শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশ-বিদেশে রমজানের ঐতিহ্য

দেশ-বিদেশে রমজানের ঐতিহ্য

রমজানের ঠিক আগে মুংগাহান নামের অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে একসঙ্গে খাবারের আয়োজন হয়। এই অনুষ্ঠানে রমজানের তাৎপর্য তুলে ধরে বেশি বেশি ইবাদত করার আহ্বান জানানো হয়

সম্পূর্ণ ধর্মীয় আবেগে মাহে রমজান পালিত হওয়ার কথা থাকলেও দেশে দেশে আঞ্চলিক ঐতিহ্য এসে মিশে গেছে রমজানের ঐতিহ্যে।

এমনই কিছু ঐতিহ্যের কথা লিখেছেন মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

 

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন ইন্দোনেশিয়ায়। বর্তমানে ২৬ কোটিরও বেশি জনঅধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া। যার ৯০ ভাগই মুসলমান। তবে সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়া কোনো মুসলিম রাষ্ট্র নয়; ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা করা হয়। যার শুরু হয় মূলত মাহে রমজানের চাঁদ দেখার আগে থেকেই। রমজানের ঠিক আগে আগে ইন্দোনেশিয়ার একেকটি অঞ্চলে একেক ধরনের রীতি-নীতি বা ঐতিহ্য লালনের নজির রয়েছে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংস্কৃতি কিংবা অন্য ধর্মের প্রভাবের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন অনেক সমালোচক, যার পক্ষে কোরআন বা সুন্নাহর সমর্থন প্রশ্ন সাপেক্ষ। যেমন ইন্দোনেশিয়া বাতেন রাজ্যের ত্যাগেরাং অঞ্চলে এবং জাভা অঞ্চলে মানে রমজান শুরুর আগে ‘পাডুসান’ নামক এক ঐতিহ্য পালন করা হয়। ‘পাডুসান’ শব্দের অর্থ গোসল করা এ সময় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ পাহাড় ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে মন ভরে গোসল করে নিজেদের শরীর এবং মনকে পবিত্র করে নেয়। যারা পাহাড়ি ঝরনার কাছে যেতে পারে না, তারা স্থানীয় নদী বা প্রাকৃতিক জলাধারে নেমে পড়ে। এই গোসলের কোনো নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও পরিবার-পরিজনসহ বেশ বড়সড়ো একটা জমায়েত হয়ে যায়, যা চলে দিনভর। এরপর পরীক্ষার পোশাক ও দেহমন নিয়ে শুরু হয় মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা। পশ্চিম সুমাত্রায় নদী, হৃদ কিংবা নিজের বাসায় গোসল করে নেয় যা কালিমা ((BALIMAU) নামেও পরিচিত। নেলপ নামের ঐতিহ্য অনুসারে দক্ষিণ লপাংয়ের কালিয়ান্দা এলাকায়ও রমজান শুরুর আগের দিন বেলা থাকতেই স্থানীয় কেটাং কালিয়ান্দা সমুদ্রসৈকত এলাকাবাসী গোসল করে নেন সমুদ্রের জলে। মাহে রহমানের পবিত্র চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত চলে নিজের দেহ-মনকে পবিত্র করার এই চর্চা। জাভা রাজ্যের মধ্যভাগে অবস্থিত সিমারাং শহরটি বিখ্যাত হয়ে আছে ‘ডুগডিরান নামক আরেকটি ঐতিহ্যের কারণে। আমাদের দেশে রমজানে ১৪/১৫ দিন আগে শবেবরাত পালন করা হয়। ঠিক একই সময় সিমেরাংয়ে মসজিদের পাশ থেকে কামান দাগিয়ে মাহে রমজানের আগমনী বার্তা ঘোষিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে স্থানীয়ভাবে ডের বলা হয়। এ সময় থেকেই মসজিদভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় এক ধরনের ঢোল বা ড্রাম বাজিয়ে রমজানের আগমনী বার্তা দেওয়া হয়। যা স্থানীয়ভাবে ‘ডুগ’ নামে আখ্যায়িত। এই ‘ডুগ’ এবং ‘ডের’ থেকেই ডুগডিরনের উৎপত্তি। এই সময় বিভিন্ন মসজিদভিত্তিক এলাকা ও সাংগঠনের মধ্যে ঢোল বা ড্রাম বাজানোর প্রতিযোগিতাও হয়ে থাকে। যুগের প্রেক্ষাপটে অনেক এলাকায় কামান ব্যবহারের বদলে আতশবাজি বা ফায়ার ক্রেকার্স পোড়ানো হয়। কোনো কোনো এলাকায় গাছের ফাঁপা অংশ বা খোলে বারুদ ভর্তি করে আগুন জ্বালিয়ে বিকট শব্দে জানানো হয় খোশ আমদেদ মাহে রমজান। এই পবিত্র মাসের ঠিক আগে মুংগাহান নামের অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজনও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে খাবারের আয়োজন হয়। এই অনুষ্ঠানে রমজানের তাৎপর্য তুলে ধরে বেশি বেশি এবাদত করার আহ্বান জানান হয়।

মিউগাং নামের ঐতিহ্য অনুসারে রমজানের দু-একদিন আগে পশু জবাই করা হয় এবং রমজান মাসের জন্য মাংস সংরক্ষণ করা হয়। প্রায় পুরো ইন্দোনেশিয়া জুড়ে নাইকার বা জিয়ারত পালন করা হয়। রমজানের আগে পূর্ব-পুরুষদের কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং মাসজুড়ে জিয়ারত করা হয়। এ সময় কবরে ফুল দিতেও দেখা যায়।

দক্ষিণ সুমাত্রার আরেকটি আকর্ষণ হলো ঐতিহ্যবাহী পোশাকে রংবেরঙের মশাল মিছিলের মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানান।

আফ্রিকা আর এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ মিসর। এ দেশের প্রায় সাড়ে নয় কোটি মানুষের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই মুসলমান। তাই পবিত্র রমজানে সমগ্র মিসর এবং ধর্মীয় উৎসবমুখর আরব অনুভব করা যায়। হরেক রকম ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে মিসরে রমজান পালিত হলেও এই পবিত্র মাসে মিসরের লণ্ঠন জ্বালানোর উৎসবের খ্যাতি জগৎজুড়ে। ঐতিহাসিকদের মতে হিজরি ৩৫৮ সালের ১৫ রমজান তারিখে ফাতেমীয় বংশের শাসক ও ধর্মীয় নেতা আল মুইজ আলদিন মিসরে প্রবেশ করেন। অন্ধকার দূর করে আলোকিত পথে তাকে মসজিদে নেওয়ার জন্য তৎকালীন মিসরবাসী মোমবাতিসহ নানা ধরনের প্রদীপ প্রজ্বলন করে। আর বাতাসে যেন না নিভে। সেজন্য কাঠের তৈরি এক ধরনের বাক্স বা খাঁচার ভিতর রাখা হয়েছিল এসব মোমবাতি ও প্রদীপ। তখন থেকেই আরও মুসলিম বিংশ প্রদীপের এই উৎসবমুখর ব্যবহার শুরু হয় এবং ‘ফানুস’ নামে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিসর, সিরিয়া ও তৎকালীন মেসোপেটোমিয়ার শাসক এবং মুসলিম বীর আন নাসির সালাহ আমদিন ইউসুফ বিন আইয়ুব ওরফে গাজী সালাউদ্দিনের সময় এই লণ্ঠন বা ফানুস ব্যাপক জনপ্রিয়তা প্রায়। রমজান শুরুর আগেই মিসরের ঘাট-বাজারে ছোট-বড় নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। উজ্জ্বল ও গাঢ় রংয়ের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় এসব লণ্ঠনে। মনের আনন্দে এসব লণ্ঠন কিনে দোকান-মাঠ-মিল-কারখানা বাসা-বাড়ি সাজিয়ে ফেলে। এ সময় শিশুদেরও বায়না থাকে নিত্যনতুন রঙিন লণ্ঠন কেনার জন্য। হাতে লণ্ঠন নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়, গান গায় আর বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করে। বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের ফলে কাঠের বদলে লোহা, তামা ও অন্যান্য ধারক দ্রব্য, কাচ ও স্বচ্ছ প্লাসিক শিটের ব্যবহার ঘটছে আধুনিক লণ্ঠনের নির্মাণ শৈলীতে। ফাতেমীয় আসলে রমজান মাসে রাস্তা আলোকিত করার কথা ও প্রচালিত আছে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনো মিসরের রাস্তায় লণ্ঠন দিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়। মিসরের সর্বত্র লণ্ঠনের বাজার গড়ে উঠলেও ঐতিহ্যগতভাবে স্থানীয় ইসলামিক জাদুঘরের নিকটবর্তী বাব জিউইলিয়াহ নামক স্থানটি লণ্ঠনের বিশাল বাজার বলে বিখ্যাত। ১১ শতকে নির্মিত সিটি গেটসংলগ্ন এই লণ্ঠন বাজারে রমজান মাসে দেশি-বিদেশি বহু পর্যটকের সমারহ ঘটে। মিসরে রমজানের আরেকটি ঐতিহ্য হলো সাহরির সময় ঢোল বাজিয়ে ঘুম থেকে জাগানো। উসমানীয় শাসনামলে কোনো ঘড়ি বা এলার্ম সিস্টেম ছিল না। তখন থেকেই ধরে রেখেছে মিসরবাসী। ঢোলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাব গম্ভীর গানও গেয়ে থাকে এই বাদক দল। মাসব্যাপী এই সেবা দিয়ে ঈদের আগে পাড়া-মহল্লা থেকে ঈদের বখশিশ সংগ্রহ করে উদযাপন করে খুশির ঈদ। মিসরে রমজানের আরেকটি ঐতিহ্য, কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় ঘোষণা করা। এই ঐতিহ্য শুরুর পেছনে একটি মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। মিসরবাসীর ধারণা অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে মিসর ও সুদানের স্বঘোষিত খতিব মোহাম্মদ আলী পাশা মিসরীয় সেনাবাহিনীর জন্য কিছু কামান সংগ্রহ করেন। একদিন কাকতালীয়ভাবে ইফতারের সময় শুরুর সঙ্গে সঙ্গে একটি কামান থেকে গোলা বিস্ফোরিত হয়। যদিও বিষয়টি ছিল দুর্ঘটনাবশত। তথাপি মিসরবাসী ধরে নেয় খতিব মোহাম্মদ আলীর আদেশে কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। সেই থেকে অদ্যাবধি ইফতারের সময় কামান দাগানো হয়, যা স্বচক্ষে বা টেলিভিশনে উপভোগ করেন মিসরবাসী।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রমজান মাসে প্রায় একই ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে রমজান পূর্ববর্তী শাবান মাসের মধ্যভাগ থেকে আরববাসী রমজানের জন্য খাদ্য-দ্রব্য, ফল ও পানীয় সংগ্রহ শুরু করত। আর গৃহিণীরা তৈরি করত হরেক রকম শুকনো খাবার, যা সহজে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল না।

শাবান মাসের শেষে গোত্র বা উপজাতীয় প্রধানরা তীক্ষ্ন দৃষ্টিশক্তির পুরুষদের বাছাই করতেন রমজানের চাঁদ দেখার জন্য। নির্দিষ্ট দিকে খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় নিয়ে তার এলাকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বা অন্য কোনো উচ্চস্থানে অবস্থান নিতেন। তাদের সাহায্য করার জন্য কিছু কিশোর আলোর মশাল ও পানীয় নিয়ে সঙ্গী হতো। চাঁদ দেখা মাত্র তার সঙ্গে থাকা বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে তাকে পাশের সবাইকে রমজান শুরুর বার্তা পৌঁছে দিত। আরব বিশ্বের বহু দেশে বন্দুকের বদলে আজো কামান দাগিয়ে রমজানের আগমন ও ইফতারের সময় জানানো হয়। ইউনাইটেড আরব আমিরাতের দুবাইতে ছয়টি কামানের প্রতিটি দুবার গোলা নিক্ষেপ করে রমজানের আগমন ও বিদায় ঘোষণা করে। আর প্রতিদিন ইফতারের আগে প্রতিটি কামান একটি করে গোলা নিক্ষেপ করে ইফতারের সময় নির্দেশ করে। দুবাইর মদিনাত জুমেরা এ ধরনের কামান ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। যা দেখতে অনেক পর্যটন ভিড় জমায়।

রমজানজুড়ে আরব বিশ্বের ঘরে ঘরে ঘরোয়া আড্ডা জমে ওঠে। আর এই আড্ডায় ধর্ম চর্চাও চলে। ঘরের নারীরা বয়োবৃদ্ধদের ঘিরে বসে। সঙ্গে থাকে তাদের সন্তানরা। তারপর গল্পের ছলে তাদের শোনানো হয় ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। যার উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে। প্রাচীনকালে গোত্র প্রধানরা তাদের দূত পাঠিয়ে দূরে বসবাসরত আরববাসী বা বেদুঈনের রমজানের ও ঈদের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিত। বর্তমানে টেলিভিশন ও রেডিওতে তা প্রচার করা হয়। এক সময় গোত্র প্রধানের নির্দেশে একদল মানুষ সাহরির জন্য এলাকাবাসীকে ডেকে দিত। উসমানীয় শাসনামল থেকে ঢোল বাজিয়ে সাহরির জন্য ঘুম ভাঙানোর প্রচলন শুরু হয়, যা আজো ধরে রেখেছে আরব বিশ্বের বহুদেশ। শুধু তুরস্কেই এরকম দুই হাজারের বেশি বাদক রয়েছে, যারা অলিতে গলিতে ড্রাম বাজিয়ে ঘুম ভাঙায় সাহরির জন্য। ইরাকের পুরুষরা ইফতারের পর জমায়েত হতো ‘মেহেবিজ’ নামক এক ধরনের খেলার জন্য। একটি দলের সদস্যরা গোল হয়ে বসলে দলের দলপতি একটি কম্বল বা কাপড়ে ঢেকে যে কোনো একজনকে একটি রিং দিয়ে দিত। এই দলের সবাই হাতের মুঠিবদ্ধ করে বসে থাকত। বিপক্ষ দলকে প্রতিপক্ষের শারীরিক ভাষা দেখে বের করতে হতো, কার মুঠিতে আছে এই রিং। বর্তমান আরব বিশ্বে ইফতারের পর ফ্ল্যাড লাইটের আলোতে ফুটবল খেলা কিংবা গোল হয়ে বসে টেলিভিশনে খেলা দেখা ও আরবীয় কফি বা ‘গাওয়া’ খাওয়া অতি জনপ্রিয়। ‘সিসা’ নামে পরিচিত লব্ধ নল বিশিষ্ট হুঁক্কা ‘ব্যবহার করে ধূমপান ও করতে দেখা যায়।’

আরব বিশ্বের প্রতিটি মসজিদে, রাস্তার পাশে কোনো কোনো এলাকায় নারীদের মাঝেও হুঁক্কা বা সিসার মাধ্যমে ধূমপানের রীতি রয়েছে। খোলা মাঠে ইফতারের ব্যাপক আয়োজন করা হয়। এখানে ইফতার শেষে তারা মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে। তারপর ঘরে ফিরে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন খাবারে অংশ নেয়। ‘কেয়ামুল লাইল’ নামের দীর্ঘ নামাজেও শামিল হন আরবের মুসলমানরা, যা চলে সাহরির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। কেয়ামতের বর্ণনা, কবরের শাস্তি এবং দোজখের ভয়াবহতার বর্ণিত হয়েছে এমন সূরা পাঠের সময় কেঁদে বুক ভাসান মুসল্লিরা। আবার রাতভর পরিবার-পরিজন নিয়ে পার্কে ঘোরা, সমুদ্রপাড়ে পাটি বিছিয়ে সময় কাটান আর শপিংমলে কেনাকাটা ও আরবদের হলের অভ্যাস। তাই বলা হয় রমজানে রাতে জেগে থাকে আরব বিশ্ব।

বাংলাদেশের সর্বত্র রমজানের ঐতিহ্য প্রায় একই রকম। উঁচু দালানের উপর দাঁড়িয়ে রমজান বা ঈদের চাঁদ দেখা প্রায় পরিচিত দৃশ্য। টেলিভিশনের পর্দায়ও চোখ থাকে অনেকের। চাঁদ দেখামাত্র সাইরেন বাজান বা বাজি ফোটানোর ঐতিহ্যও রয়েছে। এক সময় গ্রামের জোতদার বা জমিদাররা বন্দুকের গুলি ছুড়লেও আজকাল আর তা চোখে পড়ে না।

তবে যা চোখে পড়ে তা হলো পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। পুরান ঢাকায় বিশেষত চকবাজারে নানা রকম ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হন খাবার প্রস্তুতকারীরা। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন যে, কত বিচিত্র হতে পারে এসব খাবারের স্বাদ ও পরিবেশনার কৌশল। বাংলাদেশকে যারা অবহেলার চোখে দেখে, তাদের একবার যদি চকবাজারের ইফতারের আয়োজন দেখানো হয়, তবে নিঃসন্দেহে তাদের সব ধারণা পাল্টে যাবে। পুরান ঢাকার আরেকটি ঐতিহ্য ‘কাসিদা’ নামের এক ধরনের গজল বা সংগীতের মাধ্যমে সাহরির সময় সবাইকে ডেকে তোলা। যুগের পরিবর্তনে এই ‘কাসিদা’ এখন ইসলামী সংগীত, কেরাত ও হাফেজ প্রতিযোগিতার অদলে রিয়্যালেটি শো হয়ে ঠাঁই পেয়েছে টেলিভিশনের পর্দায়। আর পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতার নতুন ঢাকা পাড়ি দিয়ে চলে এসেছে বসুন্ধরার আন্তর্জাতিক  কনভেনশন সিটিতে।

 

আফ্রিকা আর এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ মিসর। এ দেশের প্রায় সাড়ে নয় কোটি মানুষের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই মুসলমান। তাই পবিত্র রমজানে সমগ্র মিসরে এক ধর্মীয় উৎসবমুখর আরব অনুভব করা যায়। হরেক রকম ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে মিসরে রমজান পালিত হলেও এই পবিত্র মাসে মিসরের লণ্ঠন জ্বালানোর উৎসবের খ্যাতি জগৎজুড়ে। ঐতিহাসিকদের মতে হিজরি ৩৫৮ সালের ১৫ রমজান তারিখে ফাতেমীয় বংশের শাসক ও ধর্মীয় নেতা আল মুইজ আলদিন মিসরে প্রবেশ করেন। অন্ধকার দূর করে আলোকিত পথে তাকে মসজিদে নেওয়ার জন্য তৎকালীন মিসরবাসী মোমবাতিসহ নানা ধরনের প্রদীপ প্রজ্বালন করে।

ইন্দোনেশিয়ার রীতি অনুযায়ী ধনী-গরিব-নির্বিশেষে পাহাড় ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে এভাবে গোসল করে শরীর এবং মনকে পবিত্র করে নেয়

সর্বশেষ খবর