শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রাচীন মুসলিম সংস্কৃতির শহর

বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ইসলামী সাংস্কৃতিক সংস্থা (আইসেসকো) ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী নির্বাচিত করে। মূলত এশিয়া-আফ্রিকার কিছু অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকেই ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী নির্বাচন করা হয়ে থাকে। ইতিহাসবিদদের মতে, নির্বাচিত এসব শহর ও অঞ্চল থেকেই আল্লাহর মনোনীত পবিত্র ইসলাম ধর্ম বিকশিত হয়েছিল। প্রাচীন মুসলিম সংস্কৃতির শহরগুলো নিয়ে আজকের রকমারি।

আবদুল কাদের

প্রাচীন মুসলিম সংস্কৃতির শহর

মক্কা আল মোকাররমাহ

মক্কা আল-মোকাররমাহ বা মক্কা ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত পবিত্রতম নগরী হিসেবে স্বীকৃত। যার পেছনে আছে হাজার বছরের ইতিহাস। শহরটি সৌদি আরবের হেজাজ অঞ্চলের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এখানে ইসলামের আখেরি নবী  হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম। এ নগরীতে তিনি পবিত্র কোরআনের প্রথম ওহি লাভ করেন (হেরা গুহায়, যা মক্কা নগরী থেকে তিন কিলোমিটার দূরে)। মুসলমানরা প্রতি বছর হজ ও উমরাহ পালনের জন্য এখানে আসেন। মক্কার প্রাণকেন্দ্রে পবিত্র কাবার অবস্থান। মক্কার প্রাচীন নাম ছিল বাক্কা। ইসলামিক সূত্র অনুযায়ী ইহুদি, খ্রিস্টান আর ইসলাম ধর্মের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে তাঁর স্ত্রী সারাহ ঈর্ষান্বিত হয়ে হাজেরার শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-কে মা-সহ মক্কা নগরীর বিরান ভূমিতে রেখে আসেন। বুখারি শরিফ থেকে পাওয়া যায়, আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইলের (আ.) ডানার আঘাতে মরুভূমিতে ‘জমজম’ কূপ সৃষ্টি হয়। মরুর বুকে পানির সন্ধান পেয়ে লোক জড়ো হয় এবং সেখানে লোকালয় গড়ে ওঠে। ইসলামী সূত্রমতে, হজরত ইসমাইল (আ.) বড় হওয়ার পর হজরত ইব্রাহিম (আ.) মক্কায় আসেন এবং আল্লাহর আদেশে এখানে পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ শুরু করেন। পবিত্র কাবাঘর নির্মাণে তাঁর সঙ্গী ছিলেন পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানরাই মক্কানগরীর অধিপতি হিসেবে শাসন করে আসছেন। ১৯২৫ সালে বাদশাহ ইবনে সৌদ সৌদি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর থেকে সৌদ বংশ মক্কার দায়িত্ব পালন করে আসছে। আধুনিক যুগে এসে শহর বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। যার ফলে পরিবর্তন এসেছে শহরের রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোয়। এর সম্প্রসারণের ফলে বহু ঐতিহাসিক কাঠামো এবং প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হারিয়ে গেছে। ২০০৫ সালে ইসলামিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (আইএসইএসসিও) মক্কা নগরীকে ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে ভূষিত করেন। প্রতি বছর পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে মক্কায় লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হন। ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী স্বীকৃতির পর থেকে ঐতিহাসিক মক্কানগরী বিশ্বজুড়ে এক অনন্য পর্যটন নগরীতে পরিণত হয়েছে।

 

আল মাদিনাহ আল মুনাওয়ারাহ

আল মাদিনাহ আল মুনাওয়ারাহ সাধারণত মদিনানগরী হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত। এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহর, যেখানে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক। পবিত্র মক্কা নগরীর পর এখান থেকে ইসলাম ধর্ম বিকশিত হয়। ঐতিহাসিকভাবেও মদিনা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) হিজরতের পর মদিনায় বসবাস করেন। সাহাবিদের (রা.) ইসলাম শেখানো থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ নবী মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে নববীতে বসেই আঞ্জাম দিতেন। সাহাবিরা (রা.) এখানেই মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে পবিত্র কোরআন শিখতেন আবার এর প্রাঙ্গণে হতো যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি সভা।

স্থাপত্যের দিক থেকেও মদিনা শহরটি বিশ্বের প্রাচীনতম তিনটি মসজিদের শহর; যা যথাক্রমে আল-মসজিদ আন-নববী (মসজিদে নববী), মসজিদ আল-কিবলাতাইন এবং মসজিদে কুবা। প্রত্যেকটি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাত ধরেই হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মদিনার প্রাচীন মসজিদে নববীর সংস্কার করা হয়। বর্তমানে এই মসজিদে ১০টি সুউচ্চ মিনার ও প্রায় ২০০টি ছোট-বড় গম্বুজ রয়েছে। তবে মসজিদে নববীর মূল আকর্ষণ মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা, মিম্বর, কক্ষ, সবুজ গম্বুজ ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি।

 

আলেপ্পো

আলেপ্পো সিরিয়ার প্রাণকেন্দ্র। শহরটি বিশ্বের প্রাচীনতম জনবহুল শহরগুলোর একটি। আনুমানিক ৮ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। সিরীয় গৃহযুদ্ধের আগে ১২ থেকে ১৬ শতাব্দীর মধ্যে প্রাচীন শহরের অন্য জেলাগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হয়নি। তবে ১৭ শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী শহরটির গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৪৬ সালে দামেস্ক সিরিয়ার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে আলেপ্পোর গুরুত্ব অনেক। রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন স্থাপনা। আলেপ্পোর প্রাসাদগুলো অতিকায়, রাস্তাগুলো সরু ও বাজারগুলো আচ্ছাদিত। এই সমারোহ প্রাচীন শহর আলেপ্পোকে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে। আলেপ্পোর গ্রেট মসজিদও শহরের ইসলামী ইতিহাস এবং ভূতাত্ত্বিক গুরুত্বের প্রমাণ। দুর্ভাগ্যবশত আজ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে ঐতিহাসিক প্রাচীন শহরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। একাদশ শতাব্দীর মিনারটি আজ ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে। শহরের অনেক স্থাপত্যস্থল ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও শহরটি এখনো ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে রয়ে গেছে। ২০০৬ সালে আইএসইএসসিও ঐতিহ্যবাহী আলেপ্পো নগরীকে ইসলামী সংস্কৃতি ও ইতিহাসের রাজধানী হিসেবে ভূষিত করে।

 

তারিম

ইসলামী ঐতিহ্যের অন্যতম শহর হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণ ইয়েমেনের হাদরামৌত প্রদেশের তারিম। এটি ইয়েমেনের অন্যতম ইসলামী ধর্মীয় স্মৃতিমন্ডিত অঞ্চল। এ অঞ্চল থেকে নবী, ইসলামী আইন, সুফি-সাধক, চিকিৎসক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কৃষি, ইতিহাস, গণিত, দর্শন, যুক্তিবিদ্যার ব্যক্তিবর্গ বেরিয়েছেন। শহরটির অধিকাংশ জনসংখ্যা এখনো উপজাতি হিসেবে পরিচিত। ধর্মীয় শিক্ষা ও ইসলাম চর্চার কেন্দ্র হিসেবে শহরটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। এখানে ৩৬৫টি মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে কোনো কোনোটি প্রায় সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত। সম্ভবত, বর্তমান শহরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় মসজিদ আল-মুহদার মসজিদ, যা ১৯১৫ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি তারিমের সবচেয়ে স্বীকৃত ভবনগুলোর একটি, যার মিনার ৫০ মিটারেরও বেশি উঁচু। এটি বিশ্বের উঁচু অবকাঠামোগুলোর একটি বলে বিবেচিত। শহরজুড়ে আরও বৃহত্তর মসজিদ রয়েছে। আছে আল-আহগফ পা-ুলিপি গ্রন্থাগার, যেখানে সংরক্ষিত আছে পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রাচীন পা-ুলিপি। গ্রন্থাগারটি দেশের ইসলামী শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং এখান থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী পন্ডিত পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। এ শহরে আছে দার আল-মুস্তফা, যা ঐতিহাসিকভাবে ইসলামী বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য একটি সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আছে আল-জামিয়া মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত বিশাল আল-কাফ গ্রন্থাগার। স্থানীয় আলেমদের মতে, এখানকার ৩০০ থেকে ৪০০ পা-ুলিপি ইসলামী বিশ্বে অনন্য।

 

আলেকজান্দ্রিয়া

প্রাচীনকালেই আলেকজান্দ্রিয়ার পারোস বাতিঘরটি বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্যের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার, রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটার, ক্যাটাকম্বস এবং পিলারের জন্য আলেকজান্দ্রিয়া ভীষণ জনপ্রিয়। প্রাচীন ইসলামী ঐতিহ্যের শহরটি মিসরের উত্তরে অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরীয় শহরটির ইতিহাস ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। এটি মিসরের টলেমীয় শাসকদের রাজধানী ও হেলেনীয় সাম্রাজ্যের সেরা শহর, যা আয়তন ও সম্পদে রোমের পরবর্তী শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। মিসরের মধ্যযুগীয় মুসলিম শাসকরা যখন কায়রো শহরের গোড়াপত্তন ঘটান তখনই আলেকজান্দ্রিয়ার পতন হয় এবং উসমানীয় শাসনামলে শহরটি ছিল নিছক একটি জেলেপাড়া। গ্রিক ও রোমান সভ্যতার আদলের শহরটি ২০০৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী সাংস্কৃতিক রাজধানী খেতাব অর্জন করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় নির্মিত আবু আব্বাস আল-মুরসির মসজিদটি সমসাময়িক হলেও, এর স্থাপত্যশৈলী প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। বিশেষত তেরবানা মসজিদটি আকারে ছোট, তবে সতেরো শতাব্দীতে নির্মিত হয়। যার চিত্তাকর্ষক মিনার পর্যটকদের ভীষণ আকর্ষণ করে থাকে।

 

নাজাফ

মক্কা ও মদিনার পর শিয়া মুসলমানদের কাছে ইরাকের নাজাফ নগরী তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত। শহরটি ইরাকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এটি শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক রাজধানী। এ শহরেই রয়েছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর মাজার। হজরত আলী (রা.) মাজার মসজিদটি শিয়াদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। মসজিদের প্রধান আকর্ষণ সোনায় মোড়ানো সদর দরজা-দেয়াল, গম্বুজ এবং দেয়ালে ঝুলানো মূল্যবান বস্তুসামগ্রী। মসজিদের কেন্দ্রে রয়েছে হজরত আলী (রা.) এর ঐশ্বর্যমন্ডিত সমাধি, যা ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। মূলত এই সমাধিকে ঘিরেই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদের গম্বুজ ও মিনারগুলোয় ৫০ হাজার সোনার টাইলস দ্বারা আবৃত, যা শিয়া মসজিদটির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। মসজিদের  পেছনে আছে শান্তির কবরস্থান ওয়াদিউস সালাম। শিয়াদের বিশ্বাস, এখানে হজরত আদম (আ.) এবং হজরত নূ হ (আ.)-এর কবর রয়েছে। এখানে শেষকৃত্য করাকে পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়।

 

কাইরুয়ান

মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেমের পর কাইরুয়ান শহরকে ইসলামের চতুর্থ ধর্মীয় মর্যাদাপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীরঘেরা এই শহরের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইসলামী স্বর্ণযুগের অসংখ্য ইতিহাস। এখানে আছে ইসলামী বিশ্বের প্রাচীন মসজিদের একটি, নাম উকবা মসজিদ।

প্রায় সপ্তম শতাব্দীর গোড়ায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে কাইরুয়ান শহরটি উকবা (রা.)-এর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যিনি তিউনিসিয়ায় পবিত্র কোরআন ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে এসেছিলেন। রক্ষণশীল অঞ্চলটি এখনো তার প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান, যা এখনো ইসলামী সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। আনুমানিক ৫০ হিজরি সালে হজরত উকবা বিন নাফি (রা.) নয় হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। জানা গেছে, এখান থেকেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল।

 

টেলমসেন

আলজেরিয়ায় টেলমসেন শহর উত্তর আফ্রিকায় অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। শহরটি মুরিশ, আন্দালুসিয়ান, ফরাসি, ইসলামী এবং বহু সংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত, যার স্থাপত্য, সংগীত এবং শিল্প সব ক্ষেত্রেই বেশ ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীতে শহরটির উৎপত্তি হয়েছিল এবং এখানে কিছু প্রাচীন মসজিদ রয়েছে, যা প্রায় একাদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। বিশেষত টেলমসেনের গ্র্যান্ড মসজিদ, যা প্রায় ১০৯১ সালের গোড়ার দিকে নির্মিত হয়েছিল। এটি আলমোরাভিদ নকশার অত্যন্ত চমৎকার একটি উদাহরণ। এর বিস্তৃত মিহরাবটি (মক্কার মুখোমুখি) অত্যন্ত আকর্ষণীয়, যার মধ্যে ঝাড়বাতিসহ একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। আরেকটি মসজিদ, আবু মাদিয়ান বা সিদি বুমাদিয়ানের মাদ্রাসা এবং সমাধি আন্দালুসীয় স্থাপত্যের পরবর্তী উদাহরণ।

১৩৩৯ সালে নির্মিত, সমাধিটি মুসলমানদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে, যেখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অসংখ্য সুফি-দরবেশ ঘুমিয়ে আছেন। পরবর্তীতে ১৩৪৭ সালে মাদরাসা মসজিদের পাশে একটি ইসলামী স্কুল খোলা হয়েছিল, যেখানে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে।

 

ত্রিপোলি

প্রাচীরঘেরা শহর ত্রিপোলি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ইসলামী অঞ্চল। এটি উত্তর আফ্রিকার রাষ্ট্র লিবিয়ার রাজধানী, যা লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত। এ শহরের আছে প্রাচীন ইসলামী সংস্কৃতির ইতিহাস। মক্কা বিজয়ের পর মুসলিম সাম্রাজ্য (খোলাফায়ে রাশেদিন) পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো জয়ের দিকে নজর দেয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে সিরিয়া, পারস্য (ইরাক ও ইরান), মিসর এবং লিবিয়াসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো জয় করে নেয়। এখানকার অসংখ্য মূর্তিমান ভবন, প্রাচীন শহরটির বাণিজ্যিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। আছে প্রাকৃতিক-প্রত্নতাত্ত্বিক-নৃবৈজ্ঞানিক ও শিলালিপি জাদুঘর। আরও আছে ইসলামী জাদুঘর, রোমান সম্রাট মার্কুস আউরেলিয়ুসের সম্মানে নির্মিত রোমান বিজয় খিলান, কারামানলি ও গুর্গি মসজিদ এবং ১৬ শতকে নির্মিত স্পেনীয় দুর্গ। গুর্গি মসজিদটি তুর্কি স্থাপত্যের চমৎকার নিদর্শন; যা তুর্কি ঔপনিবেশিকরা ৫০০ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন। গুর্গি মসজিদটির অন্দরে ইতালিয়ান মার্বেল, মরক্কোর খোদাই করা ১৬টি গম্বুজসহ তিউনিশিয়ান সিরামিক দিয়ে সুসজ্জিত- বিস্ময়ের কথা বলে। ২০০৭ সালে শহরটিকে আইএসইএসসিও-এ ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

সর্বশেষ খবর