ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সাবেকদের আমলনামা
ভালো নেই সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস

ভালো নেই আওয়ামী লীগের সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। মন্ত্রী থাকাকালে নানামুখী বিতর্কের কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার মনোনয়ন পাননি। একই সঙ্গে হারিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদও। বর্তমানে দলীয় কর্মকাণ্ডে তাকে আমন্ত্রণও জানানো হয় না। এর পরও তিনি নিজ থেকে দলীয় কার্যালয়ে যান।

জানা গেছে, মন্ত্রী থাকাকালে আবদুল লতিফ বিশ্বাস প্রথম আলোচনায় আসেন নিজের স্ত্রীকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করে। এরপর মিরপুরে বাড়ি নির্মাণ ও পানিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে ঘুষ দাবি করে বিতর্কিত হন। সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এর পরও পাঁচ বছর মন্ত্রী থাকেন লতিফ বিশ্বাস। কিন্তু আমলনামায় বিপর্যয় ঘটে। দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। জানা গেছে, লতিফ বিশ্বাস একসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর দলীয় মনোনয়নে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত মহাজোট সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। সেই প্রভাবশালী, ব্যস্ত এই সাবেক মন্ত্রী এখন অনেকটা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। দলের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া মিটিং, সকাল-বিকাল দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীর সুখ-দুঃখের ভাগী এবং দলকে সংগঠিত করার পরামর্শ প্রদান করেই দিন পার করছেন তিনি। একজন সাবেক মন্ত্রী হওয়ার পরও দলীয় কর্মসূচিতে সম্মানজনকভাবে দাওয়াত না পাওয়ায় দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। দশম সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাননি। তাই বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার নেতা-কর্মীদের এক গ্রুপ তার সঙ্গে আছে আর আরেক গ্রুপ তাকে এড়িয়ে চলছে। বিষয়টি বুঝেও সবার সঙ্গে সখ্য রেখেই চলছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি। দলের নীতিনির্ধারণী ও বর্ধিত সভায়ও তাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না, যে কারণে দলেরও ক্ষতি হচ্ছে। নির্বাচন এলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে-দুঃখে ভোট দিতে যাচ্ছেন না, যে কারণে ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী জিতলেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। একই কারণে ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চৌহালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদে দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের সভাপতি ইউসুফ জী খান ও সম্পাদক ফজলুল হক সরকার সাবেক এই মন্ত্রীকে দাওয়াত না দেওয়ায় বর্ধিত সভার শুরুতেই চরম হট্টগোল হয়। এ আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুল মজিদ মণ্ডলের সঙ্গে প্রকাশ্যে কিছুটা সখ্য থাকলেও ভেতরে ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব চলছে তার। মন্ত্রী থাকাকালে যারা বেশি সুবিধা ভোগ করেছেন, তারাই এখন সাবেক মন্ত্রীর সখ্য ছেড়ে বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষ নিয়েছেন। যে কারণে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ এখন অঘোষিতভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস সপ্তাহে চার দিন বেলকুচি ও তিন দিন ঢাকায় থাকছেন। বেলকুচিতে অবস্থানকালে তিনি সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে এক-দেড় ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করেন। এরপর বাড়িতে বসে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চেষ্টা করেন তাদের সমস্যা সমাধানের। সকাল ১০টায় নাশতা সেরে চলে যান দলীয় কার্যালয়ে। দুপুর পর্যন্ত সেখানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাটান। দুপুরে আবার বাড়ি ফিরে খাওয়া শেষে বিশ্রাম নেন। সন্ধ্যায় আবারও দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে বাসায় ফেরেন রাতে। তবে সম্মানজনকভাবে দাওয়াত না করায় অধিকাংশ দলীয় কর্মসূচি বর্জন করেন লতিফ বিশ্বাস। শুক্রবার দুপুরের দিকে আলাপকালে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, 'মনোনয়ন না পাওয়ায় কষ্ট পেয়েছি। যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সময় দিতে পারতাম না। এখন প্রচুর সময়, তাই তৃণমূলের সঙ্গে কাটিয়ে দিন পার করছি।' তিনি আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে রাজনীতি করছি। বেলকুচিতে দলকে সুসংগঠিত করতে অনেক চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে। মনোনয়ন না পেলেও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।' তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'মন্ত্রী থাকাবস্থায় বেলকুচি ও চৌহালীতে দল সুসংগঠিত করার পাশাপাশি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের পর বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যে কারণে সংসদ নির্বাচনের পর চৌহালীতে যাওয়া হয়নি। এমনকি চৌহালীর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সমন্বয় তো দূরের কথা, কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি। তবু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে দুটি ইউনিয়নে গিয়ে গণসংযোগ করেছি। বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে গিয়ে গণসংযোগ করেছি।'

বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডলের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে সমন্বয় হয় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছুটা সমন্বয় হয়। সুবিধাভোগী নেতাদের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন মানুষ সবার কাছে প্রিয়ভাজন হতে পারে না।

 



এই পাতার আরো খবর