শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাঁওতাল বিদ্রোহ

সাঁওতাল বিদ্রোহ

আজ ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। উনিশ শতকের পঞ্চম দশকে সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-১৮৫৬) দেখা দেয়। সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তৎকালীন বাংলার বীরভূম, ভাগলপুর ও মুর্শিদাবাদ জেলার সাঁওতাল অঞ্চলগুলোতে। সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ। কোম্পানির শাসনব্যবস্থা শুরু হওয়ার আগে সাঁওতালদের জীবনযাত্রা ছিল সরল ও সাদাসিধে। কোম্পানির বাংলা দখল করার পর তারা সাঁওতাল জনজীবনের ওপর বাড়িয়ে দিয়েছিল শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা। নিরীহ ও শান্তিকামী সাঁওতালদের ওপর নিপীড়নকারী  জমিদার, মহাজন, পুলিশের বিরুদ্ধে এক সুসংগঠিত সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তোলে। সাঁওতালরা ঔপনিবেশিক অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং নিজেদের প্রাকৃতিক অধিকার বজায় রাখার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। সাঁওতালরা বিশ্বাস করত, যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম জঙ্গল কেটে জমি চাষের উপযোগী করে, জমির মালিকানা তারই। মুঘল সরকার এই ঐতিহ্যকে সম্মান করায় তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে জমিদাররা জমির ওপর তাদের মালিকানার দাবি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। এই স্বাভাবিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ১৮১১, ১৮২০ ও ১৮৩১ সালে সাঁওতালদের মধ্যে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটে।

সাঁওতালরা বাঙালিদের ‘মইরা’ ও ‘দিকু’ নামে ডাকত এবং তাদের শত্রু মনে করত, কেননা এই বাঙালিরাই ছিল জমিদার, মহাজন, দোকানদার ও রেলওয়ে শ্রমিক-ঠিকাদার, যারা কমবেশি সবাই ছিল শোষক ও নির্যাতনকারী। এসব মইরা ও দিকুর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সাঁওতালরা ১৮৫৫ সালের গোড়ার দিকে সংগঠিত হতে শুরু করে। যখন সাঁওতাল নেতা বীর সিংহকে পাকুড় রাজের কাচারিতে তলব করে তার অনুসারীদের সামনে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়, তখনই শুরু হয় মূল বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের জুন মাস থেকে বিদ্রোহ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

১৮৫৫ সালের ১৯ জুলাই সামরিক আইন জারি করা হয়। সাঁওতালদের দমনের জন্য তিনটি সৈন্যদল পাঠানো হয়। সাঁওতালদের রক্তে সিক্ত হয় রাজমহল পার্বত্য এলাকা। তাদের সবকটি গ্রাম ধ্বংস করা হয়। ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে নেতৃস্থানীয় সাঁওতালদের অধিকাংশই ধরা পড়ে এবং লোক দেখানো বিচার করে তাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয় হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর