৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২২:০৪

বিপিএলের উপস্থাপনা নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

শামছুল হক রাসেল

বিপিএলের উপস্থাপনা নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ও সঙ্গীতা আহমেদ।

একটি প্রাণহীন অনুষ্ঠানকে দক্ষ উপস্থাপনা দিয়ে যেমন প্রাণবন্ত করা যায়, ঠিক তেমনই একটি জমকালো আয়োজনকে মানহীন উপস্থাপনা দিয়ে নিভিয়ে দেয়া যায়। বলছিলাম, রবিবার সন্ধ্যায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিপিএলের উদ্বোধনী আয়োজনের কথা। যে কোন মেগা ইভেন্টে সামান্য ক্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটু চোখ বুলালেই বোঝা যাচ্ছে- গতকালের উপস্থাপনা সেই বর্ণিল অনুষ্ঠানকে কতটা ম্লান করে দিয়েছে। 

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমালোচনার তীরে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা। এই দায়িত্বে ছিলেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ও সঙ্গীতা আহমেদ।

প্রথম নজরেই স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা তাদের দেখে একে অন্যের দিকে তাকাতে থাকেন। অনেকেই আবার প্রশ্ন ছুড়ে দেন- যেখানে এতো এতো ইয়ং, এনার্জেটিক, স্মার্ট তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন মঞ্চে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সেখানে তারা কেন?

ফেসবুকে সমালোচকদের কথা হলো- জুয়েল এবং সঙ্গীতা স্ব স্ব অবস্থানে অবশ্যই ভালো। তারা হয়তো ভালো শিল্পী, উপস্থাপক এবং সমন্বয়ক বটে। কিন্তু এরকম একটি বিশাল আয়োজনে তারা কতটা মানানসই?
 
কেউ কেউ আবার এটাও লিখেছেন, এই রকম একটি এনালগ উপস্থাপনা দিয়ে ডিজিটাল উপস্থাপনা কী করা যায়?

মূলত, উপস্থাপকের কাজ হলো অতিথি এবং দর্শকদের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও জুয়েল এবং সঙ্গীতা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, তাদের ড্রেস কোডের বিষয়টি ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। কেউ কেউ বলছেন, এই রকম একটি অনুষ্ঠানে পোষাক নিয়ে জুয়েলের ভাবা উচিত ছিল। 

উপস্থাপকের ব্লেজারের (ওয়েস্ট কোর্ট) বোতাম সংশ্লিষ্ট জায়গায় ছিল না। পরে অবশ্য সেটি ঠিক করেই মঞ্চে আসেন তিনি। 

এই রকম আরও বেশ কয়েকটি বিষয় ছিল দৃষ্টিকটু। বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে তিনটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল। অথচ উপস্থাপকরা বারবার বলছিলেন দু'টি টিভি চ্যানেলের কথা। তারা  বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর'র কথা উচ্চারণই করেননি।

বিপিএলের মঞ্চ মাতাতে ঢাকায় পা রেখেছিলেন বলিউড সুপারস্টার সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফ। স্টেডিয়াম মাতাতে আসা সালমান খান আরও অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। কারণ সালমান খান এবং উপস্থাপকদের মধ্যে কেমন যেন সমন্বয়ের অভাব ছিল। অনুষ্ঠান শেষে মাঠে উপস্থিত অনেক দর্শকই তাদের দিকে এমন অভিযোগের আঙ্গুল তুলেন। 

এছাড়া অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন সঙ্গীতা আহমেদকে নিয়েও। তিনি খুব (সিলি) সহজ ইংরেজি শব্দগুলো বারবার দেখে বলছিলেন আর থামছিলেন। এই ধরনের একটি জমকালো আয়োজনে বারবার পেপার বোর্ড দেখে কথা বলায় অনেকের চোখে লেগেছে। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে জুয়েল অনেকটা জোর করেই সালমান খানকে দিয়ে বলান- 'জুয়েল আমি তোমাকে ভালোবাসি'। জুয়েলের এই বিষয়টি নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ফেসবুকে।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই এই রকম বিরূপ মন্তব্য করছেন। বেশকিছু ছবি আবার ভাইরালও হয়েছে। 

ফেসবুকে ইসতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, প্রচুর আলোকসজ্জা, দেশি বিদেশী শিল্পী,
সব দেখে একটা বৃহৎ একটা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের ফিল আসতেই, যেই উপস্থাপক দম্পতি জুয়েল, সঙ্গীতা চলে আসছেন, তখনই মনে হচ্ছে, বিপিএল না তাদের বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছি। দুইটা ভালোমন্দ খাওয়াবে বলে তাদের মনগড়া উপস্থাপনা শুনতে হচ্ছে...

লীনা পারভিন লিখেছেন, কেউ মাইন্ড না করলে একটা কথা বলতে পেটে গুড়গুড় করতাছে। প্লিজ কেউ মাইন্ড কইরেন না প্লিজ। গতকাল অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জুয়েল সাহেবের ড্রেসকোড কে ঠিক করে দিছিল? এই রকম পালাজো প্যান্ট কেনো পরলো উনি? ওয়েস্টকোট পরে কনসার্ট উপস্থাপনা, মানে, চোখ আর মন থেকে তাড়াতে পারতেছি না সেই সব সিন। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া উপস্থাপনা আর সবার শেষে সঙ্গীতা আপার সাল্লুর কাছে মাসে দুইবার করে আসার আবদার। পুরাই তব্দা অবস্থা। উফফফ। আর পারছি না বাপু। হা হা পে দে অবস্থা।

সুমন হোসেন লিখেছেন, BPL এ সালমান, ক্যাটরিনাকে দেখি নাই 
দেখেছি দু'জন মানুষের অদ্ভুত উপস্থাপনা।

মাহতাব হোসেন লিখেছেন, গতকালের বিপিএলের উপস্থাপনা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। আমাদের দেশের চলমান সিস্টেমের প্রতিচ্ছবি ওটা। 

ফেসবুকজুড়ে এমন নানা সমালোচনা ও আলোচনা বেগবান হচ্ছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা নিয়ে। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর