শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

রুটির দোকান থেকে মানুষের অন্তরে

রুটির দোকান থেকে মানুষের অন্তরে

কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি ও সংগীতজ্ঞ। জš§স্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামের এক মক্তবে কোরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে নজরুলের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাকে নামতে হয় জীবিকা অর্জনে। স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ১৯১০ সালে নজরুল লেটো দল ছেড়ে ছাত্রজীবনে ফিরে আসেন।

কিছুদিন আসানসোল রুটির দোকানে কাজ করেন। এভাবে বেশ কষ্টের মাঝেই তার বাল্যজীবন অতিবাহিত হতে থাকে। এই দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনিই নজরুলকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। ১৯১৫ সালে তিনি আবার রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে যান এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই পড়াশোনা করেন। এ বছরের শেষ দিকে মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়ে তিনি  ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। প্রায় আড়াই বছরে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার হয়েছিলেন। ১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে তিনি সৈনিকজীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  তারপর গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সঙ্গে পরিচিত হয়ে প্রথম কুমিল্ল­ার বিরজা সুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সঙ্গে। যার সঙ্গে তার পরিণয় হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্ল­ায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল। এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সঙ্গে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেনÑ‘ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী’। তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতি লাভ করে। ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট নজরুল ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো। পরবর্তী জীবনে তিনি প্রায় চার হাজার গান, বহু কবিতা রচনা করেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এ সময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বশেষ খবর