শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

থাউজেন্ড হিলস, গরিলা আর আকাবাঙ্গার দেশ রুয়ান্ডা

জ ই মামুন

থাউজেন্ড হিলস, গরিলা আর আকাবাঙ্গার দেশ রুয়ান্ডা

আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা আফ্রিকার নাম শুনলে একটু অস্বস্তি বোধ করি, হয়তো কিছুটা ভয়ও পাই। তাই এবারের রুয়ান্ডা সফর নিয়েও খানিকটা অস্বস্তি যে ছিল না তা নয়। বাংলাদেশে রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ২২ মার্চ সকালে ঢাকা থেকে ১১ সদস্যের বহরের সঙ্গে এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাই যাত্রা। সেখানে দীর্ঘ বিরতির পর মধ্যরাতে রুয়ান্ডা এয়ারের ফ্লাইটে সে দেশের রাজধানী কিগালির উদ্দেশে উড়াল। ওই প্লেনে আমাদের মতো তামাটে বর্ণের মানুষ বলতে হয়তো আমরা ১১ জনই, বাকি প্রায় সবই আফ্রিকান, কালো মানুষ।

আমাদের প্লেন কিগালিতে পৌঁছায় ২৩ মার্চ ভোরে। রুয়ান্ডাব নীল আকাশে তখন সোনালি সূর্য সবে উঁকি দিচ্ছে। ভোরের আলো-আঁধারিতে দেখা যায়, চারদিকে পাহাড় আর উপত্যকার মাঝে এক টুকরো সবুজ শহর কিগালি। বিমান অবতরণের আগে পাইলট ঘোষণা দিয়ে সেখানকার সময়, আবহাওয়া, তাপমাত্রা ইত্যাদি জানালেন। সঙ্গে এও বললেন, যাত্রীদের কারও কাছে যদি প্লাস্টিক বা পলিথিনের কোনো ব্যাগ থাকে তা যেন তারা এয়ারপোর্টের নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে যান। কারণ রুয়ান্ডায় পলিথিন নিষিদ্ধ। এয়ারপোর্টে নেমে দেখা গেল, আমাদের মতো নবাগতদের যাদের স্যুটকেস প্লাস্টিক দিয়ে র‌্যাপ করা ছিল, তাও সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা খুলে রাখছেন। বিস্ময়ের শুরু সেখান থেকে। পরবর্তী পাঁচ দিন রাজধানী কিগালি এবং রুয়ান্ডার বিভিন্ন শহর-গ্রাম-জনপদ ঘুরে, নানা মানুষের সঙ্গে মিশে এ বিস্ময়ের মাত্রা কমেনি, বরং বেড়েছে। কালো মানুষেরা তাদের দেশটাকে যে কত সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে পারেন, তা রুয়ান্ডায় না গেলে বিশ্বাস হতো না। পলিথিন দূরের কথা, কোথাও এক টুকরা কাগজও পড়ে থাকতে দেখিনি পথে।

বিমানবন্দর থেকে আমরা যাত্রা করি কঙ্গো সীমান্তবর্তী লেক সিটি গিসেনির উদ্দেশে। সড়কপথে চার ঘণ্টার যাত্রা, বেশির ভাগ জায়গায় পাথুরে পাহাড়ের বুক চিড়ে রাস্তা, কোথাও পাশে গভীর গিরিখাত, কোথাও উপত্যকা, কোথাও সবুজ বনÑ সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার এক লীলাভূমি। আর পথের ধারে ফুটে আছে নানা জাতের নানা রঙের বাহারি সব ফুল। আমরা এগোচ্ছি আর আমি একটু পরপর আশপাশে যা দেখি তারই ছবি তুলি। কিন্তু এই দীর্ঘ পথে একটাও খানাখন্দ ছিল না, রাস্তায় একটা গাড়িকেও অকারণ হর্ন দিতে শুনিনি, নিয়ম ভেঙে ওভারটেক করেনি কোনো গাড়ি।

সকালের নাস্তার জন্য পথিমধ্যে আমরা থেমেছিলাম রুহেংগিরি নামের এক জায়গায়। ছোট্ট ছিমছাম মফস্বল শহর। লোকজনরে ভিড় কম, যানবাহনের উৎপাত নেই। খাবারের টেবিলে দেখা গেল একেবারেই অচেনা সব আয়োজন। কলা, আলু, মিষ্টি আলু আর কাসাভা ওদের প্রধান খাদ্য। আমাদের মতো ভাত-রুটি খুব একটা নেই। তবে খাদ্য তালিকায় কলার বাহারি ব্যবহার আগে কোথাও দেখিনি। ওরা কলাকে কেবল ফল হিসেবে নয়, সবজি হিসেবেই বেশি খায়। পাকা কলার বারবিকিউ থেকে শুরু করে কলার ফ্রাই, মাংসের সঙ্গে, মাছের সঙ্গে আলুর সঙ্গে সবকিছুতেই পাকা কলা ওদের খুব প্রিয়। আমাদের মধ্যে যারা খাবারদাবারের ব্যাপারে একটু অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, তারাও ব্যাপারটা উপভোগ করেছি। তবে অ্যাডভেঞ্চার বেশিক্ষণ ভালো লাগে না, তাই সফরের বাকি দিনগুলোয় আমরা ব্যস্ত ছিলাম ভারতীয় রেস্তোরাঁর খোঁজে।

আমরা যখন কিভু লেকের পাশে সেরিনা হোটেলে পৌঁছি তখন প্রায় দুপুর। কঙ্গো সীমান্তবর্তী ওই জলাধারকে যদিও তারা লেক বলে, তবে আমার কাছে তাকে সমুদ্রই মনে হচ্ছিল। বিশাল লেক, ‘কূল নাই কিনার নাই নাই কো দরিয়ার পাড়ি’র মতো অবস্থা। হোটেলসংলগ্ন লেকের তীর ঘেঁষে কেউ প্রাতঃভ্রমণ করেন, কেউ বেলাভূমিতে শুয়ে থাকেন, কেউ সাঁতার কাটেন, কেউ সার্ফিং করেন, কেউ নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানÑ কিন্তু কারও দিকে কেউ ফিরেও তাকান না, নেই কোনো নিরাপত্তার ঝুঁকি বা হয়রানি। এই কিভু লেক রুয়ান্ডার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। রুয়ান্ডার আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। বছরের পুরো সময় তাপমাত্রা মোটামুটি ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। তাই না শীত না গরম আবহাওয়ায় আমরা স্বস্তি বোধ করি। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়, তবে তার স্থায়িত্ব খুবই কম।

পর্যটনের কথা আসায় অবশ্যই বলা দরকার গরিলার কথা। রুয়ান্ডাকে সে দেশের মানুষ বলে ল্যান্ড অব থাউজেন্ড হিলস, মানে হাজার পাহাড়ের দেশ। তার মধ্যে বেশকিছু আছে বিশাল উঁচু পর্বত। মৃত আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্টি হয়েছে সেসব পর্বতের। তেমনই কিছু পর্বতের শিখরে এখনো অবশিষ্ট আছে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী গরিলা। এ রাষ্ট্রের সবচেয়ে পরিচিত, সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড এ গরিলা। তাই পথে পথে গরিলার ভাস্কর্য, গরিলার নামে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, কফি আরও অনেক কিছু। তবে গরিলা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। কারণ ওই পর্বতে যাওয়ার টিকিট নেই, ২০২০ সাল পর্যন্ত সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে, আর টিকিটের দামও কিন্তু সে রকমÑ মাথাপিছু দেড় হাজার মার্কিন ডলার। রুয়ান্ডা সরকার কঠোর সুরক্ষা দেয় আদিম এই প্রাণীকে, যাদের আচরণ অনেকটাই মানুষের মতো।

প্রথম দিন দুপুরে খেতে বসে আমরা পরিচিত হই এক নতুন জিনিসের সঙ্গে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশির মতো ছোট্ট বোতলে হলদেটে এক ধরনের ঘন তরল, খাবারের সঙ্গে এক দুই ফোঁটা মেশালেই মারাত্মক ঝাল, তারও চেয়ে সুন্দর একটা ঝাঁঝালো গন্ধ। আমাদের নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচের মতো সবচেয়ে ঝাল মরিচের নির্যাস বা তেল এটি, নাম আকাবাঙ্গা। এ আকাবাঙ্গা জিনিসটি আমাদের সবার এতই পছন্দ হয় যে আমরা আমাদের গ্রুপের নামকরণ করে ফেলি আকাবাঙ্গা গ্রুপ। দেশে ফেরার সময় সবাইকে আকাবাঙ্গা উপহারও দেন আমাদের স্থানীয় নিমন্ত্রণকর্তারা। আমি ঝাল খেতে ভালোবাসি, এত দিন পর্যন্ত মেক্সিকোর তাবাসকো সসকেই ভাবতাম দুনিয়ার সবচেয়ে ঝাল বস্তু, আমার সে ধারণা ভেঙে দিয়েছে আফ্রিকান এই আকাবাঙ্গা। এ সফরের আয়োজক বাংলাদেশে রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল জেনারেল, প্রখ্যাত ব্যবসায়ী পিএইচপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী। ঢাকা থেকে ১১ জন যাত্রা করলেও দুই দিনের মাথায় সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ১৭-এ। উদ্দেশ্য আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় সিইও কনফারেন্সে যোগ দেওয়া। তবে ওখানে পৌঁছানোর পর ওই সম্মেলনের চেয়ে নতুন দেশটিকে দেখা এবং সবার একত্র হওয়ার আকাক্সক্ষাই প্রবল হয়ে ওঠে। আমাদের দলে ছিলেন এটিএন বাংলার পরিচালক বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী চন্দন সিনহা, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মুন্নী সাহা, পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাসুদ রিজওয়ান, ব্যবসায়ী আলমগীর শাহীন, সৈয়দ মো. ইকবাল, মনজুর আলম ও পিএইচপি ফ্যামিলির কমিউনিকেশন চিফ নাজমুল হাসান। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে এসে যুক্ত হন গৌরব মালহোত্রা, ফ্রান্স থেকে কিটু মজুমদার, নেদারল্যান্ডস থেকে নাহিদুল হাসান আর ভারত থেকে আসেন একলব্য সিং ও তপন রায়। আয়োজক ইকবাল ভাইকে আমরা বলি আইএইচসি। তার নিখুঁত এবং আন্তরিক ব্যবস্থাপনায় কদিনের জন্য রুয়ান্ডাই হয়ে উঠেছিল আমাদের ‘হোম’। তবে আরেকজনের কথা না বললেই নয়, তিনি এরিক। পুরো নাম এরিক কায়গি রুটনি, রুয়ান্ডা সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। দেখতে হ্যান্ডসাম, কথাবার্তা, যোগাযোগ এবং ডিপ্লোম্যাসিতেও সেই রকম চৌকস। ২৩ তারিখ ভোরে কিগালি এয়ারপোর্টে নামার পর থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন এই ভদ্রলোক ছায়ার মতো লেগে ছিলেন আমাদের সঙ্গে। আমাদের যে কোনো প্রয়োজনে তিনি ছিলেন তৎক্ষণাৎ ত্রাণকর্তা। ২৭ তারিখ মধ্যরাতে আমাদেরকে উড়োজাহাজে উঠিয়ে দেওয়া পর্যন্ত তিনি ছিলেন আমাদের নিত্যসঙ্গী।

রুয়ান্ডায় আমদের প্রথম রাত কাটে কিভু লেকের ধারে। রাতে সেখানে এরিকের ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয় বারবিকিউ ডিনার এবং রুয়ান্ডার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সে দেশের শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ এবং গান, তাদের সাজপোশাক আমাদের মুগ্ধ করে। ওই আয়োজনে বাড়তি প্রাপ্তি ছিল আমাদের চন্দন সিনহার গান। আফ্রিকার মাটিতে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, পাশ সমুদ্রের মতো বিশাল লেক, সেখানে ঢাকা থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হারমোনিয়ম বাজিয়ে চন্দন গাইলেন শচীন দেববর্মণের ‘মন দিল না বঁধু’সহ বেশ কয়েকটি গান। আর শেষ করলেন তার বিখ্যাত ‘আমি নিঃস্ব হয়ে যাব’ দিয়ে।

পরদিন আমরা ফিরে আসি রাজধানী শহর কিগালিতে। আসা-যাওয়ার দুই সময়েই পথের ধারে দেখেছি বাংলাদেশের মতো গ্রামীণ হাটবাজার, কিন্তু কোনোটিই রাস্তার ওপরে নয়। রাস্তা থেকে অন্তত ৫০/১০০ গজ দূরে, একটু ভিতরের দিকে, যাতে হাটের কারণে রাস্তায় যান চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়। ফেরার পথের একটি ঘটনা বলা দরকার। একটি বিশেষ প্রয়োজনে আমাদের গাড়ি একবার রাস্তার মাঝের দাগ ক্রস করে এক পাশে দাঁড়িয়েছিল কয়েক মিনিটের জন্য। তখন আশপাশে কোনো গাড়ি ছিল না বা তাতে কারও কোনো অসুবিধাও হয়নি। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যে কোত্থেকে এক পুলিশের গাড়ি যেন উড়ে এসে আমাদের গতি রোধ করে। যেখানে থামার কথা নয় সেখানে থামার অপরাধে আমাদের ড্রাইভারকে জরিমানাই করতে যাচ্ছিল পুলিশ, কিন্তু আবারও ত্রাণকর্তা সেই এরিক। তিনি পুলিশকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাদের মুক্ত করেন। কত যে নিয়মানুবর্তিতা এবং আইনের প্রয়োগ ওই দেশে! আমার তখন মনে পড়ছিল বাংলাদেশের সড়কপথের কথা।

আধুনিক রুয়ান্ডার রাজনৈতিক ইতিহাস বড় করুণ। ১৯৯৪ সালে মাত্র তিন মাসের জাতিগত দাঙ্গায় নিহত হন এ দেশের সাড়ে সাত থেকে আট লাখ মানুষ। সেই গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বীভৎস গণহত্যাগুলোর একটি। সেই গণহত্যার সময় বিদ্রোহী নেতা জেনারেল পল কাগামি ২০০০ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং অবিসংবাদিত নেতা। তার রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বার বার সরকার নির্বাচিত হচ্ছে।

কিগালি পৌঁছে আমরা প্রথমেই যাই সেখানকার জেনোসাইড মেমোরিয়ালে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আদলে সেখানে থরে থরে সাজানো গণহত্যার বিভিন্ন ছবি, প্রামাণ্য দলিল, নিহত মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল, হাড়গোড়। আছে তাদের ব্যবহৃত রক্তমাখা কাপড়, যেসব দেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গণহত্যা চালানো হয়েছে তার অনেক কিছু। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে আমদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় গণহত্যার নির্মমতা। পাশেই গণকবর এবং শহীদদের নাম লেখা দেয়াল। এখনো প্রতিদিন মানুষ এসে নত মস্তকে ফুল রেখে যায় সেই দেয়ালের পাশে। এ গণহত্যা যেমন একদিকে রুয়ান্ডাকে পঙ্গু করে দিয়েছে, অন্যদিকে সেই গণহত্যার পরই জাতি হিসেবে ঘুরে দাঁড়ায়, মাথা তুলে দাঁড়ায় রুয়ান্ডা। এখন সেখানে কেউ আর জাতিগত পরিচয়ে পরিচিত হন না, এখন সবাই এক দেশ এক পরিচয় রুয়ান্ডান। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে কোথাও বাবার নাম, মায়ের নাম বা জাতি-ধর্ম লেখা নেই, কারণ কোনোভাবেই যেন এ দেশেরে মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদ তৈরি না হয় সে ব্যপারে খুবই তৎপর তাদের রাষ্ট্র ও সরকার। আর এ ঐক্যই মাত্র ২০-২৫ বছরে রুয়ান্ডাকে পরিণত করেছে এক আধুনিক রাষ্ট্রে। রুয়ান্ডায় পাঁচ দিনের সফরে যে বিষয়টি আমাদের সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে তা হলো পরিচ্ছন্নতা। শহরে-বন্দরে কোথাও আমরা এক টুকরো কাগজ পড়ে থাকতে দেখিনি। পুরো দেশ ঝকঝকে তকতকে। সবাই নির্ধারিত জায়গায় ময়লা ফেলে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আমাদের দেশের মতো শুধু ভোরবেলা নয়, সারা দিন শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করেন। এমনকি রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতাও তারা সঙ্গে সঙ্গে কুড়িয়ে নেন। স্কুলের ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন তাদের ক্লাসরুম থেকে শুরু করে স্কুলের আঙিনা পরিষ্কার করে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতি মাসের শেষ শনিবার রুয়ান্ডায় দেশজুড়ে মাসিক পরিচ্ছন্নতা দিবস। সেদিন রাষ্ট্রের সব মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উঠান-আঙিনা, বাগান পরিষ্কার করে। আর দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ম চলে আসছে বলে ওই শনিবার পর্যন্ত আসলে কেউ অপেক্ষা করে না, রোজই তারা সবকিছু পরিষ্কার করে। কালো মানুষের দেশ যে কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পারে, যারা রুয়ান্ডা দেখেননি, তারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না।

রুয়ান্ডার গল্প এক লেখায় শেষ করা অসম্ভব। কিন্তু সম্পাদকের নির্দেশ, লেখা বড় করা যাবে না। তাই এখানেই ইতি টানছি। তবে ২৭ মার্চ মধ্যরাতে কিগালি এয়ারপোর্ট থেকে যখন রুয়ান্ডা এয়ারবাস ৩৫০ প্লেনে দেশে ফেরার জন্য দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করি, তথন মাথায় ঘুরছিল একটাই প্রশ্ন- এত বড় গণহত্যার পর মাত্র ২৫ বছরে ওরা যদি এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমার সোনার বাংলায় কেন আমরা ৪৮ বছরেও কোথাও তেমন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম না!

সর্বশেষ খবর