শিরোনাম
শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোজায় কর্মজীবীদের দিনকাল

রোজায় কর্মজীবীদের দিনকাল

শুরু হচ্ছে মাহে রমজান। প্রতিদিনের কাজ অব্যাহত রেখে তাৎপর্যম-িত এই মাসের পবিত্রতা রক্ষায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রস্তুত। অনেকে ভেবে থাকেন, কর্মজীবীদের জন্য এই গরমে ঠিকমতো নামাজ-রোজা করা শারীরিক কষ্টের কারণ হবে। কিন্তু বাস্তবতা তেমন নয়। শুধু প্রয়োজন কিছু বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন। বিস্তারিত লিখেছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

সংযম-সাধনার এক অপূর্ব সমন্বয় পবিত্র মাহে রমজান। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মাসটি এক অনন্য উপহার। রমজান মাসে নিয়ম মেনে সিয়াম সাধনায় শামিল হন তারা। এ সময় কর্মজীবীদের রুটিনে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই রোজার মাসে নিজেকে সুস্থ-সবল রাখাটা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। আর তাই সবচেয়ে বেশি নজর রাখতে হয় খাবার-দাবারের প্রতি। খাবারে অবহেলা হলে নানা রকম শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয়, যা কারও জন্য কাম্য নয়। সেজন্য প্রয়োজন কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা।

প্রতিদিন আমরা স্বাভাবিক যে খাদ্য গ্রহণ করি, সাহরিতে একই খাদ্য গ্রহণ করা যাবে। সারাদিন যেহেতু খাবার থেকে বিরত থাকতে হয় তাই শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উত্তম। ভাত, রুটি, আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা। খাবার শেষে কিছু ফলমূল খাওয়া যেতে পারে। দুধ কিংবা ফলের রসও উত্তম হবে আপনার জন্য। অপর দিকে               ইফতারিতে ভাজাপোড়া খেলে পাকস্থলীতে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু খেজুর প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটি খাবার। তাই ইফতারে ভাজাপোড়া এড়িয়ে খেজুর খাওয়া ভালো। শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতারে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ঘৃতকুমারী, ইসবগুল-মিছরিসহ নানা ধরনের শরবত খেলে পানিশূন্যতা একদমই কেটে যায়।

রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিন বা বিষ ফ্যাটের সঙ্গে বের হয়ে যায়। একই সঙ্গে পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে উপকার হয় গ্যাস্ট্রিক-আলসার রোগীদের ক্ষেত্রে। এ সময় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। রমজানে রোজা রেখেও সুস্থ থাকতে কিছু বিষয় মেনে চলা অতি জরুরি।

- বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। এগুলো বদহজমসহ বুক জ্বালাপোড়া ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

- যেসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

- সাহরি ও ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়।

- সাহরিতে ভাত, রুটি, মসুর ডাল, শাকসবজি খান। এ খাবারগুলো পাকস্থলীতে পরিপাক হতে অনেক সময় লাগে।

- প্রতিদিনের ইফতারে কয়েক পদের ফল রাখার  চেষ্টা করুন।

- রোজা রেখে অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়া ঠিক নয়।

- অনেকে অলসতা করে সাহরি খেতে চান না। অথচ সাহরি না করে রোজা রাখলে শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যায়।

শুধু খাবার নয়, রোজায় ক্লান্তিহীন থাকতে আরও কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। রোদে বাইরে গেলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন। চাইলে দিনে দুবার গোসল করতে পারেন। আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ওজু করা ছাড়াও বার বার ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো অসুখ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, রোজা রেখে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার সময় ঠিক করে নিন। এতে রমজানে রোজা রেখেও আপনি থাকবেন একেবারেই সুস্থ।

রমজান এলে কর্মজীবীদের মাঝে কিছু অসাধারণ গুণাবলির চর্চা শুরু হয়। যেমন, কম কথা বলা, অল্প নিদ্রার অভ্যাস গঠন ও নিজেকে স্বল্প পানাহারের জন্য তৈরি করা। তা ছাড়া রোজার মাসে প্রাপ্ত ধৈর্যের শিক্ষা প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগে। কর্মজীবী মানুষের মাঝে রোজার নানা নিয়মকানুন পালনের মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতার চর্চা গড়ে ওঠে। রোজায় মানুষ যেমন সময় মতো সাহরি, সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় করতে যথা সময়ে মসজিদে উপস্থিতি; সময় মতো ইফতার; সময় মতো তারাবি; নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে শেখায় একজন মানুষ যদি রমজান মাসকে অনুসরণ করে, তবে বাস্তবজীবনে একজন মানুষ নিয়ম-নিয়ন্ত্রিত সফল মানুষে পরিণত হতে পারে। রোজাদার হয়ে ওঠে পরিশ্রমী। মানুষ রোজার দিনে পানাহার ত্যাগ করা সত্ত্বেও নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করে। সারা দিন রোজা রেখে রাতের বেলায় তারাবি, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার করে। আবার শেষ রাতে উঠে সাহরি খাওয়া ও ফজর আদায় করা অনেক কষ্টকর। এই রোজা থেকেই মানুষ পরিশ্রমী হতে শিখে, যা একজন মানুষের বাস্তব জীবনে অতীব জরুরি।

মানুষের যত রকম খারাপ চরিত্র বা আচরণ থাকুক না কেন রমজানের রোজা তা ধুয়ে-মুছে সুন্দর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। যে ব্যক্তি রোজা রাখেন তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। মিথ্যা বলতে গেলে নিজে থেকেই একটা খারাপ লাগা অনুভূত হয়। তা ছাড়া একজন রোজাদার কখনো সজ্ঞানে কোনো অবৈধ তথা হারাম কাজ করতে পারেন না।

সর্বশেষ খবর