৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১২:১৯

পাকিস্তান নিয়ে হইচই চাইছেন না মোদি

অনলাইন ডেস্ক

পাকিস্তান নিয়ে হইচই চাইছেন না মোদি

প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাশে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় কানে কানে বলেছিলেন, ‘আলোচনা করতে তো আমি সব সময়ই রাজি। ভারত-পাকিস্তান সমস্যা মেটাতে চাই বলেই তো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কথাও বলেছিলাম। কিন্তু এখন আমার কাছে এটা স্পষ্ট যে, পাক সেনাবাহিনী আপনার কথা শোনে না। সীমান্তে গোলাবর্ষণ, জঙ্গি-অনুপ্রবেশ ও নাশকতা, কিছুই বন্ধ হচ্ছে না’।

নওয়াজ শরিফ এ কথা শো‌নার পরে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘দেশে ফিরেই আমি আপনার উদ্বেগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু আপনি যদি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরে একটা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাজি হন, তা হলে আমার পক্ষেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে’।

প্যারিস থেকে ফিরে মোদি তার সঙ্গে নওয়াজের আলোচনা নিয়ে অজিত ডোভাল, প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন মিশ্র, বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করেন। আপাতত পাকিস্তান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কৌশল হল, বরফ কিছুটা গলুক। আপাতত দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা ফের শুরু হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরে সন্ত্রাস ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনাও চলতে থাকবে। চিন-মডেল অনুসরণ করে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যার সমাধানসূত্র নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু করে দেওয়া অথবা লাহৌর বাসযাত্রার মতো কর্মসূচির আয়োজন করে শান্তিপ্রক্রিয়ার নামে একটা বড় ধরনের হইচই করতে এখনই রাজি নয় মোদী সরকার।

অটলবিহারী বাজপেয়ীর লাহোর বাসযাত্রার পরেই লেগেছিল কারগিল যুদ্ধ। তখনও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেনাপ্রধান ছিলেন পারভেজ মুশারফ। সেই ঘটনা বিজেপি নেতৃত্ব তথা মোদী ভোলেননি। অন্য দিকে নওয়াজও ভোলেননি লাহৌর বাসযাত্রার জন্য তাকে যে রাজনৈতিক খেসারত দিতে হয়েছিল। তাই তিনিও এ বারে অনেক বেশি সতর্ক। পাক প্রশাসনের শীর্ষে থেকেও পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রকাশ্যে সংঘাতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করা যে অসম্ভব, সেটা তিনি ভালই বুঝছেন। পরিস্থিতি বুঝছেন মোদিও। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যে পাকিস্তান যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলেও এই সফরকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও রাজনৈতিক ‘সার্কাস’ না হয়, সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন মোদি। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেতে বলেছেন, আমি যাচ্ছি। পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা মৈত্রী চাই। কিন্তু সেটা নিয়ে কোনও অসত্য স্বপ্নবিলাস কাঙ্খিত নয়। বরং বাস্তবতার জমিতে যাত্রা শুরু হওয়াই উচিত কাজ হবে।’’ গত কয়েক দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী অজিত ডোভালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক-হানার কোনও ঘটনা ঘটছে কি না, সে দিকে নজর রেখেছিলেন। মোদী নওয়াজকে বলেছিলেন, কোনও ঘটনা ঘটলে সুষমাকে পাঠানো সম্ভব হবে না। সেই কারণেই এত দিন অপেক্ষা করে সুষমার সফরের বিষয়টি আজ ঘোষণা করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, প্রথমত সুষমা পাকিস্তানে যাচ্ছেন কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে নয়। যাচ্ছেন ইস্তাম্বুল-পাকিস্তান সম্মেলনে যোগ দিতে। সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে নওয়াজের আলাদা কথা হতে পারে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের কুশীলবেরাই জানেন যে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চাবিকাঠি সুষমা নয়, রয়েছে মোদীর হাতে। এমনকী অজিত ডোভালের ভূমিকাও সুষমার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

অজিত ডোভালকে নিয়ে পাক সেনা এবং আইএসআই-এর এমনিতেই একটা দুশ্চিন্তা রয়েছে। ডোভাল দীর্ঘদিন পাকিস্তানে ছিলেন। গোয়েন্দা মহলে প্রচারিত, সে সময় প্রায় জেমস বন্ডের মতো লাহৌর, করাচিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি! এমনকী কিছুদিন আগেও যখন মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী, তখন বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান যদি ভারতে এই ধরনের আক্রমণ করে, তা হলে আমরাও বালুচিস্তানে আক্রমণ হানতে পারি। ২০১৪ সালে মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ডোভাল যখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন, তখন তার এই বক্তব্যের ফুটেজ ইউটিউবের মাধ্যমে পাকিস্তানে তাকে প্রায় গব্বর সিংহের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল! এখন ডোভাল নিজেও তার এই পুরনো ভাবমূর্তি সংশোধনের চেষ্টায় সচেষ্ট হয়েছেন।

মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাকিস্তানে যেতে চাইলেও তার দল কংগ্রেসের সায় ছিল না। সে সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ও পাক সফরের বিরোধী ছিলেন। পররাষ্ট্র ন্ত্রী থাকাকালীন প্রণববাবু এক দিনের জন্য নমো নমো করে পাক সফর করে দায় সেরেছিলেন। ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে কোনও রাজনৈতিক নাটক তিনিও করতে চাননি। এখন সুষমার সফরের সময় মোদি কিন্তু সেই প্রণববাবুর কৌশল ধরেই এগোচ্ছেন। সুষমাকে পাকিস্তানে পাঠালেও বিষয়টি নিয়ে কোনও যাত্রাপালা তৈরিতে আগ্রহী নন মোদি। সেই কারণেই রবিবার ব্যাঙ্ককে এনএসএ-স্তরের বৈঠকটি দু’দেশের সরকারি স্তরে খুব গোপন কিছু না হলেও এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই করেনি কোনও পক্ষই। সুষমার সফর নিয়েও একই কৌশল নেওয়া হচ্ছে।


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা 


বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর