ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভর্তি ফি নিয়ে নৈরাজ্য
কেউ মানছে না নীতিমালা

রাজধানীর বেসরকারি কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে চলছে মনগড়া ফি নির্ধারণ। ভর্তি নীতিমালায় নির্দিষ্ট টাকার অঙ্ক দেওয়া থাকলেও একেক কলেজ একেক ধরনের ফি নির্ধারণ করছে। সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন অভিভাবকরা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডে ভর্তি ফি-সংক্রান্ত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। বিপুলসংখ্যক জিপিএ-৫ পাওয়ায় অনেকেই রাজধানীর কলেজগুলোতে ভর্তি হতে না পারার আশঙ্কা করছে। ফলে তারা বেশি টাকা হলেও ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক অভিভাবক। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ১৭ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে নটর ডেম কলেজ তাদের ভর্তি ও সেশন চার্জসহ ১২ হাজার টাকার সঙ্গে বেতনও নিয়ে নিচ্ছে। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা, দনিয়া এ কে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রায় ১২ হাজার টাকা, ঢাকা সিটি কলেজে ১৯ হাজার, নরসিংদীর আবদুল কাদের মোল্লা কলেজে ২১ হাজার টাকা, বিসিআইসি কলেজে ১৫ হাজার, মণিপুর উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে ১৪ হাজার, সেন্ট যোশেফ কলেজে ১৫ হাজার টাকা, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ তাদের ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার টাকা।

রাজধানীর মহানগর আইডিয়াল কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি ও বেতন বাবদ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার টাকা। সঙ্গে নানা খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা যুক্ত করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে। মেট্রোপলিটন কলেজ (চকবাজার) ভর্তি ও সেশন ফি এবং বেতনসহ নির্ধারণ করেছে সাড়ে ৯ হাজার টাকা।

এগুলো রাজধানীর একাদশ শ্রেণির ভর্তি ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ চিত্র মাত্র। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত ২১০টি কলেজে এভাবে চলছে ফি-নৈরাজ্য। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে দিলেও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা মানছে না। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ফি-নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি নীতিমালায় বলা আছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এবং এমপিও-বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করার কথা নীতিমালায় রয়েছে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। পাঠদানের প্রাথমিক অনুমোদনবিহীন কোনো কলেজে কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মানলে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে। ভর্তি নীতিমালায় বিভিন্ন নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ কলেজ কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। এসব অনিয়মের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে খোদ শিক্ষা প্রশাসন।

জানা গেছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হচ্ছে। তবে একমাত্র নটর ডেম কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তির শেষ তারিখ ৩০ জুন, বিলম্ব ফিসহ ভর্তির শেষ তারিখ ২২ জুলাই। একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই।

এদিকে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে ১২ জুন। আজ ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু ভালো ফল করেও ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না শিক্ষার্থীদের। এ বছর মাধ্যমিকে মোট ১৩ লাখ তিন হাজার ৩৩১ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) চিফ পরিসংখ্যান অফিসার শামসুল আলম বলেন, 'সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তিন হাজার ৭৪৫টি'। হিসাব মতে, এসব প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে। এবার এসএসসিতে সব বিভাগ মিলে এক লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন জিপিএ ৫ পেলেও এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত কলেজ রয়েছে মাত্র ১৭৫টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে রয়েছে ২২টি কলেজ। মানসম্মত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে। বাকি প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর আসন হবে না এসব মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৩ লাখ ২২ হাজার ৮১৯ জন পাস করলেও এসব শিক্ষার্থীর জন্য ১৪৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য মোট আসন রয়েছে মাত্র ৪৩ হাজার ৫১৯টি। রাজধানীর ভালো কলেজগুলোতে ভর্তির সাধ থাকলেও এ সাধ পূরণ হবে না অনেক শিক্ষার্থীর। ভালো কলেজে ভর্তির জন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে শঙ্কায় দিন অতিবাহিত করছে শিক্ষার্থী আর তাদের অভিভাবকরা।

একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে ফি-নৈরাজ্যের ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছে। এ নীতিমালা মেনে চলতে হবে। অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ প্রশাসন) অধ্যাপক আতাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভর্তি নীতিমালার বাইরে কোনো কলেজ কর্তৃপক্ষ বেশি ফি নির্ধারণ এবং টাকা আদায় করলেই অভিযুক্ত কলেজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এমপিওভুক্ত কলেজ হলে পৃথক তদন্তের মাধ্যমে এমপিওভুক্তি বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

 

 



এই পাতার আরো খবর