শিরোনাম
রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখরিত প্রাঙ্গণ

মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ

স্থাপত্যরীতি মুঘল আমলের। সঙ্গে মিশেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত-ঐতিহ্য। যেটার জাঁকজমকপূর্ণ শৈলী আপনাকে থমকে দিতে পারে কিছুক্ষণের জন্য। মনে করিয়ে দেবে দেশের প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠের নানা অর্জনও। প্রাণের ক্যাম্পাসে প্রবেশের এমন অনুভূতি জাগানিয়া একটি তোরণ নির্মাণ হচ্ছে। সুরম্য এ তোরণ ক্যাম্পাসে স্বাগত জানাবে সবাইকে। দীর্ঘ ৯৩ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তি ও গণতন্ত্র' নামক স্থায়ী এই তোরণ নির্মিত হচ্ছে। তোরণের নকশা করেছেন স্থপতি রবিউল হুসাইন। ২০১৪ সালের ১৬ মে এই তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। তোরণ নির্মাণের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (ডিইউএএ)। ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) সহযোগিতায় এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় এক কোটি টাকা। ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী তোরণ নির্মাণ এটিই প্রথম। অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ফটকগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এ ধরনের স্থায়ী তোরণ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

চায়ের আড্ডা হাকিম চত্বর

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে 'হাকিম চত্বর' অবস্থিত। আবদুল হাকিম নামের এক চা বিক্রেতার নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ করা হয়। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে 'হাকিম ভাই' হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হাকিম ভাই তার বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তার মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকারা চিঠি চালাচালিও করতেন। তার দোকানের 'চা' খেয়ে অনেকে মন্ত্রী, বিচারপতি, বড় বড় আমলা হয়েছেন। ১৯৬৭ সালের দিকে বাবার হাত ধরে দোহার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন হাকিম ভাই। তখন তার বয়স ১৫ বছর। তিনি একটি আমগাছের নিচে বসে চা আর পান বিক্রি শুরু করেন। এ সময় টিএসসি ও এর আশপাশের এলাকায় আর কোনো চায়ের দোকান ছিল না। হাকিম ভাই ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে এখানে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। দোকানের সামনে রয়েছে একটি বড় রেইন ট্রি। এখানে বসে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেন। তাদের আড্ডা পরিণত হয় নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায়। হাকিম চত্বরে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাবেক শিক্ষার্থী জুলফিকার আলী আর সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে ছিলেন বর্তমান শিক্ষার্থী এনামুল হক প্রিন্স। জুলফিকার আলী জানান, কর্মব্যস্ততার ফাঁকে একটু অবসর সময় পেলে ছুটে আসেন এখানে। চা পানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মধুর সময়গুলোর স্মৃতিচারণ করে আনন্দেচিত্তে কাটান অবসর সময়।

পড়ুয়াদের জ্ঞান চত্বর

খুব সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এলে সহজেই একটি দৃশ্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেটি হলো লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘলাইন। পড়ুয়া শিক্ষার্থীর তুলনায় লাইব্রেরিতে পড়ার জায়গা কম হওয়ায় একটি চেয়ার দখল করতেই তাদের এই লাইনে দাঁড়িয়ে স্থান দখলের প্রতিযোগিতা। পড়ার জন্য প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী এভাবে প্রতিযোগিতায় নামার দৃশ্য পৃথিবীতে দুর্লভ। লাইব্রেরিতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে লাইব্রেরির সামনে গিয়ে আড্ডা দেয়। তাদের সেই আড্ডাও পড়ালেখার বাইরে নয়। 'বিসিএস-সহ অন্যান্য পরীক্ষার জন্য কিভাবে পড়তে হবে', 'কার প্রস্তুতি কেমন', 'দেশের বর্তমান অবস্থা', 'কার একাডেমিক রেজাল্ট কী রকম' ইত্যাদি বিষয় ঠাঁই পায় তাদের আড্ডায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ স্থানটিকে 'জ্ঞান চত্বর' বা 'লাইব্রেরি চত্বর' বলে ডাকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরিরত সাবেক শিক্ষার্থীরাও এখানে এসে আড্ডা দেয়।

 

 

সর্বশেষ খবর