মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সংবাদপত্র জীবনেরই অংশ

ফরিদুর রেজা সাগর

সংবাদপত্র জীবনেরই অংশ

লেখাটি শুরু করছি একটি গল্পের মধ্য দিয়ে। জীবনের প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখি পাড়ার সবচেয়ে বনেদি পরিবারে। ঘটনাক্রমে আমরা যে বাসায় থাকতাম তার পাশেই ছিল সেই বনেদি বাড়িটি। পড়ার টুলের ওপর দাঁড়িয়ে, দেয়ালের ওপর দিয়ে পাশের বাড়ির টিভির আলোর-ঝলকানিটুকুই দেখতে পেতাম। ব্যাপারটা আমার মা বুঝতে পেরে তার লেখা থেকে প্রাপ্ত সম্মানী দিয়ে আমার এক খালুকে বলে ব্যবস্থা করে ফেললেন টেলিভিশনের পারমিটের। পারমিট ছাড়া সে সময় টেলিভিশন কেনা যেত না। পাড়ার দ্বিতীয় টেলিভিশন এলো আমাদের বাসায়। সেই শুরু।

টেলিভিশনের সঙ্গে, টিভি-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক এখন নিবিড়। এই নিবিড়-গভীর সম্পর্ক নিয়েই চলমান আমার জীবন।

টেলিভিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় এবং লেখালেখির কিছুটা অভ্যাস থাকার কারণে  টেলিভিশন জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি কয়েকটি বই রচনা করেছি। একজীবনে টেলিভিশন, টেলিভিশন আরেক জীবনে, টেলিভিশন : জীবনের সঙ্গী, টেলিভিশন ভাবনা।

অগ্রজ মিডিয়াব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আমার একটি বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন-  ... সেই সময় ছিল দেশে একটিমাত্র টেলিভিশন। কালের বিবর্তনে কারিগরি উৎকর্ষের কারণে এখন দেশে বহু টেলিভিশন কেন্দ্র। সবাই বলে স্যাটেলাইট টেলিভিশন। এই টেলিভিশনগুলো বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের অনুষ্ঠান প্রচার করে। বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করে। এই প্রচারসীমার দর্শক বিশ্বজুড়ে। যেখানে ১৯৬৪ সালে টেলিভিশনের দর্শক ছিল ঢাকা শহরের দশ মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সেখানে মাত্র তিন যুগে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের দর্শক রয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বব্যাপী টেলিভিশনের এই দর্শক জয় সহজে হয় নি। বহু মানুষের মেধা পরিশ্রম এর পেছনে রয়েছে।

গুণীজনেরা বলেন, সংবাদপত্র সমাজের আয়না। আমাদের সামাজিক জীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহের চিত্র আমরা দেখতে পাই সেই আয়নাতে। তবে সংবাদপত্রের অবস্থাটা হয়তো এখন আর পূর্বসূরিদের মতো নেই।  ঘুম ভাঙলেই এখনো সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখি। নানান সংবাদ পড়ার চেষ্টা করি। জানার চেষ্টা করি আমাদের নানান জায়গার সংবাদের বিষয়। সংবাদপত্র এক নজর না দেখলে মনে হয় আজ সারাদিন কিছুই দেখা হয় নি।

আরেকটি বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন-

বাংলাদেশ টেলিভিশন মাধ্যমটি সমাজে ব্যাপক বিস্তার করলেও টেলিভিশন-বিষয়ক গবেষণা, লেখালেখি, মতামত জরিপ, স্মৃতিচারণ, অনুষ্ঠান পর্যালোচনা সেরকমভাবে হয়নি। সংবাদপত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও টেলিভিশন-বিষয়ক সাংবাদিকতা এখনো খুবই দুর্বল।

গণমাধ্যমের এখন বহু রূপ। সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, স্যাটেলাইট টিভি, এফএম রেডিও, সোস্যাল মিডিয়া ইত্যাদি। গণমাধ্যমের এই বহু রূপ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই পৃথিবীর মানুষ অবলোকন করছে। কিন্তু আজ থেকে সাত দশক আগেও গণমাধ্যম বলতে ছিল রেডিও এবং সংবাদপত্র।

সংবাদপত্রের সঙ্গে আমার একটা সম্পৃক্ততা আছে। ছাত্রজীবনে কিশোর বাংলা, ইত্তেফাকের কচিকাঁচার মেলা’র পাতায় লিখতাম। পরবর্তীতে আরো বেশ কয়েকটি পত্রিকায় আমার লেখা বের হয়। ব্যবসায়িক জীবনের শুরুতেই আমি একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হই। আজকের কাগজ নামে ঐ পত্রিকাটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পত্রিকার গেটআপ-মেকআপ এবং সংবাদ পরিবেশনার বৈচিত্র্য ছিল এর মূল আকর্ষণ। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে যোগ হয় আরো বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পত্রিকা। এদেরই একটি বাংলাদেশ প্রতিদিন। শুরুতেই এই পত্রিকাটি পাঠকমহলে নজর কাড়ে। তার পর থেকেই তাদের ক্রমাগত এগিয়ে চলা।

গুণীজনেরা বলেন, সংবাদপত্র সমাজের আয়না। আমাদের সামাজিক জীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহের চিত্র আমরা দেখতে পাই সেই আয়নাতে। তবে সংবাদপত্রের অবস্থাটা হয়তো এখন আর পূর্বসূরিদের মতো নেই।

ঘুম ভাঙলেই এখনো সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখি। নানান সংবাদ পড়ার চেষ্টা করি। জানার চেষ্টা করি আমাদের নানান জায়গার সংবাদের বিষয়। সংবাদপত্র এক নজর না দেখলে মনে হয় আজ সারাদিন কিছুই দেখা হয় নি। তাই আমার এবং আমার মতো সংবাদপত্রের ভক্তকূলের জন্য সংবাদপত্র জীবনেরই অংশ। সংবাদপত্রের এই অংশকে কোনোদিনই জীবন থেকে মুছে ফেলা যাবে না, যায় না।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর