শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দৈনন্দিন জীবন-জীবিকায় ইসলাম

মোস্তফা কাজল

দৈনন্দিন জীবন-জীবিকায় ইসলাম

জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। ফলে মুসলমানগণ যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মাধ্যমে দিনটিকে ইবাদত-বন্দেগির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। ছাড়া আল্লাহ সব ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইবাদত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মহত্ত্বের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আল্লাহতায়ালা ইবাদত-বন্দেগির সাপ্তাহিক অনুশীলনের জন্যই জুমার দিনটিকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে দিনের হক আদায়ে আজানের সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায়ে মসজিদ পানে ছুটে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পরবর্তী জুমা পর্যন্ত আল্লাহর বন্দেগিতে নিযুক্ত রাখতে নিজেদের সেভাবে তৈরি করার তৌফিক দান করুন। ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ, হালাল-হারাম সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নিয়ে আজকের আয়োজন...

 

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য

নবীজির জীবনে ব্যবসা-বাণিজ্য

পৃথিবী সৃষ্টিকারী এবং প্রতিপালনকারী মহান আল্লাহ। ভাত-কাপড় এবং বাসস্থান হলো মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। প্রয়োজন পুরা করার জন্য মানুষ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। তন্মধ্যে ব্যবসা হলো সবচেয়ে উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ। রিজিক উপার্জনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি ইসলাম। তবে যে পেশাই অবলম্বন করা হোক তা যেন হালাল হয় তার ওপরই জোর দিয়েছে ইসলাম। হালাল রিজিক উপার্জন করাকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ফরজ ইবাদতসমূহের (নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি) পরে হালাল উপার্জন করা একটি ফরজ এবং ইবাদতের গুরুত্ব রাখে। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মানুষ এর চেয়ে উত্তম উপার্জন খায়নি যা সে নিজ হাতে উপার্জন করে খায়। নবী দাউদ (আ.)ও নিজ হাতের উপার্জন খেতেন। (সহিহ বুখারি)

রিজিকের জন্য ব্যবসা

রিজিক অনুসন্ধানের জন্য হুকুম করেছেন মহান আল্লাহ এবং তাঁর রসুল (সা.)। উপার্জনের গুরুত্ব এবং ফজিলতের দ্বারাই অনুমিত হয় যে, প্রত্যেক নবীই কোনো না কোনো ব্যবসা করতেন। হজরত আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন। হজরত ইদরিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন। হজরত দাউদ (আ.) লোহার বর্ম বানাতেন। আমাদের নবীজি (সা.)ও নিজে ব্যবসা করেছেন। ব্যবসাকে উপার্জনের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম আখ্যা দেওয়ার বড় কারণ এই যে, নবীজি (সা.) স্বয়ং নিজে ব্যবসা করেছেন। তিনি অন্য আরেকজনের সঙ্গে মিলে শেয়ারে ব্যাপক পরিসরে ব্যবসা করেছেন। তথা ব্যবসার মাল আদান-প্রদান করে লাভ করা। নির্দিষ্ট হারে বণ্টন করে নেওয়া। এ ধরনের ব্যবসাও করেছেন। নবুওয়ত লাভ করার পূর্বে নবীজি (সা.) মুদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.)-এর সঙ্গে শেয়ারে ব্যবসা করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) বলেন, আমি জাহেলিয়াতের যুগে নবীজির ব্যবসার শেয়ার ছিলাম। আমি যখন মদিনায় গেলাম তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমাকে চিন? বললাম, কেন চিনব না? আপনি তো আমার অনেক ভালো ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। না কোনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করতেন, না কোনো কিছুতে ঝগড়া করতেন। (খাসায়েসে কুবরা, উসদুল গাবাহ) উপার্জনের অনেক রকম পদ্ধতি আছে। বৈধ পন্থায় রিজিক অনুসন্ধান করাকে উত্তম বলেছেন মহান আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে। আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে। যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা, আয়াত : ১০)

ব্যবসা-বাণিজ্যের ফজিলত

সৎ ব্যবসায়ীর শান-মর্যাদা বর্ণনা করে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে নবীগণ, সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণের দলে থাকবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯) রিজিকের ১০টি অংশ। তন্মধ্যে ৯টি অংশ ব্যবসা-বাণিজ্যে নিহিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, পেশাদার মুসলমানকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা মানুষের ওপর ফরজ। মুত্তাকি বান্দাদের কাছে হালাল রিজিক উপার্জন ইমানের অংশ। জীবনযাপনে সংকীর্ণতা ইজ্জত-সম্মানের জন্য কলঙ্ক। ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমানদের অবহেলা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।

হালাল ধনসম্পদ উত্তম জিনিস

নবী করিম (সা.) হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) কে বলেছেন, আমি চাই তোমার উপযুক্ত ধনসম্পদ অর্জন হোক। তিনি বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি ধনসম্পদের জন্য মুসলমান হইনি। আমি আমার দিলের টানে মুসলমান হয়েছি। নবীজি (সা.) বললেন, হালাল ধনসম্পদ অনেক উত্তম জিনিস। (মুসনাদে আহমদ)। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা অর্জন নয় বরং এর দ্বারা মানুষের সঙ্গে পরিচিতি বাড়বে। তখন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, আন্তরিকতা দেখানো এবং হাস্যোজ্জ্বলভাবে কথা বলা উচিত। এতে অন্যদের অন্তরে আপনার ইজ্জত-সম্মান এবং ভালোবাসাও ঠিক থাকে। তারা আপনার কোনো কথা সহজে মান্য করে। তাহলে ইসলামের সৌন্দর্য অন্যদের কাছে তুলে ধরা সহজ হবে। ইমানদারির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মধ্যে আল্লাহপাক অগণিত রিজিক দানের ওয়াদা করেছেন।

সৎ ব্যবসায়ীর মর্যাদা

সৎ ব্যবসায়ীর শান-মর্যাদা বর্ণনা করে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে নবীগণ, সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণের দলে থাকবেন। (জামে তিরমিজি, দারাকুতনি ও দারেমি)

আখিরাতের জন্য সম্পদ থাকা জরুরি

আখিরাতে উত্তম জীবনযাপনের জন্যও ধনসম্পদ থাকা জরুরি। যাতে আল্লাহর সৃষ্টিজীব এবং নিজের অধীনদের ওপর মন খুলে খরচ করা যায়। বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ অকর্মণ্য। মুসলমানদের জন্য উচিত ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসা। কেননা ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এতে এগিয়ে আসলে ইনশা আল্লাহ অকর্মণ্যতাও দূর হবে। জীবনেও ফিরে আসবে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য।

 

জুমার দিনের ইবাদত আমল

সপ্তাহের সেরা দিন ইয়াওমুল জুমা। এ দিন সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে- ‘মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এ দিন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করতে মসজিদে একই কাতারে শামিল হন। ফলে সবার মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সেতুবন্ধন। এ দিন মুমিন-মুসলমানের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত দিন। এ দিনের রয়েছে বিশেষ আমল। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনকে আল্লাহতায়ালার দেওয়া সেরা উপহার এবং সাপ্তাহিক ইবাদত-বন্দেগির জন্য ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমরা পৃথিবীতে সর্বশেষ আগমনকারীরাই কেয়ামতের দিন অগ্রগামী থাকব। পার্থক্য হলো এই যে, তাদেরকে (পূর্ববর্তীদেরকে) আমাদের পূর্বে (আল্লাহর) কিতাব দান করা হয়েছে। আর আমাদেরকে (কিতাব) দান করা হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর তাদের ওপর এ দিনটি অর্থাৎ জুমার দিনটি (ইবাদতের জন্য) ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা (আহলে কিতাবের অনুসারীরা) এ দিনটির ব্যাপারে মতভেদ করল। আর আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন। ফলে এ ব্যাপারে অন্যান্য লোক আমাদের পেছনে থাকল। ইয়াহুদিগণ পরের দিনকে (শনিবার) এবং নাসারাগণ তার পরের দিনকে (রবিবার) গ্রহণ করল। (বুখারি ও মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াবাসীর মধ্যে আমরাই সর্বশেষ আগমনকারী এবং কিয়ামতের দিন আমরাই প্রথম। যাদের জন্য (হিসাব-কিতাব ও জান্নাতে প্রবেশের) আদেশ সমস্ত সৃষ্টির পূর্বে দেওয়া হবে। এ দিনের ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা  কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- হে ইমানদারগণ! জুমার দিন নামাজের জন্য যখন তোমাদের আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ‘অতঃপর যখন নামাজ শেষ হয় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়। আর আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর। যাতে তোমরা (উত্তম রিজিক ও নেয়ামত লাভে) সফলকাম হও। (সুরা জুমা : আয়াত ৯-১০)

আমল

জুমার দিনের অনন্য আমল হলো- এ দিনের একটি আমলেই মিলবে হাজার বছরের নামাজ-রোজার সওয়াব। হাদিসে এসেছে- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন পাঁচটি কাজ করার মাধ্যমে একটি আমল করবে। অর্থাৎ জুমার নামাজ পড়তে আসবেন। আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির মসজিদে আসার প্রতি কদমে এক বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব দান করবেন। (সুবহানাল্লাহ) কাজ পাঁচটি হলো- (এক) জুমার দিন গোসল করা। (দুই) আগে আগে মসজিদে আসা। (তিন) পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা। (চার) ইমামের কাছাকাছি বসা এবং (পাঁচ) মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা।

জুমার নামাজের জন্য আসা ওই ব্যক্তি যদি উল্লিখিত পাঁচ কাজ মেনে জুমার দিন আমল করেন, তবে তার আমলনামায় ১০০ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব যোগ হবে। হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে- জুমার দিনের এসব আমলের সুযোগের চেয়ে বেশি আমলের সুযোগ লাভের আর কোনো দ্বিতীয় মাধ্যম নেই। বিখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেন, আমার কাছে নফল হজ করার চেয়ে বেশি উত্তম শুক্রবারের আমল করা।

নিয়ত করা

সব কাজের শুরুতেই নিয়ত করা সুন্নাত। কারণ সঠিক নিয়তের কারণেই কাজটি করে অনেক সাওয়াব লাভ করা যায়। ঘুমানো, খাওয়া, কাজ করা এবং অন্যান্য বৈধ কাজ আল্লাহর আনুগত্যের কাজ এবং তাঁর নৈকট্যের উপায় হতে পারে। একজন মুমিন মুসলমান বান্দা হিসেবে এসব কার্যাবলির জন্য যে কেউ অনেক সাওয়াব লাভ করতে পারেন যখন এগুলো করার সময় আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিয়ত করেন। যেমন- যদি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এই নিয়্যতে যে, যেন কিয়ামুল লাইল অথবা ফজরের নামাজের জন্য জাগতে পারেন তাহলে আপনার সারা রাতের ঘুমটি ইবাদতে পরিণত হবে। এটি সব বৈধ কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

 

জাহান্নামিদের ভয়ঙ্কর সাত খাদ্য

 পরকালে কাফেরদের স্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এতে তারা অনন্তকাল জ্বলতে থাকবে। তাদের দেহ থেকে গোশত চামড়া বিগলিত হয়ে গড়িয়ে পড়বে। সেটা অত্যন্ত দুর্গন্ধ ঘন হবে। দুর্গন্ধময় পুঁজকে সদিদ বলা হয়। সদিদই জাহান্নামিদের খাবার হবে। প্রসঙ্গে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের জন্য পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে। পান করানো হবে গলিত পুঁজ, যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গলাধঃকরণ করবে। গলাধঃকরণ করাও প্রায় সহজ হবে না। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা।

 

জাহান্নাম অকৃতজ্ঞ বান্দাদের আজাবঘর। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহর বিধানকে অমান্য করেছে তাদের শাস্তি প্রদান করার জন্য এ জাহান্নামের সৃষ্টি। জাহান্নামের খাদ্য ও পানীয় সবই হবে জাহান্নামিদের শাস্তির অংশ। জাহান্নাম সব সময় জ্বলমান। কখনো দুর্বল হবে না। কখনো নিভবে না। এর অধিবাসীদের আজাবও স্থায়ী। তারা সেখান থেকে সাহায্য চাইবে। কিন্তু সাহায্যকারী থাকবে না। জাহান্নামিরা আজাবের চোটে চিৎকার করবে। কাঁদবে এবং খাবার চাইবে। তখন তাদের সামনে এমন খাবার উপস্থিত করা হবে যার কারণে তাদের আজাব আরও বেড়ে যাবে।

তাদের যন্ত্রণাদায়ক খাবার প্রদান করা হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা জাহান্নামিদের সাত ধরনের খাবারের উল্লেখ করেছেন। (এক) হামিম : হামিম হচ্ছে জাহান্নামের আগুনে ফোটানো গরম পানি। এ পানি পান করার পর পেটের ভিতরকার সবকিছু গলে যাবে। নাড়িভুঁড়ি তরল পদার্থের মতো গড়িয়ে পড়বে। চামড়া ঝলসে যাবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেবে। (সুরা মুহাম্মদ : ১৫)।

(দুই) গাসসাক : গাসসাক হচ্ছে অধিক ঠা-া পানি, যা অতিরিক্ত ঠা-া হওয়ার কারণে পানযোগ্য নয়। এ মর্মে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, এ হচ্ছে হামিম ও গাসসাক। অতঃপর তারা একে আস্বাদন করুক। (সুরা সাদ : ৫৭)।

(তিন). সদিদ : পরকালে কাফেরদের স্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এতে তারা অনন্তকাল জ্বলতে থাকবে। তাদের দেহ থেকে গোশত ও চামড়া বিগলিত হয়ে গড়িয়ে পড়বে। সেটা অত্যন্ত দুর্গন্ধ ও ঘন হবে। এ দুর্গন্ধময় পুঁজকে সদিদ বলা হয়। এ সদিদই জাহান্নামিদের খাবার হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের জন্য পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে। পান করানো হবে গলিত পুঁজ, যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গলাধঃকরণ করবে। গলাধঃকরণ করাও প্রায় সহজ হবে না। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা। কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না। এরপর কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। (সুরা ইবরাহিম : ১৬-১৭)।

(চার) গাদের মতো পানি : জাহান্নামিরা আজাব ভোগ করতে করতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়বে। তারা তখন পানি চাইবে। তখন তাদের গাদের মতো পানি দেওয়া হবে। তা পান করা মাত্রই মুখম-ল ঝলসে যাবে। এ পানি জাহান্নামিদের বাধ্য হয়ে পান করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি জালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানি চাইলে তাদের দেওয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানি, যা তাদের মুখম-ল দগ্ধ করবে। এটা নিকৃষ্ট পানীয়। আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট আশ্রয়। (সুরা কাহফ : ২৯)।

(পাঁচ) দরি : জাহান্নামিরা যখন খানা চাইবে, তখন তাদের সামনে দরি উপস্থিত করা হবে। এ দরি এক ধরনের দুর্গন্ধময় বিষাক্ত কাঁটা। এর দ্বারা দোজখিদের ক্ষুধা নিবারণ হবে না। এর পরও দরিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে জাহান্নামিদের। এ মর্মে আল্লাহতায়ালা বলেন, দরি (কাঁটার ঝাড়) ছাড়া তাদের জন্য অন্য কোনো খাদ্য নেই। সেটি তাদের মোটাতাজাও করবে না। ক্ষুধা নিবারণের কাজেও দেবে না। (সুরা গাশিয়া : ৬-৭)।

(ছয়) গিসলিন : দোজখিদের দেহ থেকে প্রবাহিত রক্ত ও পুঁজের সমষ্টিকে বলা হয় গিসলিন। এ গিসলিন হবে দোজখিদের নিকৃষ্ট খাবার। এ ধরনের পচা খাবার দ্বারা দোজখিরা ক্ষুধা মেটাতে চাইলেও ক্ষুধা মিটবে না। কারণ, এটাও জাহান্নামিদের একটি কঠিন আজাব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, অতএব আজকের দিনে এখানে তার কোনো সুহৃদ নেই। আর কোনো খাদ্য নেই ক্ষত-নিঃসৃত গিসলিন ছাড়া। অপরাধী ছাড়া কেউ এটা খাবে না। (সুরা হাক্কাহ : ৩৫-৩৭)।

(সাত) জাক্কুম : জাক্কুম এক ধরনের বিষধর বৃক্ষের ফল, যা জাহান্নামের তলদেশে উৎপন্ন হয়। এই ফল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এর দ্বারা জাহান্নামিদের শারীরিক কোনো ফায়দা হবে না। বরং জাক্কুম ফল খাওয়া মাত্রই জাহান্নামিদের শারীরিক যন্ত্রণা আরও বেড়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় জাক্কুম গাছ পাপীর খাদ্য হবে।’

গলিত তামার মতো পেটে ফুটতে থাকবে। যে রকম ফোটে পানি। একে ধরো এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। এরপর তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানির আজাব ঢেলে দাও। স্বাদ গ্রহণ করতে দাও। এ সম্পর্কে তোমরা সন্দেহে পতিত ছিলে। (সুরা দুখান : ৪৩-৫০)।

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, এটি একটি গাছ, যা জাহান্নামের তলদেশ থেকে উৎপন্ন হয়। এর গুচ্ছ যেন শয়তানের মাথা। কাফেররা এ থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে। (সুরা সাফফাত : ৬৪-৬৬)।

 

সুখ-দুঃখে যে দোয়া পড়বেন

সুখ ও দুঃখ মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়ানো। সুখের পর দুঃখ আবার দুঃখের পরে মানুষ সুখের সময় অতিবাহিত করে। সর্বাবস্থায় মুমিন মুসলমান মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে থাকেন। সুখ-দুঃখের এ সময়গুলোতে নিজেদের আবেগকে দমন করা মুমিন মুসলমানের জন্য খুবই জরুরি। কোরআন সুন্নায়  সর্বাবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণের উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আবেগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন- এটা এ জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও। যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আনন্দিত না হও। গর্বকারী ও অহঙ্কারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সুরা হাদিদ : আয়াত ২৩) বরং সুখ ও দুঃখের সময় নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হাদিসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়ার দোয়া শেখানো হয়েছে। তা হলো দোয়ার (আরবি উচ্চারণ) : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আদলা ফিল গাদাবি ওয়ার রিদা। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই মধ্যম পন্থা কামনা করি। মুমিন মুসলমানের উচিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের ওপর আমল করা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাকে দুটি শব্দ উচ্চারণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তা হলো দুঃখের সময় বোকামিসুলভ (হায়! হায়!)  আর অন্যটি হলো (আনন্দের অতিমাত্রায়) পাপসুলভ (হুররে! বা হাহ্হা) শব্দ। (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নেয়ামত পেলে (পাপ হয় এমন শব্দে) ‘হুররা বা হাহ্হা’ করা। আর বিপদের সময় বোকামিবশত হায়!, আফসোস করা। অর্থাৎ বড় নিঃশ্বাস ফেলা। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা ও ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার তৌফিক দান করুন।  গর্ব ও অহঙ্কার থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন এবং দুঃখ ও আনন্দের আতিশয্যে তাঁর অবাধ্যতা থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর