শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আল-কোরআনে দোয়ার ফজিলত

মোস্তফা কাজল

আল-কোরআনে দোয়ার ফজিলত

ইমানদার মানুষ আল-কোরআনের দোয়া পাঠ করেন মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। দোয়া হতে পারে মানুষের জন্য। হতে পারে দেশের জন্য। কিংবা সমাজের জন্য। এমনকি নিজের জন্যও হতে পারে। কোরআন পাঠ বা দোয়া করা মুমিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। যারা এসব ক্ষেত্রে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন, তাদের জন্য প্রস্তুত থাকবে জান্নাত। ইমানদার ব্যক্তি মহান রবের উদ্দেশে সেজদা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এবং পবিত্র কোরআন শরিফের প্রচার-প্রসার ইত্যাদি কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন। আবার মানুষের কল্যাণে দোয়া, দান-সদকা, পরোপকারসহ দিকনির্দেশনামূলক বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে আমলকারী হিসেবে নিয়োজিত করছেন। এসব নিয়ে আজকের আয়োজন...


দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ

প্রাত্যহিক জীবনে প্রত্যেক মুসলমান কিছু না কিছু আল্লাহতায়ালার কাছে চেয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে কারও দোয়া কবুল হয়, কারও বা হয় না। আর এই দোয়া কবুল না হওয়ার পেছনে অবশ্যই কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। অনেক মুসলমান আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করার পরও প্রত্যাশিত বিষয় না পেলে দোয়া করা হয়তো ছেড়ে দেন। হতাশ হয়ে যান। অধৈর্য হয়ে পড়েন। তাদের জানা থাকা দরকার যে, দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে তিনটি বিষয়ের কোনো একটি দিয়ে থাকেন।

এক. হয়তো প্রত্যাশিত বিষয়টি দিয়ে দেন। দুই. দোয়ার বদৌলতে আল্লাহতায়ালা তার ওপর থেকে সমপর্যায়ের বিপদ দূর করেন। তিন. দোয়ার সওয়াব আল্লাহতায়ালা আখেরাতে তাকে দান করবেন। তাই দোয়ার পর প্রত্যাশার বিপরীত কোনো কিছু ঘটলেও ধৈর্য ধরা। অধৈর্য না হওয়া।

দোয়া কবুল না হওয়ার মধ্যে আছে- খাবার, পানীয় ও পোশাক হালাল না হওয়া। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ পবিত্র। তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন। দীর্ঘ সফরের ফলে যার চুল উসকোখুসকো, চেহারা ধুলোবালিমাখা ছিল।

সে হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছে, হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম। পানীয় হারাম, পোশাক হারাম। আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে। কীভাবে তার দোয়ায় সাড়া দেওয়া হবে?’ [সহিহ মুসলিম : ১০১৫] সফরে দোয়া কবুল হয়। হাত উঠিয়ে দোয়া করলে কবুল হয় এবং নিজেকে হীনজ্ঞান করে আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকলেও দোয়া কবুল হয়। এতগুলো শর্ত লোকটি পূরণ করার পরও তার দোয়া কবুল হচ্ছে না। কেবল হারাম খাবার, পানীয় ও পোশাকের জন্য। [ইবনু রজব হাম্বলি, জামিউল ‘উলূম ওয়াল হিকাম]। এ ছাড়া

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শপথ সেই সত্তার। যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে। অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা অচিরেই এর ফলে আল্লাহ তোমাদের ওপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তার কাছে দোয়া করবে। কিন্তু তোমাদের দোয়ায় সাড়া দেওয়া হবে না। [তিরমিজি : ২১৬৯, হাদিসটি হাসান] রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ আল্লাহকে ডাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে। যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে- ‘আল্লাহকে তো ডাকলাম।’ কিন্তু কোনো সাড়া তো পাওয়া গেল না। [সহিহ বুখারি : ৬৩৪০]

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ (অপরাধ)। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। হাদিসে আছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাক্সিক্ষত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন। (২) অথবা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন। (৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন। সাহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগিব, হাদিস : ১৬৩৩) মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা। তিনি দোয়া সঙ্গে সঙ্গে কবুল না করে প্রার্থিত বস্তুর চেয়েও অধিক দেওয়ার জন্য রেখে দেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন। হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে দিয়ে দেন। তার দোয়াকে তার আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন। কিংবা দোয়ার পরিমাণ অনুসারে তার অন্য কোনো (অনাগত) বিপদ তিনি দূর করে দেন।


ঘুমের জন্য দোয়া

ঘুম বান্দার জন্য আল্লাহর এক মহাঅনুগ্রহ। যে কোনো মানুষ ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে দুনিয়ার কোনো কাজই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না। মানসিক প্রশান্তির অন্যতম উপসর্গও এ ঘুম। কিন্তু সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের অধিকাংশকেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয়। আবার অনেকের ঘুমের ওষুধেও কাজ হয় না। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত একটি দোয়া রয়েছে, যা ঘুমের আগে পড়লে ঘুম চলে আসবে। যে দোয়া পড়তে তিনি সাহাবি হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে- হজরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ আল-মাখজুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করো (ঘুমাতে যাও) তখন বলো-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বিনি ওয়া মা আদাল্লাত কুল্লি জারাম মিন শাররি খালকিকা কুল্লিহিম জামিআ। আইঁইয়াফরুত্বা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও আইঁইয়াবগিয়া আলাইয়্যা আয্যা ও জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা। (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! সাত আকাশের প্রভু। যার ওপর তা ছায়া বিস্তার করেছে। সাত জমিনের প্রভু এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন। আর শয়তানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে! তুমি আমাকে তোমার সব সৃষ্টিকুলের অনিষ্টতা থেকে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও। যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার ওপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে। অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যদি কেউ ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তাহলে শয়তান তার কাছে আসতে পারে না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) আল্লাহতাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রচ- মানসিক চাপ ও অস্বস্তিতে এ দোয়া পড়ে ঘুম লাভের  তৌফিক দান করুন। আর ঘুমের মাধ্যমে শারীরিক প্রশান্তি লাভে হাদিসের আমল যথাযথ করার তৌফিক দান করুন।

ঘুমানোর আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি সুন্নতি আমল হলো : একবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফজিলত : (ক). সকাল পর্যন্ত তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী (ফেরেশতা) তাকে নিরাপত্তা দেবে। (খ) শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না। যখন বিছানায় ঘুমাতে যাবে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার ওপর সব সময় একজন হেফাজতকারী নিযুক্ত থাকবেন। ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার ধারে-কাছেও আসতে পারবে না।


সুন্নাহসম্মত দোয়া...

দোয়া করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত অথচ দ্যোতক অর্থবহ শব্দ নির্বাচন করা উচিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের দোয়া হলো সর্বোত্তম দোয়া। তবে একজন ব্যক্তি তার চাহিদা অনুযায়ী তার নিজস্ব ভঙ্গিতে দোয়া করতে পারবে। সুতরাং দোয়া করতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে। যেসব কাজ আল্লাহকে অখুশি করে সেগুলো থেকে বিরত থাকা।

আল্লাহতায়ালা আপনার ওপর খুশি থাকলে আপনার দোয়া এমনি কবুল হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- দোয়ার ফলাফল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- যে ব্যক্তি দোয়া করবেন হয়তো আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির মনের আকাক্সক্ষা পূরণ করবেন। অথবা তিনি দোয়ার ওসিলায় তার ওপর থেকে অমঙ্গলজনক কিছু দূর করবেন। সর্বোপরি আমাদের এ বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ যা করেন তার সবই আমাদের মঙ্গলের জন্য।

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। যে বিষয়গুলো থেকে আশ্রয় চাওয়া গোটা মানব জাতির জন্য একান্ত আবশ্যক। উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন আদিল্লা আও উদাল্লা। আযিল্লা আও উযাল্লা; আও আজলিমা আও উজলামা; আও আজহালা আও ইউজহালা আলাইয়্যা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পথভ্রষ্ট হওয়া বা (কাউকে) পথভ্রষ্ট করা থেকে আশ্রয় চাই; গোনাহ করা বা (কাউকে) গোনাহের দিকে ধাবিত করা থেকে আশ্রয় চাই; (কাউকে) অত্যাচার করা ও (কারও দ্বারা) অত্যাচারিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই।

অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা অজ্ঞতা প্রকাশের পাত্র হওয়া থেকেও আশ্রয় চাই। সুতরাং ঘর থেকে বের হলেই আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে হাদিসে শেখানো দোয়ার মাধ্যমে উল্লিখিত চার বিষয় থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া জরুরি। আল্লাহতাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে যথাযথ আমল করার তৌফিক দান করুন।


দোয়া কবুলের যত শর্ত

শিরকমুক্ত দোয়া : শর্তহীনভাবে শুধু আল্লাহর কাছেই বলা, মানুষকে দেখানো বা শোনানোর উদ্দেশ্য না থাকা। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনকে (ইসলামকে) আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করে শুধু আল্লাহকেই ডাকো। পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দোয়া করো। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা দোয়া কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। [সহিহ আল জামে : ২৪৫, হাদিসটি হাসান]

অন্তরকে সজাগ রাখা ও উদাসীনতা পরিহার

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দোয়া করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন না। [সহিহ আত তারগিব : ২/১৩৩, হাদিসটি হাসান]। আল্লাহ যে কোনো দোয়া কবুল করতে পারেন।  যে কোনো কিছু দিতে পারেন, এই বিশ্বাস রাখা। এভাবে দোয়া করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে দাও। [সহিহ বুখারি : ৬৩৩৮] সুতরাং, এভাবে দোয়া করা যাবে না। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর জন্য কোনো কিছুই এত বড় নয় যে, তিনি তা দিতে পারবেন না। [সহিহ মুসলিম : ২৬৭৯]। দোয়ার শুরুতে এবং দোয়ার শেষে আল্লাহতায়ালার সুন্দর সুন্দর নাম এবং তার মহিমান্বিত গুণাবলির দ্বারা আল্লাহকে ডাকার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চাওয়া।


সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ার ফজিলত

রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। বালা-মুসিবত ও যে কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট হবে। জিন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট হবে।  আয়াতগুলো পড়ে শেষে ‘আমিন’ বললে আয়াতগুলোতে যে দোয়া আছে সেগুলো আল্লাহতায়ালা কবুল করে নেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বেন এটি তার জন্য যথেষ্ট হবে। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ রিয়াদুস সালেহীনের লেখক ইমাম আন-নববী (রহ.) বলেন, ‘এর অর্থ কেউ বলেছেন : কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য যথেষ্ট হবে। কেউ বলেছেন : শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট হবে।

কেউ বলেছেন- বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। তবে সব অর্থ সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সহিহ বুখারির ভাষ্যকার, আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) এই অভিমত সমর্থন করে বলেন, ওপরের সব অর্থ নেওয়া সঠিক। আল্লাহ ভালো জানেন। প্রথম অর্থটি (তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়া) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে একটি মারফু হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এ কারণেই আলী (রা.) বলেন, আমার মতে যার সামান্যও বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না’।

সুরা কাফিরুন : একবার পড়া। উপকারিতা : এ সুরা পাঠে শিরক থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : এই সুরাটিতে শিরক থেকে বাঁচার শিক্ষা রয়েছে। আবু দাউদ : ৫০৫৫, তিরমিজি, আহমাদ, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি ও শায়খ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। ১০০০ সুন্নত, পৃষ্ঠা ১৬০। ফরওয়া ইবন নাওফাল (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন : ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আমার শয্যা গ্রহণের সময় বলতে পারি। তিনি বললেন : কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন সুরাটি পাঠ করবে। কেননা এটি হলো শিরকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা। সুরা ইখলাস পাঠ করা একবার, তিনবার অথবা ১০ বার অথবা যার যতবার পড়তে ভালো লাগে। তবে তিনবার পড়লে যেহেতু একবার কোরআন খতম করার সমান। সুতরাং তিনবার পড়া যেতে পারে। কারও ইচ্ছা হলে আরও বেশি ১০ বারও পড়তে পারেন।

১০ বার সুরা ইখলাস পড়লে তার জন্য জান্নাতে একটা বাড়ি বানানো হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিগণকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক-তৃতীয়াংশ কোরআন পড়তে পার না’? প্রস্তাবটি সাহাবিদের জন্য কঠিন মনে হলো।

তাই তাঁরা বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে’? তিনি বললেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক- তৃতীয়াংশ পড়ার সমান। (অর্থাৎ এই সুরা পড়লে এক-তৃতীয়াংশ কোরআন পড়ার সমান নেকি পাওয়া যায়)। সহিহ বুখারি ৫০১৫, নাসায়ি ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯।

খ. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবেন, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে।


তাসবিহ তাহমিদ ও তাকবির পাঠ করা

৩৩ বার তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) ও ৩৪ বার তাকবির (আল্লাহু আকবার) পাঠ করার ফজিলত : কারও একজন দাস থাকলে দিনে-রাতে যে সেবা-যত্ন ও সাহায্য করত তার থেকেও বেশি উপকার পাওয়া যাবে এই আমল করলে। মোট ১০০ বার পড়লে, মিজানে ১ হাজার নেকির সমান হবে। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে আটা পেষার জন্য তার হাতে ফোসকা পড়ে যাওয়ার অভিযোগ করলেন। আমি বললাম তোমার পিতা (রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে যদি একটা খাদেমের আবদার জানাতে। (ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাদেম দেওয়ার কথা বললেন তখন) তিনি (রসুল) বললেন : তোমার জন্য কি খাদেমের চাইতে উত্তম কোনো কিছু বলব না? তোমরা যখন তোমাদের শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়বে। সুনানে আত-তিরমিজি,  দোয়া অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদিস নং-৩৪০৮। হাদিসটি সহিহ।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে ১০০ বার। এটা তোমাদের জবানে তো হলো ১০০। কিন্তু মিজানের পাল্লায় হবে এক হাজার (নেকি)। সুনানে আত-তিরমিজি, দোয়া অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদিস নং-৩৪১০।


সুরা মুলক পড়া

প্রতিদিন (দিনে বা রাতে যে কোনো এক সময়) সুরা মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। অনেকে মনে করেন, এটা রাতেই পড়তে হবে। এটা ঠিক না। কেউ রাতে পড়লে ভালো। তবে সুবিধা মতো সময়ে দিনে রাতে, যে কোনো সময়ই পড়া যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) আলিফ লাম মিম তানজিলুল কিতাব (সুরা আস-সাজদা) ও তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক) তেলাওয়াত না করে কোনোদিন ঘুমাতেন না। এই সুরাটি নিয়মিত প্রতিদিন তেলাওয়াত করলে কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা করবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের বেলা তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবেন আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জামানায় এই সুরাটিকে আমরা ‘আল-মা’আনিয়াহ’ বা সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়বেন তিনি খুব ভালো একটা কাজ করলেন। এই সুরা প্রত্যেক দিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- কোরআনে এমন একটা সুরা আছে যার মধ্যে ৩০টা আয়াত রয়েছে যেটা একজন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর