শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব

সাইফ ইমন

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিদের পর্যায়ক্রম নির্ধারণ করে ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম তাদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়। এ তালিকাটি ৫০০ মুসলিম নামেও পরিচিত। আম্মানে অবস্থিত দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার প্রতি বছর এ তালিকা তৈরি করে আসছে...

 

পারসন অব দ্য ইয়ার

ইমরান খান, প্রধানমন্ত্রী (পাকিস্তান)

ইমরান খান নিডাজি পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছিল। প্রায় দুই দশক রাজনীতি করার পর সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দেশটির জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার দল পিটিআই নির্বাচনে জয় পেলেও সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। ফলে ছোট ছোট দলগুলোর সহায়তায় তাকে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী এ মুসলিম নেতার এজেন্ডার মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের বিষয়টিই প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচনায় রেখেছেন। পাকিস্তান চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে গত কয়েক বছর ধরেই। এসব সংকট কাটিয়ে তিনি একটি ‘নতুন পাকিস্তান’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

জায়েদ আল নাহিয়ান

ক্রাউন প্রিন্স, আবুধাবি

পুরো নাম মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। আবুধাবির এই ক্রাউন প্রিন্স সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে কাজ করছেন। ৫৮ বছর বয়সী জায়েদ আল নাহিয়ান প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের তৃতীয় ছেলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বজন-সম্মানিত প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি ১৯৭১-এ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ২০০৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব, দানশীলতা, দাতব্য ও উন্নয়নের কারণে তাকে প্রভাবশালী মুসলিম তালিকায় মনোনিত করা হয়।

 

 

কাবুস বিন সাদ-আল-সাইদ

সুলতান, ওমান

ওমানের বর্তমান সুলতান কাবুস বিন সাদ ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।  সুলতান কাবুস তার বাবা সাইদ বিন তাইমুরকে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে ওমানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পুনেতে তিনি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার ছাত্র ছিলেন। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষে ২০ বছর বয়সে তিনি রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে যোগ দেন। স্যান্ডহার্স্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি জার্মানিতে এক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। আল সাইদ রাজবংশের ১৪তম প্রজন্ম এ সুলতান।

 

 

রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান

 প্রেসিডেন্ট, তুরস্ক

রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতি। ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এরদোগান। তিনিই ২০০৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব। ২০০১ সালে তিনি জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একেপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে। বিভিন্ন কারণে বিশ্বমহলে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত। তার দল তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে টানা ৪ বার সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়।

 

সালমান বিন আবদুুল আজিজ

 বাদশাহ, সৌদি আরব

বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ। তিনি ২০১১ সাল থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে¡ ছিলেন। তারও আগে ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রিয়াদ প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। বাদশাহ সালমান ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি তার সৎভাই বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ২য় অবস্থানে রয়েছেন। সৌদি বাদশাহ হিসেবে তিনি পবিত্র কাবা শরিফেরও প্রধান। 

 

আবদুল্লাহ ইবনে আল হোসাইন

 বাদশাহ, জর্ডান

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি। তিনিই জর্ডানের বর্তমান বাদশাহ। তার বাবা হুসাইন বিন তালাল মারা যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালে তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। তার পূর্বপুরুষদের বলা হয় হাশিমি রাজপরিবার। এ পরিবার ১৯২১ সাল থেকে জর্ডান শাসন করে আসছে। এ পরিবারের সদস্যদের মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর বংশধর বলা হয়। বাদশাহ হুসাইন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুনা আল-হুসাইনের সন্তান বর্তমান এ জর্দানের বাদশাহ।  

 

আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী খামেনি

সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, ইরান

আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী হোসেনি খামেনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালের ১৭ জুলাই। তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং ইরানের ৮ কোটি শিয়া মুসলমানের আধ্যাত্মিক নেতা।  তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৪র্থ অবস্থানে রয়েছেন। ১৩ অক্টোবর ১৯৮১ থেকে ৩ আগস্ট ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি ইরানের ৩য় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফোর্বস সাময়িকীর ২০১২ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ২১ জনের তালিকায় তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন। খামেনি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম সমর্থক।

 

বাদশাহ মোহাম্মদ ষষ্ঠ

বাদশাহ, মরক্কো

কিং মোহাম্মদ ষষ্ঠ জন্মগ্রহণ করেন ১৩৬৩ সালের ২১ আগস্ট। তিনিই হলেন মরক্কোর বর্তমান বাদশাহ। বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৫ম অবস্থানে রয়েছেন মরক্কোর এ বাদশাহ। তার পিতা মরক্কোর বাদশা দ্বিতীয় হোসাইনের মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মরক্কোর এ বাদশাহ মোহাম্মদ হলেন বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের সন্তানদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী লায়লা লতিফা হাম্মউয়ের প্রথম সন্তান। জন্মের দিনই মোহাম্মদ রাজ্যের উত্তরাধিকারী এবং রাজপুত্র ঘোষিত হন। তাকে শিশুকাল থেকেই ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়।

 

মুফতি মুহাম্মদ ত্বকী উসমানী

প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব, পাকিস্তান

বিচারপতি মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ ত্বকী উসমানী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালে। পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন। তিনি হাদিস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়া এ বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরিয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

 

আলী আল সিস্তানি

 শিয়া প্রধান, ইরাক

শিয়া মতবাদের অনুসারীদের একজন ধর্মীয় ইমামের অনুসারি হতে হয়। আরবিতে এ ধরনের পদ্ধতিকে বলা হয় ‘মারজা’। এ নিয়মেই শিয়াদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ ‘আয়াতুল্লাহ’ নির্বাচন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কুম শহরে দুজন ‘আয়াতুল্লাহ’ ধর্মীয় অনুশাসনের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। নাজাফের হাজার বছরের পুরনো শিয়া ইমামতন্ত্রের প্রধান হিসেবে রয়েছেন সিস্তানি। সে হিসেবে ইরাকের সব শিয়াদের ধর্মীয় নেতা তিনি। বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৭ম অবস্থানে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলী আল সিস্তানি।

 

ওমর বিন হাফিজ আলী

আধ্যাত্মিক নেতা, ইয়েমেন

শায়খ আল হাবিব ওমর বিন হাফিজ অষ্টম স্থানে রয়েছেন। তিনি ইয়েমেনের তারিমে অবস্থিত ‘দারুল মুস্তাফা’ সংস্থার পরিচালক। প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক বিভিন্ন রচনাকর্ম ও আয়োজনের কারণে তিনি বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণকারী এ ব্যক্তিত্ব এবারই প্রথম তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ের ওপর বয়ান দিয়েও তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। ইউটিউব থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে তার বয়ানের ভিডিও দেখছেন কোটি কোটি মানুষ। আর এ জন্য প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় তিনি অবস্থান করছেন। 

সর্বশেষ খবর