বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

যেমন ছিল সেদিনের ঢাকা

বাঙালির সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের সোনালি দিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ দিন লাল-সবুজ পতাকার জয় হয়। দিনটি ছিল বাঙালির বাঁধনহারা উল্লাসের দিন। সাধারণ মানুষ বিজয় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। ঘরে ফেরা মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জ্যাকব আত্মসমর্পণের দলিল নিয়ে দুপুর ১টায় হেলিকপ্টারযোগে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বাকের সিদ্দিকী এবং জাতিসংঘের ঢাকা প্রতিনিধি জন কেলি। জেনারেল জ্যাকব ও কর্নেল খারাকে নিয়ে পূর্বাঞ্চল (পাকিস্তান) বাহিনীর সদর দফতরে পৌঁছান। সেখানে যৌথ বাহিনীর উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। নিয়াজীর সঙ্গে আলোচনার আগে জ্যাকব জেনারেল জি সি নাগরাকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈনিক ঢাকায় আনার নির্দেশ দেন এবং ঢাকার নিরাপত্তা, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পাঠিয়ে দেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পিনপতন নীরবতার মধ্যে কর্নেল খারা আত্মসমর্পণের শর্তগুলো পড়ে শোনান এবং খসড়া কপিটি জেনারেল নিয়াজীকে দেন। পাকিস্তানিরা ধারণা করেছিলেন যে আত্মসমর্পণ নয়, যুদ্ধবিরতি হবে। আত্মসমর্পণের সংবাদ পেয়ে তারা বেশ হতাশ হয়ে পড়ে। কেউ কেউ দলিলের কিছু পরিবর্তনের কথা বলেন। জেনারেল জ্যাকব জানান, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে রেসকোর্স ময়দানে। শর্তগুলোর বিষয়ে জেনারেল জ্যাকবের অনড় অবস্থানের কারণে শেষে জেনারেল নিয়াজী সবই মেনে নেন। তবে আত্মসমর্পণের পরও নিরাপত্তার জন্য তার অফিসার ও সৈনিকদের ব্যক্তিগত অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখার অনুমতি চান। সাধারণত বিজিত সেনাপতি বিজয়ী সেনাপতির সদর দফতরে গিয়ে আত্মসমর্পণের দলিলে সই দেন ও অস্ত্র সমর্পণ করেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এর ব্যতিক্রম ঘটানো হয়। এখানে বিজয়ী সেনাপতি বিজিত সেনাপতির এলাকায় গিয়ে জনসমক্ষে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। হেলিকপ্টারে করে পড়ন্ত বিকালে জেনারেল অরোরাসহ মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি আবদুল করিম (এ কে) খন্দকার বীরউত্তম তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করেন। অবতরণ করার পর তারা দেখেন, সেখানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তেজগাঁও বিমানবন্দরে জেনারেল নিয়াজী, জেনারেল জ্যাকব এবং আরও কিছু পাকিস্তানি ও মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তা তাদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর জিপে করে তারা রমনা রেসকোর্স ময়দানে রওনা হন। সে সময় রমনার চারপাশে ছিল মানুষের ব্যাপক ভিড়। এমন পরিস্থিতিতে ভিড় ঠেলে তারা উপস্থিত হন রেসকোর্স ময়দানে।  অনুষ্ঠানটি ছিল অনাড়ম্বর এবং এটি অল্প সময়ে শেষ হয়। আত্মসমর্পণের রীতি অনুযায়ী জেনারেল নিয়াজী নিজের রিভলবারটি কাঁপা কাঁপা হাতে অত্যন্ত বিষণœতার সঙ্গে জেনারেল অরোরার কাছে হস্তান্তর করেন।  এরপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সৈন্য ও কর্মকর্তাদের কর্ডন করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান। এভাবে বাঙালি জাতির বিজয় সূচিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর