২৫ অক্টোবর, ২০১৫ ১২:৩২

অসহিষ্ণুতার আঁচ বাড়ছে, ক্ষুব্ধ মোদি

অনলাইন ডেস্ক

অসহিষ্ণুতার আঁচ বাড়ছে, ক্ষুব্ধ মোদি

বিহার ভোট যখন মধ্যগগনে, তখন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের একের পর এক লাগামছাড়া মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এই সব মন্তব্য শাসক দলের নেতাদের অসহিষ্ণু মনোভাবকেই সামনে এনে দিয়েছে। যার জেরে বিতর্ক ছড়িয়েছে গোটা দেশে। বিহারে বিজেপির ভোটবাক্সে সেই বিতর্কের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে আশঙ্কায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বই। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দল বা সরকারের কী রণকৌশল হবে, তা ঠিক করতেই এখন হিমসিম খাচ্ছেন মোদি থেকে অমিত শাহ।
দাদরির হত্যাকাণ্ডের পরে প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছিল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, সাক্ষী মহারাজ, মহেশ শর্মা বা সঙ্গীত সোমের মতো নেতারা দাদরির ঘটনার নিয়ে যে সব উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন, তার পিছনে প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলেই মোদি মুখে কুলুপ দিয়ে রয়েছেন। এর পরে আনন্দবাজারের কাছেই প্রথম দাদরির ঘটনার নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে এ-ও বলেন যে, এই ঘটনার সঙ্গে কেন্দ্রের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। একাধিক সাক্ষাৎকারে একই যুক্তি দিয়েছেন বিজেপি সভাপতিও।

কিন্তু তার পরেও দাদরির আঁচ বিজেপির গায়ে ভাল মতোই লাগছে। অভিযোগ উঠছে, বিহারের ভোটকে সামনে রেখেই মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। ঠিক যেমনটি তারা করেছিল উত্তরপ্রদেশে লোকসভা ভোটের আগে। কিন্তু বিহার ও উত্তরপ্রদেশ এক নয়। ফলে, উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে বিহারে উল্টে প্যাঁচে পড়েছে দল। লালু-নীতীশেরা বলার সুযোগ পেয়েছেন যে, বিজেপির সাম্প্রদায়িক চেহারাটা আবার সামনে এসে গিয়েছে।

অথচ বিহারে প্রচারে গিয়ে বারবার উন্নয়নের প্রসঙ্গই তুলে ধরেছেন মোদি। কিন্তু দাদরির ঘটনা বা এম এম কালবার্গি, গোবিন্দ পানসারের হত্যা, তার সেই প্রচারকেই আড়াল করে দিচ্ছে। অসহিষ্ণুতা ঘিরে বিতর্ককেই মূল বিষয় করে তুলতে চাইছেন বিরোধীরা। তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে বিজেপি নেতাদেরই একাংশের বেলাগাম মন্তব্য। ফলে ক্ষুব্ধ হন মোদি। তার নির্দেশেই সাক্ষী মহারাজ, মহেশ শর্মা ও সঙ্গীত সোমকে ডেকে পাঠিয়ে ভর্ৎসনা করেন অমিত শাহ।

বিজেপির শীর্ষ নেতাদের অনেকের মতে, দাদরির ঘটনায় দলের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে গোড়ায় ধোঁয়াশা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাকে বিরোধীদের মতোই দলের অনেকের প্রচ্ছন্ন কৌশল বলে মনে করেছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, ওই ঘটনার সরাসরি নিন্দা না করে বিহার ভোটে মেরুকরণের সুবিধা নিতে চান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত মোদি যখন মুখ খুললেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ততক্ষণে অনেক বিজেপি নেতাই আগ বাড়িয়ে অসহিষ্ণু মন্তব্য করে বসেছেন। যার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, উত্তরপ্রদেশে প্রথমেই রাষ্ট্রপতি শাসন দাবি করা উচিত ছিল। তা হলে বোঝানো যেত, বিজেপি দাদরির ঘটনার বিরুদ্ধে। এবং ওই ঘটনার জন্য বিজেপি নয়, রাজ্যের শাসক দল সমাজবাদী পার্টিই দায়ী।

বিহার ভোটের আরও তিনটি পর্যায় বাকি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিহারে অনেকগুলি জনসভা করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর হঠাৎই বাতিল হয়। দুর্গাপুজো, নবরাত্রি উৎসবের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রের। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অসহিষ্ণুতা বিতর্কের জেরেই কি মোদির সফর বাতিল করা হল? আপাতত নীতীশ-লালুদের মোকাবিলায় অরুণ জেটলিকে পাঠিয়ে উন্নয়ন নিয়ে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।

বিজেপি সূত্রের মতে, মহারাষ্ট্রে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি মুসলিম ভোটের বড় অংশ টেনে নিয়েছিলেন। ফলে, ওই ভোট বিজেপির মূল প্রতিপক্ষের হাতছাড়া হয়েছিল। তাতে আখেরে লাভ হয়েছিল বিজেপির। কিন্তু বিহারে ওয়েইসির তেমন প্রভাব নেই। তাই লালু-নীতীশদের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে তার থাবা বসানোর সম্ভাবনাও কম। ফলে, ভোটের হিসেবে ক্ষতি হতে পারে বিজেপির।

কেবল বিরোধী দল নয়, বহুত্ববাদের উপরে হামলা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব সাহিত্যিক-সহ নাগরিক সমাজের একটি অংশও। আজও লেখকদের পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন গীতিকার গুলজার। গতকাল মৃদু সুরে হলেও লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছে সাহিত্য অকাদেমি। কন্নড় সাহিত্যিক এম এম কালবার্গির হত্যার প্রতিবাদ করেছে তারা। ফলে, সরকারের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

আবার সংরক্ষণ নিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্য ও ফরিদকোটে দলিত হত্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহের বক্তব্যে অস্বস্তি আরও বেড়েছে বিজেপির। কারণ, তাদের দলিত-বিরোধী বলে প্রচার করারও সুযোগ পেয়েছেন বিরোধীরা। দলিত হত্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভি কে সিংহ প্রথমে বলেন, ‘‘কেউ কুকুরকে ঢিল ছুড়লেও কি সরকারকে দায়ী করা হবে?’’ পরে বিতর্ক শুরু হলে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফের বিতর্কে জড়ান  ভি কে। কারণ, তখন সাংবাদিকদের আগরার মানসিক হাসপাতালে যেতে বলেন তিনি। রাতে আবার অমিত শাহের ধমক খেয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান প্রাক্তন এই সেনাপ্রধান। কিন্তু তত ক্ষণে বিষয়টি লুফে নিয়েছে বিহারে লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের মহাজোট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের চেষ্টাতেও অস্বস্তি কাটেনি। 

গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো এসেছে জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়। মোদি সরকারের আনা আইন খারিজ করে বিচারপতি নিয়োগে পুরনো কলেজিয়াম ব্যবস্থাই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। সরকার নতুন বিল আনার কথা ভাবলেও এখন তাদের প্যাঁচে ফেলতে সক্রিয় কং‌গ্রেস। এক সময়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারই বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি বদলাতে খসড়া বিল তৈরি করেছিল। মোদি জমানায় আনা জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন সমর্থনও করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু এখন তাদের দাবি, ওই বিলে মোদি জমানায় আনা সংশোধনীর ফলেই আইন সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়েছে, এই দাবি করে সরব হয়েছে কংগ্রেস।  

বিজেপির একাংশের মতে, মোদী সরকারের রাজনৈতিক ম্যানেজারের বড় অভাব। প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। তার উদ্দেশ্যও ভাল। কিন্তু সংসদে বিভিন্ন বিল পাশের সময়েই রাজনৈতিক ম্যানেজারের অভাব বোঝা গিয়েছে।

বিহারে ভোট গণনা ৮ নভেম্বর। এই ফল গোটা দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে বিজেপি নেতারাও মনে করছেন। তার আগে সরকার তথা দল একের পর এক বিতর্কে জড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। টিম মোদি এই গোলকধাঁধা থেকে বেরনোর পথ বের করতে পারে কি না তাই এখন দেখার।


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর