১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৩:১৪

যাবেন মোদি, শরিফকে জানিয়ে এলেন সুষমা

অনলাইন ডেস্ক

যাবেন মোদি, শরিফকে জানিয়ে এলেন সুষমা

ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে ফের আলোচনার টেবিলে বসছে ভারত-পাকিস্তান। বুধবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আলোচনার মধ্যে দিয়ে যার সূচনা হল বলে মনে করা হচ্ছে। সুষমা বলেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এবং সেই প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই আমি ইসলামাবাদে এসেছি।’’

আফগানিস্তানের উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে দু’দিনের ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকালই পাকিস্তান গিয়েছেন সুষমা। সঙ্গে গিয়েছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। এ দিন পাকিস্তানের দিকে প্রথম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শরিফের সঙ্গে বৈঠকের আগেই তিনি জানান, সামনের বছর পাকিস্তান সফরে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সার্ক সম্মেলনের আসর বসতে চলেছে পাকিস্তানে। সেই সফরে কি মোদি আসবেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে সুষমা বলেন, ‘‘হ্যাঁ তিনি আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমিও আসব।’’

সুষমা এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে খবর ছড়িয়ে পড়ে ১২ বছর পরে পাক সফরে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে শেষ বার পাকিস্তান যান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার তাগিদ রয়েছে মোদির তরফে। সেই লক্ষ্যে তিনি বহু দিনই ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন। তাই দিল্লিতে  পালাবদলের পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথের অনুষ্ঠানে মোদি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শরিফকে। চলতি বছরে রাশিয়ার উফায় শরিফ ও মোদীর বৈঠকে মোদীকে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে আসার আমন্ত্রণ জানান শরিফ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেন। আজ ইসলামাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে সুষমা জানালেন, আগামী বছর পাকিস্তানে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন সম্মেলনের ফাঁকে শরিফের সঙ্গে কথা বলেন সুষমা। দু’জনের মধ্যে সন্ত্রাস, কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তার পরে দু’দেশের তরফেই যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, সন্ত্রাস, নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাঙ্ককে দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক সফল। তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বৈঠক হবে দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়েও। পাকিস্তানের তরফেও ভারতকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মুম্বাই হামলার চক্রীদের দ্রুত বিচারের জন্য পদক্ষেপ করা হবে। 

ভারত-পাক বৈঠক পর্যন্ত পৌঁছতে উফার বৈঠকের পরেও কিন্তু দু’দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলেছিল। হুরিয়ত নেতাদের দিল্লির পাক হাই কমিশন ডেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছিল ইসলামাবাদ। তখন ভেস্তে গিয়েছিল দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক। কিন্তু তাতে দমে যাননি মোদি।এর পর প্যারিসে জলবাযু সম্মেলনের ফাঁকে বেশ কয়েক মিনিট একান্তে কথা বলেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। ফের খুলতে শুরু করে ভারত-পাক আলোচনার দরজা। যার ফলশ্রুতি ব্যাঙ্ককে ভারত-পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক। সেই বৈঠকই সুষমার পাকিস্তান সফরের পথ প্রশস্ত করেছে।

এ দিন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে জোরদার করার উপরেও জোর দিয়েছেন সুষমা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এখন অনেক পরিণত হয়েছি। দু’দেশের আত্মবিশ্বাসও যথেষ্ট বেড়েছে। দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককেও আরও জোরদার করে তুলতে হবে। তার জন্য যা যা করার তা করতে হবে।’’

রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, ভারত-পাক বাণিজ্যিক সম্পর্কে জোর দিতে চাওয়ার পিছনেও রয়েছে মোদীর কূটনীতি। কী সেই কূটনীতি?

প্রধানমন্ত্রী জানেন নিরাপত্তা আর বাণিজ্য হাতে হাত ধরে চলে। মোদি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনার উপর জোর দিচ্ছেন। সেই কারণেই তার একটার পর একটা বিদেশ সফর। কিন্তু সেই বিদেশি বিনিয়োগের পথে একটি কাঁটা হল ভারত-পাক সীমান্তের সন্ত্রাস। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক। তাই ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সহজ করার জন্য আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলির চাপ রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর উপর। সেই কারণেই মোদী চাইছেন পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে।
এবং তা অতি অবশ্যই অতি গোপনীয়তার মোড়কে। সেই গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা রয়েছে দিল্লি-ইসলামাবাদ দু’তরফেই। কারণ যখনই ভারত-পাক শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে আলোচনার পথ প্রশস্ত হয়েছে, তা ভেস্তে দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের জঙ্গি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। সেই কারণে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিশেষ মাতামাতি করুক, চাননি মোদিও। সেই কারণে সম্প্রতি অত্যন্ত গোপনে ব্যাঙ্ককে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক হয়। সেখানে সন্ত্রাস, কাশ্মীর সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এই বৈঠক সম্পর্কে ভারত বা পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম আগাম কোনও খবর পায়নি।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশি মাতামাতি যে মোদি চান না, তার আর একটি কারণও রয়েছে। বেশি ঢাকঢোল পিটিয়ে এই কাজে এগোলে ঘরোয়া রাজনীতিতে চাপের মুখে পড়তে হতে পারে মোদিকে। ২০১২ সালে মনমোহন সিংহ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এস এম কৃষ্ণের পাক সফরের পর পাকিস্তান গেলেন সুষমা। ফলে এই সফর নিয়ে বেশি মাতামাতি হলে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারেন, সুষমার এই পাক সফরে ভারতের প্রাপ্তি কী? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নের মুখে পড়তে চাইছেন না মোদি। তবে দু’দিনের সম্মেলন শেষে আজ রাতেই দেশে ফিরছেন সুষমা। কাল বৃহস্পতিবার এই পাক সফর নিয়ে সংসদে বলবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ দিন সন্ত্রাস নিয়ে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন সুষমা। প্রায় ৩০ মিনিট দু’জনের মধ্যে কথা হয়। ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে ১৭টি দেশ। দু’দিনের এই সম্মেলনে ‘ইসলামাবাদ ডিক্লারেশন’ গৃহীত হয়েছে। যেখানে আফগান তালিবানের সমস্ত সংগঠনকে শান্তি আলোচনায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।           

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিডি-প্রতিদিন/ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর