শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুমায়ূন পাঠশালা

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা থেকে

হুমায়ূন পাঠশালা

প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে সুন্দর মনোরম পরিবেশে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। চারপাশ খোলা মনোরম পরিবেশে তৈরি বিদ্যাপীঠটির অবকাঠামো সৌন্দর্যও যেন চোখে পড়ার মতোই। চারিদিকে বকুল, কৃষ্ণচূড়া আর তেঁতুল গাছ লাগানো। যা থেকে নির্মল বাতাস পায় শিক্ষার্থীরা। বিদ্যাপীঠের ঠিক উল্টো দিকেই মেইন ফটকের সামনে লেখক বকুল গাছ লাগিয়ে সেটির নামকরণ করেছিলেন বকুলতলা। আর সেখানেই নির্মাণ করেন ৪ শহীদের নাম লিখে ‘শহীদ স্মৃতি ফলক’। বিদ্যাপীঠে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে চার শহীদের নাম সংবলিত স্মৃতি ফলকটি। প্রথমেই রয়েছে লেখকের পিতা কুতুবপুর গ্রামের শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ, কচন্দরা গ্রামের শহীদ মুখলেছুর রহমান খান, বালিজুরা গ্রামের মুকলেসুজ্জামান ও বারইকান্দা গ্রামের আবদুল লতিফ মাস্টারের নাম। বাবার নামে নামকরণ না করে তিনি দেশের সব শহীদকে উৎসর্গ করেই বিদ্যাপীঠের নামকরণ করেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। তবে নামফলক দিয়ে সড়কের নাম করেছেন শহীদ ফয়জুর রহমান সড়ক। এদিকে বিদ্যাপীঠের শিক্ষাদান কর্মসূচিও গতানুগতিক থেকে ভিন্ন আঙ্গিকের। মা আয়েশা ফয়েজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন নন্দিত এ কথাসাহিত্যিক। বর্তমানে এ নান্দনিকতা শুধু বিদ্যাপীঠ ঘিরেই নয়। শিক্ষার্থীরা যখন দূর-দূরান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা- যাওয়া করে সেই দৃশ্য যেন দৃষ্টি কাড়ে। বিশেষ করে যেখানে নারীরা এখনো অবহেলিত সেখানে সাইকেলে চড়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া সত্যিই বিরল। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মা ছিলেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখবাড়ির সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। তখনকার সময়ে পৈতৃক ভিটা কেন্দুয়ার কুতুবপুরে ছিল না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনকি আশপাশ এলাকাতেও না। তখন শশুরবাড়ি এলাকায় যাওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদের মায়ের মনে  হয়েছিল এই অঞ্চলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে হয়তো  ছেলেদের তিনি এখানেই পড়াতে পারতেন। সেই থেকে তিনি সে এলাকায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পৈতৃক ভিটার অদূরেই তিন একর জায়গা কেনেন। স্বপ্নের বিদ্যাপীঠকে বাস্তবে রূপ দিতে ১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। এরপর অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয় ২০০০ সনে। পরে সরকারিকরণ নিয়ে নানা জটিলতায় ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে  প্রতিষ্ঠা হয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ১১ বছরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিদ্যাপীঠে বর্তমানে ৩২৯ জন শিক্ষার্থী হয়েছে। সাফল্য ধরে রেখে এগিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। সুদূরপ্রসারী ভাবনা নিয়েই হুমায়ূন আহমেদ বিদ্যাপীঠ নামকরণ করেছিলেন। ভবিষ্যতে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হবে এই প্রত্যাশায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর