শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মুসলমানদের কতিপয় আমল

মোস্তফা কাজল

মুসলমানদের কতিপয় আমল

মহান আল্লাহতায়ালার মহা অনুগ্রহে সারা বিশ্বের সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের সম্পদ আছে কিন্তু জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তি নেই। সে জন্য প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেশি বেশি আমল ও দোয়া করা।  দুনিয়া ও পরকালের জীবনে উত্তম অবস্থান ও সম্পদশালী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী অনুগত বান্দা হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহতায়ালা ওই বান্দাকে দুনিয়ায় প্রাচুর্য দান করেন। অর্থ-সম্পদের অভাব, সন্তান-সন্ততির অভাব, রিজিকের অভাব দূর করে দেন। পরকালের সুন্দর জীবন লাভে দুনিয়ার সব গুনাহও ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা ও হাদিসের বর্ণনায় তা সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এসব নিয়ে আজকের আয়োজন...

 

নেক মকসুদ পূরণে আমল

যে কোনো মুসলমানের নেক মকসুদ পূরণে রয়েছে ছয় আমল। এক : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। দুই : মিথ্যা বলা ও হারাম খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকা। তিন : মানুষকে ধোঁকা দেওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা। চার : অসহায় এবং গরিবদের দান করা। সুযোগ হলে বিপদগ্রস্ত মানুষের উপকার করা। পাঁচ : সব ধরনের গুনাহর কাজ ছেড়ে তওবা করা। ভবিষ্যতে গুনাহ না করার মনমানসিকতা তৈরি করা। ছয় : মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে দোয়া চাওয়া। উপরের শর্তগুলো ঠিকমতো পালন করতে পারলে যে কোনো মুমিন মুসলমানের উদ্দেশ্য যত বড়ই হোক না কেন, ইনশা আল্লাহ সব আশা পূরণ করবেন। অতঃপর যে কোনো দিন মাগরিবের নামাজ আদায় করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। আশা পূরণের নিয়তে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। নামাজ শেষে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আকুতি মিনতি করে বিনয়ের সঙ্গে নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দোয়া করা। কেঁদে কেঁদে দোয়া করার চেষ্টা করা। কারণ মহান আল্লাহতায়ালা কান্না করে দোয়া করলে অনেক খুশি হন। আর আল্লাহতায়ালা খুশি হলে কবুল হয় আমল। আর কেউ কাঁদতে না পারলে, মন থেকে কান্না করার চেষ্টা করবেন। এতেও আল্লাহতায়ালা খুশি হন।

পরে দোয়া শেষে কেবলা মুখ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের ওপর ভরসা করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আদবের সঙ্গে কিছু চাইতে পারেন। মানুষ আদবের সঙ্গে ডাকলে আল্লাহতায়ালা বান্দার আশা পূরণ করেন। আর ডাকার সময় মনে মনে ভাববেন, আপনি আল্লাহকে অনেক ভালোবাসেন। সুতরাং আল্লাহতায়ালা আপনি যা চাইবেন, তাই খুশি হয়ে দান করবেন।

আমল শেষ করার পর মুনাজাত করবেন। মুনাজাতে একবার সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াত পড়বেন। একবার নবীজি (সা.)-এর ওপর দুরুদ শরিফ পড়বেন। অতঃপর নিজের বাসনা পূরণের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করবেন। এভাবে মাগরিবের পরে লাগাতার সাত দিন আমল করবেন। সাত দিন শেষ হওয়ার পর প্রতি বৃহস্পতিবার মাগরিবের পরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে একই আমল করবেন। কোনো কারণে বৃহস্পতিবারে করতে না পারলে শুক্রবার মাগরিবের পর করে নেবেন। কখনো মহান আল্লাহতায়ালার ওপর থেকে ভরসা ত্যাগ করবেন না। বিরামহীনভাবে আমল চালাতেই থাকবেন। কারণ আমল যত বেশি হবে আপনার জন্য তত ভালো হবে। আর দোয়া করার সময় অভাব-অনটন যাতে না হয় সে বিষয়ে ফরিয়াদ জানাতে পারেন। সুতরাং আমল যত বেশি সময় নিয়ে করবেন এবং দীর্ঘদিন করবেন, আপনার দোয়ার বরকতে তত বেশি কল্যাণ আল্লাহপাক দান করবেন ইনশা আল্লাহ। সুতরাং ফল লাভ হতে দেরি হলেও হতাশার কোনো কারণ নেই। অনেক সময় আল্লাহতায়ালা বান্দার ভালোর জন্যই দোয়া কবুল করতে দেরি করেন। আমাদের ধৈর্য ধরে আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করে আমল চালাতে হবে।  এতে আল্লাহতায়ালাও অনেক খুশি হন। এর প্রমাণ পবিত্র কোরআনেও আছে।

 

সৌন্দর্য ও সম্পদ লাভের আমল

প্রার্থনাকারী ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহতায়ালা ওই বান্দাকে দুনিয়ায় প্রাচুর্য  দান করেন

জীবনের সৌন্দর্য ও সম্পদ মহান আল্লাহতায়ালার মহা অনুগ্রহ। এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের সম্পদ আছে কিন্তু জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তি নেই। আবার সম্পদহীন জীবনযাপন করেন অনেকে। দুনিয়া ও পরকালে জীবনে উত্তম অবস্থান ও সম্পদশালী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী অনুগত বান্দা হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহতায়ালা ওই বান্দাকে দুনিয়ায় প্রাচুর্য দান করেন। অর্থ-সম্পদের অভাব, সন্তান-সন্ততির অভাব, রিজিকের অভাব দূর করে দেন। পরকালের সুন্দর জীবন লাভে দুনিয়ার সব গোনাহও ক্ষমা করে দেন। কোরআনের নির্দেশনা ও হাদিসের বর্ণনায় তা সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেনÑ অতঃপর আমি বললাম, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাকারী। তিনি তোমাদের (উত্তম রিজিকের) জন্য প্রচুর বৃষ্টিবর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন আর তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন জান্নাত ও তোমাদের জন্য প্রবাহিত করবেন নহরসমূহ। (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২) সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দয়াময় মহান মালিকের কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। গোনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া। আর তাতে জীবন ও সম্পদে প্রাচুর্য ফিরে আসবে। ফলে দয়াময় রবের কাছে তাঁরই শেখানো ভাষায় ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুমিন।

উচ্চারণ : রাব্বিগফির ওয়ার হাম ওয়া আনতা খায়রুর রাহিমিন।

অর্থ : হে আমার প্রভু। আমাকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। দয়াশীলদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ঠ দয়াশীল। (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও উম্মতে মুহাম্মদির জন্য নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যমে নেয়ামত লাভের সুসংবাদ দেন। হাদিসে এসেছেÑ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেনÑ হে আদম সন্তান। তুমি যতদিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গোনাহ মাফ করতে থাকব। তুমি যা-ই করতে থাক না কেন, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান, তোমার গোনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও। তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহসহ আমার কাছে আস আর আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাক, তবে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমাসহ তোমার কাছে আসব। (তিরমিজি)। মহান আল্লাহতায়ালা ক্ষমা প্রার্থনাকারী মুমিন মুসলমানকে মানসিক গ্লানি থেকে মুক্ত রাখেন। দুনিয়ায় জীবন ও সম্পদের অভাব মুছে দেন। দান করেন উত্তম রিজিক। এর জন্য শুধু প্রয়োজন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাওবাহ-ইসতেগফার করা। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে কল্যাণময় সঠিক পথের দিকে ধাবিত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার তৌফিক দান করুন।  ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে  জীবন ও সম্পদে বরকত লাভের তৌফিক দান করুন।

 

ভুলের ক্ষমা চাইবেন যেভাবে

মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো কাজে ভুল করে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। বান্দা কীভাবে ক্ষমা চাইবে, সে ধরনও আল্লাহতায়ালা  কোরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। মুমিন বান্দা এই ছোট্ট দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ভুল থেকে ক্ষমা চাইবেন।

দোয়ার উচ্চারণ : রব্বানা লা তুআখিজনা ইন্না সিনা আও আখত্বানা।

অর্থ : হে আমাদের প্রভু। যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি। তবে আমাদের অপরাধী করো না। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)। মানুষের এসব ভুল হতে পারে মনের ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়। ভুল যেভাবেই হোক না কেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরই শেখানো ভাষায় ছোট্ট এ দোয়ার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি। আশা করা যায়, মহান আল্লাহ বান্দার ভুলগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে ইচ্ছা-অনিচ্ছাকৃত সব ভুল থেকে মুক্তি লাভে এ দোয়ার মাধ্যমে প্রার্থনা করার তৌফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত  জীবনযাপনের তৌফিক দান করুন।

 

মুসলমানের যে সাত গুণ আল্লাহতায়ালার পছন্দ

মুসলমানের যে সাত গুণ আল্লাহতায়ালার পছন্দ। এক. তওবা করা। আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন। দুই. তাহারাত (পবিত্রতা)। যারা পবিত্র থাকে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। তিন. তাক্বওয়া (আল্লাহভীতি) নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন। চার. ইহসান- আল্লাহ নেককারদের ভালোবাসেন। পাঁচ. তাওয়াক্কুল- নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন তার ওপর ভরসাকারীদের। ছয়. ন্যায়বিচার- আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন। সাত. সবর- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর মনোনীত বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন।

দোয়া কবুলের সেরা ১০টি সময়

আল্লাহতায়ালা মুমিন বান্দার দোয়া সব সময় কবুল করে থাকেন। তারপরও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুনির্দিষ্ট কিছু সময়ের কথা হাদিসে পাকে উল্লেখ করেছেন। যে সময়গুলো দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা নিশ্চিতভাবে বান্দার দোয়া কবুল করেন। আর তা হলো-

>> রাতের শেষ তৃতীয়াংশে

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নিচের (প্রথম) আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমাকে ডাকো। আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো আমার কাছে চাও। আমি তোমাকে দান করব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (বুখারি)।

>> আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (আবু দাউদ)।

>> জুমার দিনের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন নামাজ পড়া অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে। আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পূরণ করবেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন। (বুখারি)।

>> সেজদার সময়ের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায় তা হলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা তখন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও। (মুসলিম)।

>> ফরজ নামাজের পরের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রাতের শেষ সময় এবং ফরজ নামাজের পরে দোয়া কবুল হয়। (মুসলিম)।

>> শবেকদরের রাতের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের (জীবনের) সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি)।

>> বৃষ্টি হওয়ার সময়ের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ)।

>> আরাফাতের দিনের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া।’ (তিরমিজি)।

>> জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল অন্য যে কোনো দিনের আমলের চেয়ে উত্তম। (বুখারি)।

>> রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দোয়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করেন। ন্যায়পরায়ণ শাসক। নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)। মুমিন মুসলমানের উচিত এ সময় ও দিনক্ষণগুলোতে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের একান্ত চাহিদাগুলো পূরণে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে উল্লিখিত দিন ও সময়ে তওবা-ইসতেগফারসহ দোয়া করার তৌফিক দান করুন।

ক্ষমা ও অনুগ্রহ পাওয়ার দোয়া

আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ক্ষমা ও রহমত লাভের অনেক দোয়া নাজিল করেছেন। দোয়ার এসব আয়াত নাজিলের পেছনে অনেক কারণ ও নিদর্শন আছে; যা মুমিন মুসলমানের জন্য অনুকরণীয় ও সুমহান শিক্ষা। হজরত মূসা আলাইহিস সালাম নিজ ভাই হারুন আলাইহিস সালামের ওপর একটি ঘটনার কারণে প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলন। যখন তাঁর রাগ কমে আসে তখন তিনি আল্লাহর কাছে নিজের জন্য এবং তাঁর ভাইয়ের জন্য এ দোয়া করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য হজরত মূসা আলাইহিস সালামের ক্ষমা ও রহমত লাভের সেই দোয়াটি এভাবে তুলে ধরেছেন-

উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া লিআখি ওয়া আদখিলনা ফি রাহমাতিকা ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমিন।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা কর আমাকে। আর আমার ভাইকে এবং আমাদের সবাইকে। তোমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যে সর্বাধিক করুণাময়। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫১) উল্লেখ্য, হজরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে ৩০ দিন ও ৩০ রাত ধ্যানমগ্নের জন্য তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন। সে সময়ের জন্য নিজ ভাই হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে কাওমের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। হজরত মূসা আলাইহিস সালাম ৩০ দিন ৩০ রাত ধ্যানমগ্ন থাকার কথা থাকলেও আল্লাহতায়ালা তা ১০ দিন বাড়িয়ে দেন। যার ফলে বনি ইসরাইল জাতি এ সময় গো-বাছুর পূজায় লিপ্ত হয়। আর তাতে হজরত হারুন আলাইহিস সালাম বাধা প্রদান/নিষেধ করলে, পুরো কাওম তাঁর ওপর রেগে যান এবং তাকে হত্যা করতে উদ্যত হন। হজরত মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে থাকতেই ওহির মাধ্যমে গো-বাছুর পূজার কথা আল্লাহর কাছে জানতে পারেন। কিন্তু আল্লাহর কাছে শোনার পর তা বাস্তবে এসে দেখায় তিনি রাগ সামলাতে পারেননি। নিজ ভাই হারুন আলাইহিস সালামকে তিনি দোষারোপ করেন। তার মাথার চুল ধরে টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসেন। তখন হজরত হারুন আলাইহিস সালাম নিজ ভাইকে বললেনÑ ভাই! এ কাজে আমার কোনো দোষ নেই। সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার কথার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম। বরং তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। কাজেই আমার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবহার করবেন না, যাতে আমার ও আপনার শত্রুরা খুশি হয়ে যায়। আর আমাকে তাদের এ ভ্রষ্টতার মধ্যে শামিল আছি বলে ভাববেন না। ভাইয়ের মুখে এ কথা শুনে হজরত মূসা আলাইহিস সালামের রাগ কমে যায়। আর মূসা আলাইহিস সালাম তখন নিজের জন্য, নিজ ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের দোয়া করেন। এ দোয়াটি মহান আল্লাহর এত বেশি পছন্দ হয়ে যায় যে, আল্লাহতায়ালা তা উম্মতে মুহাম্মাদির ক্ষমা ও রহমত লাভের জন্য তুলে ধরেন। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হজরত মূসা আলাইহিস সালামের ক্ষমা ও রহমত লাভের দোয়ার মাধ্যমে নিজেদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ কামনা করা। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে উল্লিখিত দোয়ার মাধ্যমে তার ক্ষমা ও রহমত লাভের তৌফিক দান করুন।  দুনিয়ার সব ভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর