শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুসলিম বিশ্বের ঐতিহাসিক গ্রন্থাগার

জ্ঞানের খোঁজ করা মুসলিম ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষা, গবেষণায় মুসলিম মনীষীদের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। তাদের হাতে রচিত বিশ্ব সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গবেষণাধর্মী কাজগুলো মলাটবন্দী রয়েছে বই ও নথিতে। যুগের পর যুগ ধরে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে এ বইগুলো ভূমিকা রেখে চলেছে। সেসব বই নিয়ে গড়ে উঠেছে লাইব্রেরি। বিশ্বের নানা প্রান্তে রয়েছে এ লাইব্রেরিগুলো। জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় মানব সভ্যতার উন্নয়ন ও বিকাশে সেরাদের কাতারে থাকা মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসেরা লাইব্রেরি নিয়ে আজকের আয়োজন।

তানিয়া তুষ্টি

মুসলিম বিশ্বের ঐতিহাসিক গ্রন্থাগার

বিশ্বের প্রাচীনতম মুসলিম গ্রন্থাগার আল-কারাউইন

আল-কারাউইন মরক্কো

বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার আফ্রিকার মরক্কোতে অবস্থিত আল-কারাউইন। হাজার বছরের বেশি পুরাতন এ গ্রন্থাগার এখনো বিলিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানের আলো। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গ্রন্থাগারে ভিড় করতেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত জ্ঞানী-গুণী, পর্যটক ও ছাত্র-শিক্ষক। আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার। এখানে আছে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিল্পকলা, ইতিহাস-ভূগোল, জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রগামী দেশ মরক্কোর অতীত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য। ইসলামের প্রথম যুগের নানা পান্ডুলিপি পাওয়া যায় এ পাঠাগারে। এর মধ্যে আছে, নবম শতকের একটি আল-কোরআন এবং দশম শতকে লিখিত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনীর বিভিন্ন অংশ। এ ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিজ্ঞানের ওপর বই আছে এখানে।

৮৫৯ সালে আরবের ধনী নারী ফাতেমা আল ফিহরির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফেজ নগরীর কারাউইন নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সে বছরই মসজিদের আঙিনায় তিনি গড়ে তোলেন আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আল-কারউইন বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৩৫৯ সাল পর্যন্ত একটানা চালু ছিল পাঠাগারটি। তবে বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধে উপনিবেশবাদীদের দখল-বেদখলের ঘটনায় ফেজ শহর আঘাতপ্রাপ্ত হলেও আল-কারাউইন মোটামুটি অক্ষতই ছিল। কখনো কখনো বন্ধ থেকেছে বিশাল এ জ্ঞানের ভান্ডার। কয়েক প্রজন্ম ধরে পাঠাগারের রক্ষীরা এসব মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত রেখেছেন তালাবদ্ধ। কিন্তু পাঠাগারের অবকাঠামোগত সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পাঠাগারে প্রবেশ করে নানা রকম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। হঠাৎ করে আল-কারাউইনের পাটাতনের নিচ দিয়ে ধীরে ধীরে পানির স্রোত বইতে শুরু করে।

১৯১৩-৫৬ সাল পর্যন্ত ঔপনিবেশিক আমলে ফ্রান্স পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরেকবার ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও সনদ বিতরণ বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীনতা লাভ করার পর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন বাদশা মুহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত, পদার্থ, রসায়নসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান বিভাগ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলেন। ১৯৫৭ সালে খোলা হয় নারীশিক্ষার্থী বিভাগ। ১৯৬৩ সালে কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে মরক্কোর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি আল-কারাউইন পাঠাগারকে বাঁচাতে নতুন পদক্ষেপ নেয় মরক্কোর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। পাঠাগারটিকে পুনরায় চালু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তারা নিয়োগ দেয় আজিজা চাউনি এবং তার স্থাপত্যদলকে। প্রকৌশলীরা ভবনের ভিত্তি পুনরায় স্থাপন করেছেন, সেখানে নতুন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করেছেন এবং ভবনের সবুজ রঙের ছাদের প্রতিটি টাইলস আগের মতো দৃষ্টিনন্দন রূপে তৈরি করেছেন।

 

মক্কা লাইব্রেরি সৌদি আরব

ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার মক্কা লাইব্রেরি। আব্বাসীয় শাসক খলিফা মাহদির শাসনামলে সৌদি আরবে সাফা-মারওয়া সা’ঈর থেকে পূর্ব পাশে ১৬০ হিজরিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩৫৭ হিজরিতে বাদশা আবদুল আজিজের শাসনামলে প্রথম এর নামকরণ করা হয় ‘মাকতাবাতুল হারাম আল-মাক্কি’। প্রথমে এটি হারাম শরিফের একটি গম্বুজের অংশবিশেষ থাকলেও পরবর্তীতে গ্রন্থাগারটি হারাম শরিফের বাইরে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এর সংগ্রহে আছে পাঁচ লক্ষাধিক বই। এর মধ্যে ৮ হাজারের অধিক মুদ্রিত-অমুদ্রিত পাণ্ডুলিপি রয়েছে। দুর্লভ পান্ডুলিপি আছে প্রায় ৫ হাজারের মতো। এখানে থাকা ইবনে নাদিমের (মৃত্যু ৪৩৮ হি.) ‘আল-ফিহরিস্ত’, আল্লামা হায়ছামির ‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি পৃথিবীতে এই একটিই। মক্কা লাইব্রেরির বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। এর পরিসেবা বিভাগটি সাধারণ পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত। লাইব্রেরির বিশাল হলরুমে রয়েছে এক লাখেরও বেশি সংকলন। যে কোনো আগ্রহী পাঠক এখানকার মনোরম পরিবেশে এসে অধ্যয়ন করতে পারেন। লাইব্রেরির পাণ্ডুলিপি বিভাগ নির্ধারিত করা হয়েছে গবেষক ও বিশ্লেষকদের জন্য। গবেষণার জন্য এখানে আছে প্রায় ৬৮৪৭টি মূল পান্ডুলিপি। সেই সঙ্গে ৩৫৮টি অনারবি এবং ২৩১৪টি ফটো পাণ্ডুলিপিও রয়েছে। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে প্রশিক্ষণ বিভাগ, ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি বিভাগ, মাইক্রোফিল্ম বিভাগ, ফটো মাইক্রোফিল্ম বিভাগ, হারামাইন স্টল, নারী বিভাগসহ আরও অনেক সুবিধা।

 

মদিনা লাইব্রেরি সৌদি আরব

রাসুলের শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরি ‘মদিনা মুনাওয়ারা লাইব্রেরি’। ৮৮৬ হিজরির ১৩ রমাজানের অগ্নিকান্ডে লাইব্রেরির অনেক মূল্যবান বই ভস্ম হয়ে যায়। তখনকার সময়ে একে ‘খিজানাতুল কুতুব’ নামে অবিহিত করা হতো। তবে ১৩৫২ হিজরিতে ধর্ম ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ওবায়েদ মাদানির পরামর্শে এ লাইব্রেরিকে ‘মাকাতাবাতু মাসজিদিন নববি’ নামকরণ করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এর অবস্থানেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। অবশেষে মসজিদে নববির পশ্চিম দিকের ১২নং গেট সংলগ্ন ছাদে লাইব্রেরিটি স্থানান্তর করা হয়। অত্যাধুনিক কারিগরি ব্যবস্থাপনায় সুবিন্যস্ত ও সুশৃঙ্খল করে সাজানো হয় গোটা লাইব্রেরিকে। কয়েক ভাগে বিভক্ত মনোরম এ লাইব্রেরিটি। মসজিদের ছাদের ওপর রয়েছে অধ্যায়ন কক্ষ। এতে আছে ৩৫৮টি সেলফ, প্রায় লাখখানেক বই এবং গবেষকদের জন্য তিনশ চেয়ার। এতে আছে ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের সাহায্যে কম্পিউটারে অধ্যয়ণের সুব্যবস্থা। পাণ্ডুলিপিসহ অসংখ্য গ্রন্থের বিপুল সমাহার। আছে শ্রুতি লাইব্রেরি। তিলাওয়াত ও হারামাইনের খুতবা, অসংখ্য আলোচনা, দরস-নসিহত সবই শোনা যায় এর সাহায্যে। এ ছাড়া আরও অনেক বিভাগ এর। আছে নির্দিষ্ট অধ্যয়ন কক্ষ, সাময়িকী বিভাগ, দুর্লভ গ্রন্থ বিভাগ,  নারীদের অধ্যয়ন কক্ষ ও বিশেষ সংগ্রহ বিভাগ রয়েছে। এখান থেকে বাঁধাই প্রকল্প, কিতাব ও পাণ্ডুলিপি মেরামত ও সংরক্ষণ, হস্ত ও মেশিনে কিতাব লিখন করা যায়। মদিনার বুকে ‘মদিনা মুনাওয়ারা লাইব্রেরি’ তাই ইসলামের অন্যতম স্মারক হয়ে আজও বিরাজ করছে।

 

ইরান লাইব্রেরি ইরান

বিশাল বিশাল লাইব্রেরি রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে এক লাখ ১০ হাজার বর্গমিটারের বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়েছে তেহরান বুক গার্ডেন। ধারণা করা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানে নির্মিত লাইব্রেরিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি। দেশটির রাজধানী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আব্বাসাবাদ হিলসে নির্মিত লাইব্রেরিটিতে বইয়ের মনোরম প্রদর্শনীর সঙ্গে থাকছে একটি আর্ট গ্যালারি ও অ্যাম্ফেথিয়েটার। এ লাইব্রেরিতে শিশুদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে একটি বিশেষ সেকশন। শুধু তাদের জন্যই রয়েছে চার লাখ বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। এ লাইব্রেরির অন্যান্য অংশের মধ্যে রয়েছে মুভি থিয়েটার, সায়েন্স হল, ক্লাসরুম, একটি রেস্টুরেন্ট এবং একটি প্রার্থনা ঘর। আর মনোরম পরিবেশে পড়ার জন্য লাইব্রেরির ছাদে রয়েছে সবুজ পার্ক। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন হওয়া লাইব্রেরিটি দেশের জন্য একটি বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সুযোগ গ্রহণ করে শিশুরা সর্বোত্তমভাবে গড়ে উঠবে বলে ধারণা দেশটির বোদ্ধাদের। তেহরান বুক গার্ডেনের প্রথম প্রস্তাব এসেছিল ২০০৪ সালে। তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলার তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে এ প্রস্তাবটি আসে। এর আগে গিনেজ বুক রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরির তকমা অর্জন করেছিল নিউইয়র্ক শহরের ফিফথ এভিনিউয়ের বার্নেস অ্যান্ড নোবেল। তার আয়তন ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার বর্গফুট। সেখানে দীর্ঘ ১২ মাইল জায়গাজুড়ে বই রাখার সেলফ রয়েছে।

 

আলেকজান্দ্রিয়া মিসর

খ্রিস্টপূর্ব ২৮৮ অব্দে টলেমি-১ম দিমিত্রিয়াসের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লাইব্রেরি অব আলেকজান্দ্রিয়া’। ৬০০ বছরের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখার আবিষ্কার ও দলিলের সাক্ষী হয়ে ওঠে এ লাইব্রেরি। প্রায় ১০০ জন বিদ্যান ব্যক্তি সার্বক্ষণিক এখানে লেখালেখি, গবেষণা, অনুবাদ ও অনুলিপির কাজ করতেন। ধারণা করা হয় প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে ৭ লাখের মতো চামড়া বা কাগজে পেঁচানো প্রাচীন গ্রন্থ ছিল। ১ লাখেরও বেশি ছাপা বই কাঠের শেলফে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে লাইব্রেরিটি ধ্বংস হয়ে যায়। এর প্রায় ১৫ শতাব্দী পর ১৯৭৪ সালে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে আবারও আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ইউনেস্কোর সহায়তায় ১৯৯৫ সালে এর নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়। ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল এক প্রজেক্টের অধীনে লাইব্রেরিতে নির্মাণ করা হয় ৮০ লাখ বই রাখার মতো শেলফ ও ১১টি চৌবাচ্চায়  প্রায় ৭০ হাজার বর্গমিটারজুড়ে মূল পাঠকক্ষটি। আছে বিশাল কনফারেন্স সেন্টার, ৪টি মিউজিয়াম, ৪টি গ্যালারি। পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের জন্য আছে বিশেষ ল্যাব। বিশেষ গবেষণা কেন্দ্র আছে ৭টি। প্রদর্শনীর জন্য আছে ৭টি বিশেষ গ্যালারি। ধূসর বর্ণের আসওয়ান গ্রানাইট দিয়ে এর দেয়াল তৈরি করা হয়েছে, যাতে ১২০ ধরনের রকমফের হস্তলিপি খোদাই করা আছে।

 

বায়তুল হিকমাহ বাগদাদ

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সাড়া জাগানো ও প্রভাবশালী জ্ঞানচর্চাকেন্দ্র বায়তুল হিকমাহ বা জ্ঞানের ভান্ডার। একটি অনুবাদকেন্দ্র হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ক্রমেই তা উচ্চতর গবেষণাকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানমন্দির ও মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রে পরিণত হয়। আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদ বাগদাদে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর মানসুরের নির্দেশে চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, প্রকৌশল ও সাহিত্যের বইগুলো অনুবাদ করা হতো। তিনি রাজপ্রাসাদে বইগুলো সংরক্ষণ করতেন। হারুনুর রশিদ খলিফা হওয়ার পর তা সাধারণ পাঠক, আলেম ও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। খলিফা মামুনের যুগকেই বায়তুল হিকমার স্বর্ণযুগ বলা হয়। তিনি বায়তুল হিকমাহকে পূর্ণতা দান করেন। রোম, পারস্য ও ভারতবর্ষ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সাহিত্যের দুর্লভ বই সংগ্রহ করে অনুবাদ ও তার ভিত্তিতে গবেষণার নির্দেশ দেন। তার আমলে বায়তুল হিকমায় জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, চিকিৎসা ও সাহিত্যের ওপর অসংখ্য বই অনূদিত ও রচিত হয়।

 

আল আজহার মিসর

বিখ্যাত লাইব্রেরির কথা এলেই মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির নাম আসবেই। শায়খ আবদুহুর তত্ত্বাবধানে ১৮৯৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এখানে দুই লাখের বেশি বই রয়েছে। এ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে প্রাচীন ও দুর্লভ সব বই ও পাণ্ডুলিপি। বিশেষ করে হিজরি নবম শতাব্দী ও তার পরবর্তী যুগের পাণ্ডুলিপির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সংরক্ষিত আছে এখানে। ২০০৫ সালে এখানকার পাণ্ডুলিপির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজারে। ৬৩টি শাস্ত্র ও বিষয়ে বর্তমানে ৪৫০ আধুনিক শেলফসমৃদ্ধ ৩১৮টি হলরুম আছে লাইব্রেরিটিতে। আছে ৭৪টি কম্পিউটার। আলাদা প্রকাশনা বিভাগও আছে লাইব্রেরির। আছে ২৬টি নিজস্ব প্রেস মেশিন। চার মাজহাবের ফিকহ-হাদিস-ইতিহাস, তাফসির, সিরাত, আধ্যাত্মিকতা, ভাষা-সাহিত্য, বালাগাত ও অলঙ্কার, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, রাজত্ব ও বাদশা নামদারদের কথনসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ আছে এখানে।

সর্বশেষ খবর