শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রিয়জনকে লেখা শামসুর রাহমানের অপ্রকাশিত চিঠি

সংগ্রহ ও ভূমিকা : শেখ মেহেদী হাসান

প্রিয়জনকে লেখা শামসুর রাহমানের অপ্রকাশিত চিঠি

প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯-১৭ আগস্ট ২০০৬)। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর জন্ম ঢাকার মাহুতটুলি। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, মা আমেনা বেগম। ঢাকা নগরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। নাগরিক কষ্ট, দুঃখ-সুখ তাঁর কবিতায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে। ১৯৫২ সাল ভাষা আন্দোলনে পূর্ব বাংলার বাঙালি নিজের পথ খুঁজতে শুরু করল, কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের সূচনাও সেখান থেকেই। ১৯৬০-এ তাঁর প্রথম কাব্য, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে-র প্রকাশ কবিতায় তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। কলকাতা থেকে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় ‘রূপালী স্নান’ প্রকাশের মাধ্যমে কবিতায় বৃহত্তর বাংলায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি রেডিও-তে কাজ করার পর মর্নিং নিউজ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা-য় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

স্বাধীনতার পরও শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সোচ্চার আন্দোলনে শামসুর রাহমান নিজের কবিতা সমর্পণ করেছিলেন। গত শতকের সত্তর এবং আশির দশকে তাঁর কবিতা ওই সময়ের রাজনৈতিক আন্দোলনে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রথম জীবনে রোমান্টিকতাই তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন। তাঁর কবিতার ভাষা আড়ালের নয়। বাঙালি মধ্যবিত্তের প্রতিবাদ ন্যায্যতা দেশ রাজনীতি ও নৈতিকতা ভাষা। নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, প্রগতিশীল তাঁর কবিতার পঙ্ক্তির কাছে যেন দুমড়ে পড়ে। তিনি হয়ে ওঠেন আশার প্রতীক।

বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তাঁর কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও গদ্য। বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবদীপ্ত অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে তাঁর কবিতায়। বিদ্রোহ থেকে শুরু করে প্রেমের অনুভূতি- শব্দকে হাতিয়ার করে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অনায়াস বিচরণ করেছেন বাংলা সাহিত্যের এই মহীরুহ। জীবনের সত্য-সুন্দরকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য।

শামসুর রাহমানের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। তাঁর রচনা বহুল পঠিত, প্রশংসিত। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা-অনুভূতি-স্বপ্ন-কল্পনার সঙ্গে নতুন একটা বোঝাপড়ায় নেমেছিলেন, যা থেকে তৈরি হয়েছে কবিতার নতুন আঙ্গিক, ভাষাশৈলী। কবিতার পাশাপাশি তাঁর গদ্য, গানে তৈরি হয়েছে নতুন ব্যঞ্জনা। আর এ কাজটি নিরন্তর করে গেছেন তিনি। ব্যক্তির মনোজগতের নানা সমীকরণ মেলাতে গিয়ে অনেক চিন্তা, অনেক ভাবনা, বোধ অথবা অভিজ্ঞতায় বারেবারে ফিরে গেছেন। তাঁর কবিতা আমাদের কাছে মোটেও নির্লিপ্ত মনে হয় না বরং চেতনাকে শানিত করে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান। তিনি আমাদের গৌরব।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য শামসুর রাহমান বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯২) ভূষিত হন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে তিনি জাপানের মিতসুবিশি পুরস্কার পান। ১৯৯৪ সালে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তাঁকে আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত করে। কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার সুযোগ হয় কবি শামসুর রাহমানের অপার স্নেহ লাভের। কবি, তাঁর স্ত্রী জোহরা রাহমান, কন্যা, পুত্র-পুত্রবধূ সবার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাত্রজীবন থেকে পেশাগত জীবনে নানা সময় তাঁর বাড়িতে গিয়েছি কখনো কাজে, কখনো অতিথি হয়ে। নিজ থেকেই নিয়মিত খবর নিতেন অভিভাবকের ন্যায়। আমি তাঁকে পবিত্র ও সরল মানুষ হিসেবে জানি। কবির মৃত্যুর পরও তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কটা টিকে আছে। সেই সূত্রে কবির বেশ কিছু অপ্রকাশিত রচনা, চিঠিপত্র আমার হস্তগত হয়। পরম যত্নে এতদিন আলগে রেখেছিলাম। কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দশটি অপ্রকাশিত চিঠি পত্রস্থ করা হলো। এ চিঠিগুলো কবি তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও কল্পিত প্রেমিকাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। এসব চিঠিতে স্ত্রী, সন্তানের প্রতি সম্মান ও নির্ভরতার যেমন পরিচয় আছে, তেমনি ভালোবাসার কথাও আছে। ব্যক্তিগত হৃদ্যতা, ঘনিষ্ঠতা বা অন্তরঙ্গতা তাঁকে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত করতে পারেনি- চিঠিগুলোই তারই প্রমাণ।

 

স্ত্রী জোহরা রাহমানকে লেখা

মস্কো

৭/৬/৭২

প্রিয় জোহরা,

কাল রাতে মস্কোয় ফিরে এসেছি লেনিনগ্রাদ, স্কোভ, মিখাইলাভস্কী, নভোগ্রভ ইত্যাদি জায়গা থেকে। দু’জায়গায় কবিতা পড়েছি বাংলায়। পড়ার পর তর্জমা করা হয়েছে রুশ ভাষায়। প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই সুন্দর। ফিরে আসতে কয়েক দিন দেরি হয়ে যেতে পারে। কাল রাতে যাচ্ছি আল মস্কোয় ত্রশিয়ায়। সেখানে আশা করি, তিন দিন থাকবো। তারপর মস্কোয়। পরে কোথায় যাবো, তা এখনো জানি না।

তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ভালো আছো। তুমি নিজের শরীরের যত্ন নেবে, এটা আশা করি আমার বলতে হবে না। এর আগে তোমাকে ক’টি চিঠি লিখেছি। চিঠি পৌঁছুতে অনেক দেরি হয় শুনেছি। ভালোবাসা।

স্বাক্ষর

 

 

স্ত্রী জোহরা রাহমানকে লেখা

ওয়াশিংটন

৬/৫/৭৯

প্রিয় জোহরা,

ওয়াশিংটনে পৌঁছেই তোমাকে চিঠি লিখছি। হাওয়াই জাহাজে অনেক ঘণ্টা উড়েছি, ঘুম হয়নি দু’রাত; শরীর ভীষণ ক্লান্ত। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, তবু হাতে কলম তুলে নিয়েছি। কারণ, এই মুহুর্তে চিঠি না লিখলে আর লেখাই হবে না সহজে। দু-তিন দিন পরে, নিউইয়র্কে যাবো। সেখান থেকে সুমিওদের চিঠি লিখবো। তোমাদের কথা সব সময় মনে পড়ে, আর বাড়ির জন্য মন কেমন করে। এখানে সব কিছুই খুব ঝকঝকে, ঝলমলে, কিন্তু আমার মন পড়ে আছে আমার সেই ছোট ঘরে, সেই বিছানায়, সেই অগোছালো টেবিলে। তাই, প্রায়ই মন কেমন উদাস হয়ে যায়। আমি দেখতে পাই, তুমি গাছ থেকে ফুল তুলছো, সুমি কলেজে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে, ফাওজিয়া শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে, ফাইয়াজ খবরের কাগজ পড়ছে, শেবা ওর বেড়ালটাকে নিয়ে মেতে আছে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে। ঐ বেড়ালটা কি এখনো আছে, নাকি পালিয়ে গেছে আবার?

মতিনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না।

আম্মা ও আব্বুকে আমার কথা বলো। বাড়ির সবাইকে বলো যে, তাদের কথা খুব মনে পড়ে। তোমরা কেমন আছো, জানতে ভারি ইচ্ছে করে। ভালোবাসা জানাই।

স্বাক্ষর

 

কন্যা সুমি ও ফাওজিয়াকে লেখা

দিল্লি

২১/১/৮৩

প্রিয় সুমি ও ফাওজিয়া,

এখন আমরা ভারতের রাজধানী দিল্লীতে। ইতিমধ্যে বানারসী, খাজুরাহো এবং আগ্রা ঘুরে এলাম। খুব ভালো লাগছে। তোমাদের কথা খুব মনে পড়ে। এখানে তোমাদের অনুপস্থিতি কেমন যেন মন খারাপ করে দেয়। আনন্দ অনেকখানি অপূর্ণ থেকে যায়। হয়তো জীবনই এ রকম, এ কথা মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

সারা দিনের পর এত ক্লান্ত লাগে যে, ভালো করে চিঠি লেখার মতো মানসিক অবস্থা থাকে না। ফলে লিখি-লিখি করে লেখার উপকরণ মনে জমে থাকে,  কাগজে গরহাজির। তবু তাড়াহুড়ো করে সামান্য কয়েকটি লাইন রওয়ানা করে দিলাম তোমাদের উদ্দেশে।

সুমি, ফাওজিয়ার দিকে একটু বিশেষ লক্ষ্য রেখো। প্রিয় কেমন আছে? ফাইয়াজ ও সেবা? আমিন ও সাবেরিনকে বলো ওদের কথা রোজ মনে পড়ে। তোমার আম্মা তো প্রায় সারাক্ষণই তোমাদের কথা বলেন।

ফাওজিয়া,

তুমি কেমন আছো? তোমার শরীর ভালো আছো তো? কোনোরকম চিন্তা করো না; মনোবল দৃঢ় রেখো। তোমরা সবাই আমাদের আদর নাও। তোমার দাদীকে আমাদের সালাম জানিও। আমাদের জন্য দোয়া করতে বলো। দাদীকে বলবে, ওঁকে খুবই মনে পড়ে। ওঁর শরীর কেমন আছে? তোমাদের চাচা ও চাচীকে আমার শুভেচ্ছা। ফুপা ও ফুপুদের জন্যে আমার প্রীতি। শাহজাহান চাচাকে আমাদের সালাম জানিও। কাল জয়পুরের পথে রওয়ানা হবো। আশা করি ৩০ তারিখ ফিরে আসবো। হয় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে কিংবা বাংলাদেশ বিমানে। আম্মিকে একটু খেয়াল রাখতে বলো।

আব্বু ও আম্মা

 

স্ত্রী জোহরা রাহমানকে লেখা

২৭/৪/৮০

প্রিয়তমাসু,

এখন ঘরে ফেরার পালা। এই শহরে চার দিন থাকবো। আজই পিকিং থেকে এসেছি। যে হোটেলে আছি, তাকে ঠিক হোটেল বলা যায় না। রেস্ট হাউস বলাই ভালো। একদম ভিড়ভাট্টা নেই, নেই হৈ-চৈ। খুব নিরিবিলি, সুন্দর, জায়গা। রেস্ট হাউসের চারদিকে থই থই পানি, একে দ্বীপনিবাস বলতে ভালো লাগছে। এখানে এসেও তোমার অনুপস্থিতি তীব্রভাবে অনুভব করছি। এমন একটা জায়গায় যদি আমরা দু’জন কিছুদিন থাকতে পারতাম, তাহলে কী যে ভালো লাগতো আমার। ঢাকায় মনের মতো একটা জায়গা খুঁজে মরি রাত্রিদিন, কিন্তু কিছুতেই পাই না। অথচ এমন সুন্দর জায়গায় এখন আছি, অথচ তুমিই নেই। বোধ হয় এটাই মানুষের নিয়তি। রবীন্দ্রনাথের কথা একটু পাল্টে যেতে পারে, আমরা যা চাই তা ভুল করে চাই, যা পাই তা চাই না।

এর আগে তোমাকে দুটো চিঠি লিখেছি পিকিং থেকে। জানি না সেই চিঠি দুটো পেয়েছো কিনা। না পেলে খুব খারাপ লাগবে আমার, অনেক ব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় চুরি করে তোমার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছি আমার এলোমেলো শব্দমালা। কোনো একটা প্রতিনিধিদলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এলে নানা ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়; তাছাড়া যেহেতু আমি দলনেতা, তাই আমি সময় পাই আরো কম। দলের সবার চোখ এড়িয়ে, লুকিয়ে চিঠি লিখতে হয় আমাকে। এমন কষ্টের মধ্যে লেখা চিঠি যদি তোমার হাতের স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে আমার দুঃখের সীমা থাকবে না।

তোমাকে কি বলতে হবে নতুন করে যে, তোমাকে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না। বিছানায় হাত বাড়াই তোমার জন্য, কল্পনা করতে ভালো লাগে তুমি বসে আছো আমার পাশে, হাসছো মিষ্টি করে, বিছানায় শুয়ে আছো আমার বুকের কাছে, গুনগুনিয়ে গাইছো কোনো পুরোনো গান, যা শুনতে আমার ভালো লাগে। আর আমি ব্যাকুল হয়ে যাই তোমাকে পাওয়ার জন্য। আমার ভাবতে ভালো লাগছে, এখন আমি তোমার কাছে ফিরে যাচ্ছি আবার। আবার তোমাকে ফিরে পাবো আমার বুকে, আবার তুমি সেতারের মালা বাজাবে আমার রক্ত কণিকায়, আমার মন তুমি ভরে দেবে শান্তিধারায়। ভালোবাসা। ভালোবাসা। ভালোবাসা। তোমার কবি।

 

স্ত্রী জোহরা রাহমানকে লেখা

৯/১০/৮১

প্রিয়তমাসু

কাল এখানে ঈদ হয়ে গেলো।  তোমাদের কাছ থেকে এত দূরে এই প্রথমবারের মতো ঈদ কাটলো আমার। কেমন কেটেছে বুঝতেই পারছো। মনে কোনো আনন্দ ছিলো না; আমাদের রাষ্ট্রদূত খাজা কায়সারের বাসায় নেমন্ত্রণ ছিলো। সেখানেই সারাদিন কাটিয়ে ছিলাম। কোনো মতে রাতে হোটেলে ফিরে এলাম। কান্ত শরীরে, তারপর ঘুম। খাজা কায়সারের বাসায় বসে বারবার তোমাদের কথা মনে পড়ছিলো; মনে পড়ছিলো মাহুতটুলি আর আশেক সেনের কথা।

কাজা কায়সার বললেন, আব্বুর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিলো, ওরা একসঙ্গে হকি খেলেছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আব্বুর কথা বলার সময় তার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো।

এর আগে তোমাকে কয়েকটি চিঠি লিখেছি। পেয়েছো কিনা জানি না, আব্বাকেও চিঠি পাঠিয়েছিলাম অনেক দিন আগে। সুমি, আমিন, ফাইয়াজ, ফাওজিয়া, ওরা কেমন আছে? কেমন আছে আমার প্রিয়? সুমি কি আশেক লেনে আছে? ওর শরীর কেমন এখন? ওকে বোলো, আমি নিউইয়র্ক থেকে রেণু এবং নাজুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। ওরা ভালো আছে। রেণু বললো সুমির শাশুড়ি এখন লন্ডনে আছেন চিকিৎসার জন্যে। তার জন্যে উদ্বিগ্ন আছি।

নিউইয়র্কে টেলিফোনে মাসুদ এবং শানুর সঙ্গে কথা হয়েছে। ওদের সঙ্গে দেখা হয়নি। শুনলাম তুমি চিঠি পাঠিয়েছো। দু’একদিনের মধ্যে সেই চিঠি আমার হাতে আসবে। চিঠির জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছি, বুঝতেই পারছো। বিদেশে এসে তোমার জন্যে মনের টান আরো বেড়ে গেছে। তোমার আওয়াজ শুনতে ইচ্ছে হয়, কাছে পেতে সাধ হয়। মনে পড়ে, তুমি শুয়ে আছো আমার পাশে, একটু আধটু সাজগোজ করছো কখনো সখনো, আলীকে ধমকাচ্ছো, বুয়ার সঙ্গে রান্নাবান্না বিষয়ে কথা বলছো, আলাপ করছো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে, প্রিয়কে কোলে নিয়ে হাঁটছো। সেসব দৃশ্য মনে পড়লে বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে যাই আর যখন দেয়ালে-টানানো মতিনের ফটোগ্রাফটি চোখে ভেসে ওঠে তখন মন কেমন উদাস হয়ে যায়। তোমরা আমার জন্যে চিন্তা করে না; মাঝে একদিন সামান্য জ্বর হওয়া সত্ত্বেও আমি ভালো আছি। এখানে এখন অনেক শীত। ছেলে-মেয়েদের আমার আদর দিও। তোমার জন্যে ভালোবাসা।

সর্বশেষ খবর