শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুসলিমদের বিশ্বসেরা আবিষ্কার

মুসলিমদের বিশ্বসেরা আবিষ্কার

অনেকেই দাবি করেন আধুনিক সভ্যতার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য থেকে যদি মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে এই আবিষ্কার ও আধুনিকায়ন ধসে পড়বে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা সভ্যতার বিকাশকে করেছে আরও গতিশীল। রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস সর্বত্র ছিল তাদের অগ্রণী পদচারণা। সেসব আবিষ্কার ও গবেষণার আধুনিকরণ ঘটেছে, তার সুফল ভোগ করছে আজকের বিশ্ববাসী।

দুনিয়া কাঁপানো মুসলিম আবিষ্কারকদের উল্লেখযোগ্য কিছু আবিষ্কার নিয়ে আজকের রকমারি— সাইফ ইমন

 

প্রথম কফি চাষ ও  টুথব্রাশ

অনেকে আছেন এখন কফি ছাড়া দিনই শুরু করতে পারেন না। সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১৬০ কোটিরও বেশি কাপ কফি বিক্রি হয়।  ইউরোপ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি কফি বিক্রি হয়। কিন্তু মজার বিষয় এই কফির প্রথম আবিষ্কারক কিন্তু ইউরোপ আমেরিকার কেউ নন। পৃথিবীর বুকে প্রথম এই কফির চাষ করেছে নবম শতকের দিকে ইয়েমেনবাসী। আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন সুফিরা ইবাদত করার জন্য রাত জাগতেন।  অনেকেই বলে থাকেন প্রথম প্রথম কফি পান করেই সুফিরা রাত জেগে থাকতেন। এরপর একদল শিক্ষার্থীর মাধ্যমে মিসরের রাজধানী কায়রোতে এসে সেই কফি পৌঁছায়। এর পর থেকে সেখানেও কফি চাষ শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে কফি চাষ ছড়িয়ে পড়ে। আবার ইসলামের কারণেই দাঁত পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা লাভ করে। সর্বসম্মতভাবে সবাই স্বীকার করেন যে, প্রাচীন মিসরীয়রাই সর্বপ্রথম দাঁত পরিষ্কারের জন্য গাছের ডাল ব্যবহার করতেন।

তাদের ব্যবহার করা ডালই আজকের মেসওয়াক হিসেবে পরিচিত।

 

প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কারুইয়িন 

সারা বিশ্বে এখন কত কত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেখান থেকে দেওয়া হচ্ছে কত শত সনদ। শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন মুসলিমরাই। কারণ পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলিমদের হাতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ প্রদানের কার্যক্রমও প্রথম সূচিত হয়েছে মুসলিমদের মাধ্যমেই। আফ্রিকা মহাদেশের মরক্কোয় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। ৮৫৯ সালে প্রিন্সেস ফাতেমা আল ফিরহি মরক্কোর ফেজেতে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সর্বপ্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরবর্তীকালে প্রিন্সেস ফাতেমার বোন মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পুরো কমপ্লেক্সটির নাম

হয় ‘কারুইয়িন বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং মসজিদটির নাম রাখা হয় ‘আল কারুইয়িন মসজিদ’।

 

 

বীজগণিত ও মানুষের চোখ

বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে গণিতের ভিতের ওপর। আর গণিত দাঁড়িয়ে আছে বীজগণিতের ওপর। সেই পৃথিবীর প্রথম বীজগণিত নিয়ে প্রথম গ্রন্থটি রচনা করেছেন পার্সিয়ার বিখ্যাত মুসলিম গণিতবিদ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজম। এরপর সপ্তম শতকে তিনি রচনা করেন দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবলা’। তার রচিত এই বইটি থেকেই মূলত এই শাস্ত্রের নাম হয় আলজেবরা। আল-খোয়ারিজম রচিত বীজগণিতের ওপর ভিত্তি করেই আধুনিক গণিতের যাত্রা ও পথচলা শুরু হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম এই শাখাটি সূচনা শুরু হয় একজন মুসলমানের হাতে। বিষয়টি ভাবতে চমকপ্রদ অবশ্যই। এদিকে তৎকালীন আরব বিশ্ব শুধু গণিতেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি, বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। তারা বিবর্ধক কাচ বা চশমার ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। বসরা নগরীর বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত আলহাজেন সর্বপ্রথম বর্ণনা করেন চোখের গঠন প্রণালি এবং চোখ কীভাবে কাজ করে। তিনিই প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করেন, চোখের দৃষ্টি রশ্মির সঙ্গে পারিপার্শ্বিক অনুভূতি নেই। এ ছাড়া তিনিই প্রথম চশমার ধারণা দিয়ে বলেন, বাঁকানো কাচের পৃষ্ঠতল চোখের দৃষ্টি সহায়ক হিসেবে বিবর্ধনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

সর্বপ্রথম হাসপাতাল

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। আর মানুষের সমাজে বেঁচে থাকার জন্য পাঁচটি মৌলিক অধিকার অতি জরুরি। চিকিৎসা এর মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসক ও হাসপাতাল। একসময় হাসপাতাল কিন্তু ছিল পৃথিবীর কোথাও, যেখানে সাধারণ মানুষ সরাসরি গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারতেন। বর্তমানে এমন কোনো দেশের অস্তিত্ব এখন আর আমরা কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু মানুষের জন্য এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন আহমদ ইবনে তুলুন। তিনি ছিলেন তুলুনিদ সাম্রাজ্যের একজন শাসক। পৃথিবীর ইতিহাসে নবম শতকে মিসরে সর্বপ্রথম হাসপাতাল ব্যবস্থার সূচনা হয়। আহমদ ইবনে তুলুন ৮৭২ সালে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ‘আহমদ ইবনে তুলুন হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল ব্যবস্থার ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসার জন্য এই যে হাসপাতাল ব্যবস্থা তা চালু হয়েছে মুসলমানদের হাত ধরেই। পরবর্তীকালে বাগদাদে আরও নতুনভাবে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে হাসপাতাল ব্যবস্থা চালু হয়।

 

 

আলোকবিদ্যা

আলোকবিদ্যা বা আলোকবিজ্ঞান হলো পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা। মুসলিম বিজ্ঞানীরা পদার্থবিজ্ঞানেও অনেক এগিয়ে ছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা আলোকবিদ্যা নিয়ে মুসলমান বিজ্ঞানীরাই সর্বপ্রথম গবেষণা করে আলোর আচরণ, বৈশিষ্ট্যাবলি এবং বস্তুর সঙ্গে আলোর পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া বর্ণনা করেন। আলোকবিদ্যা আলোক সম্পর্কীয় প্রত্যক্ষ ঘটনা ব্যাখ্যা করে। আনুমানিক ১ হাজার সালের দিকে বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম পদার্থবিদ ইবনে আল হাইছাম প্রমাণ করেন যে, ‘বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো মানুষের চোখে প্রবেশের পরই কেবল মানুষ  সেই বস্তু দেখতে পায়’। এভাবে মুসলমানদের মাধ্যমেই আধুনিক আলোকবিদ্যার শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়েছিল। মুসলমানদের আবিষ্কৃত মতবাদ প্রাচীন বিজ্ঞানীদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে।

সর্বশেষ খবর