শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রিয় নবী ও ইসলাম প্রচার

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনে চলার যাবতীয় বিষয় ইসলামে রয়েছে। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ অন্য সব সমস্যার সমাধান দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিভেদ, হানাহানি, শত্রুতাসহ যাবতীয় খারাপ কাজ ইসলামে নিষিদ্ধ। ন্যায়, ইনসাফ ও সমতার ভিত্তি হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। এ ধর্ম আগমনের আগে আরবসহ গোটা বিশ্ব নৈতিক অবক্ষয়ের তলানিতে ছিল। এ দুঃসময়ে মুক্তির বারতা নিয়ে দুনিয়ায় আসেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। শুরু হয় ইসলামের প্রচার। এসব নিয়ে আজকের আয়োজন...

মোস্তফা কাজল

প্রিয় নবী ও ইসলাম প্রচার

নবীজির দুধমা হালিমার বাড়ি ও শৈশব কাটানো পাহাড়

শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে তায়েফ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই ইতিহাসেও তায়েফ অধ্যায়ের কথা আলোচনা হয়েছে নানাভাবে, নানা প্রসঙ্গে। নবী করিম (সা.) তায়েফ শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে বনু সাদ অঞ্চলে দুধমায়ের ঘরে লালিত-পালিত হন। পরে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হলে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তায়েফ যান। তৎকালীন আরবের, বিশেষ করে মক্কার প্রথানুযায়ী সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিশু সন্তানদের জন্মের পর মরুভূমির মুক্তাঞ্চলে লালন-পালনের ব্যবস্থা করা হতো। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আট দিন মতান্তরে ১০ দিন বয়সের সময় বনু সাদ গোত্রের হালিমা সাদিয়া তাঁকে লালন-পালনের জন্য তাঁর মা আমিনার কাছ থেকে নিয়ে আসেন। দুধমা হালিমা যখন হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) কে তার ঘরে নিয়ে আসেন তখন পাঁচ বছর বয়সী সায়মা নামে তার এক কন্যাসন্তান ও আবদুল্লাহ নামে এক দুগ্ধপোষ্য পুত্রসন্তান ছিল। নবী করিম (সা.) কে লালন-পালনের বিষয়ে সায়মা তার মাকে সাহায্য করতেন। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) কে গোসল করানো এবং বাইরে হাঁটাচলা করানোর দায়িত্ব সায়মা যতœ ও পরম স্নেহের সঙ্গে সম্পাদন করতেন। হজরত হালিমার ঘরে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের পর পরিবারটির দারিদ্র্য অবস্থা দূর হয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আসতে থাকে। তা ছাড়া দুধমা হালিমা লক্ষ্য করলেন, যেদিন মা আমিনা শিশু মুহাম্মদকে তার কাছে অর্পণ করলেন সেদিন তার স্তন দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তিনি মক্কা থেকে তায়েফ ফেরার পথে লক্ষ্য করলেন, নবী করিম (সা.) কে বহনকারী অপেক্ষাকৃত দুর্বল উটটি অপরাপর সবল উটের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে চলছিল। নিজ বাড়িতে ফেরার পর তিনি দেখলেন, তার মেষ ও দুম্বাগুলোর ওলান দুধে ভরপুর। সে  সময় তারা স্বাভাবিক গতিতে চললেও হালিমার কাছে মনো হলো, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) কে লালন-পালনের দুই বছর যেন খুব দ্রুতই পার হয়ে গেছে। রীতি অনুযায়ী নবী করিম (সা.) কে তার মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় হলে দুধমা হালিমা, দুধভাই আবদুল্লাহ ও দুধবোন সায়মা খুবই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। ঐতিহাসিকরা লেখেন, দুগ্ধপানরত শিশু মুহাম্মদ (সা.)কে তার স্তন থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় মা হালিমার কান্না, আবেগ ও ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে মা আমিনা তাঁকে আরও কিছুকাল তায়েফের বনু সাদ অঞ্চলে লালন-পালনের জন্য আবার তার কাছে অর্পণ করেন। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) তায়েফের বনু সাদ অঞ্চলে মা হালিমার যে দুটি ঘরে লালিত-পালিত হয়েছিলেন সে দুটি ঘরের অস্তিত্ব পাহাড়ের পাদদেশে এখনো বিদ্যমান। এখন পাহাড়ের ওপরে মানুষের বসতি থাকলেও, পাহাড়ের পাদদেশে কোনো বসতি নেই। ছোটবেলায় এ পাহাড়ে খেলতেন মহানবী (সা.)। ঘর দুটির চারদিকের দেয়াল পাথর দিয়ে ঘেরাও করা। যার আয়তন দৈর্ঘ্যে ১৪ ফুট ও প্রস্থে ৬ ফুট। ঘর দুটির ছাউনি বর্তমানে নেই। আগেকার আরবদের ঘরের ওপর খেজুর পাতার যে ধরনের ছাউনি থাকত, এ দুটি ঘরের ওপরও অনুরূপ ছাউনি ছিল। কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে গেছে, আর হারিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। হজরত হালিমার ঘর দুটি দেখার জন্য প্রতিদিন সেখানে অনেক মানুষের আগমন ঘটে। তবে সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজনের আগ্রহ বেশি। কোনো আরবকে সেখানে খুব একটা যেতে দেখা যায় না। তাদের যুক্তি, হ্যাঁ হতে পারে নবী করিম (সা.) এখানে জীবনের একটি অংশ কাটিয়েছেন। কিন্তু সেই স্থানের সঙ্গে তো ইসলামের কোনো বিধান সম্পৃক্ত নয়। সেখানকার কোনো ফজিলত বা মাহাত্ম্যের কথা আলাদাভাবে নবী করিম (সা.) বলে যাননি। তাই সে জায়গাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করার কোনো অবকাশ নেই। তাহলে ওই জায়গাকে ঘিরে নানা ধরনের নতুন নতুন কর্মকা- ঘটতে থাকবে। যার অনুমোদন ইসলামে নেই। তার পরও মানুষ দলবেঁধে যান হালিমার বাড়ি দেখতে। স্থানটি তায়েফ শহর থেকে বেশ দূরে। অবশ্য রাস্তা ভালো হওয়ায় সময় বেশি লাগে না। সেখানে আসা-যাওয়ার জন্য ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস এমনকি বড় বাসও মেলে। পাথরের ঘেরাও দিয়ে ঘর দুটির মেঝেতে জায়নামাজ বিছানো রয়েছে। দর্শনার্থীদের অনেকে সেখানে শোকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায়স্বরূপ নফল নামাজ আদায় করেন। হালিমার বাড়ির পেছনে পাহাড়ের ঢালে একটি বিশাল জায়গা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। মানুষজন বলেন, এখানে নবী করিম (সা.) দুধ ভাইবোনদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন এবং মেষ চরাতেন। সেখানে সবুজ ঘাসের সমারোহ, একপাশে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। মেষ চরানোর জায়গা থেকে বেশ দূরে একটি পাহাড়ি গাছের নিচে মানুষের ভিড়। এখানেও জায়নামাজ বিছানো আছে। মানুষ গাছের নিচে বসে আসেন। ঠিক এই গাছটি নয়। তবে ওখানে একটি গাছের নিচে নবী করিম (সা.)-এর সিনা চাক করার ঘটনা ঘটেছিল। পাহাড়ি ঢালুপথ বেয়ে নিচে নেমে দেখা যাবে অনেক আবেগি মানুষ সেখানে থাকা গাছটির ছাল নিতে নিতে ন্যাড়া বানিয়ে ফেলেছে। অনেকে আবার সেখানে আতর ঢেলে দিচ্ছেন। এই সেই উপত্যকা, যেখানে নবী শিশুজীবনের প্রায় পাঁচটি বছর কাটিয়েছেন। এখানে একসময় বনু সাদের লোকজনের বাস ছিল। সুতরাং সঙ্গত কারণেই স্থানটির সঙ্গে মুসলমানদের আবেগ জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে আছে ইতিহাসের একটি বিশাল অংশও।

 

রক্তে ভেজা তায়েফের মরুপথ

নবুয়তের দশম বছর। শাওয়াল মাসে নবী (সা.) খাদেম জায়েদ বিন হারেসা (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে তায়েফ যান। রসুল (সা.) তায়েফবাসীর পাশে ১০ দিন যাপন করেন। এ সময় তিনি তাদের নেতৃস্থানীয়দের কাছে দীনের দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু তারা বলল, তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও। এরপর কিছু ইতর ছেলেপেলেকে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিল। অশ্লীল গালমন্দ আর চ্যাঁচামেচি করল। একসময় তারা রসুল (সা.)-এর ওপর পাথর মারতে শুরু করল। নবীজির জুতা দুটি রক্তে লাল হয়ে উঠল। জায়েদ বিন হারেসা (রা.) তাঁকে পাথর বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তাঁর মাথায়ও যখমের সৃষ্টি হয়। এভাবে পাথর ছোড়ার ভিতরে দৌড়াতে দৌড়াতে তাঁরা রবিআর দুই ছেলে উতবা ও শাইবার আঙ্গুর বাগানে আশ্রয় নিলেন। এরপর রসুল (সা.) মক্কার পথ ধরলেন। তাঁর হৃদয়ে তখন হতাশার কালো মেঘ। তিনি যখন করনুল মানাজিল নামক মহল্লায়  পৌঁছলেন তখন জিবরাইল (আ.) পাহাড়ের  ফেরেশতাকে নিয়ে তাঁর কাছে এলেন। বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! অনুমতি দিন! তাদের আবু কুবাইস ও কুআইকিয়ান পাহাড়ের মাঝে ফেলে এক চাপ দিয়ে  শেষ করে দিই। রসুলে করিম (সা.) শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন, না! তাদের মারবেন না। আমার একান্ত আশা; হয়তো আল্লাহ পাক তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন অগণিত-অসংখ্য মানুষ পাঠাবেন যারা একমাত্র আল্লাহতায়ালারই ইবাদত করবে। যারা তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুর শরিক করবে না। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি একবার রসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন ওহুদ যুদ্ধের চেয়েও কোনো কঠিন দিন কি আপনার জীবনে এসেছিল? জবাবে নবীজি তায়েফের এই মর্মান্তিক দিনের বর্ণনা দিয়েছেন। অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন আমাদের নবীজি! তাঁর আখলাক-চরিত্র ছিল মহান! আমরা কি হতে পারি না নবীজির মতো দয়ালু হৃদয়ের মানুষ!

 

মহানবীর ‘জুব্বা’

আমাদের প্রিয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জুব্বা তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের জাদুঘরে শর্তসাপেক্ষে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। নবীজি (সা.)-এর ব্যবহৃত পোশাকের মধ্যে মাত্র একটি দীর্ঘকায় পোশাক তৎকালীন আরবীয় প্রথা অনুসারে  তৈরি করা বিশেষ জামা বা জুব্বা তুরস্কের তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘরে রয়েছে বলে দাবি করা হয়। গবেষকদের মতে, মহানবী (সা.)-এর সময়কার কবি কাব ইবনে জুহাইর ইসলাম গ্রহণের পর কবিতার মাধ্যমে প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রশংসা করতেন এবং বিধর্মীদের বিরূপ কবিতার প্রতিউত্তর দিতেন। তৎকালীন ঐতিহ্য অনুসরণ করে মহানবী (সা.) কবি কাব ইবনে জুহাইরকে তাঁর একটি জুব্বা (জামা) উপহার দেন।

পরবর্তীতে এই কবির সন্তানরা উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতার কাছে এই পবিত্র জুব্বা (জামা) বিক্রি করে দেন। এই জুব্বা লম্বায় প্রায় দুই গজ এবং ফুলহাতাযুক্ত। কালের বিবর্তনে জুব্বার রং পরিবর্তিত হতে পারে ধারণা করা হলেও গবেষকদের মতে, জুব্বাটি ছিল হালকা ঘিয়া বা ক্রিম কালারের। বর্তমানে তোপকাপি জাদুঘরে একটি স্বর্ণখচিত স্বচ্ছ বাক্সে এই পবিত্র জুব্বা রাখা আছে। প্রতি বছর রমজান মাসের ১৫ তারিখে এই জুব্বা জনসাধারণকে দেখার সুযোগ করে  দেওয়া হয়। অন্য সময় এই জুব্বা দেখার সুযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

 

নবীকে ছায়াদানকারী মরুভূমির সাফাঈ এলাকার সেই গাছ

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে যে গাছটির নিচে মহানবী (সা.) বিশ্রাম নিয়েছিলেন জর্ডানের মরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় সেই গাছটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ সর্বপ্রথম এই স্থানটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেন। পৃথিবীতে এত পুরনো কোনো গাছ এখনো বেঁচে আছে তা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটিই সত্যি। মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশের কারণে জন্ম থেকেই গাছটি ছিল পাতাহীন শুকনো। কিন্তু একসময় আল্লাহর হুকুমে গাছটি সবুজ পাতায় ভরে ওঠে। আজ পর্যন্ত গাছটি সবুজ-শ্যামল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস্য এই গাছটি জর্ডানের মরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় দন্ডায়মান। ৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স তখন ১২ বছর। তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে মক্কা থেকে তৎকালীন শাম বা সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে তারা সিরিয়ার অদূরে জর্ডানে এসে উপস্থিত হন। জর্ডানের সেই এলাকাটি ছিল শত শত মাইলব্যাপী বিস্তৃত উত্তপ্ত বালুকাময় এক মরুভূমি। মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর চাচা আবু তালিব মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন তাঁরা একটু বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিলেন। কিন্তু আশপাশে তাঁরা কোনো বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চারদিকে যতদূর চোখ যায় কোনো বৃক্ষরাজির সন্ধান পাচ্ছিলেন না। কিন্তু দূরে একটি গাছ দেখতে পেলেন তাঁরা। উত্তপ্ত মরুভূমির মাঝে গাছটি ছিল লতাপাতাহীন শীর্ণ ও মৃতপ্রায়। উপায় না পেয়ে তাঁরা মরুভূমির উত্তাপে শীর্ণ পাতাহীন সেই গাছটির তলায় বিশ্রাম নিতে বসেন। উল্লেখ্য, রসুল মুহাম্মদ (সা.) যখন পথ চলতেন তখন আল্লাহর নির্দেশে মেঘমালা তাঁকে ছায়া দিত এবং বৃক্ষরাজি তাঁর দিকে হেলে পড়ে ছায়া দিত। মুহাম্মদ (সা.) তাঁর চাচাকে নিয়ে যখন গাছের তলায় বসেছিলেন তখন তাদের ছায়া দিতে আল্লাহর নির্দেশে মৃতপ্রায় গাছটি সজীব হয়ে ওঠে এবং গাছটির সব ডালপালা সবুজ পাতায় ভরে যায়। সে গাছটিই বর্তমানে সাহাবি গাছ নামে পরিচিত। এ ঘটনা দূরে দাঁড়িয়ে জারজিস ওরফে বুহাইরা নামে এক খ্রিস্টান পাদ্রি দেখছিলেন। আবু তালিব মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে পাদ্রির কাছে গেলে তিনি বলেন, আমি কোনো দিন এই গাছের নিচে কাউকে বসতে দেখিনি। পাদ্রি বলেন, গাছটি ছিল পাতাহীন কিন্তু আজ গাছটি পাতায় পরিপূর্ণ। এই ছেলেটির নাম কি? চাচা আবু তালিব উত্তর দিলেন মুহাম্মদ! পাদ্রি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, বাবার নাম কি? আবদুল্লাহ! মাতার নাম? আমিনা! বালক মুহাম্মদ (সা.) কে দেখে এবং তাঁর পরিচয় শুনে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পাদ্রির চিনতে আর বাকি রইল না যে, এই বালক সেই বহু প্রতীক্ষিত শেষ নবী মুহাম্মদ। চাচা আবু তালিবকে ডেকে পাদ্রি বললেন, তোমার সঙ্গে বসা বালকটি সারা জগতের সর্দার। সারা বিশ্বের নেতা। এই জগতের শেষ নবী। তিনি বলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে বাইবেলে পড়েছি। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, এই বালকটিই  শেষ নবী। চাচা আবু তালিব ও মহানবী (সা.)  যে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই গাছটি ১৫০০ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল আজও সে অবস্থায় জর্ডানের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটি সবুজ লতাপাতায় ভরা এবং সতেজ ও সবুজ। আশ্চর্যের বিষয়, গাছটি যেখানে অবস্থিত তেমন মরূদ্যানে কোনো গাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। গাছটির আশপাশের কয়েক শ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আর কোনো গাছ নেই। গাছটির চারদিকে দিগন্তজোড়া শুধুই মরুভূমি আর মরুভূমি। উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমির মাঝে গাছটি দাঁড়িয়ে থেকে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে।

 

রহস্যময় জিনের পাহাড়

পুরো মদিনা শহরটি ঘিরে রেখেছে ওহুদ পাহাড়। মদিনায় জিনের পাহাড় বিশ্বের এক বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মদিনায় জিনের পাহাড়ের কথা অনেকেরই অজানা। সৌদি আরবের মদিনা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ওয়াদি আল বায়দা নামক স্থানে এই জিনের পাহাড়ের অবস্থান। মূলত এ পাহাড়ের নাম ওয়াদি আল জিন। আমরা জানি, সবকিছু ঢালুর দিকে গড়িয়ে যায়। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এই জিনের পাহাড়ে সবকিছু ঢালুর বিপরীত দিকে অর্থাৎ ওপরের দিকে গড়ায়। সাধারণ নিয়মের ঠিক উল্টো। এমন কি রহস্যঘেরা এ পাহাড়ে বন্ধ গাড়িও ঢালুর বিপরীতে চলতে থাকে। কেউ কেউ ধারণা করেন জায়গাটিতে প্রচুর চুম্বক জাতীয় পদার্থ আছে, তাই এমনটি হয়। জানা যায়, ২০০৯-১০ সালের দিকে সৌদি সরকার এই ওয়াদি আল বায়দায় একটি রাস্তা বানানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করার পর সমস্যা শুরু হয়। হঠাৎ দেখা যায় রাস্তা নির্মাণের যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে মদিনা শহরের দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে। যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি যন্ত্রপাতিগুলো মদিনার দিকে ঠেলছে। এমনকি পিচ ঢালাইয়ের ভারী রোলারগুলোও বন্ধ থাকা অবস্থায় আস্তে আস্তে ঢালু বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এসব দেখে কর্মরত শ্রমিকরা ভয় পেয়ে যান। তারা কাজ করতে অস্বীকার করেন। রাস্তাটির কাজ যেখানে বন্ধ করা হয় সেখানে চারদিকে বিশাল কালো পাহাড়। ওখানেই শেষ মাথায় গোল চত্বরের মতো করে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই রাস্তাটি ২০০ কিলোমিটার করার কথা থাকলেও ৪০ কিলোমিটার করেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই জিনের পাহাড় ঘিরে মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক কৌতূহল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও পর্যটক আসেন এই জিনের পাহাড় দেখতে। প্রতি বছর হজ এবং ওমরাহ করতে আসা মানুষও এই রসহ্যময় জিনের পাহাড় দেখার জন্য ভিড় জমান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর