শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

হজে আগত লাখ লাখ মুসল্লির প্রথম পছন্দ পবিত্র জমজমের পানি পান

মোস্তফা কাজল মক্কা, সৌদি আরব থকে

হজে আগত লাখ লাখ মুসল্লির প্রথম পছন্দ পবিত্র জমজমের পানি পান

পবিত্র হজ পালন করতে আসা বিশে^র লাখ লাখ মুসল্লির প্রথম পছন্দ পবিত্র জমজমের পানি। এ পানি পান করে তারা পরিতৃপ্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ পানি পান করছেন। ফলে হজে আসা মুসলমানদের জন্য মক্কার অন্যতম আকর্ষণ জমজমের পানি। এ পানির ইতিহাস লিখেও শেষ করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে এ পানির কথা জেনে আসছে সারা বিশ্বের মুসলমান সমাজ। হজ করতে এসে আত্মীয়স্বজনদের জন্য নিয়ে যাওয়া এ পানি আমাদের অনেকে ভক্তিভরে পানও করছেন অনেক বছর ধরে। এ পানি যতবার পান করা যায়, ততবারই মনে হবে এই প্রথম পান করছি। মন ও প্রাণ ভরে যায়। দেহ-মনে প্রশান্তি আসে। মসজিদুল হারামের প্রবীণ খাদেম শেখ আবু তালহা বিন ওমর জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ফজরের নামাজের পর এই পানি নিয়ম করে পান করলে ফল পাওয়া যায়। এই পানি বসে পান করতে হয়। এসব কারণে সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই পানির স্বাভাবিক চাহিদা বেড়ে যায়। হজের সময় ছাড়াও বছরের অন্য সময় ওমরাহ হজ পালনকারী নর-নারীরা মক্কায় এসে মসজিদুল হারামে কাবা শরিফ তাওয়াফ ও নামাজ আদায়ের পর জমজম কূপের পানি পান করেন। কাবা ঘরের কাছে হাজরে আসওয়াদের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে এই জমজম কূপের অবস্থান। দুনিয়ায় আল্লাহ রব্বুল আলামিনের যত অনুপম নিদর্শন আছে, তার মধ্যে জমজম কূপকে অন্যতম বলা হয়। এ পানি স্বচ্ছ। উৎকৃষ্ট, পবিত্র ও বরকতময়। জমজমের পানি অনেকে রোগের পথ্য হিসেবে পান করে উপকৃত হয়েছেন। জানা যায়, জমজম কূপ প্রথমে খোলা অবস্থায় ছিল। তখন কূপ থেকে বালতি দিয়ে পানি তোলা হতো। জমজমের মুখ থেকে ৪০ হাত গভীর পর্যন্ত কূপের চারপাশ প্লাস্টার করা। এর নিচে পাথরকাটা অংশ আছে আরও ২৯ হাত। এসব লাল পাথরের ফাঁক দিয়েই তিনটি প্রবাহ থেকে আসে পানি। একটি কাবার দিক থেকে। একটি সাফা পাহাড়ের দিক থেকে এবং আরেকটি মারওয়ার পাহাড়ের দিক থেকে। সৌদি সরকার জমজম কূপ পরিষ্কার করিয়েছেন কয়েকবার। পরিষ্কারের সময় ডুবুরিরা কূপ থেকে তুলে আনেন বালতি, মগ, মুদ্রা ও অন্যান্য জিনিসপত্র। তখনই মূলত এই পানি আসার দিকগুলো শনাক্ত করা হয়। এর ছবিও তুলে আনেন ডুবুরিরা। হাজীদের জন্য এখানে মাটির নিচে জমজমের পানি পানের একটি স্থান তৈরি করেছে সৌদি আরব সরকার। কয়েকশ টেপ দিয়ে আধুনিকভাবে সাজানো কক্ষটির প্রবেশপথ ছিল কাবা থেকে অনেক দূরে সাফা পাহাড়ের কাছে। সেখানে জমজম কূপটির অবস্থান এবং পানি উত্তোলনের মোটর, পাইপ সবই দেখা যেত। ক্রমবর্ধমান ভিড়ের কারণে ২০০৩ সালে ওই কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন আর কূপ দেখা যায় না। শুধু পানি পানের ব্যবস্থা করা আছে। এ ছাড়া কাবা শরিফের আশপাশেও টেপ ও ছোট ড্রামে জমজমের ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করা আছে। মদিনায় মসজিদে নববীতে প্রতিদিন গাড়ির মাধ্যমে এ পানি পৌঁছে দেওয়া হয়। জমজমের পানি যত খুশি পান করা যায়। কনটেইনারে ভরে আনতেও নিষেধ নেই। তবে এই পানি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এবার বিমান হাজীদের জন্য পানি দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। চলতি বছরও বিমানের টিকিট দেখে হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে প্রত্যেক হাজীকে ৫ লিটার জমজমের পানি দেওয়া হবে। হাজীদের নিজেদের বহন করে আনতে হবে না।

সর্বশেষ খবর