নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৪২১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নয় দফা দাবিতে প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শারমিন বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কর্তৃক সংঘটিত সকল অপরাধের বিচার করতে হবে এবং শহীদ সাজিদ ভবনে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্তহীন একতরফা বিচার প্রত্যাহার করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসের সার্বিক মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করণে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার সুচিন্তিত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রত্যাশা করি এবং শহীদ সাজিদ ভবনে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্তহীন একতরফা বিচার অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
নয় দফা দাবি হল-
১. বিগত ১৭ বছরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট আমলে সংগঠিত নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘ ১১ মাসে কেন ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগ, কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগ কর্তৃক আহত ও নির্যাতিতদের বিরুদ্ধে ভিক্টিম কার্ড তৈরির কারণ সুনির্দিষ্ট ভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
২. নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে যারা ছাত্রলীগ দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে তাদেরকে শাস্তি প্রদান সম্পূর্ণ রূপে বৈষম্য ও অন্যায় হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বৈষম্যমূলক এই শাস্তি প্রত্যাহার করতে হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ধরতে গেলে সাজিদ ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, এর পিছনে ছাত্রলীগের আশ্রয় দাতাদের উস্কানি এবং উদ্দেশ্য তদন্ত সাপেক্ষে বের করে আনতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কেন এবং কিভাবে বহিষ্কার করা হলো তার সুনির্দিষ্ট কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে। যারা বিশৃঙ্খলা নিরসনে কাজ করেছে কোন তথ্যর ভিত্তিতে তাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তা ক্লিয়ার করতে হবে।
৪. বিচারকে প্রভাবিত করতে ভিসি ভবনে তালা দেয়াকে আমরা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এবং অনৈতিক প্রভাব বলে চিহ্নিত করেছি। এর পেছনের দুরভিসন্ধি খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. ভিসি ভবনে তালা দেয়া কেন ভিসি মহোদয়কে অবমাননা বলে চিহ্নিত হবে না তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
৬. ছাত্রলীগকে বাঁচাতে গিয়ে কারা কি উদ্দেশ্যে মব তৈরি করলো তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারা কিভাবে ব্যবহার করছে তা সুস্পষ্ট ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. শিক্ষক লাঞ্ছনার বিষয়টি সামনে এনে ছাত্রদলকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ঘায়েল করার চেষ্টার পিছনের ষড়যন্ত্র বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।।
৯. জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা এক দফা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এবং কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধ করেনি। তাদের দায় মুক্তির দেয়া হোক। কিন্তু যারা শুধু কোটা আন্দোলন করেছে কিন্তু এক দফায় যায়নি তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাদের যাদের ব্যাপারে দায় মুক্তি দেয়া হবে তার সুনির্দিষ্ট তালিকা দিতে হবে এবং যারা দায় মুক্তি পাবে না তাদেরও সুনির্দিষ্ট তালিকা দিতে হবে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, আমরা শুধুমাত্র তাদের বিচার চাই যারা বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছে। তবে কেউ যদি নিরপরাধ হয়, তাকে যেন কোনোভাবেই হয়রানি করা না হয়-সেই বিবেচনায় আমরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের দায়মুক্তির দাবি জানিয়েছি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত