ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরা সীমান্তে নারী ছদ্মবেশে যেভাবে গ্রেফতার হয় সাহেদ
মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

নারী ছদ্মবেশে বোরকা পরিহিত অবস্থায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় অভিযান চালিয়ে বহুল আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা। আজ বুধবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্তের লবঙ্গবতী খালের পাশ্ববর্তী সীমান্ত নদী ইছামতির তীর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ড কর্নেল সরোয়ার বিন কাশেমের নেতৃত্বে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার দেহ তল্লাশি করে একটি অবৈধ পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। সাহেদ করিমের গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট পাশ্ববর্তী কামালনগর গ্রামে। তার পিতার নাম সিরাজুল করিম। তার মা সাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা টেস্ট জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলাসহ মোট ৫৭টি মামলা রয়েছে।

দেবহাটা পদ্মশাখরা সীমান্ত থেকে গ্রেফতারের পর তাকে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে আনা হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত আকারে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল সাংবাদিকদের জানান, গত ৭ তারিখে উত্তরা থানায় করোনা টেস্টের সনদ জালিয়াতি মামলার পর থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদ করিম আত্মগোপনে চলে যায়। এর পর থেকে সাহেদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৬ এবং পুলিশের সহযোগিতায় আজ ভোর ৫টা ১০মিনিটে অবৈধ ভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বোরকা পরিহিত অবস্থায় সাতক্ষীরা দেবহাটা উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্তের লবঙ্গবতী খালের পার্শ্ববর্তী ইছামতি নদীর তীরের একটি নৌকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এসময় ভাল সাঁতার জানায় পালিয়ে যায় নৌকার মাঝি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাতক্ষীরার শীর্ষ এক চোরাকারবারি ও সীমান্তের বাচ্চু দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল সাহেদ করিম। বাচ্চু দালালকে গ্রেফতারের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিচ্ছে র‌্যাবের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা। তিনি আরও জানান, সাহেদ আত্মগোপনের পর থেকে চুলের রং করে এবং গোঁফ কেটে ঘন ঘন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে আসছিল। এমনকি মাথা ন্যাড়া করে চুল ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল সাহেদের। ইতিমধ্যে সাহেদের সহযোগী রিজেন্ট গ্রুপের এমডি পারভেজসহ ৯/১০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সাহেদকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে সাহেদ করিমকে র‌্যাব সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে র‌্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। ৭ জুলাই করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র‌্যাব।

মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এরপর থেকেই পালিয়ে ছিলেন সাহেদ। তাকে গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র‌্যাব। অবশেষে সাতক্ষীরা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

উল্লেখ্য, সাহেদ করিমের মা ছাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা আসমানি কিন্ডার গাডেন স্কুলের শিক্ষক ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন সাফিয়া করিম। বাবা ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী। বাড়ির জমি জায়গা ও মৎস্য ঘের দেখাশুনা করতেন তিনি। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে তিনি সাতক্ষীরা কামানগর গ্রামের ভিটা বাড়ির জায়গা জমি দোকান পাট বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের দিকে শহরের ভিটেবাড়ী বিক্রি করে সাতক্ষীরা ছেড়ে সম্পূর্ণ ঢাকাতে অবস্থান নেন সাহেদের বাবা ও মা। মা ছাফিয়া করিমের মৃত্যুর পর সাহেদ ও তার বাবা সিরাজুল করিম ঢাকাতেই অবস্থান করতেন। সাতক্ষীরাতে খুব বেশি পদচারণা ছিল না সাহেদের। সাতক্ষীরার কেউ তাকে তেমনভাবে চিনতেনও না। সাহেদ করিম নিজের আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন করে ঢাকাতে সাহেদ আহম্মেদ পরিচয় দিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় নিজেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নিকট রাজধানী ঢাকার ২৫টির মতো প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে বলে জানা গেছে। সাহেদ জেলও খেটেছেন এক বার। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান সাহেদ করিম। তিনি রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা রোগীর টেস্টের নামে প্রতারণা করে সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। করোনা পজেটিভ হয়েও টাকার বিনিময়ে কাউকে দিয়েছেন করোনা নেগেটিভ সাটিফিকেট আবার করোনা আক্রান্ত না হয়েও কাউকে দিয়েছেন ভুয়া করোনা আক্রান্ত সনদ। সাহেদের গ্রেফতারে সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। অনেকে ভয়ঙ্কর এই প্রতারক সাহেদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর