শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংবর্ধিত গুণী

ববিতা সুবর্ণা থেকে গোলাপী

অনুপম হায়াৎ

ববিতা সুবর্ণা থেকে গোলাপী

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় ও ববিতা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক পরিবারের তিন কন্যার একজন ববিতা। বাকি দুই কন্যা হলেন বড় বোন সুচন্দা ও ছোট বোন চম্পা আর সবার ওপরে আছেন সুচন্দার স্বামী জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২)।

ববিতার ডাকনাম পপি, আসল নাম ফরিদা আখতার। গত শতকের ষাট দশকের উত্তুঙ্গ সময়ে দুলাভাই জহির রায়হানের পৃষ্ঠপোষকতায় চিত্রজগতে আসেন ববিতা।

তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সংসার’ (১৯৬৮)-এ নাম গ্রহণ করেন ‘সুবর্ণা’। কিন্তু পরপরই নতুন উর্দু ছবি ‘ডবলাত সুরুজ কান্ড নিচে’ তার নতুন নামকরণ হয় ববিতা। অতঃপর ববিতা নামেই জন্ম হয় এক নতুন তারকার। ১৯৬৮-৭১ সালের মধ্যে একে একে মুক্তি পায় তার ‘শেষ পর্যন্ত’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘স্বরলিপি’ ও ‘জলছবি’। তবে ওই সময় তার অভিনীত বহুল প্রত্যাশার ছবি ছিল বহুভাষিক আন্তর্জাতিকমানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। মুক্তিযুদ্ধের কারণে সে ছবির শুটিং বন্ধ হয়ে যায়, সেই সঙ্গে চিরতরে হারিয়ে যান এর পরিচালক জহির রায়হানও। এ বড় মর্মান্তিক, বড় বেদনার।

’৭২ সালে মুক্ত স্বাধীন দেশে অভিনেত্রী ববিতারও বিজয়ের পতাকা উড়তে থাকে চলচ্চিত্রের আকাশে। মুক্তি পায় ‘মানুষের মন’, ‘প্রতিশোধ’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘জীবনতৃষ্ণা’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘প্রিয়তমা’, ‘শ্লোগান’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘লাঠিয়াল’, ‘বাঁদি থেকে বেগম’ ইত্যাদি। এসব মুক্তি পায় ১৯৭২-৭৫ সালের মধ্যে।

এর মধ্যে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আলোর মিছিল’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘বাঁদি থেকে বেগম’ তাকে প্রশংসা ও পুরস্কারের বিজয় এনে দেয়। সেই সঙ্গে ভারতের সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনিসংকেত’ ছবিতে অভিনয় তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যায়।

১৯৭৬-৭৯ সালের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন পর্দালোকের ‘নয়নমণি’ ও ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’।

আশির দশকের ‘লাইলি মজনু’, ‘আকাশপরী’, ‘জংলী রানী’ তাকে ‘নতুন বউ’-এর মর্যাদা দিলেও নকল, ভাঁড়ামো, অশ্লীলতাকবলিত চিত্রজগৎ তার জন্য অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। তিনি নিজেই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় জড়িত হন ‘ববিতা মুভিজ’ গঠন করে। প্রযোজনা করেন কয়েকটি ছবির। কিন্তু তত দিনে আকাশ সংস্কৃতি এসে গেছে, চিত্রজগৎ ক্রমে ম্রিয়মাণ। তার ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ (১৯৯৬) পুরস্কার-প্রশংসার নন্দিত বন্দিত হলেও বক্স অফিস আনুকূল্য পায়নি।

শিল্পী ববিতা, অভিনেত্রী ববিতা এখন চলচ্চিত্র ইতিহাসের বিগত দিনের  সোনালি অধ্যায়। তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে আছেন তিনি সেই ‘সুবর্ণা’ ‘গোলাপী’ হয়ে। থাকবেন তিনি ‘অনঙ্গ বউ’ হয়ে। দেশ-বিদেশের যত পুরস্কার তার সাফল্যের সোপানে। সর্বশেষ তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘আজীবন সম্মাননা’।

ববিতার প্রিয় ফুল রজনীগন্ধা। তিনি চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে রজনীগন্ধার সৌরভ নিয়েই স্মৃতিতে থাকবেন।

সর্বশেষ খবর