ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

করোনায় মৃতদের শেষ ভরসা 'আল মানাহিল ফাউন্ডেশন'
রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এক রোগী। পরে স্বজনরা মৃত্যু সনদ নিয়ে হাসপাতালে মৃতদেহ রেখেই চলে যান। সেখানেই পড়ে থাকে নিথর দেহটি। হাসপাতালের ফাইলে থাকা মোবাইল নম্বারে কল করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। অবশেষে এগিয়ে আসলেন আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়াই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আরেফিন নগর কবরস্থানে দাফন করা হয়। গত ১৪ মে এ ঘটনাটি ঘটে।         

এভাবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা লাশ দাফন ও সৎকার করে যাচ্ছে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার  ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষের নিরাপদ, সম্মানজনক, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং শঙ্কামুক্ত হয়ে দাফন ও সৎকার কাজ করা হচ্ছে। অন্তিম শয়ানের শেষ ভরসায় পরিণত হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষদের। ঈদুল আজহার দিনও করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া সাতজন এবং পরদিন ছয়জনের মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। গত রবিবার পর্যন্ত ৯২ জনের দাফন কাজ সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত ৭৭ এবং উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১৫ জন। আশার কথা হলো- এখন পর্যন্ত সংগঠনের কোনো কর্মী করোনা আক্রান্ত হননি।            

সংগঠনের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিন জমির বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর অনেকেরই স্বজন আর পাশে আসেন না। আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষটি মুহূর্তেই পর হয়ে যান। তাই মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে মরদেহগুলো গ্রহণ করে গোসল করানো, জানাজার নামাজ এবং দাফন কিংবা সৎকার পর্যন্ত কাজগুলো আমাদের কর্মীরা করছেন। প্রতিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা হয়। দাফন শেষে পিপিই পুড়িয়ে ফেলা হয়।’  

সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন বিন জমির বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৯২ জনকে দাফন ও সৎকার করা হয়েছে। দুঃখজনক কথা হল এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ জনের পরিবারকে কাছে পাওয়া গেছে। অন্যরা সবাই মৃতদেহ ফেলেই চলে গেছেন। এগুলো অনেক বড় হৃদয়বিদারক দৃশ্য।’ তিনি বলেন, ‘নগরীর হালিশহরে একটি ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করছি। ইতোমধ্যে ৫০টি শয্যা প্রায় প্রস্তুত। গতকাল মাননীয় পুলিশ কমিশনার হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। আশা করি, এক সপ্তাহ পর এখানে রোগী ভর্তি করা হবে।’   

জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল থেকে আল মানাহিল দাফন ও সৎকারের কাজটি শুরু করে। সংগঠনের আছে ৪০ সদস্যের একটি টিম। এখন পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মী নিজ বাড়ি যাননি। নগরীর মোটেল সৈকতেই অবস্থান করে পালাক্রমে কাজ করেন। বর্তমানে আছে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি মাইক্রোবাস। এ সব গাড়ি প্রতিদিন করোনা রোগী এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে আনা-নেওয়া করা, করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও তা নির্দিষ্ট ল্যাবে দিয়ে আসার কাজে ব্যবহার করা হয়।  

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আল্লামা জমির উদ্দিন নানুপরী ফটিকছড়িতে ‘আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০১১ সালে মারা যান। ইন্তেকালের পর তাঁর তিন সন্তান মাওলানা হেলাল উদ্দিন বিন জমির, মাওলানা শিহাব উদ্দিন বিন জমির ও মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বিন জমির ফাউন্ডেশনটি পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি সারাদেশ প্রায় ৭০০টি মসজিদ প্রতিষ্ঠা, অজ্ঞাত মানুষের লাশ দাফন, গরিব মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা, দরিদ্রদের ঘর নির্মাণ, পানীয়জলের ব্যবস্থা করে আসছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও রোহিঙ্গাদের ঘর নির্মাণও করে। 

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার



এই পাতার আরো খবর