বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা

করোনায় পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায়। বিশ্বজুড়ে মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকেছে। সেই ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। কেবল ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটাই নয়- শপিং মল, সুপারশপ বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাড়ছে ক্যাশলেস লেনদেন। আর ক্যাশলেস লেনদেন সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং। বিগত কয়েক বছরে দেশে অনেকাংশেই কমে গেছে নগদ অর্থের লেনদেন। বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেন। দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ চলে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায়। প্রতি মাসে এ সেক্টরে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিস বা এমএফএসের আওতায় ছিল ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। গত বছরের অক্টোবরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৪৩ শতাংশই এখন ডিজিটাল লেনদেন। আর প্রায় ৫৭ শতাংশ লেনদেন হচ্ছে নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলনে। ২০১৯ সালের একই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাত্র ৩০ শতাংশ ছিল ডিজিটাল লেনদেন। আর ৭০ শতাংশ লেনদেন হতো নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলনে। সেই হিসেবে দুই বছরের ব্যবধানে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে, তার বিপরীতে কমেছে নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলন। ব্যক্তিগত লেনদেনের পাশাপাশি পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, টিকিট ক্রয়-বিক্রয়, বীমা প্রিমিয়াম, মোবাইল ফোন রিচার্জসহ নানা কাজে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যম। কার্ড বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আনা যাচ্ছে এমএফএসে। দ্রুতগতিতে বাড়ছে অ্যাপসভিত্তিক লেনদেনও। আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনীতিতে নগদ লেনদেন যত কমবে, অবৈধ অর্থের ব্যবহারও সেই হারে কমে আসবে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকেই বেশি ঝুঁকবে। অদূর ভবিষ্যতে নগদ লেনদেন নেমে আসবে প্রায় শূন্যের কোঠায়।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। আর এ সময়ে অনলাইনে কেনাবেচা হচ্ছে কোরবানির পশু। ঘোরার ঝামেলা এড়িয়ে কোরবানির পশু কেনার জন্য অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছেন অনলাইন হাট-বাজারের। আর পশু কেনার পর মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট কিংবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ে পেমেন্টে করছেন কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কোরবানির পশু অনলাইনে কেনার সুবিধা বহুমুখী। প্রথমত, ক্যাশ টাকা বহনের ঝুঁকি এড়িয়ে ডিজিটালি পেমেন্ট সম্পন্ন করা যায়। পাশাপাশি, যেহেতু অনলাইনে বিক্রেতারা ওজন মেপে দাম নির্ধারণ করেন, সেহেতু দামে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাছাড়া গরুটা খামারে আছে, ঈদের ঠিক আগেও পৌঁছে দেবে বিক্রেতা।

কেবল কোরবানির পশুই নয়, এখন ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে জামা-জুতা-সাজগোজের পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, খাদ্যপণ্য সবই কেনা যায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ডিজিটাল পেমেন্ট ক্রেতাদের দিচ্ছে ক্যাশলেস কেনাকাটার অভিজ্ঞতা, আর সঙ্গে এই উৎসবের সময়ে নানান রকম ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্ট তো পাচ্ছেনই গ্রাহকরা।

তবে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা ক্যাশলেস লেনদেনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে প্রচার-প্রচারণা, ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফারই ডিজিটাল লেনদেনকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে।

সর্বশেষ খবর