বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

মিডিয়ার সংকট ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের এগিয়ে চলা

নাইমুল ইসলাম খান

মিডিয়ার সংকট ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের এগিয়ে চলা

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ এ পত্রিকাটি গ্রহণ করে, পয়সা দিয়ে কিনে। এখানে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই- ধরুন মানুষ যখন একটা সংবাদপত্রকে পছন্দ করে, এটা কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার।

 

সংবাদপত্র জগতে এখন একটা অদ্ভুত সংকট চলছে। এটা কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয়েছে তা নয়। এটা বেশ কয়েক বছরের ব্যাপার। আমি বলব, সাত-আট বছর আগে থেকে এর সূত্রপাত। এখন এ সংকট ঘনীভূত হতে হতে সংবাদপত্রের অস্তিত্বের জন্য, সাংবাদিকতার অস্তিত্বের জন্য একটা প্রবল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এ হুমকিটা সাংবাদিকতা পেশা, পেশাজীবীদের বেতন-ভাতা, চাকরির নিশ্চয়তা, পেশাদারি সাংবাদিকতা, সংবাদপত্র হিসেবে স্বাধীন ও মুক্তভাবে যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ এ সংকটটা আমাদের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতাকে এককভাবে নয়, বহুমাত্রিকভাবে পর্যুদস্ত করছে।

কী সেই সংকট? এ সংকটটা হচ্ছে শত শত সংবাদপত্রকে বিশৃঙ্খলার পরিবেশে, একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মাধ্যমে এ সংবাদপত্রগুলোর ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সাংবাদিকতার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত না এবং পরিচালিতও না। এসব গণমাধ্যমের সাংবাদিকতার কাঠামো ওদের নেই। এটা তাদের উদ্দেশ্যও নয়। এখন আপনি বলতে পারেন উদ্দেশ্য না, সেটা কীভাবে বুঝলেন? আসলে যে কোনো কিছুর উদ্দেশ্য তার কর্ম থেকেই বোঝা যায়। তিনি কী করেন? পত্রিকাটি কীভাবে বের হচ্ছে? কোথায় ছাপা হয়? কত কপি ছাপা হয়? কত কপি বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়? আমি আরেকটু বুঝিয়ে বলি- ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ পত্রিকা বের হয় বলে আমরা শুনি। কিন্তু আপনি ঢাকার পত্রিকা বিক্রির একমাত্র মেকানিজম যেমন- দুটি সমিতির মাধ্যমে পত্রিকা ডিস্ট্রিবিউশন বা বিক্রির চেষ্টা করা। এখানে সর্বোচ্চ ৪৮ থেকে ৫০টি পত্রিকা বিক্রি এবং বিতরণের জন্য দেওয়া হয়। বাকি ২০০ পত্রিকা কিন্তু বিক্রির জন্য দেওয়াই হয় না। এখন এই যে সীমিত সংখ্যার পত্রিকা দেওয়া হয়, এর মধ্যে নিয়মিত সামান্য উল্লেখ্য করার মতো বিক্রি হয় ২০-২৫টি। আমি যদি জোর করে ধরি, ৩০টি হবে! এখন ৫০টি পত্রিকা ডিস্ট্রিবিউশন এবং বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে মোটামুটি উল্লেখ্য করার মতো পত্রিকা ২৫-৩০টি। এখন আপনি দেখেন, এ পত্রিকা সারভাইভ্যালের জন্য মূল রিসোর্স হলো- বিজ্ঞাপন। বিশেষত সরকারি বিজ্ঞাপন। এ সরকারি বিজ্ঞাপনের জায়গাটাতে ওই ২৫০টি পত্রিকাই কিন্তু দাবিদার। তারা গিয়ে হয় ঘুষ, নয়তো উচ্চ কমিশন, নয় মাস্তানি, নয় হুমকি, নয় ব্ল্যাকমেইল- এসব দিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা বা কর্মকর্তাকে নাস্তানাবুদ ও ভীতি সঞ্চার করে। এবং সেখান থেকে বিজ্ঞাপনগুলো সংগ্রহ করে। রেগুলার রিলায়েবল সংবাদপত্রগুলো, যে পত্রিকাগুলো মেইন স্ট্রিম বা যেগুলোর ওপর পাঠক নির্ভর ও নির্ভরযোগ্য মনে করতে পারত তাদের রাজস্ব কমে যাচ্ছে। এতে করে তাদের সামর্থ্য কমে যাচ্ছে। ফলে তারা কর্মীদের নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ, বাংলাদেশে যে সুবর্ণজয়ন্তী হচ্ছে, এ সুবর্ণজয়ন্তীর সময়কালে বাংলাদেশের সংবাদপত্র এত বিপন্ন বোধ করেনি। এটা আমার পরিষ্কার কথা। সুবর্ণজয়ন্তীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন, অনেক মেগা প্রজেক্ট, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু শিক্ষা, সকল শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসার, বহু ক্ষেত্রে- যোগাযোগের ইনফ্রাস্ট্রকচার, রেল সেক্টর, এভিয়েশন সেক্টর, রোড সেক্টর, যেভাবে গড়ে উঠছে, ওইগুলোর সঙ্গে যদি আপনি সংবাদপত্রকে বলেন, সংবাদপত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মানে সুবর্ণজয়ন্তীর সবচেয়ে বিপন্ন সেক্টরটি হচ্ছে সংবাদপত্র।

সারভাইভ করার উপায় কী? এটা সারভাইভ করার উপায় সরকারের হাতে। কেবল শৃঙ্খলা আনা। শৃঙ্খলাটা কী? যে সংবাদপত্রের প্রকৃত সার্কুলেশনটা ডিটারমিন করে মেরিটক্র্যাসি। যে সমাজ মেরিটের মূল্য দেবে না, ধরুন পত্রিকাটি ভালো সার্কুলেশন, সংবাদপত্রের মেরিট কিন্তু তার পাঠক। যে পত্রিকা পাঠক বেশি গ্রহণ করছে, এটাই মেরিটরিয়াস। এটা কিন্তু একজন বসে বলবে এ পত্রিকাটা আমার ভালো লাগে না। এটা দিয়ে কিন্তু পত্রিকার ভালো-মন্দ ডিটারমিন করা যাবে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ সাবস্ক্রাইব করে। আমি যদি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশ প্রতিদিন একটা উন্নত পত্রিকা নয়। এটার কোনো মানেই নেই। এ বক্তব্যের কোনো মর্যাদা নেই, ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ ছাড়া। কারণ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ এ পত্রিকাটি গ্রহণ করে, পয়সা দিয়ে কিনে। এখানে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই- ধরুন মানুষ যখন একটা সংবাদপত্রকে পছন্দ করে, এটা কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার। বাংলাদেশের বা পৃথিবীর যে কোনো দেশের মানুষ তার একজন নেতাকে পছন্দ করে, তারা ওই নেতার খরচে, নিজে কোনো খরচ না করে, বিনা পয়সায় একটা ভোট দেয়। মানে ভোটারের কিন্তু কোনো খরচ নেই। সে গিয়ে মানুষকে ভোট দেয়। কিন্তু একটি পত্রিকাকে মানুষের ম্যান্ডেট পেতে হলে কী করতে হয়? ওই নাগরিক নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে প্রতিদিন পত্রিকাটি কিনতে হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রতিদিন হোক, ইত্তেফাক হোক, প্রথম আলো হোক, সমকাল হোক বা অন্য কোনো পত্রিকা পয়সা দিয়ে কিনে জানান দিচ্ছি যে এই পত্রিকাটিকে আমি পছন্দ করি। বিনা পয়সায় নয়। এটা কিন্তু এত সহজ নয়। তাই এর আলাদা মর্যাদা রয়েছে। তো এ মর্যাদাটা যদি রাষ্ট্র এপ্রিশিয়েট না করে, রাষ্ট্র যদি এখানে শৃঙ্খলা না আনে, আমি মনে করি যে বাংলাদেশে সংবাদপত্র শিল্পের সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এবং দেশে সুশাসন আনার জন্য, দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য, দেশের দুর্নীতিকে রুখে দেওয়ার জন্য বা দুর্নীতি রোধে ভূমিকা রাখার জন্য যে শক্তি-সামর্থ্য দরকার, সংবাদপত্র সেই শক্তি ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছে। সুতরাং কীভাবে একটা রাষ্ট্র অ্যাকাউন্টেবল, সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গড়ে ওঠবে? আমি এর কোনো সম্ভাবনাই দেখি না।

তথ্যাধিকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সাংবাদিকতা কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। দেখেন আমি অবশ্যই এ আন্দোলনের সঙ্গে। কোনটা? যে একজন সাংবাদিক কাজ করবে, তাকে যত বাধাহীন করা যাবে, যতভাবে তাকে ভয়মুক্ত রাখা যাবে, তত সে ভালো রিপোর্টিং করে অনিয়ম, দুর্নীতি উন্মোচন করবে। আর এটা যদি একজন সাংবাদিক উন্মোচন করে তাহলে দেশে সুশাসনের জন্য পজিটিভ পরিবেশ তৈরি হবে, ধাপে ধাপে। এখন আমি যদি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট দিয়ে সাংবাদিকতাকে নিরুৎসাহিত করে বা সাংবাদিককে হুমকির মুখে ফেলি তাহলে তো রিপোর্টিং কম হবে। তাহলে তো সংবাদপত্র যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। দায়িত্ব পালনে সংবাদপত্র বাধার সম্মুখীন হবে। তাহলে কী করবে? নানান রকম গল্প-গুজব, গ্ল্যামার নিয়ে রিপোর্টিং করবে। সমাজের শুদ্ধতার জন্য, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য, দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংবাদপত্রের যে মৌলিক দায়িত্ব, সমাজের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ করবে, সেটা হবে না। সেটা দুর্বল হয়ে পড়বে। ওই যে অন্তর্নিহিত বিশৃঙ্খলা বললাম, যেনতেন পত্রিকা, ভাই এটা বোঝার জন্য কোনো বড় সাইনটিস্ট বা রিসার্চার হতে হবে না। আপনি পত্রিকাগুলোর চেহারা দেখলে- এটা কোথা থেকে বের হয়, কোন ছাপাখানায় ছাপা, এ দুই-তিনটি তথ্য দেখলেই বুঝবেন এ পত্রিকাগুলোর বৈধ কোনো উদ্দেশ্যই নেই।

প্রিন্ট মিডিয়ায় যে সংকটের কথা বললাম, আপনি কিন্তু অনলাইন মিডিয়ায় রেজিস্ট্রেশন প্রসেসের মধ্যে একই রকম সমস্যা। ধরুন, আমি যদি লম্পট হই, আমার লাম্পট্য কিন্তু সব ক্ষেত্রেই থাকবে। আমার রাষ্ট্রের ম্যানেজমেন্টের মধ্যে যে দুর্বলতা, এ দুর্বলতাটা- আমি বলার সময় শুধু প্রিন্ট মিডিয়ার উদাহরণটা দিলাম। এর ম্যানেজমেন্ট প্রবলেম কিন্তু অনলাইনেও। আপনি যদি অনলাইনে যেগুলো রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে, সেই তালিকাটি নিয়ে একটা সাধারণ অনুসন্ধান চালান, যে কোনো কমনসেন্সসমৃদ্ধ মানুষ রিয়ালাইজ করবে অবাক হবে, বিস্মিত হবে, হতাশ হবে যে এ প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে অনুমোদন পায়! এর বিপরীতে আপনি দেখবেন, লেজিটিমেড প্রতিষ্ঠান তার ফুল যে টিম আছে অনেক বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে, পায় না। আমার মনে হয় সংবাদপত্র কিংবা অনলাইন মাধ্যম সর্বোত্রই একটা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিন পার করছে। স্খলন আমাদের অনেক আগেই হয়ে গেছে। এখন যেটা হচ্ছে যে আমরা গভীর খাদের মধ্যে পড়ে গেছি। এখান থেকে উদ্ধার কীভাবে আমার জানা নেই। কিন্তু উদ্ধার আমাদের হতেই হবে। কে উদ্ধার করবে? আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের উদ্ধার করতে হবে। আমাদের ওই যে ২৫-৩০টা পত্রিকা যারা লেজিটিমেটলি বের হয়, কিংবা ভবিষ্যতেও ধরেন, আমি কিন্তু এটা বিশ্বাস করি যে, ভবিষ্যতেও আরেকটি নতুন পত্রিকার উদ্ভব হবে। এটা লেজিটিমেট। আমি মনে করি যারা সঠিকভাবে প্রফেশনাল সাংবাদিকতার জন্য মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুতি বা ইচ্ছা নিয়ে যে পত্রিকা করবে সে যখনই করুক- হি শুড বি ওয়েলকাম। অ্যান্ড হি অর শি উড বি অ্যাংকারেজ। হি অর শি উড বি সাপোর্ট। এখন কিন্তু বাংলাদেশে সরকারের বিজ্ঞাপন অনেক কমে গেছে। কীভাবে কমেছে? এগুলোও কিন্তু একটা ষড়যন্ত্র। মিডিয়াকে আন্ডামাইন করা। মিডিয়াকে শক্তিশালী রাখা। আগে নিয়ম ছিল একটা বিজ্ঞাপন অন্তত চারটি পত্রিকায় দিত। এখন অনেকে দুটি পত্রিকায় দিয়ে খালাস। অনেকে বিজ্ঞাপনটাকে একেবারে সংক্ষেপে দেয়। যেন কম টাকায় ছাপানো যায়। এগুলো করতে করতে পত্রিকাকে শক্তিহীন করা হচ্ছে। তারপরও আমি বলব এখনো পর্যন্ত যতটুকু সরকারি বিজ্ঞাপন আছে, যে ৪৮-৫০টি পত্রিকা বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়, তারপরও আমি বলব সরকার যদি একটা সঠিক নিয়মনীতির মাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপনগুলো যোগ্যতা, মেরিট এবং লেজিটিমেসি বিবেচনা কওে, যদি বিতরণের কাঠামোটা তৈরি করে দিতে পারে, সাইন্টিফিক্যালি, মেথডিক্যালি তাহলে ৫০টি পত্রিকা ফিন্যান্সিয়ালি ভালোভাবে টিকতে পারবে। কর্মীদের বেতন দিতে পারবে। সব ওয়েজবোর্ডও বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু প্রতিটি ওয়েজবোর্ডের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মূল্যের একটু এসকেলেশন বাড়ানো হয়। এবার কিন্তু নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের মূল্য বাড়ানো হয়নি। এটা যদি বাড়ানো হয় আমি মনে করি ভালোভাবে ৫০টি পত্রিকা চলতে পারবে।

যারা সাংবাদিকতার সুস্থতায় বিশ্বাসী তারা একত্রিত হয়ে দাবি করতে হবে অসুস্থতার বিরুদ্ধে। এটা পত্রিকার আর্থিক সুস্থতা, সাংবাদিকতার সুস্থতা আনয়নে ভূমি রাখবে। আমরা আমাদের সাংবাদিকদের মান উন্নয়নেও ভূমিকা রাখব। তাদের দেশে-বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠাব। বিদেশ থেকে ট্রেইনার এনে তাদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমাদের সাংবাদিকতার মান উন্নয়ন করতে পারব। বাংলাদেশে কিন্তু যথেষ্ট মেধাবী সাংবাদিক রয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ যদি বিপরীতে চলে যায়, এ মেধাবী মানুষটিও মানসম্মত সাংবাদিকতায় ভূমিকা রাখতে পারবে না। সুতরাং আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ মানে এই নয় যে প্রতিযোগিতা থাকবে। প্রতিযোগিতাকে দূরে রেখে আমরা প্রফেশনালিজমে একমত হই। আমি মনে করি রাষ্ট্র এটাকে রেসপন্স বা উৎসাহিত করতে বাধ্য হবে। আপনি লক্ষ্য করুন বিগত সাত-আট বছর, আমাদের ঐক্যবদ্ধ কোনো অবস্থান নেই। এর কিছুটা আমরা দেখাতে পেরেছিলাম ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে। তবে সেটার মধ্যেও দোনামোনা ছিল। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। মূলত দলীয় আনুগত্যের কারণেই এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব। যদি এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব না থাকত, তাহলে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটা পরিশুদ্ধ করে পাস করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারতাম। কিন্তু তারপরেও ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিশেষত রোজিনা গ্রেফতারের পর আরও কথাবার্তা হয়েছে। খেয়াল করবেন রোজিনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করেনি। চাইলে কিন্তু পারত। করেনি। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করতে দেখিনি। কিন্তু এটা তো স্বস্তিতে থাকা নয়, ছোট জেলার একজন সাংবাদিক, একজন নাগরিক সে কিন্তু হেনস্তার শিকার হতে পারে। সে হয়তো সাংবাদিক না। একজন নাগরিকও যদি একটা আইনের দ্বারা নিগৃহীত হয়, সেটাও তো একজন সাংবাদিক হিসেবেও আমাদের কনসার্ন থাকতে হবে। সাংবাদিক হিসেবে কেবল নিজেদের নিরাপত্তা নয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়েও লিখতে হবে। না হলে সেটা হবে সাংঘাতিক স্বার্থপরতা। এটা কখনই কাম্য নয়। হ্যাঁ, আমাদেরটা আমরা করব, সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের নিরাপত্তা, নাগরিকের নিশ্চয়তাটাও আমাদের এনশিউর করতে হবে।

 

লেখক : বিশিষ্ট সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর