১১ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:০৮

সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক ‘কুল্লু খালাস’, না অন্য কেউ?

সিলেট ব্যুরো

সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক ‘কুল্লু খালাস’, না অন্য কেউ?

বদরোজ্জামান সেলিম

সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর এখন শুরু হয়েছে মহানগর বিএনপি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। একজন যোগ্য নেতাকে আহবায়ক করার লক্ষে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা শুরু করছেন আলাপ-আলোচনা। সিলেট মহানগর বিএনপিতে কাকে আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হলে বিভাজন কমবে, সে লক্ষেই উপযুক্ত ব্যক্তির খোঁজে রয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা।   

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আহবায়ক করা হতে পারে এমন ৫ জন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ হক, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরোজ্জামান সেলিমের মাঝ থেকে কাউকে করা হতে পারে আহবায়ক।

২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সভাপতি পদে নাসিম হোসেইন ও সাধারন সম্পাদক পদে বদরোজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ২ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা বিএনপির ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি করা হয়। সর্বশেষ ১ নভেম্বর দীর্ঘ ১৯ বছর পর সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি গঠনের পর এখন শুরু হয়ছে মহানগর বিএনপি গঠনের প্রক্রিয়া। কে হচ্ছেন সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক এমন আলোচনা চলছে বিএনপি ঘরণার রাজনীতিতে। প্রতিটি বলয় থেকে কয়জন করে আহবায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এমন আলোচনা এখন সর্বত্র।

দলীয় কোন্দল মেঠাতে মহানগর বিএনপিতে একজনকে সদস্য সচিব করা হতে পারে বলছেন কেউ কেউ। তবে একথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হাসান।  তিনি বলেন, প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে মহানগর বিএনপির কমিটি করা হবে বলে তিনি জানান।

বিএনপির একটি অংশ চাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী-কে আহবায়ক করতে। জেলা বিএনপিতে আরিফ বলয়ের তেমন কেউ অন্তর্ভূক্ত হয়নি। এছাড়া জেলা যুবদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে আরিফের পছন্দ ছিল সাদিকুর রহমানকে।১৯ বছর সাদিক ছিলেন জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। যুবদলের কমিটি গঠনের পর বিপক্ষে অবস্থান নেন আরিফসহ ৪ বিএনপি নেতা। তারা দল থেকে পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছিলেন।
 
এজন্য আরিফকে খুশি করতে এবং সিলেট বিএনপির চলমান বিরোধ মেঠাতে তাকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক করা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন। মহানগর বিএনপির কমিটিতে তার আগ্রহ আছে কি-না জানতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।   

অপরদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর নামও বেশ আলোচনায় রয়েছে। ক্লিন ইমেজের ডা. শাহরিয়ার ছিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের প্রথম সভাপতি। এছাড়া তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপিও ছিলেন। মহানগর বিএনপির আহবায়ক করার বিষয়ে তিনি বলেন, আগাম কিছু বলা যাবেনা।

এদিকে আলোচনায় রয়েছে দলের দু’জন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার নাম। সিলেট বিএনপিতে এম এ হককে এক নামে সবাই চিনেন। তিনি এখন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। প্রবীণ এ নেতা সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। শেষ বয়সে তাঁকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক করে সম্মানিত করা হতে পারে বলে একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন।

এম এ হকের সাথে আলোচনায় আছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হকের নাম। দলের কল্যাণে ও নেত্রীর মুক্তি আন্দোলন জোরদার করতে দল যদি তাকে এ দায়িত্ব দেয় তাহলে কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক বদরোজ্জামান সেলিমের অনেক ভূমিকা রয়েছে সিলেট বিএনপিতে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সবুজ সংকেত পেলে তিনি দেশে চলে আসতে পারেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্দ।এজন্য সেই রাগ-অভিমান মেঠাতে সেলিমকে শেষমেষ আহবায়ক করা হতে পারে। বদরোজ্জামান সেলিম সিলেট ছাত্রদলের মূল পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতিও ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সেলিম।

সেলিম জানান, দলের সকল পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছি। দুর্দিনে দল ছেড়ে যাইনি। দল যদি আমাকে প্রয়োজন মনে করে তাহলে এই দায়িত্ব দেবে। সারা জীবন দলকে দিয়েছি। কিছু নেইনি। চেয়ে কোন পদ পদবী নিতে রাজি নন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আবারও বলেন, প্রয়োজন হলে ‘কুল্লু খালাস’।

প্রসঙ্গত, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি তখন আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন; বলেন, ‘কুল্লু খালাস’। তখন থেকে সেলিমের নামের সাথে সিলেটের লোকজন ‘কুল্লু খালাস’ হিসেবে অভিহিত করেন।  

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর