সময়টা ২০১০, মাস ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ২০০৯ সালের ১১ জুন নিজের পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু হাতে ছিল না তেমন কোনো চাকরি। দৈনিক যুগান্তরে কন্ট্রিবিউটার হিসেবে কাজ করছিলাম তখন। সারা মাস লিখে যে বিলটা পেতাম তা দিয়ে আমারই হতো না, তার মধ্যে করেছি বিয়ে। ২০০৭ সালে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় আমি কাজ শুরু করি জিয়া (মনজুর কাদের জিয়া) ভাইয়ের হাত ধরে। কিন্তু সেখানে বেশি দিন কাজ করা হয়ে ওঠেনি। জিয়া ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা ছিল দারুণ। আমাকে বেশ পছন্দ করতেন। যে হিসেবে ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আমাকে ফোন করে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় কাজ করার জন্য। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, তখনো এই পত্রিকাটির জন্ম হয়নি। জিয়া ভাই আমাকে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, বর্তমান সম্পাদক নঈম নিজাম স্যারের নম্বরটি দেন। বলেন, ভাইকে একটা ফোন দিয়ে চলে আসতে। আমি খুব ভয়ে ভয়ে স্যারকে ফোন দিলাম। স্যার ফোনটি ধরলেন না। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ফোনকলটি ব্যাক করলেন। আমি আমার পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। স্যার আমাকে পরদিনই অফিসে আসতে বলেন। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে আমি মগবাজারের বাংলাদেশ প্রতিদিনের অফিসে যাই। জিয়া ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে খুব ভয়ে ভয়ে সম্পাদক স্যারের রুমে প্রবেশ করি। স্যার আমার কাছ থেকে জানতে চান, আমি কোন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছি। আমি তখন স্যারকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতার আইডি দেখিয়ে বলি, আমি এখান থেকে পড়াশোনা করেছি। স্যার তখন তাঁর পকেট থেকে একই ইউনিভার্সিটির আইডি কার্ড বের করে বললেন, আমি এই ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাডভাইজার হিসেবে আছি। কিন্তু তখন এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। স্যার আমার সঙ্গে অল্প কিছু সময় কথা বলে কাজ শুরু করে দিতে বলেন। আমি সেদিন থেকেই জিয়া ভাইয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ডামির কাজ শুরু করে দেই। সঙ্গী হিসেবে পাই আলাউদ্দীন মাজিদ ভাইকে। সেই সময় মগবাজারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ছোট একটি রুমে নিউজপ্রিন্ট কাগজে হাতে লিখে তিনজনের শোবিজ টিম কাজ শুরু করে। প্রায় এক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে ২০১০ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রথম সূর্যে আলোর মুখ দেখে। প্রেস থেকে যখন এক একটি পত্রিকা প্রিন্ট হয়ে আসছিল, মনে হচ্ছিল কোটি মানুষের স্বপ্ন বেরিয়ে আসছে আমাদের হাত ধরে। শুরুর দিকে বাংলাদেশ প্রতিদিন নামটি তারকাদের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু পেছনে হটিনি আমরা। সেই সময় জিয়া ভাই নাটক, আলাউদ্দীন মাজিদ চলচ্চিত্র আর আমি গানের তারকাদের নিয়ে কাজ শুরু করি। দুই টাকার এই পত্রিকাটি রাতারাতি জনপ্রিয়তা পায় প্যানি প্রেসের মতো। যেখানে চোখ পড়ে শুরু বাংলাদেশ প্রতিদিন আর বাংলাদেশ প্রতিদিন। রাতারাতি বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকার ভিত নাড়িয়ে দেয় পত্রিকাটি। একসময় শোবিজ টিমে যোগ দেন জাকারিয়া সৌখিন ভাই। চারজনের এই শোবিজ টিমটি ভালোই চলছিল। মাঝখান থেকে হঠাৎ অন্য একটি পত্রিকায় চলে যান জিয়া ভাই। শোবিজ অঙ্গনে নিজেদের ছন্দ টিকিয়ে রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে শুরু করি আমরা। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মগবাজারের ছোট অফিস ছেড়ে আমরা চলে আসি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। চকচকে কাচের দালানে শুরু হয় আমাদের নতুন করে পথ চলা। শোবিজ তারকাদের সাক্ষাৎকার, আড্ডা, নিউজ করতে করতে চলে যায় বেশ কিছু বছর। ততদিনে বাংলাদেশ প্রতিদিন আমাকে এনে দেয় খানিকটা তারকা পরিচিতি। এরই মধ্যে নাটক নির্মাণে ভালো করায় চাকরি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন সৌখিন ভাই। আবারও শোবিজের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার আর আলাউদ্দীন ভাইয়ের ওপর। বেশ কিছুদিন আমরা দুজনই শোবিজ পাতাটা চালিয়ে নিয়ে যাই। মাঝপথে আমাদের সঙ্গে যোগদান করেন পান্থ আফজাল। ২০১৯-এর প্রথমদিকে আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় সম্পাদক নঈম নিজাম স্যারের কথায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাশাপাশি নিউজ টোয়েন্টিফোর ও ক্যাপিটাল এফএম-এ কিছু অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকি। আজকের এই আমার সম্পূর্ণটাই বাংলাদেশ প্রতিদিনের কৃতিত্ব। কোটি মানুষের ভালোবাসাকে সঙ্গে নিয়ে আজ বাংলাদেশ প্রতিদিন দুই যুগে প্রবেশ করেছে। সময়ের স্রোতে পালাবদলের সঙ্গে অনেকেই আসবে-যাবে, কিন্তু হাজার বছর টিকে থাকবে বাংলাদেশ প্রতিদিন। এটাই আমার প্রত্যাশা।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।