শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আলোচিত ইসলামী চিন্তাবিদ

সাইফ ইমন

আলোচিত ইসলামী চিন্তাবিদ

আবদুর রহমান

সৌদি আরব

আবদুর রহমান ইবনে আবদুল আজিজ আস-সুদাইস সৌদি আরবের আনাজ্জাহ গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬০ সালে। তিনি সৌদি আরবের প্রধান মসজিদ ‘মসজিদ আল-হারাম’-এর ইমাম। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় পবিত্র স্থান পবিত্র কাবা শরিফকে ঘিরে এটি অবস্থিত। দুবাই আন্তর্জাতিক হলি কোরআন অ্যাওয়ার্ড থেকে ২০০৫ সালে তিনি সেরা ইসলামিক ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। আল-সুদাইস সন্ত্রাসবাদ নিহত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগের ব্যবস্থা করেছেন, ইসলাম বিরোধীদের কাছে বোমা হামলা এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ভুল ধারণা খণ্ডন করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ আন্তধর্ম সংলাপের আয়োজন করেছেন। মাত্র বারো বছর বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে ফেলেন। তার কৈশর কাটে রিয়াদে। রিয়াদ সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে তিনি স্নাতক এবং পরবর্তীতে ইসলামিক শরিয়াহর ওপর ডক্টরেট করেন।

 

মোহাম্মদ তাহেরুল কাদরী

পাকিস্তান

মোহাম্মদ তাহেরুল কাদরী অন্যতম মুসলিম ধর্মীয় নেতা বলে মানা হয়। তিনি শাইখুল ইসলাম নামেও বহুল পরিচিত। বহুগুণের অধিকারী এই ইসলামিক ব্যক্তিত্ব একই সঙ্গে একজন শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুবক্তা, সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে পরিচিত।

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। যৌবনেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আশির দশকে শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান মিনহাজুল কোরআন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০২ সালে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর কিছু বছর  টরন্টোতে কাটানোর পর ২০১২ সালের            ডিসেম্বরে নিজ দেশে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।

 

ফেতুল্লাহ গুলেন

তুরস্ক

ফেতুল্লাহ গুলেন একজন লেখক, শিক্ষক এবং মুসলিম চিন্তাবিদ। ১৯৪১ সালে তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসিত অবস্থায় বসবাস করছেন। তিনি সাইদ নুসরির শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে সুন্নি/হানাফি ইসলামের মধ্যমপন্থি সংস্করণ শিক্ষা দেন এবং এর আধুনিকীকরণ করে থাকেন। তার এই ধর্মপ্রচারপন্থা পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। যা পরবর্তীতে তুরস্কের একটি বিশাল ধর্মীয় রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এই আন্দোলনটি  গুলেন আন্দোলন নামে পরিচিত। এই চিন্তাবিদ সব সময় সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে এসেছেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে যোগাযোগকে সমর্থন করে ভ্যাটিকান ও কিছু ইহুদি সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক করে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংলাপের ব্যবস্থা করেছিলেন।

 

আবদুল্লাহ বিন মাহফুদ

মরিতানিয়া

আবদুল্লাহ বিন মাহফুদ ইবনে বাইয়্যাহ ১৯৩৫ সালে আফ্রিকার দেশ মরিতানিয়াতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের ওপর বিশেষ দক্ষ। এ ছাড়াও চার মাযহাবের বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী একজন সুন্নি ঘরানার মুসলিম পণ্ডিত। তিনি বিভিন্ন দেশের ১১টিরও বেশি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৌদি আরবের ইসলামিক ফিকাহ কাউন্সিল,  ইন্টান্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স এবং ডাবলিনের ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফতোয়া অ্যান্ড রিসার্চসহ ইত্যাদি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলিমের নামের তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

 

 

হুসাইন ইয়ে

মালয়েশিয়া

হুসাইন ইয়ে একজন বিখ্যাত চীনা বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান ইসলামিক পণ্ডিত এবং ইসলামী বক্তা। ১৯৫০ সালে চিনে একটি বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও তিনি সৌদি আরবের মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিস বিভাগে অধ্যয়ন করেন। এ সময় তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর অধীনে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। ১৯৭৮ সালে স্নাতক হওয়ার পর তিনি মালয়েশিয়া ফিরে আসেন এবং মুসলিম কল্যাণ সংস্থায় যোগদান করেন। এই সংস্থাটি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিতদের কল্যাণে কাজ করে আসছে। পরবর্তীতে তিনি হংকংয়ের একটি ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

ইউসুফ এস্টেস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ইউসুফ এস্টেস একজন আমেরিকান মুসলিম। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৪ সালে এক খ্রিস্টান পরিবারে।  ১৯৯১ সালে ৭৪ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মোহাম্মেদ নামের এক মিশরীয় মুসলিমের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরই তিনি ধর্মান্তারিত হন। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে মুসলিমদের প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বেড়ে ওঠেন টেক্সাসের হিডস্টনে একটি এংলো প্রাচীন ইংরেজি ভাষী প্রোটেস্ট্যান্ট পরিবারে। ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন। তিনি নিজের উদ্যোগে গাইড আস টিভি নামের আমেরিকার প্রথম চব্বিশ ঘণ্টা প্রচারিত ইসলামিক টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন।

 

 

ইসমাইল ইবনে মুসা

জিম্বাবুয়ে

জিম্বাবুয়ে জন্মগ্রহণ করা ইসমাইল ইবনে মুসা মেঙ্ক হলেন একজন বিখ্যাত মুসলিম শিক্ষাবিদ, ইসলামিক সুবক্তা। ২০১৬ সালে ফিলিপাইনের একটি ধর্মীয় বিশ্ববিদ্যালয় ‘অ্যালডারসগেইট ইউনিভার্সিটি’ এই ইসলামিক জিনিয়াসের সমাজ সংস্কারে অবদানের জন্য অনারারি ডক্টরেট দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি মুফতি মেঙ্ক নামেও অধিক পরিচিত। ইসমাইল ইবনে মুসা বর্তমানে জিম্বাবুয়ের গ্র্যান্ড মুফতি এবং ইসলামিক এডুকেশনাল সেন্টারের প্রধান পরিচালক। সমাজ সংস্কারে আবদানের জন্য কেএসবিইএ আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব ২০১৫ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ২০১৫ সালে। মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া আইনের ওপর স্নাতক অর্জন করেন এবং ভারতের গুজরাট থেকে আইনশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন।

 

 

মুহাম্মদ রাশিদ রিদা

উসমানীয় সিরিয়া

মুহাম্মদ রাশিদ রিদা একজন মুসলিম সংস্কারক। তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত উসমানীয় সিরিয়ার ত্রিপলির নিকটবর্তী আল কালামুনে জন্মগ্রহণ করেন।  তার ধারণাগুলো ইসলামী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দর্শন তৈরিতে ২০শ শতাব্দীর ইসলামী চিন্তাবিদদের ওপর প্রভাব ফেলে ব্যাপকভাবে। বলা হয় যে রশিদ রিদা তার প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন। অবশ্য এই ইসলামিক জিনিয়াস বিতর্কিত হয়েছিলেন।  তিনি সালাফি আন্দোলন ও কায়রোতে ইসলামী আধুনিকতাবাদ আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৮৮৪ থেকে ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয় আল উরওয়া আল উসকা নামক পত্রিকা। এই পত্রিকায় তিনি ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯৩৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর