৌধুরী ও তার স্ত্রী জিনাত চৌধুরীর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ছেলে আদনান চৌধুরী ব্যবসা করেন। মেয়ে ফারজানা আহমেদ থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়।

অবসরের পর ফারুক চৌধুরী বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘জীবনের বালুকাবেলায়’ ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পায়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৭ মে ২০১৭ তিনি দেহ ত্যাগ করেন। তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর