রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আগে পরিকল্পনা পরে বাস্তবায়ন

শামছুল হক রাসেল

বর্তমান প্রেক্ষাপটে গতানুগতিক শিক্ষার মাধ্যমে ক্যারিয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন কিছু গুডউইল বা দক্ষতা, যা উজ্জ্বল ক্যারিয়ারকে ত্বরান্বিত করে। তাহলেই গুড থেকে বেস্ট। কাজের জায়গায় সত্যি কি আমরা ‘কাজের লোক’? আরও, আরও বেশি কার্যকরী হয়ে উঠতে গেলে কিন্তু আমাদের দক্ষতাগুলোকে একটু-আধটু নাড়াচাড়া করে নিলেই চলে। ধারা যাক, টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে আপনি সব সময়ই দারুণ। কিন্তু যদি বলি, নতুন নতুন স্কিল শিখতে আপনি কতটা সময় ব্যয় করেন, তা হলে? হয়তো রোজকার জীবনের গাদা গুচ্ছের ডিমান্ড আপনি স্ট্রেট ব্যাটেই খেল। কিন্তু মহা-হেকটিক শিডিউলে পড়লে হয়তো সেই কমিউনিকেশন স্কিল ভড়কে যায়, স্ট্রেস ফুটে ওঠে শরীরে। কাজের জায়গায় সত্যিকার অর্থে এফেক্টিভ হয়ে উঠতে পারাটা আপনাকে এখন তো বটেই, ক্যারিয়ারজুড়েই সুফল দিতে পারে। এফেক্টিভ কর্মীরাই দুর্দান্ত সব প্রজেক্ট পান, বাঘা বাঘা ক্লায়েন্টদের মন জয় করেন, সহকর্মী এমনকি বসের কাছেও তাদের খাতির আলাদা। কিন্তু কথাটা হলো, আরও বেশি এফেক্টিভ হবেন কী করে? ফোকাস করবেন কিসের ওপর? বেশি এফেক্টিভ হয়ে উঠতে কোন স্কিলগুলো অর্জন করা চাই, নিজের কাজে লাগতে পারার ক্ষমতাটাকে শানাতে কী কী স্ট্র্যাটেজি নেওয়া দরকার, সেগুলো জানা খুব জরুরি। কিছু জিনিস আছে যা অভ্যাস করলে আপনি কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গাটা পোক্ত করতে পারবেন। একটা কথা আমরা প্রায়ই বলি ASK yourself, আমার কাছে এই ASK- এর মানেটা এ রকম। A-Attitude, S-Skills, K-Knowledge কাজের জায়গায় আপনি হয়তো ‘গুড’। এই ‘গুড’ থেকে বেস্ট হয়ে উঠতে গেলে এই তিনটা জিনিস চাই-ই। ধরুন কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনার কাজটা ঠিক কী ভাই? ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারবেন তো? জেনে রাখুন এফেক্টিভ হয়ে উঠার মূলমন্ত্র— কী কাজ করছি, কেনই বা করছি, সেটা নিজের ভালোভাবে জানা। নিজেই যদি না জানলেন কাজের ক্ষেত্রে কোন লক্ষ্যটায় আপনাকে পৌঁছতে হবে, তা হলে ঠিকঠাক প্রায়োরিটি সেট করবেন কী করে? আর যদি প্রায়োরিটি সেট না করেন, তা হলে দেখবেন সব সময় সামনে কাজের পাহাড়, আর কোন কাজটা জরুরি, কোনটা ততটা নয়, সেটা ধরতেই পারবে না। সত্যিকারের কাজের কর্মীরা গুড অ্যাটিচিউডবান। কিন্তু গুড অ্যাটিচিউড। ঠিক কী? অ্যাটিচিউডওয়ালা কর্মীরা যে কোনো কাজে এগিয়ে যান সবার আগে। কোনো সহকর্মীর সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন, কারও অসুস্থতায় কোনো কাজ পিছিয়ে গেলে সেটা ধরে নেন, সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করেন যে, নিজের কাজগুলো যেন হান্ড্রেড পার্সেন্ট ঠিক হয়। যথেষ্ট ভালোতে সন্তুষ্ট থাকার বান্দা তারা নন। কাজের  জায়গায় এই অ্যটিচিউড আপনাকে যেমন অন্যের শ্রদ্ধা এনে দেবে, তেমনই কাজের প্রতি আপনার মনোভাব বা কাজের স্ট্যান্ডার্ড এগুলোও গড়ে দেবে। আপনি যে কাজকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন, এই মানসিকতাটাই অন্যের সঙ্গে পার্থক্য গড়ে দেবে। এ ছাড়া ওয়াচ ইয়োর টাইম স্কিলটা থাকা জরুরি। এই স্কিলটা না থাকলে সব সময় কাজ নিয়ে, ই-মেইল নিয়ে, ফোন হাতে পাগলের মতো ছুটতে হবে। প্রতিদিনের কাজের তালিকাটা হাতে নিয়ে দেখে নিন। একটা ছক তৈরি করুন, মিটিংয়ে এত সময়, ই-মেইল চেক করতে এত, ফোন করতে এত। পরে চোখ বুলালে দেখবেন, রোজ এমন অনেক অকাজকে কাজ ভেবে সময় ঢালছেন, যার সঙ্গে টার্গেটের কোনো সম্পর্ক নেই। এবার আসল কাজগুলো বেছে নিয়ে ‘ইম্পর্ট্যান্ট’, ‘মোর ইম্পর্ট্যান্ট’, ‘মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট’, এভাবে ভেঙে নিন। দেখবেন, কিছু কাজ পরেও করা যায়, আবার কতকগুলো নিজে না করলেও চলে। অন্যদিকে সময়-সুবিধা মতো ব্যবহার করতে জানতে পারাটাও খুব দরকার। যেমন, ‘মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট’ কাজগুলো দিনের সেই সময়ে কর যখন তুমি দারুণ এনার্জেটিক মু েআছ। নিজের ‘পিক এনার্জি টাইম’  জানতে পারলে দেখবেন দিনের কাজগুলো গুছিয়ে ফেলাটা জলভাত হয়ে যাবে। নিজের কার্যকারিতা বাড়াতে হলে ‘গোল’ বা লক্ষ্যগুলো সেট করে ফেলুন। ছকটা তৈরি হলে বুঝে যাবেন, কাজ বা ‘রোল’টা ঠিক কী। এবার সেই মতো শর্ট আর লং-টার্ম লক্ষ্যগুলো বাছুন। অন্যের সঙ্গে ঠিকঠাক কমিউনিকেট করাটাও মস্ত ফ্যাক্টর। কমিউনিকেশনকে আরও ঝালাই করবেন কী করে? আগে ভেবে নিন,  রোজ কিভাবে কমিউনিকেট করেন। শুরু করুন ‘লিসনিং স্কিল’ দিয়ে। অন্যে যা বলছে, সেটা সত্যিই শুনছেন ও বুঝছেন, রিপোর্ট  তৈরির সময়ও এগুলো মাথায় রাখুন। কাজের একটু চাপ থাকলে ভালোই, কিন্তু সামর্থ্যের চেয়ে চাপটা বেশি হয়ে গেলে উল্টো প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। অন্য সময় যে সিদ্ধান্তগুলো অনায়াসে নিতে পারেন, স্ট্রেস্ড হলে সেগুলোই ধারে-কাছে ঘেঁষে না। ক্ষতি হয় স্বাস্থ্যেরও। তাই স্ট্রেস সামলাতে জানা চাই। এরই সঙ্গে সফ্ট স্কিল, ইমোশন নিয়ন্ত্রণ, ক্রিয়েটিভ থিঙ্কিং চাই। সুতরাং নিজেকে গুড নয়, বেস্ট ভাবুন।

সর্বশেষ খবর