শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

শি চিন ফিং-এর অধুনা বাংলাদেশ সফর

লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.)

শি চিন ফিং-এর অধুনা বাংলাদেশ সফর

চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর বাংলাদেশ সফরকালে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

শি চিন ফিং-এর অধুনা বাংলাদেশ সফর শীর্ষক বিষয়বস্তুতে যাওয়ার আগে আমি প্রথমে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন নিয়মিত পাঠক ও অনিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে তার শুভ জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন। পত্রিকাটির সম্পাদক কৃতি সাংবাদিক বন্ধুবর নঈম নিজাম। বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা, যশ ও খ্যাতি অব্যাহত থাকুক কামনা করি।

বেশি দিন অতিবাহিত হয়নি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মহান রাষ্ট্রপতি শি চিন ফিং-এর বাংলাদেশে ঐতিহাসিক সফরের। বাংলাদেশ-চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৩০ বছরের মধ্যে চীনের কোনো রাষ্ট্রপতির সফর এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরেই বাংলাদেশ-চীন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। জিয়া ছিলেন দূরদর্শী, একজন ভিশনারী নেতা।  ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি দৃষ্টি ফেলেন পূর্বদিগন্তে। দেখেন সমস্ত আকাশ রক্তিম রঙে রাঙানো। তিনি আরও দেখেন এক দীর্ঘ শক্ত উষ্ণ হাত তার দিকে প্রসারিত। তিনি হাতটি ছুঁয়ে নিতে সামনে এগিয়ে যান। শক্ত করে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ৪ অক্টোবর আমাদের দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এরপর দৃপ্তপদে শুধু পথ চলা, শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফিরে তাকালে দেখেছি সহস্রাধিক বছরের সোনা দিয়ে গড়া, সোনা দিয়ে মোড়া সোনার বাংলা ও মহান সভ্যতার মহাপ্রাচীর বেষ্টিত মহাচীনের কালজয়ী মৈত্রী ইতিহাস। বার বার আগ্রহভরে ইতিহাসের পাঠ নিয়েছি। অবাক-বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছি। পাঠ করেছি ফা হিয়েন, হিউয়েন শাং, ই চিং, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের কথা। তারা সহস্রাধিক বছর আগে সভ্যতার ঊষালগ্নে হিমালয়ের ওপর দিয়ে সম উচ্চতায় মৈত্রী সেতু নির্মাণ করে গেছেন। চীনের গৌরবোজ্জ্বল থাং শাসনামল। তেমনি বাংলার (ভারত) পাল আমল। দুই সভ্যতার মৈত্রী বন্ধন এক কিংবদন্তির ইতিহাস। বিশ্ব ইতিহাসের চির ভাস্মর চির অম্লান, অমলিন। পরবর্তীতে মৈত্রী ইতিহাসের আরেক সোনালি অধ্যায় চতুর্দশ শতাব্দীতে চীনের মহাপরাক্রান্ত মিং রাজ আমল। তখন সুবেবাংলার সুবর্ণ যুগ। বার ভূঁইয়া, ইলিয়াস শাহ, গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ, সাইফউদ্দিন ও শাহী সুলতানদের আমল। বাংলা তখন ঐশ্বর্যে প্রাচুর্যে সুখ ও শান্তিতে বিশ্বে এক মহা আকর্ষণের দেশ। বিশ্বজোড়া আগ্রহ ও কৌতূহলের দেশ। বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করেছে চীনের মহাপরাক্রান্ত মিং রাজগণ। নিবিড় বন্ধন স্থাপন করেছেন মিং সম্রাট চু তি-ইয়ং ল। বন্ধুত্বের বার্তা হাতে প্রেরণ করেছেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ নাবিক শান্তির দূত এডমিরাল চ্যাং হ কে। তিনি প্রায় শত জাহাজের এক বিশাল নৌবহর নিয়ে সমগ্র ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সাগর তীরে অবস্থিত আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের ৩০টিরও বেশি রাজ্য ও বন্দর ভ্রমণ করেন। মিং সম্রাটের শুভেচ্ছা বার্তা ও প্রীতি উপঢৌকন পৌঁছে দেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেন। এডমিরাল চ্যাং হ একাধিকবার তার নৌবহর চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘ নোঙর করেন। সুবাবাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ তার সম্মানে রাজধানী সোনারগাঁয়ের পানাম নগরীতে বিশাল রাজকীয় এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনার আয়োজন করেন। ইতিহাসের পাতায় মিং সম্রাট ও সুবাবাংলার সুলতানের বন্ধুত্ব এক প্রবাদ উপাখ্যান হয়ে চির বিরাজমান। 

মহান অতিথি রাষ্ট্রপ্রধান শি চিন ফিং-এর বাংলাদেশ সফর সুপ্রাচীন ইতিহাসের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতায় সংগঠিত এক অনন্য সফর। Veni Vidi Vici আমি আসলাম, আমি দেখলাম, আমি জয় করলাম। রাষ্ট্রপতি শি চিন ফিং তাই করেছেন। জয় করে গেছেন বাংলাদেশের সাড়ে ষোল কোটি মানুষের হৃদয় ও মন। মাত্র ২৪ ঘণ্টার সফর। কিন্তু আন্দোলিত করেছেন, আলোড়িত করেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের প্রতিটি নগর, প্রতিটি প্রান্তর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত সুদূরপ্রসারী ও গভীর তাৎপর্যবহ ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। রাষ্ট্রপতি শি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের স্বর্ণদ্বার উদ্ঘাটন করে গেছেন।

ভাগ্যের সোনার চাবিকাঠিটি তুলে দিয়ে গেছেন বাংলার মানুষদের হাতে। স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন। বিশাল বিশাল স্বপ্ন। ব্যক্ত করে গেছেন গভীর আস্থা, প্রগাঢ় ভালোবাসা ও প্রত্যাশার বাণী। রাষ্ট্রপতি শি ২২ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্পের বিনিয়োগ MOU স্বাক্ষর করে গেছেন। ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা বলে গেছেন।

চীন বাংলাদেশকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চায়। দেখতে চায় বাংলাদেশ নিজের শক্ত পায়ের ওপর ভর করে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে, মহান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৃপ্ত কণ্ঠের শব্দগুলোর মতো—‘চির উন্নত মম শির। শির নেহারি আমারি। নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির।’ স্বপ্নদ্রষ্টা রাষ্ট্রপতি শি স্বপ্ন দেখেন মহান চীনা স্বপ্ন (চুং কুয়ো মং) Great China Dream. তিনি অতীতের গৌরবোজ্জ্বল মহান চীনের কথা স্মরণ করেন। তার ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা জানান। বুকে লালন করেন, ধারণ করেন। তারই পথ ধরে নতুন পথের আবিষ্কার ঘটিয়ে স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে চান। গড়তে চান এক পরিপূর্ণ চীন আর সঙ্গে নিতে চান সব নিকট ও দূরের প্রতিবেশী দেশকে এবং ইতিহাসের বন্ধুদের।

রাষ্ট্রপতি শি বিসিআইএম-ইকোনমিক করিডোর (BCIM-Economic Corridor) এর বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। সহযোগিতা কামনা করেছেন। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে একটি আঞ্চলিক জোট নির্মাণের মধ্য দিয়ে যুগান্তকারী অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানোর কথা বলেছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ চারটি দেশের অংশীদারিত্ব, সমন্বয় ও সহযোগিতায় যে অর্থনৈতিক করিডোরটি নির্মিত হতে যাচ্ছে তার মধ্য দিয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ, রেল ও মহাসড়কের সংযোগ বিস্ময়কর সমৃদ্ধি আনবে। এটি হবে এ সমগ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা বিকাশের একটি প্রশস্ত করিডোর। উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চলের রেশম পথ (Northern Silk Road) দিয়ে চীনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তারও বহু আগে (প্রায় তিন হাজার বছর আগে) দক্ষিণাঞ্চলের রেশম পথে (Southern Silk Road) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো আমাদের বহু দূরবর্তী অতীতের পূর্ব পুরুষেরা সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটিয়েছিল। বলাবাহুল্য বিসিআইএম-ইকোনমিক করিডোর সুপ্রাচীন দক্ষিণাঞ্চলীয় রেশম পথের (Southern Silk Road) নব্য সংস্করণ মাত্র। এর উৎপত্তি ছিল চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু থেকে। পরবর্তীতে তা ক্রমশ কুনমিং হয়ে ইরাবতী নদীর, চিন্দুইন নদের সমান্তরালে এগিয়ে গিয়ে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। তখন বাংলাদেশ (পুন্ড্রবর্ধন) ছিল বিশাল করতোয়া সভ্যতার আলোকিত দেশ। আর তার কেন্দ্রস্থল ছিল রাজধানী প্রাচীন পুন্ড্র নগরী (বগুড়ার মহাস্থান অঞ্চল) যার ভূগর্ভে বিরাজমান কয়েক হাজার বছরের বিপুল পূরাকীর্তির বিশাল ঐশ্বর্য ভাণ্ডার।

রেশম পথের দেশগুলোর নববিকাশের মধ্য দিয়ে চীন গড়তে চায় নতুন এক পৃথিবী, শান্তির-মৈত্রীর-প্রগতির। সেখানে থাকবে না কোনো দ্বন্দ্ব কোনো সংঘাত। থাকবে না স্নায়ুযুদ্ধ রক্তপাত। সবাই এক হয়ে একই পথ ধরে একই বলয়ে বিকশিত হবে। বিকশিত হবে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, অর্থে ও সম্পদে। থাকবে না দারিদ্র্য, বৈষম্য, হতাশা। থাকবে না রোগ, শোক ও অশ্রুপাত।

রাষ্ট্রপতি শি স্বপ্নচারী একজন দার্শনিক। অদম্য ইচ্ছাশক্তির সদাজাগ্রত এক মহান নেতা। বৃহত্তম মানবগোষ্ঠীর দেশটির রাষ্ট্রপতি তিনি। বিশ্বকে তাক লাগানো বিস্ময়কর সমৃদ্ধির যে আধুনিক চীন তার নির্মাতা চীন কমিউনিস্ট পার্টি। আর তার সাধারণ সম্পাদক ও শীর্ষ নেতা শি চিনফিং। প্রায় এক কোটি সদস্যবহুল বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি শি-কে জাতীয় কোর নেতা (national core leader) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছে। চীনের আফিম যুদ্ধের পরবর্তী ইতিহাসে মাও সে তুংকে যথাযথভাবে শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত রেখে চীন তার চার মহান নেতাকে কোর নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এরা হলেন— চীন বিপ্লবের মহান নেতা, চীনা গণমুক্তিফৌজের স্রষ্টা মহাকাব্যিক লং মার্চের মহানায়ক গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং, আধুনিক চীনের রূপকার তেং শিয়াও ফিং, সমৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের মহান নেতা জিয়াং জেমিন এবং সর্বশেষে, চীনের বর্তমান প্রজন্মের মহান নেতা স্বপ্নদ্রষ্টা, যুগস্রষ্টা রাষ্ট্রপতি শি চিনফিং।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল চেয়ারম্যান মাও সে তুং ব্যতীত অপর সব মহান কোর নেতার দুর্লভ সাক্ষাৎকার লাভের। কোর নেতৃবৃন্দের সবার কাছ থেকেই আমি বাংলাদেশের বিষয়ে অপূর্ব নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও প্রত্যয় ব্যক্ত করতে শুনেছি। আমার মনে পড়ছে, ১৯৯৬ সাল। আমি যখন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান, চীনের গণমুক্তিফৌজ (PLA) আমাকে চীন সফরে আমন্ত্রণ জানায়। সেই সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের সঙ্গে আমার সুযোগ হয়েছিল এক আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের। আমার মনে আছে, চীনা প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেছিলেন, ‘চীন অনেক বদলে গেছে, সত্তর- আশির দশকে আপনি এই দেশে বসবাসকালে যেই চীন দেখে গেছেন আজকের চীন আর সেই চীন নয়। আজকের চীন আধুনিক চীন উন্নত চীন এবং এখানে এখন নতুন প্রজন্ম নতুন নেতৃত্ব’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। আমি শুনেছি, ঢাকার দিগন্ত রেখাও বদলে গেছে। কিন্তু এতসব পরিবর্তনের মধ্যেও আপনি কি লক্ষ করেছেন, একটি বিষয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, কোনোদিন ঘটবেও না। আর সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, বাংলাদেশের বিষয়ে আমাদের নীতি’।

তিনি বলে চলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি চীন সব সময় বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে থাকবে। প্রয়োজনের মুহূর্তে চীন সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবে’। তিনি বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক বন্ধুত্বের, বন্ধুত্বের আর বন্ধুত্বের এবং একমাত্র বন্ধুত্বের। আর অন্য কিছু নয়’। তার কথাগুলোর মধ্যে আমি সেদিন এক অদ্ভুত স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তা প্রত্যক্ষ করি।

শি চিনফিং তার প্রজ্ঞা, মেধা ও গতিশীল নেতৃত্ব এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে চরম অভিযানের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে তার এক অতুলনীয় বিশাল অবস্থান নির্মাণ করেছেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তার চেয়ে সফল আর কোনো নেতা এখন পর্যন্ত চীনে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি দশ লক্ষাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দলীয় নেতা-কর্মীকে কারারুদ্ধ করেন। কঠোর শাস্তি দেন। অভিযান এখনো অব্যাহত। তিনি দেশের মানুষের কাছে আধুনিক চীনের নবজাগরণের মহান কারিগর-লৌহমানব। জনগণের চোখে মাও সে তুং-এর পরে তিনিই চীনের মুকটবিহীন সম্রাট। তিনি চীনের বর্তমান অবিসংবাদিত নেতা। সবার শ্রদ্ধা, আনুগত্য ও ভালোবাসায় সিক্ত। আগামী দিনে চীন তার নেতৃত্বে নব নব উত্থান ঘটাবে। নব নব দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশ্ব ঐক্য বিশ্ব শান্তি বিশ্ব প্রগতি ও সঙ্গতি স্থাপনে চীন পুরোভাগে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। শি চিনফিংয়ের নেতৃত্বে চীন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে একবিংশ শতাব্দীর সব চ্যালেঞ্জ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। আরোহণ করবে সাফল্য আর গৌরবের শিখর চূড়ায়। বন্ধুপ্রতীম, ভাতৃপ্রতীম মহান চীনের পরম প্রিয় রাষ্ট্রপতির জন্য আজকের দিনে আমার রইল প্রাণঢালা শুভেচ্ছা, শুভ কামনা ও সুবাসনা।

অতি সম্প্রতি চীন তার ত্রয়োদশ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (NPC)-এর প্রথম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে শি চিনফিংকে আজীবন রাষ্ট্রপতি করে জাতীয় সংবিধান সংস্করণ করেছে। জাতীয় প্রয়োজনে নেতৃত্বের অপরিহার্যতার কারণে এটা ছিল সময়ের দাবি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাঁচটি পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে শি চিনফিংয়ের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ হয়েছিল। শান্ত, স্থিতধী, অত্যন্ত সংবেদনশীল এ ব্যক্তিত্বের মুখে সর্বদা লেগে থাকে প্রীতিময় এক মধুর হাসি আর উষ্ণ আন্তরিকতার উজ্জ্বল্য। আমি তার মাঝে দেখেছি প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই-এর প্রতিচ্ছবি। তার প্রশংসা না করে, তাকে ভালো না বেসে পারা যায় না। শি চিনফিংয়ের মধ্যে প্রতিফলিত দেখি সান ইয়াতসেনের ঐতিহ্য, মাও সে তুং-এর বৈপ্লবিক চেতনা, নেতৃত্বের অসাধারণ দক্ষতা, তেং শিয়াওফিং-এর সুদূরপ্রসারী প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতা।

 

লেখক : সাবেক সেনাপ্রধান।

সর্বশেষ খবর