শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

রমজানকে স্বাগত জানিয়ে প্রিয়নবী (সা.)-এর ভাষণ

রমজানকে স্বাগত জানিয়ে প্রিয়নবী (সা.)-এর ভাষণ

যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করায় আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউস কাউসার হতে পানীয় পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন একটি মাস যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ ক্ষমা আর শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থদের কর্মভার হালকা করে দেবে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করবেন

রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের মাস মাহে রমজান আমাদের দ্বারপ্রান্তে। মাহে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) বিশ্ববাসীর উদ্দেশে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছেন বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাবে তা সংগৃহীত রয়েছে খুব নিখুঁতভাবে। পাঠকদের জন্য আগত মাহে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মহানবী (সা.)-এর ঐতিহাসিক ভাষণটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

বিশিষ্ট সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) হুজুর (সা.) এর ভাষণটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার শাবান মাসের শেষ দিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য এক গুরুগম্ভীর ভাষণ প্রদান করলেন। ওই ভাষণে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, “হে লোক সকল! তোমাদের উপরে এক মহান মাস, এক কল্যাণময় মাস ছায়া বিস্তার করছে। এটা এমন এক মাস, যাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতে (সালাতুত তারাবি) নামাজ পড়াকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একটি সুন্নাত বা নফল কাজ করবে, আল্লাহ তাকে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করার সমান সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ পালন করবেন, অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ পালনের সওয়াব তার আমলনামায় আল্লাহতায়ালা লিখে দেবেন।

এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা ওই মাস যাতে মুমিন ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে এটা তার পক্ষে তার গুনাহসমূহের জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব দান করা হবে, এতে তার সওয়াব হতে কিছুই কমানো হবে না।

হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি এমন সামর্থ্য রাখে না যা দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। তখন রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা এ সওয়াব ওই ব্যক্তিকেও দান করবেন যে কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ দ্বারা, একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করায় আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউস কাউসার হতে পানীয় পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন একটি মাস যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ ক্ষমা আর শেষ অংশ জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের মাস। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থদের কর্মভার হালকা করে দিবে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকি শরিফ এবং মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নম্বর : ১৮৬৮।)

এ হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) রমজানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেছেন, যেন তাঁর উম্মত রোজা সম্পর্কে আরও বেশি আগ্রহী এবং উদ্যমী হয়। আমরা যেন বেশি বেশি সুন্নাত-নফল এবং ফরজ ইবাদত করে মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিল করতে পারি- এ বিষয়ে আমাদের আরও বেশি যতœশীল হতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের পূর্ণ ফয়েজ এবং বরকত দান করুন। আমিন।

 

লেখক : এমফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর ঢাকা।

সর্বশেষ খবর