শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মনে মনে সাজিয়ে নিন রমজানের ইবাদত

মনে মনে সাজিয়ে নিন রমজানের ইবাদত

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত। প্রতিটি কাজ নির্ভর করে নিয়তের ওপর। নিয়ত সুন্দর হলে কাজটিও সুন্দর হয়। আমরা যখন নিয়ত করি, অর্থাৎ কোনো কিছু অর্জনের ইচ্ছা করি, তখন প্রথম করণীয় হলো, সুন্দর একটি পরিকল্পনা করা। একটি সুন্দর পরিকল্পনা কাজকে অর্ধেক এগিয়ে দেয়। আমরা যদি মাহে রমজানের পূর্ণ ফায়দা অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের সুন্দর একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। আর পরিকল্পনা করতে হবে রমজানের আগেই। যেন চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোমর বেঁধে লেগে যেতে পারি। রমজানে আমাদের ইবাদত কেমন হতে পারে, তার একটি পরিকল্পনা পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

রমজানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কোরআন তেলাওয়াতকে। মনে রাখবেন, রমজানের মর্যাদার সবচেয়ে বড় কারণ, এটি কোরআন নাজিলের মাস। তো আমরা যদি রমজানকে কোরআনের মাস হিসেবে নিতে পারি তাহলেই রমজানের জ্ঞান ও বরকত লাভ করতে পারব। কোরআন পড়তে না জানলে শিখব, পড়তে জানলে বুঝব, সময় পেলেই কোরআন পড়ব, আলোচনা করব, অন্যকে শেখাব, তারাবি-তাহাজ্জুদে বেশি বেশি কোরআন শুনব, অবসরে কোরআন নিয়ে ভাবব- এক কথায় রমজানের বড় একটা অংশ যেন কোরআনের সঙ্গে কাটে।

চেষ্টা করব তারাবির নামাজে অংশগ্রহণ করার জন্য। যতটা পারি ধীরে-সুস্থে তারাবি পড়ব। সাহরির আগে এবং পড়ে অল্প করে হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করে নেব। এখানেও সুমধুর তেলাওয়াতকে প্রাধান্য দিতে হবে সবচেয়ে বেশি।

যথাসম্ভব অনাড়ম্বর ইফতার করব। রসুল (সা.) কয়েকটি খেজুর, দুধ বা পানি দিয়ে ইফতার করতেন। ইফতারে অতিভোজন রোজার উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে দেয়। সাহরিতেও পরিমিত খাবারের বেশি খাব না। অবশ্যই আমার সঙ্গে যেন আমার প্রতিবেশী, বন্ধুরা সাহরি ও ইফতারে শরিক হয় সে বিষয়ে আন্তরিক হব। ইফতার করতে হবে দ্রুত, একেবারে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই। সাহরি করতে হবে সুবহে সাদিকের শেষ সময়ে। সাহরি খেতে খেতে আজান হয়ে গেলে ব্যস্ত হব না। ধীরে-সুস্থে খাবার শেষ করে নেব। এটাই নবীজির আদেশ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আজান শোনে, তার হাতে খাবারের পাত্র থাকে, সে যেন আজানের কারণে খাবার বন্ধ না করে, যতক্ষণ না সে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ না করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মুয়াজ্জিন এ আজান দিতেন ফজর উদ্ভাসিত হওয়ার পরই। (মুসনাদে আহমাদ; দ্বিতীয় খণ্ড, হাদিস নং-৫১০, বায়হাকি, সুনান, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং-২১৮।) সাধ্যমতো দান খয়রাত করব। গরিব প্রতিবেশী আত্মীয়দের খোঁজখবর নেব। তাদের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করব। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, টার্গেটভিত্তিক জাকাত দেব। জাকাতের হিসাব নিখুঁত হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, আপনার উপার্জিত সম্পদ খরচ হবেই। সেটা আপনার হাতে আখেরাতের জন্য খরচ করবেন নাকি উত্তরাধিকাররা তাদের মনমতো খরচ করবে-সে সিদ্ধান্ত আপনার।

একটি সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে, রোজার আকর্ষণ হলো লাইলাতুল কদর। আর লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য ইতিকাফের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে। তো এখনই নিয়ত করে ফেলুন, শেষ দশ দিন যেন ইতেকাফে কাটাতে পারেন। নিয়ত করার মালিক আমরা। সব ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আল্লাহর। ইতিকাফে কাটাতে না পারলেও শেষ দশ দিন যেন মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয় সে পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। নিজে লাইলাতুল কদর খুঁজবেন, পরিবারের সদস্যদের উৎসাহ দেবেন। আশা করা যায়, সৌভাগ্যময় রাত আপনার ভাগ্যে জুটে যাবে।

রমজানের ফায়দা অর্জনের জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হতে পারে হাতের ছোট্ট মোবাইলটি। কোরআন শেখা থেকে শুরু করে বোঝাসহ আরও অনেকভাবেই সওয়াব অর্জন করা যায়। চাইলে ইউটিউব থেকে তেলাওয়াত শোনা, তাজবিদ শেখা, তাফসির শোনা যেতে পারে। এমনিভাবে আপনি চাইলে অন্যকেও ইসলামের কথা কোরআনের কথা শেখাতে পারেন। দাওয়াতি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন মেইল মেসেজের মাধ্যমে। যাই করুন না কেন একটি মুহূর্তও যেন অবহেলা-অলসতায় না কাটে এ বিষয়ে এখনই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন। আল্লাহ আমাদের দয়া করে রমজানের পূর্ণ ফায়দা হাসিলের তাওফিক দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর