শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইউনেস্কোর সেরা মুসলিম স্থাপনা

মুসলিম বিশ্বে নির্মিত ইসলামী স্থাপত্যগুলো এমন এক নিদর্শন, যা বছরের পর বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পর পেয়েছে পূর্ণতা। মুসলমানরা বিশ্বে এমন বহু নিদর্শন তৈরি করেছেন, হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও এসব স্থাপত্যের সৌন্দর্য ও আকর্ষণে আসেনি কোনো পরিবর্তন। এ স্থাপত্য কর্মগুলো শিল্পকলা-চারুকলা এবং স্থাপত্যকলা-অলঙ্করণকলার বিবেচনায় সেরা ও মানোত্তীর্ণ বলেই এ স্থাপত্যগুলো ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যে আজও সমুজ্জ্বল। ইউনেস্কো সেরা মুসলিম বিশ্বের স্থাপনাগুলো নিয়ে আজকের রকমারি-

আবদুল কাদের

ইউনেস্কোর সেরা মুসলিম স্থাপনা

আলেপ্পোর দুর্গ

প্রাচীন নগরী আলেপ্পো; ইতিহাস গড়া অসংখ্য সভ্যতার আবাসস্থল। যেখানে আধিপত্য গড়ে গ্রিক, বাইজেন্টাইন, আইয়ুবি এবং মামলুক সাম্রাজ্য। আলেপ্পোর ঐতিহাসিক দুর্গটি মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী নিদর্শন। দুর্গের নির্মাণকাজ বাইজেন্টাইন আমলে শুরু হলেও মুসলিম শাসনামলে স্থাপনাটি নির্মিত। ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমরা আবার আলেপ্পো জয় করলে দুর্গটিকে তারা সামরিক স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলে। দুর্গের বর্তমান অবকাঠামোটি সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর শাসনামলে নির্মিত। তিনি দুর্গের সীমানা-প্রাচীর শক্তিশালী করেন, টিলার ওপরে সমতল ভূমি তৈরি করেন এবং প্রবেশপথগুলো পাথরের ক্লাডিং দিয়ে ঢেকে দেন। ১২০০ শতাব্দীতে দুর্গটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। সিরিয়ার আলেপ্পোর নগরীর পাহাড়ের ওপর নির্মিত বিশাল প্রাসাদটি (দুর্গ) বিশ্বের অন্যতম বড় ও পুরনো দুর্গের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ঐতিহাসিক দুর্গটি মুসলিম শাসনামলে সামরিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) চারপাশের পরিখাগুলো আরও গভীর করেন এবং তাকে প্রাকৃতিক খালের সঙ্গে যুক্ত করেন। একটি সংযোগ সেতু তৈরি করেন, যা এখনো দুর্গের ভিতরে প্রবেশে ব্যবহার হয়। মূল প্রাসাদে প্রবেশে সাতটি বিশাল দরজা পার হতে হয়। শত্রুদের আক্রমণ থেকে আলেপ্পোকে সুরক্ষিত রাখতেই দুর্গটির এমন নকশা করা হয়েছিল। যুদ্ধের সময় বৃহৎ দুর্গটি আলেপ্পোর অভ্যন্তরীণ সুলতানী ভবন, রাজ্য কোষাগার, মসজিদ ও অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনাগুলোকে সুরক্ষিত রাখত। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের আক্রমণে এবং ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লং-এর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুর্গ। সময়ের সঙ্গে লড়াই করে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা দুর্গটি নিজের অধিবাসীদের ঝগড়া-বিবাদ সহ্য করতে পারেনি। যুদ্ধের প্রভাবে দুর্গটি তার পুরনো জৌলুস হারিয়েছে। তবে যুগে যুগে শত্রুর আক্রমণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও টিকে আছে আলেপ্পো দুর্গের ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন। যেমন- প্রাচীন সেমিটিক দেবতা ‘হাদাদ’-এর মন্দির, শাসকদের রাজপ্রাসাদ, জামে আল-কাবির, দরবার কক্ষ এবং বার্বারীয় দুর্গ।

আলহাম্বরা

ইতিহাসের সাক্ষী ইউরোপের অনেক এলাকায় এক সময় মুসলমানদের রাজত্ব ছিল। স্পেনের মুসলিম শাসনের বহু শতাব্দীর প্রতীক বিখ্যাত আলহাম্বরা। এটি মূলত একটি দুর্গ। যা স্থানীয়দের কাছে ‘দ্য রেড ওয়ান’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে পুরনো রোমান দুর্গের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত হয়েছিল। নবম শতাব্দীতে দুর্গটি শহরাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল, তবে ত্রয়োদশ শতাব্দীর পরে আলহাম্বরা রাজকীয় বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে আন্দালুসিয়ার গ্রানাডায় আমিরাতের মরিশ শাসকরা এ প্রাসাদ পুনঃনির্মাণ করেছিলেন।

যা বাসস্থান এবং রাজদরবার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বিশাল প্রাসাদটি গ্রানাডা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের আসসাবিকা পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত। আলহাম্বরা প্রাসাদটি ইতিহাসে গর্ব ও দ্বন্দ্বার্থ আহ্বানের প্রতীক এবং এটির স্থাপত্য অত্যন্ত জটিল। এর নকশা করা হয়েছিল দুর্গের আদলে এবং এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে লালচে পোড়া ইট। যা প্রাসাদটির সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে। আলহাম্বরাকে ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং গ্রানাডার জেনেরালাইফকে মানবতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 

প্রাচীনতম নগরী সানা

ইয়েমেনের প্রাচীন এবং বৃহত্তম নগরী সানা, যা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। সম্ভবত শহরটি মানুষের নির্মিত প্রথম শহরগুলোর একটি। লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও আরব সাগরের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা প্রাচীন ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জনপদ সানা নগরী। ইসলামী ইতিহাসবিদদের মতে, নবী হজরত নুহ (আ.) এর ছেলে শ্যাম সানা নগরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শুধু তাই নয়; ইয়েমেনের বর্তমান ভূখন্ড এক সময় হজরত দাউদ ও হজরত সোলায়মানের রাজত্বের অংশ ছিল। এ জনপদে অনেক নবী-রসুলের আবির্ভাব যেমন হয়েছে, তেমনি আল্লাহর ঘর কাবা ধ্বংস করতে উদ্যত আবরাহা তার হস্তিবাহিনী নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিল এ সানা থেকে, যা এখনো বিদ্যমান।

এখানে তিন হাজার বছর আগে নির্মিত বাঁধ এখনো দেখতে পাওয়া যায়। নগরীর ভবনগুলোর নকশা এবং উপাদান ব্যতিক্রমধর্মী কারুকার্য প্রদর্শন করে। শহরের প্রাচীর ও ভবনগুলোর পুরোটাই পোড়া ইট-পাথরে নির্মিত। যার গেরুয়া রং শহরকে করেছে গোটা বিশ্বের বুকে অনন্য। এখানকার প্রতিটি ভবনের জানালার আকৃতি, রং ইত্যাদিতে মিল রয়েছে। যদিও একটি জানালা অন্যটি থেকে আলাদা। প্রাচীন সানা নগরী হলো ইউনেস্কো ঘোষিত মানুষের তৈরি মুসলিম ঐতিহ্যের শহর এবং বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

 

তাজমহল

ভারতের আগ্রায় অবস্থিত সাদা মার্বেলে নির্মিত ঐতিহাসিক প্রাসাদটি সম্রাট শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মমতাজের ভালোবাসার প্রতীক। ভালোবাসার এমন নিদর্শন পৃথিবীতে আর একটিও নেই। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় তাজমহল অন্যতম এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত মুঘল আমলের এ স্থাপনায় রয়েছে ইসলামিক, ফারসি ও ভারতীয় স্থাপত্যের এক অপূর্ব মিশ্রণ। সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রয়াত স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গড়ে তোলেন রাজকীয় এ সমাধিস্তম্ভ। ইতিহাসের পাতা সাক্ষ্য দেয়, তাজমহল নির্মাণের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ১৬৩২ সালের শুরুতে। ১৬৪৭ (মতান্তরে ১৬৫৩)-এর দিকে বাস্তব রূপ লাভ করে শাহজাহানের স্বপ্নের স্থাপত্য। স্থপতি ওস্তাদ আহমেদ লাহৌরির নির্দেশনায় ২০ হাজার সুদক্ষ কর্মীর দেড় যুগ ধরে রাত-দিন চরম খাটুনির ফসল তাজমহল।

 

ইট, লাল রঙের পাথর এবং সাদা মার্বেলের তৈরি এ স্মৃতিস্তম্ভটিজুড়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য আর শিল্পকলা সারা পৃথিবীর মানুষকে মুগ্ধ করে। মমতাজ মহলের প্রকৃত সমাধিতে ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপি হিসেবে আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। তাজমহল কমপ্লেক্সের দেয়ালজুড়ে রয়েছে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত। তাজমহলের গায়ে রয়েছে ২৮ ধরনের মূল্যবান রতেœর সমাবেশ। দিনের বিভিন্ন সময় ও পূর্ণিমা রাতে এটি নানা রং ধারণ করে। ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, তিব্বত ও আরব দেশ থেকে আনা হয়েছিল তাজমহল নির্মাণের উপকরণ।

 

হুমায়ুনের সমাধি

তাজমহল এবং হুমায়ুনের সমাধি; দুটোই মুঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের মতো সম্রাট হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগম নির্মাণ করেন হুমায়ুনের সমাধি। মুঘল সম্রাট হুমায়ুন ১৫৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর দিল্লি রাজপ্রাসাদেই তাকে সমাহিত করা হয়। একই বছর হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগম সমাধি নির্ধারণের কাজ শুরু করেন। ১৫৬০ সালে সমাধিস্তম্ভটি নির্মাণ করা শুরু হয়। তবে সমাধিটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৫৭২ সালে। এ সমাধির নকশা প্রস্তুত করেন পারসিক স্থপতি মিরাক মির্জা গিয়াস। সমাধি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মির্জা গিয়াসের মৃত্যু হয়। পরে তার পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবনে মিরাক গিয়াসউদ্দিন পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যের রয়েছে আভিজাত্যের শিল্প ছোঁয়া। সদর দরজা থেকে সমাধি পর্যন্ত রয়েছে অনেক ছোট ছোট স্মারক। রয়েছে সুরি শাসক শের শাহের রাজসভার আফগান অভিজাত পুরুষ ঈসা খান নিয়াজির সমাধি। রয়েছে হুমায়ুনের স্ত্রী ও হুমায়ুনের সমাধির প্রতিষ্ঠাতা হামিদা বানু বেগমের সমাধিও। এ ছাড়া রয়েছে সম্রাট শাহজাহানপুত্র দারাশিকো, জাহান্দর শাহ, ফারুকশিয়ার, রফি উদ দৌলত ও দ্বিতীয় আলমগীরের সমাধিও। হুমায়ুনের সমাধি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বের মুসলিম ঐতিহ্যের অন্যতম স্থাপনা।

 

কায়রুয়ান গ্রেট মসজিদ

তিউনিসিয়ার ঐতিহাসিক শহর কাইরুয়ানে ইসলামিক ঐতিহ্যের অনন্য উদাহরণ কায়রুয়ান গ্রেট মসজিদ। যা প্রাচীন ইসলামী স্থাপত্যের বিবর্তন এবং নকশার অগ্রগতিতে ভূমিকা পালন করেছে। এটি তিউনিসিয়ার পুরনো এবং ঐহিত্যবাহী মসজিদ। আঞ্চলিকভাবে এটি উকবা মসজিদ নামেও পরিচিত। ৬৭০ সালে আরব সেনানায়ক উকবা ইবনে নাফি কাইরুয়ান নগরীতে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি মুসলিম বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদ, যা পরবর্তীকালে স্থাপিত অন্যান্য মসজিদের মডেল হিসেবে গণ্য হয়। মসজিদটি উত্তর আফ্রিকার চিত্তাকর্ষক এবং বৃহৎ স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। ইসলামী ইতিহাসবিদদের মতে, এখান থেকে প্রথম আফ্রিকা মহাদেশের আজান উচ্চারিত হয়েছে। তাই মুসলিম বিশ্বে এর গুরুত্বও অপরিসীম।

প্রায় নয় হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে মসজিদটি অবস্থিত, যার পরিসীমা প্রায় ৪০৫ মিটার (১৩২৮ ফুট)। মসজিদটিতে রয়েছে পাঁচটি বিশালাকার গম্বুজ এবং নয়টি প্রবেশদ্বার। মসজিদটির প্রতিটি ফ্লোর এবং উঠানে ব্যবহার করা হয়েছে মার্বেল পাথর। অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল নামাজের স্থান। প্রতিটি স্তম্ভে করা হয়েছে নান্দনিক কারুকার্য এবং একটি বিশালাকার মিনার। বাহ্যিকভাবে মসজিদটি দেখতে অনেকটা দুর্গের মতো, যার দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথরে এবং এর দেয়াল গেরুয়া রঙের। কায়রুয়ান গ্রেট মসজিদটির নকশা, নির্মাণশৈলী ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনন্য উদাহরণ।

 

ডোম অব দ্য রক

ডোম অব দ্য রক প্রাচীনতম ইসলামী স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। সপ্তম শতাব্দীতে প্রাচীন জেরুজালেম শহরে উমাইয়া খলিফা আবদুল ইবনে মারওয়ান ডোম অব দ্য রক নির্মাণ করেন। যার নির্মাণকাজ ৭২ হিজরি মোতাবেক ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভ। এটি পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত প্রাচীনতম মসজিদগুলোর অন্যতম। যা মুসলিম এবং ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান। মসুলিম ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এখান থেকে নবী করিম (সা.) মেরাজ গমন করেছিলেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এখানেই হিব্রু ভাষাভাষীর প্রথম পিতৃপুরুষ আব্রাহাম তার পুত্র আইজ্যাককে [ইব্রাহীম (আ.) তার পুত্র ইসমাইল (আ.)কে] বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। ইহুদি ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে ডোম অব দ্য রক নির্মিত হয়েছিল ‘সেকেন্ড টেম্বল’-এর (বা দ্বিতীয় হাইকালে সুলায়মানির) স্থানে, যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ধ্বংস করেছিল এবং সেখানে জুপিটারের মন্দির স্থাপন করেছিল। ডোম অব দ্য রক একটি বরকতময় বড় পাথরের ওপরে অবস্থিত। এখানে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলেও মূলত এটি কোনো মসজিদ নয়। তবে তা রসুলে করিম (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণেই অবস্থিত। অষ্টভুজাকার ডোম অব দ্য রক মূলত ইসলামী ও বাইজাইন্টাইন স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত, যা একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ দ্বারা আবদ্ধ। যার ব্যাসার্ধ ২০ মিটার এবং উন্নত ড্রামের ওপর স্থাপিত। গম্বুজের সমর্থনে আছে চারটি স্তর ও ১২টি কলাম। চার পাশে ২৪টি পিয়ার ও কলামের একটি অষ্টাভুজাকার তোরণ আছে। বাইরের দেয়ালগুলো অষ্টাভুজাকৃতির। তাদের প্রতিটি পরিমাপ প্রায় ১৮ মিটার প্রশস্ত এবং ১১ মিটার উচ্চ। ডোম অব দ্য রকের কারুকাজে সুরা ইয়াসিন, বনি ইসরাইল ও মারিয়ামের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করা হয়। যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল এবং খলিফারা ডোম অব দ্য রকের একাধিক সংস্কার করেন। যেমন- আব্বাসীয়, ফাতেমি, আইয়ুবি, মামলুক ও উসমানীয় শাসনামলে এ সংস্কারগুলো করা হয়।

 

সামারা গ্রেট মসজিদ

ইরাকের উত্তরের নগরী সামারা। বাগদাদ থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে তাইগ্রিস নদীর পাড়ে সামারার অবস্থান। যেখানে দাঁড়িয়ে আছে হারিয়ে যাওয়া মুসলিম ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন সামারা গ্রেট মসজিদ। এখানকার বেলেপাথরের টাওয়ারটি অসংখ্য ইতিহাসের সাক্ষী সামারার প্রাচীন মসজিদের অবশিষ্টাংশ। বিশাল এ মসজিদটি নবম শতকে আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিল (৮৪৭-৮৬১ খ্রি.)-এর আমলে নির্মিত। মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ৮৪৮ সালে। তবে নির্মাণ শেষ হয়েছিল ৮৫১ সালে। মসজিদের সুউচ্চ মিনার দেখতে শামুকের মতো। অনেকে একে সর্পিল মিনারও বলেন, যার নাম রাখা হয়েছিল ‘মালাউইয়া’। মিনারসহ মসজিদটি এক সময়ের মুসলিম সাম্রাজ্যের বৃহত্তম মসজিদ। মিনারটি একটি সংযোগ সেতুর মাধ্যমে মসজিদের কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। মসজিদটি পুনর্নির্মাণের ফলে প্রাচীন নকশায় পরিবর্তন ঘটে। ঘূর্ণায়মান পথের এ সুবিশাল মিনারটির উচ্চতা ৫২ মিটার, আর প্রস্থ ৩৩ মিটার। সুবিশাল মিনারসহ সামারা গ্রেট মসজিদটি এককালের সর্ববৃহৎ মসজিদের একটি। ২০০২ সাল থেকে মার্কিন সেনারা ইরাকে আগ্রাসন চালানো শুরু করলে একসময় সামারাও চলে আসে তাদের দখলে এবং আশপাশের অঞ্চল পর্যবেক্ষণের জন্য তারা এ মসজিদের মিনারেই অবস্থান করত। পরে বোমার আঘাতে ২০০৫ সালের ১ এপ্রিল মালাউইয়া মিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ১৭০ ফুট উঁচু মিনারটি টিকে যায়। সামারার প্রাচীন মসজিদ এবং এর মিনারটি ইউনেস্কার বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর